বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
হয়রতজী ইলিয়াস (রহঃ) মিয়াজী মুসাকে বললেন,
.
- "মেওয়াতে যাও মানুষকে দাওয়াত দাও।"
- সে বলল, "এটা আমার দ্বারা সম্ভব নয়, কারন আমি তো ধর্ম সম্পর্কে কিছুই জানি না।"
- বললেন, "মানুষকে কালেমা শিখার দাওয়াত দাও।"
- সে উত্তর দিল, "কালেমাও আমার জানা নেই।"
.
হযরতজী বললেন, "তাহলে তুমি লোকদের গিয়ে বলতে থাক আমি ৫০বছর জীবনে কলেমা শিখিনি। তোমরা তাবলীগে গিয়ে কলেমা শিখ। আমার মতো মূর্খ থাকবে না। আখেরাতের জীবনের জন্য তৈরি হও।"
.
মেয়াজী মুসা মেওয়াত চলে গেলেন। লোকদের জড়ো করলেন হয়রতজীর শেখানো কথা হুবহু বললেন। তার কখা শুনে মেওয়াতীরা কাঁদতে থাকলো। মেওয়াত থেকে জামাত তৈরি করে মিয়াজী মুসা আবার নিজামুদ্দিন এলেন। আল্লাহর রাস্তায় সফরের জন্য বেরিয়ে পড়লেন।
.
এই মিয়াজী মুসা পরবর্তি জীবনে হয়রতজীর সবচেয়ে ঘনিষ্ট সাগরেদে পরিণত হলেন।
.
হয়রতজী ইলিয়াছ ছাব (রহঃ)-এর কাছে কেউ দোয়ার জন্য এলে, তিনি বলতেন, "তুম মেয়াজী মুসা কি পাছ চালি যাও"।
.
তিনি মুজতাবাতুদ দাওয়াতে পরিণত হয়েছিলেন। পৃথিবীর সবকটি দেশ সফর করেছিলেন। লম্বা হায়াত পেয়েছিলেন। পৃথিবীর বড় বড় ইজতেমাতে বয়ান করতেন। বাংলাদেশ ইজতেমাতে তার কুদরতের বয়ান শুনে শূণ্য হাতে আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে তিন চিল্লা লাগিয়ে বাড়িতে আসা মানুষের সংখ্যা এদেশেও কম নন।
.
একদিন মিয়াজী মুসাকে জোড় করে সাথে করে দারুল উলুমদেওবন্দ নিয়ে গেলেন মুফতি কেফায়তুল্লাহ (রহঃ)। মিয়াজী উলামাদের সামনে বসতেন না। ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে থাকতেন। তার সামনে বা মঞ্চে কোন আলেম থাকলে তিনি কথা বলতেন না তাজিম করে। উলামাদের প্রতি মিয়াজী মুসার ভক্তি ছিল চেখে পড়ার মতো এক আদর্শ।
.
আর এই মুসাকে দেওবন্দ নিয়ে গিয়ে মুফতি কেয়ফায়তুল্লাহ, হাকীমুল ইসলাম ক্বারী তাইয়্যাব (রহঃ) সহ বড় বড় বুর্জুগগন পুরো মাদরাসার ত্বালেবে এলেমদের একত্র করলেন। সেখানে মিয়াজী মুসাকে নিয়ে গেলেন। দেওবন্দের বড় বড় উস্তাদ শায়েখগন তাকে জোড় অনুরোধ করলেন, দারুল উলুম দেওবন্দের ছাত্র শিক্ষকদের উদ্দ্যেশে কিছু নসিহত করতে।
.
মিয়াজী মুসা কাঁদতে থাকলেন। অনেক্ষন পর কাঁদা বন্ধ করে বললেন, "এটাই তাবলীগ। এই যে আমি জাহেল গণ্ডমূর্খ ডাকাত মুসা দারুল উলুম দেওবন্দের মিম্বরে বসে আছি, বিশ্বের সবচেয়ে বড় আলেমদের সামনে কথা বলছি। যদিও কথা বলতে বাধ্য করা হয়েছে আমাকে।"
.
তার পর নিজের জীবনের কথা বলে সেই বিখ্যাত ঘটনা বললেন, যা শুনে দারুল উলুম দেওবন্দের বড় বড় শায়েখ আর ছাত্র শিক্ষকের মাঝে কান্নার রোল পড়ে গিয়েছিল। এই সুপ্রসিদ্ধ গল্পটি মিয়াজী মুসার জবান থেকেই প্রথম বের হয়েছিল দেওবন্দের মিম্বরে বসে।
.
মিয়াজী মুসা বললেন, "বাবার দুই ছেলে। একজন বড় সমজদার, কর্মট, বিচক্ষন, প্রজ্ঞাবান, জ্ঞানী, কামোদ্দ্যমি। যিনি যর্থাথই বাবার যোগ্য উত্তরসুরী। সত্যকারের ওয়ারেস। আরেকজন ছোট, অবুজ,।
.
বাবা একদিন দুই পুত্রকে কাছে ডাকলেন, বললেন, "আমার কাছে হিরক খন্ডের ন্যায় অনেক দামী ভারী ওজনদার একটা কিমতি জিনিস আছে। এটা অমুক নিদৃষ্ট স্থানে পৌঁছে দিতে হবে।" বাবার ইচ্ছে বড় ছেলেই এই দামী জিনিসটি সঠিক রক্ষনাবেক্ষনের মাধ্যমে আমানতের সাথে দ্রুত পৌছে দেয়ার একমাত্র যোগ্যতা বহন করে। বাবার দৃষ্টি বড় ছেলের প্রতি।
.
তখন বড় ছেলে বলল, "আব্বাজী আমি আপনার অবর্তমানে এখন আপনার সমস্ত জিনিস দেখাশুনা করি। আপনার মেইল ফ্যাক্টরি পরিচালনা করি। আপনার ব্যাবসা বানিজ্য দেখাশুনা করি। সংসারের যাবতীয় কাজ বাজার হাট আমিই করি। আপনার এতো সব বড় বড় কাজ সঠিক ভাবে আঞ্জাম দেয়ার পর আমি কি ভাবে এই কিমতি জিনিস পৌছে দিব? আমার সেই সময় কই?
.
বাস্তবিকই আমি আপনার আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ নিয়ে মহা ব্যস্থ, এই জিনসের দ্বায়িত্ব নিলে আপনার অন্যদিকের অনেক বড় বড় কাজের ক্ষতি হবে। আপনিই তো দেখছেন আমার হাতে এক মুহুর্তের সময় নেই।"
.
তাই ছোট ছেলে তখন বাবার করুন চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝে না বুঝেই সেই কিমতি জিনসকে মঞ্জিলে মকসুদে পৌছে দিতে তৈরি হল। কারন বাবার এই কিমতি জিনিস পৌঁছে দিতেই হবে এটা বাবার নির্দেশ, বাবার শেষ ইচ্ছে, বাবার এক আমানত।
.
ছোট ভাই তখন সেই ভার কাঁধে নেয়। চলতে থাকে। কখনো সামনে কঠিন পথ দেখলে ভয়ে থমকে যায়। সাহস হারিয়ে জড়োসড়ো হয়ে যায়। কখনো অপরিচিত গন্তব্য পথে পথ হারিয়ে ফেলে। কখনো পিচ্ছিল পথে কিমতি জিনিস কে হুচট খেয়ে কাঁধ থেকে ফেলে দিয়ে আঁচড় লাগায়। কখনো ভয় মাটিতে নামিয়ে রেখে চোখের পানি ফেলে, "আহ... আজ যদি আমার বড় ভাইজান তাঁর শতব্যস্থতা থেকে একটু সময় ফারেগ করে আমার সাথে থাকতেন।
.
বাবার নির্দেশ মানতে গিয়ে, যে দামী আমানত আমি কাঁধে নিয়েছি আমি তো তা বহন করার সামান্যতম যোগ্যতাও আমার নই। ভাইজান সাথে থাকলে, আমি কখনো ভয় পেতাম না কিছুতেই। সাহস হারা হতাম না। উনার চেনা পথ ছিল, তাই কখনো পথ হারাতাম না। একটু সাহায্য করলে, আমি অভয় পেতাম এই দামী জিনিসে কোন আঁচড় লাগাতাম না। আরো অনেক আগেই মঞ্জিলে এই কিমতি আমানত নিয়ে পৌঁছে যেতাম।"
.
মিয়জী মুসা এই ঘটনা বলে চোঁখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলেন, "হয়রতগন -
.
★বাবা হলেনঃ জনাবে মোহাম্মদ সালল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
.
★কিমতি জিনিসঃ দাওয়াতের মেহনত।
.
★বড়ভাইঃ হযরত উলামায়ে কেরাম।
.
★ছোট ভাইঃ আমাদের মতো আওয়াম মূর্খ যারা তাবলীগ করতে গিয়ে বাবার এই মহা মূল্যবান আমানত কাঁধে নিয়ে একাজকে নষ্ট করছি।
.
বাবার মেইল ফ্যাক্টরি, ব্যবসা, বানিজ্য সংসার যা বড় ভাইরা চালাচ্ছেন তা হলো এই মসজিদ, মক্তব, খানকা, মাদরাসা, ওয়াজ নসিহত, তাসনিফাত।
.
আর আমানত পৌঁছে দেয়ার মঞ্জিল হলঃ কেয়ামত পর্যন্ত আনেওয়ালা সমস্ত উম্মত।
.
এই বয়ানের পর দারুল উলুম দেওবন্দে কান্নার রোল পড়ে গিয়েছিল। বড় বড় শায়খুল হাদীস আর শায়েখ গন হাউমাউ করে কাঁদতে থাকলেন।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now