বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন
বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

শ্রাবণের বৃষ্টি

"রোম্যান্টিক" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান FahMiDa SulTaNa (OboNti ) (০ পয়েন্ট)

X [শ্রাবণের বৃষ্টি] শ্রাবণের বিকেল। তবে আকাশে মেঘের ঘনঘটা নেই। নবনী আয়নায় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নিজের চেহারা দেখছে। জানালার পাশে বসে নিলয় একটা বই পড়ছে। অনেকক্ষণ ধরে বই পড়ছে বলে হয়তো চোখটা কেমন জানি ঝাপসা হয়ে এসেছে। হঠাৎ সে খেয়াল করল নবনী সাজুগুজু করছে কিন্তু বুঝতে পারছে না হঠাৎ সাজুগুজু করার কারনটা কি। ভ্রু কুচকিয়ে নিলয় তাকিয়ে আছে নবনীর দিকে। নিলয় আর নবনীর বিয়ে হয়েছে প্রায় দেড় বছর। বিয়েটা Love marriage না Arrange Marriage. তবুও এদের মধ্য ভালোবাসার কমতি নেই। নবনী নিলয়ের ভ্রু কুঁচকানো দেখেই বুঝতে পেরেছে নিলয় তার সাজুগুজু করার কারনটা বুঝতে পারছে না। চোখে চোখ পরতেই নিলয় প্রশ্নটা করেই বসল.. --- নবনী হঠাৎ এতো সেজেছো যে? --- I am sorry. আসলে তোমাকে বলা হয় নি। আজকে আমার এক ছোটবেলার বান্ধবীর সাথে দেখা করতে যাব। তুমি যাবে আমার সাথে? --- নাহ থাক। আজকে আমি অনেক টায়ার্ড। তুমি যাও। আসলে নিলয় নবনীর সাথে যেতে চাইছে না অন্য কারনে। নিলয় ছোটবেলা থেকেই বেশ লাজুক। বিশেষ করে মেয়েদের ব্যাপারে। নবনী নিলয়কে বুঝতে পেরেছে তাই সে আর জোড় করল না। ---নবনী.. --হুম। --- তুমি জানো? তোমার চোখগুলা অনেক সুন্দর। মাঝে মাঝে হারিয়ে যাই তোমার চোখের গভীরতায়। --- হা হা। তুমি না মাঝে মাঝে বাচ্চাদের মতো কথা বলো। নবনীর সাজগোজ শেষ। নিলয়ের মনে হচ্ছে আজকে সে অন্য এক নবনীকে দেখছে।নবনীকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে। নিলয়ের চোখ ফেরাতে ইচ্ছে করছে না। নবনী আজকে নীল একটা শাড়ি পরেছে আর সাথে কালো ব্লাউজ। হাতে নীল রঙের কাঁচের চুড়ি। কপালে নীল টিপ। চোখে গাঢ় কাজলের ছোঁয়া। আর ঠোঁটে লাল লিপস্টিক।  নিলয় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নবনীর দিকে। নবনীর কথায় তার ভাবনার ছেদ ঘটল। নবনীর মুখে দুষ্টুমির হাঁসির রেখা। --- এই যে মিস্টার কি দেখছেন এভাবে? --- তোমাকে দেখছি...। হা হা --- আমি আসি তাহলে। --- সাবধানে যেও। --- আচ্ছা ঠিক আছে। বিকালটা রৌদ্রজ্জ্বল ছিল কিন্তু সন্ধ্যার একটু আগে আকাশে বেশ মেঘ করল। এরপরেই মুষলধারে বৃষ্টি। রাত নয়টা নবনী বাসার দরজার সামনে দাড়িয়ে। তার সারা শরীর ভিজে গেছে। কলিং বেল চাপছে আর ভাবছে ক্যানো যে ছাতাটা নিয়ে গেল না। কিছুক্ষণ পর নিলয় দরজাটা খুলে দিল। নবনী নিলয়কে দেখে বেশ অবাক হয়েছে। নিলয়কে দেখে মনে হচ্ছে সে একটু আগে বৃষ্টিতে ভিজে এসেছে। --- তুমি ভিজলে কি করে? --- না আসলে হঠাৎ এতো বৃষ্টি দেখে একটু ভিজতে ইচ্ছে করল তাই ছাদে একটু..। আচ্ছা নবনী চা খাবে? ---হুম। --- তুমি তাহলে ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি দিচ্ছি। সে রাত থেকেই নবনীর ভীষণ জ্বর। অসুখটা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সাত দিনের দিন নবনী মারা গেল। সেদিন নিলয় খুব কেঁদেছিল। এভাবেই কেটে গেছে তিনটি বছর। আজকের বিকেলটা নিলয়ের খুব পরিচিত মনে হচ্ছে। শ্রাবণের বিকেল। তবে আকাশটা পরিষ্কার। কিন্তু সন্ধ্যার দিকে প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হলো। নবনীর কথা আজকে খুব মনে পড়ছে। নিলয় চেয়ারটা টেনে টেবিলের সামনে বসল। ভাবছে নবনীকে একটা চিঠি লিখবে। সে জানে নবনী কোনদিন ফিরে আসবে না। তার লেখাগুলোও পড়বে না। তবুও সে লিখতে বসেছে। প্রিয়তমেষু, জানোই তো তুমি আমার দ্বিতীয় স্বত্তা।আলাদা করে কিছু বলছি না।আচ্ছা তুমি বরাবর-ই বেশ অভিমানি জানো সেটা?ইদানীং তুমি ধীরে ধীরে ধূসরে মিলিয়ে যাচ্ছো।আগে মস্তিষ্কের প্রতিটি নিউরনে তুমি থাকতে।প্রতিটা মুহূর্ত মনে হতো তুমি পাশেই আছো।যাকগে সেসব কথা।তোমার আদনানের কথা মনে পড়ে?ঐযে যে ছেলেটা ভালো কবিতা লিখতো।তোমাকে নিয়েও তো একটা কবিতা লিখেছিলো।কালকে আদনানের সুসাইড নোটটা পড়লাম।ভাঙা ভাঙা অক্ষরে লেখা ছিলো,"প্রতারকের দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে না পারার ব্যার্থতা।"ভয় পেয়ো না,তোমাকে আমি প্রতারক বলছি না।কারণ আমি তো বেঁচে-ই আছি।এই গ্রাফিতির শহরে নিজেকে স্থাবর মনে হয়।এখন গলির মুখে তোমাকে রিকশার হুডের আড়ালে দেখা যায় না।ব্যাস্ত নগরের কোলাহলে তুমিও হারিয়ে যাচ্ছো।আলাদা করে তোমাকে চেনা বড়ই কঠিন।ছাদের কার্ণিশে বেলাশেষে পা ঝুলিয়ে একা একা বসে থাকি।আমার ডানপাশে যেখানে তুমি বসতে সেখানে হু হু করে হাওয়া চলে আসে।বুকভরা শূন্যতা  নিয়ে বসে থাকি,আর দেখি কিভাবে শহরের আলোগুলো ধীরে ধীরে নিভে যায় অদূরে।জালাল সাহেবের বড় কৃষ্ন্ঞচূড়ার গাছটা এখন আগুন ঝড়িয়ে আহ্বান করে।একডাল উজ্জ্বল কৃষ্ন্ঞচূড়া নিয়ে তোমার এপিটাফে(সমাধি ফলক) ফুলগুলো রেখে হাঁটু গেড়ে বসে ছিলাম।বরাবরের মতোই একপাশে শুয়ে ছিলে তুমি।তোমার কড়া পাত্তি দেওয়া চা রমযানের দোকানে এখন ভালো বিক্রি হয়।এই নগরীর প্রতিটি মানুষ তোমার রেসেপির চা খায়,তবে কজনই বা জানে এই কথা।তোমার লাগানো কামিনী ফুল গাছটার ফুলের ঘ্রাণে মনে হয় জাগতিক  তুমি ফিরে এসেছো। ঐদিন বিকেলে তুমি যখন বাসা থেকে বেরিয়ে গেলে ক্যান জানি না সে দিন তোমার পিছু নিয়েছিলাম। তুমি সেদিন আমাকে মিথ্যে বলেছিলে। আসলে সেদিন তুমি তোমার প্রাক্তন প্রেমিকের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলে। আমি তোমাদের থেকে একটু দূরেই দাড়িয়ে ছিলাম। যখন বৃষ্টি শুরু হলো আর দ্যাখলাম তুমি ভিজে যাচ্ছো। তখন ভাবছিলাম ছাতাটা গিয়ে দিয়ে আসি। কিন্তু ভাবনাটা পরক্ষণেই মিলিয়ে গেল। কারন তোমার সামনে দাড়ালে তুমি লজ্জা পাবে।জীবনের এই ঘটনাগুলোই যান্ত্রিক ভাবে বলে যাচ্ছি।একটু বেসুরো তাই নাহ?জোছনা বিলাসে আজ তুমি চা খাওয়ার আহ্বান জানাও না।নাগরিক ব্যাস্ততায় তোমার স্বত্তা খুঁজে ফিরি,নিরাশ হয়ে বসে থাকি আঁধারে।এখন আর আমি ভালো নেই।জীবনটা একটু বেশি-ই ঘটনাবহুল।তোমাকে এখন বেশি মনে পড়ে না।তাহলে কি ভুলে যাচ্ছি তোমাকে? আচ্ছা একটা কথা বলো তো,মৃত্যু কি অনিকেত প্রান্তর?? ইতি, একজন বোকা মানুষ। নিলয় ডায়েরীটা টেবিলে রেখে দিল। ঘড়িতে দেখল ঠিক রাত ন' টা। বৃষ্টিটা একটু কমেছে। এমন সময় বাইরে কলিং বেলে শব্দ। ---কে? ---আমি অবন্তী দরজা খুলো তো। উফ একদম ভিজে গেছি। আমাদের মেয়ে কি ঘুমিয়ে পরেছে?? ---হ্যাঁ একটু আগেই ঘুমিয়ে পড়ল। তোমার বান্ধবীর সাথে দেখা হলো? --- হ্যাঁ হয়েছে। কতো করে বললাম চলো আমার সঙ্গে। কিন্তু বাসায় রয়ে গেলে। নিলয় কোন উত্তর দিচ্ছে না। চুপ করে বসে আছে। আর ভাবছে জীবনে ঘটনাগুলা বার বার ফিরে আসে অন্যকোন সময়ে এক ভিন্ন রুপে। তবে এবার অবন্তী মারা যাবে না। নিলয়ে ঠোটের কোণে মৃদু হাসির রেখা স্পষ্ট।  --- অবন্তী চা খাবে? [ সমাপ্ত]


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২০৯৭০ জন


এ জাতীয় গল্প

→ শ্রাবণের বৃষ্টি

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now