বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
লেখকঃ মোহাম্মদ শাহজামান শুভ।
রাত তখন প্রায় দশটা। খাওয়াদাওয়ার পরের নিরিবিলি সময়। টিভিতে চলছে কোনো পুরোনো বাংলা সিনেমা। স্বামী ফ্যানের বাতাসে আধশোয়া হয়ে মোবাইলে খবর পড়ছেন, স্ত্রী রান্নাঘর গুছিয়ে এসে তাঁর পাশে বসলেন। মুখে একধরনের কৌতূহলী হাসি।
স্ত্রী হঠাৎ বললেন,
— শুনছো? তোমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল কী ছিল?
স্বামী থেমে গেলেন। চশমা নামিয়ে গম্ভীর ভাব ধরলেন। মনে হলো তিনি যেন জীবনের সমস্ত অঙ্ক মিলিয়ে ফেলছেন। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে উত্তর দিলেন,
— চাকরিটা ছেড়ে দেওয়া।
স্ত্রীর চোখ বড় বড় হয়ে গেল।
— কী! আমি ভেবেছিলাম বলবে আমাকে বিয়ে করা!
স্বামী মুচকি হেসে একেবারে অচলাবস্থার সমাধান করে ফেললেন,
— আরে, ওইটা তো চাকরি ছেড়ে দেওয়ার রেজাল্ট ছিল!
স্ত্রী এক মুহূর্ত রাগী মুখ করে থাকলেন, তারপর হেসে ফেললেন। হাসির মাঝেই চুল ঠিক করতে করতে বললেন,
— বাহ! খুব সুন্দর অজুহাত। কিন্তু এই অজুহাত দিয়ে তুমি কোনোদিন আমার বকা থেকে বাঁচতে পারবে না।
এই একটা লাইন বলেই দু’জনের হাসির ঝড় বয়ে গেল। হাসির শব্দে পাশের ফ্ল্যাটের আন্টি পর্যন্ত জানালা খুলে তাকালেন, ভেবে বসলেন হয়তো নতুন কোনো কমেডি সিরিয়াল বেরিয়েছে।
গল্পটা এখানেই থেমে গেলে হয়তো সাদামাটা মনে হতো। কিন্তু না, এর পর থেকে প্রতিদিনই এই দম্পতির সংসারে তৈরি হতে লাগল নিত্যনতুন হাস্যরস।
একদিন সকালে নাস্তার টেবিলে স্ত্রী বললেন,
— আজ আমি তোর জীবনের দ্বিতীয় বড় ভুলটা জানতে চাই।
স্বামী দুধ চুমুক দিয়ে উত্তর দিলেন,
— তোমাকে ভালোবেসে প্রতিদিন নতুন কবিতা লেখার চেষ্টা করা।
স্ত্রী ভুরু কুঁচকে বললেন,
— ওমা! এটা আবার ভুল হলো কীভাবে?
স্বামী গম্ভীর গলায় বললেন,
— কারণ কবিতা লিখতে গিয়ে বাস মিস করেছি, রিকশা ভাড়া দিতে গিয়ে টাকা শেষ করেছি, অফিসে দেরি করে গিয়ে বসের বকা খেয়েছি। সব কবিতার কেরামতি।
স্ত্রী হেসে বললেন,
— তাহলে আমি তোমার কবিতার অনুপ্রেরণা নই, শাস্তি নই, আমি আসলে তোমার জীবন-বিপর্যয়!
স্বামী হাত ধরে ফিসফিস করে বললেন,
— তুমি আসলে আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর বিপর্যয়।
স্ত্রী মুখ ঘুরিয়ে বললেন,
— আহা! এখনো তুমি চাকরির মতো পুরোনো ভুলের রেফারেন্স টেনে আনো।
সেদিন থেকে সংসারে শুরু হলো এক অদ্ভুত খেলা—‘ভুলের তালিকা’। যখনই কোনো ঝগড়া শুরু হয়, স্বামী গম্ভীর মুখে বলেন,
— আচ্ছা, এটা আমার তৃতীয় বড় ভুল।
স্ত্রী তৎক্ষণাৎ উত্তর দেন,
— না না, এটা আমার ভুল। কারণ তোমাকে বিয়ে করার পর আমি ভেবেছিলাম তুমি খুবই সিরিয়াস মানুষ!
এই কথাতেই আবার দু’জনের অট্টহাসি।
একদিন বৃষ্টির রাতে বিদ্যুৎ চলে গেছে। মোমবাতির আলোয় বসে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে স্ত্রী হঠাৎ গম্ভীর হয়ে বললেন,
— জানো, আমি মাঝে মাঝে ভেবেছি, তোমাকে বিয়ে করাটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল।
স্বামী চোখ বড় করে তাকালেন, তারপর শান্তভাবে বললেন,
— জানো, আমিও মাঝে মাঝে ভেবেছি, তোমাকে না বিয়ে করাটাই আমার সবচেয়ে বড় ভুল হতো।
স্ত্রী এক মুহূর্ত থমকে গিয়ে হাসলেন,
— ঠিক বলেছো। তাহলে আজকের রাতের ভুলের হিসাব শূন্য।
এভাবে ভুলের অঙ্ক মেলাতে মেলাতে দু’জনের সংসার যেন আরও জমে উঠল।
তাদের ছেলে-মেয়েরাও একদিন বাবাকে জিজ্ঞেস করল,
— আব্বু, তুমি নাকি জীবনে অনেক ভুল করেছো?
স্বামী গম্ভীর মুখ করে বললেন,
— হ্যাঁ, অনেক ভুল। যেমন স্কুলে পড়ার সময় সাইকেল চালাতে গিয়ে পুকুরে পড়েছিলাম।
ছেলে হাসতে হাসতে বলল,
— এটা তো বড় ভুল না, ছোট ভুল। বড় ভুল কোনটা?
স্বামী চোখ টিপে বললেন,
— বড় ভুল হলো তোমাদের আম্মুর প্রেমের প্রপোজালে হ্যাঁ বলে ফেলা।
মেয়েটা অবাক হয়ে বলল,
— তাহলে তো আমরা দুনিয়াতেই আসতাম না!
স্ত্রী তখন রান্নাঘর থেকে চেঁচিয়ে উঠলেন,
— চুপ করো! তোমরা এসেছো বলেই আজকের পৃথিবীটা এত সুন্দর। তোমাদের আব্বু শুধু রসিকতা করছে।
তখন স্বামী হেসে বললেন,
— হ্যাঁ রে বাবা, এটা আমার জীবনের সবচেয়ে সঠিক ভুল।
এভাবেই ভুলের অঙ্কে মিলিয়ে যায় সংসারের প্রতিদিন। কখনো ছোট খাট রাগ, কখনো অভিমান, কখনো অযথা বকা—সবই একসময় হাসিতে মিলে যায়।
যতবার স্ত্রী বলেন,
— তোমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল আমিই, তাই না?
স্বামী তখন উত্তর দেন,
— না, তুমি আমার সবচেয়ে বড় ঠিক। শুধু মাঝে মাঝে তোমাকে ভুলে ভেবে ফেলি ভুল!
সংসারের মজা তো এখানেই—ভুলের আড়ালেই থাকে মিলনের হাসি, তর্কের ভেতরেই থাকে ভালোবাসার আভাস। আর চাকরি ছেড়ে দেওয়া, প্রেম করা, বিয়ে করা—এসব আসলে ভুল নয়, এগুলোই তো জীবনের মিষ্টি রম্যতা।
তাদের এই রসিকতায় ভরা সংসারকে দেখে পাশের ফ্ল্যাটের মানুষজন একদিন বলেছিল,
— এরা ঝগড়াই করে, নাকি ভালোবাসাই করে?
কেউ উত্তর দিতে পারেনি। কারণ, তাদের ঝগড়া আর ভালোবাসা একাকার হয়ে গেছে, ঠিক যেন এক কাপ চায়ের মধ্যে মেশানো চিনি—যেটা ছাড়া আসল স্বাদই আসে না।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now