বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন
বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

তমা-তমুর কলবাজি সংসার

"মজার অভিজ্ঞতা" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান মোহাম্মদ শাহজামান শুভ (০ পয়েন্ট)

X লেখকঃ মোহাম্মদ শাহজামান শুভ । অফিসের চেয়ারে বসে তমু একদম বদ্ধ পাগলের মতো টাইপ করছিল। বস বারবার ডেকে বলছে— “রিপোর্টটা আজকেই চাই, আজকেই।” তার মাথায় ঘাম, চোখে ঘুম আর বুকের ভেতর ধপধপ করা চিন্তা— “এই মাইক্রোসফট এক্সেল আসলে একধরনের গোপন শত্রু, মানুষের মাথার রক্ত শুকানোর জন্যই বানানো হয়েছে।” ঠিক তখনই টেবিলের উপর মোবাইলটা নাচতে শুরু করলো। স্ক্রিনে স্পষ্ট লেখা— তমা কলিং। তমু গভীর নিঃশ্বাস ফেলে ভাবলো, “এখনই কল আসতে হবে? মাত্র পাঁচ মিনিট আগে তো ফোনে তরকারিতে কতটুকু লবণ দিতে হবে সেই গোপন রহস্য উন্মোচিত হলো। এবার আবার কী? হয়তো মরিচের পরিমাণ।” ফোন কেটে দিলো। মনে হলো, এবার নিশ্চিন্তে কাজ হবে। কিন্তু না, ফোন আবার বেজে উঠলো। তমু আবার কেটে দিলো। তারপর একবার, তারপর আরেকবার। শেষে বিরক্ত হয়ে মোবাইলটাই সুইচড অফ করে ফেললো। মনে হলো, এটাই তার জীবনের সবচেয়ে শান্তির মুহূর্ত। কীবোর্ডে আবার হাত দিলো, অংক মেলাতে লাগলো। কিন্তু এই শান্তি ঠিক বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। অফিসের গেটম্যান মতি ভাই এসে হাজির। “স্যার, মেডাম ফোন দিছে। লন কথা কন।” তমুর মনে হলো তার বুকের মধ্যে একটা হাতি বসে পড়েছে। “মতি ভাই, মেডামকে বলেন আমি মরুভূমিতে আছি। এখানে নেটওয়ার্ক নাই।” কিন্তু না, মতি ভাই ফোনটা কান পর্যন্ত ঠেলে দিলো। “তুমি ফোন ধরো না কেন? ফোন সুইচড অফ কেন? তুমি কোথায়? কার সাথে আছো? এক্ষুনি বাসায় আসো, আমি রান্না করছি, একসাথে খাবো।” তমু রোবটের মতো জবাব দিলো— “তমা, তুমি খেয়ে নাও, আমার আসতে দেরি হবে। আর মতি ভাইকে কল দিও না।” ফোন কেটে দিলো। অথচ আবার সেই ননস্টপ কল। অফিসে সহকর্মী রাশেদ পাশ থেকে বললো— “ভাই, আপনার স্ত্রীকে টেলিটক নেটওয়ার্কে চাকরি দেয়া উচিত ছিল। প্রতিদিন অন্তত পঞ্চাশটা কল ফ্রি দিতে পারতো।” অন্য সহকর্মী নীলা হেসে বললো— “আসলে বউ যত বেশি কল দেয়, তত বেশি ভালোবাসে। তুমি ভাগ্যবান।” তমু ফিসফিস করে বললো— “আমার ভাগ্য যে বৌ-ফোন কোম্পানির প্যাকেজে বাঁধা।” অবশেষে ক্ষেপে উঠে ব্যাগ গুছালো। ভাবলো, আজই এই রহস্যের সমাধান করতে হবে। বাসায় গিয়ে দরজায় বেল দিলো। দরজা খুলছে না। মোবাইল দিয়ে কল দিলো, তারপর দরজা খুললো তমা। দরজা খোলার সাথে সাথেই তমুর ভেতরে জমে থাকা আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরিত হলো। “এই মেয়ে, তোমার কি সমস্যা? আমাকে মানুষ মনে হয় না তোমার? সারাদিন খাওয়া-ঘুম-সিরিয়াল নিয়ে পড়ে থাকো। বুঝোই না আমি কত খেটে খাই। দিন দিন হাতির মতো হচ্ছো, মাথায় ঘিলু নাই কেন?” তমা চোখে পানি নিয়ে ফিসফিস করে বললো— “সরি, আমি অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, তাই দরজা খুলতে দেরি হলো।” চোখ দিয়ে টলমল পানি গড়িয়ে পড়লো, সে চুপচাপ রুমে চলে গেলো। তমু তখনও নিজের মনে বিড়বিড় করছে— “মেয়েটার নাটকীয়তা সিনেমাকেও হার মানাবে।” ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হলো, দেখে তমা ব্যাগ গুছিয়ে রেডি। “কোথায় যাচ্ছো?” “জাহান্নামে। আমি সরি, আর ডিস্টার্ব করবো না। তোমার ফেভারিট ডিশ রান্না করেছিলাম, শখ করে তাই একটু এক্সাইটেড ছিলাম। ক্ষমা করে দিও।” তমুর বুক কেঁপে উঠলো। সে দৌড়ে গিয়ে ব্যাগ কেড়ে নিলো। “তমা, তুমি কোথাও যাবে না। জাহান্নামে গেলে আমিও টিকেট কাটবো। তুমি আমার হাতি নও, রাজহাঁসী। তুমি না থাকলে আমার পৃথিবী ফাঁকা। আমি রাগে যা বলেছি সব বাতিল।” তমার ঠোঁটে একচিলতে হাসি ফুটলো, তবে চোখে এখনও পানি। ডাইনিং টেবিলে বসলো দুজন। ভাত, চিকেন রোস্ট, ডাল আর আলুভাজি সাজানো। ধোঁয়া ওঠা খাবারের ঘ্রাণে তমুর মন ভিজে গেলো। খেতে খেতে তমু মজা করে বললো— “তুমি যদি ফোন না করে রান্না করতে, আমি হয়তো অফিসে বসেই খিচুড়ি মাখতাম।” তমা ঠোঁট ফুলিয়ে বললো— “ফোন করলে সমস্যা, না করলে আবার বলবা আমি ভালোবাসি না।” ঠিক তখন পাশের ফ্ল্যাটের খালা জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে বললেন— “ও মা! ঝগড়া করলা নাকি? আমি তো কিছুক্ষণ আগে গর্জন শুনলাম।” তমু হেসে বললো— “না খালা, আসলে আমরা নাটক রিহার্সাল করছিলাম।” খালা হেসে বললেন— “ঠিক আছে, তবে নাটক শেষে একটু ভাত-ডাল পাঠায়ো।” সবাই হেসে উঠলো। রাতের খাবার শেষে তমা হঠাৎ বললো— “আমি যদি সত্যিই জাহান্নামে যাই?” তমু গম্ভীর মুখে বললো— “তাহলে আমি জান্নাতেও যাইবো না। তোমার ছাড়া আমার জান্নাতও জাহান্নাম।” ঘরে আবার হাসির ঢেউ উঠলো। সেদিন থেকে তমা আর ফোন দেয় দিনে বিশবার, আগে হতো দিনে পঞ্চাশবার। আর তমু আর কখনো ফোন কেটে দেয় না। কারণ এখন সে জানে, প্রতিটা কলের ভেতরে লুকিয়ে আছে তমার ভালোবাসা, তার ন্যাকামি, আর টুকটাক আদিখ্যেতার মিষ্টি ঝালমুড়ি। তাদের সংসারটা হয়ে উঠলো রোজকার “রসের কল”— কখনো মিষ্টি, কখনো ঝাল, কখনো নোনতা। কিন্তু শেষে সবসময়ই উপভোগ্য।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৬ জন


এ জাতীয় গল্প

→ তমা-তমুর কলবাজি সংসার

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now