বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন
বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

শাঁখটিয়ার আতঙ্ক

"ভূতুড়ে অভিজ্ঞতা" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিয়েন সরকার (০ পয়েন্ট)

X শাঁখটিয়ার আতঙ্ক" ----------------------- লেখক : ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায় ----------------------------- বর্ধমান জেলার রায়না থানার অন্তর্গত বেড়ুল গ্রামের গুহ পরিবারের একটি ছেলেকে নিয়ে এই গল্প। ছেলেটির নাম তারাপদ। তখন চৈত্রের শেষ। গ্রামবাংলা তখন মেতে উঠেছে চড়ক আর গাজনের মেলায়। কোথাও হরিবাসর হচ্ছে, আবার কোথাও বা যাত্রাগান। তা এইরকম সময়ে তারাপদ গিয়েছিল যাত্রা দেখতে। যাত্রা শেষ হতে অনেক রাত হয়ে গেল। তখন ওরা সবাই দলবেঁধে বাড়ির পথে পা বাড়াল। এমন সময় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে রয়ে গেল তারাপদ। ওর দলের সঙ্গীসাথীরা বলল, " তোমায় এই রাতবিরেতে একা ফেলে রেখে যাই কি করে আমরা? তার চেয়ে তুমি বরং তাড়াতাড়ি সেরে এসো, আমরা অপেক্ষায় থাকি। " তারাপদ বরাবরই ডাকাবুকো। সে বলল, " কোনও প্রয়োজন নেই। গ্রামের কাছাকাছি যখন এসে গেছি, তখন আর অপেক্ষা করা কেন? চোর ডাকাতের ভয় করি না। কি আর আছে আমার যে নেবে?" ওর সঙ্গীরা বলল, " না, ঠিক তা নয়। আসলে রাতবিরেতের ব্যাপার তো! যদি অন্য কিছু, মানে ঐসবের একটু আতঙ্ক আছে এই গাঁয়ে।" তারাপদ ব্যঙ্গভরে বলল, " ভূতপ্রেতের কথা বলছ? ওসবে আমার ভয়ও নেই, বিশ্বাসও নেই। থাকলেও ওরা আমার কিছুই করতে পারবে না। " সবাই জানত, তারাপদ সাহসী ছেলে। তাই বলল, "আমরা তাহলে যাই?" " স্বচ্ছন্দে।" ওরা চলে গেল। তারাপদ নিশ্চিন্তে মাঠে প্রাকৃতিক কাজ সেরে পাশের বড় পুকুরে গিয়ে নামল। পুকুরটা শাঁখটিয়ার মধ্যে পড়ে। মাছে ভর্তি এই পুকুর। বড় বড় রুই, কাতলা আর কালবোসে ভর্তি এই পুকুর আর এই পুকুরের মাছের স্বাদও খুব। তারাপদ যখন পুকুরে নামল তখনই দেখল মস্ত একটা মাছ ঘাই মারল পুকুরের জলে। পুকুরের চারধারে আম আর বাঁশবন। জলে কি মাছ ঘাই মারল, ঠিক বুঝতে পারল না তারাপদ, তবে অনুমানে বুঝল, আট দশ কেজি ওজনের বড় কাতলা হবে। মাছটা আবারও ঘাই দিল। এবারও একেবারে ডাঙার কাছাকাছি। তারপর আরও একটা ঘাই দিয়ে পিছলে ওর ঘা ঘেঁষে চলে গেল। তারাপদ পুকুরের জলে হাত মুখ ধুয়ে ওঁত পেতে রইল মাছটাকে ধরার জন্য। আজ সে এই মাছটা নিয়ে যাবেই। এই পুকুরের একটা মাছও ধরতে পারলে খাওয়াটা যা হবে না! মাছ যদি জলে থাকে, তাহলে সেটাকে হাত দিয়ে ধরতে যাওয়া বোকামি ছাড়া কিছু নয়। তবু তারাপদ দাপাদাপি শুরু করল। ফলে যা হবার তাই হল। মাছটা হঠাৎ ঘাই মেরে ডাঙায় উঠে ছটফট করতেই তারাপদ লাফিয়ে পড়ল সেটার ওপর। ঠিক তখনই একজোড়া টর্চের আলোর মতো আলো এসে পড়ল তার ওপর। তারাপদর মুখ শুকিয়ে গেল। নিশ্চয় যাদের পুকুর তাদের কেউ এসে পড়েছে। তবু ভাল করে চারদিক তাকিয়ে দেখল তারাপদ। না, কেউ কোথাও নেই। শুধু দেখা গেল, একটা গরু ঘাটের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে একভাবে তার দিকে তাকিয়ে আছে। অন্ধকারে গোরুটার চোখদুটো যেন জ্বলছে। এই দেখে নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারল না তারাপদ। এমনও হয়? অন্ধকারে চতুষ্পদ জন্তুদের চোখ জ্বলে ঠিকই, কিন্তু এইভাবে? যাই হোক, তারাপদ কোনওভাবেই সেই মাছটাকে নিয়ে ঘাটের সিঁড়ি বেয়ে যখন উঠে আসতে পারল না, তখন বাধ্য হয়েই আঘাটায় উঠতে গেল। এবার আরও ভয়ঙ্কর দৃশ্য। ও দেখল, একটা কুকুর অগ্নিদৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে এগিয়ে আসছে এক পা, এক পা করে। কুকুরটার চোখদুটো থেকে নানা বর্ণের আলো ঠিকরে বেরিয়ে এসে অন্ধকারে বিচিত্র রঙের খেলা খেলে হারিয়ে যাচ্ছে। তারাপদর বুক কেঁপে ওঠে। সে যত ডাঙায় ওঠার চেষ্টা করে, কুকুরও তত এগিয়ে আসে। ভাবটা এমন যেন, ডাঙায় উঠলেই ছিঁড়ে ফেলব একেবারে। তারাপদ এতেও দমল না। সে এবার পুকুরের অন্যদিক দিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু কি জ্বালা! এখানে দাঁড়িয়ে আছে একটা কালো বেড়াল। তার চোখের অবস্থাও একইরকম। তবু তারাপদ মাছটাকে বুকে নিয়ে বাঁশবনের দিক দিয়ে উঠতে গেল, সেখানে দেখল, একটা শেয়াল দাঁড়িয়ে আছে। সেটা তারাপদকে দেখে হুক্কা হুয়া, হুক্কা হুয়া' করে ডেকে উঠতেই তার মুখ দিয়ে আগুনের হল্কা ছুটতে লাগল। তারাপদ জানে, এগুলো উল্কামুখী শেয়াল। তারাপদ এবার নির্ভয়ে ডাঙায় উঠল। একহাতে মাছটাকে বুকে আঁকড়ে ধরে অন্য হাত দিয়ে একটা ইঁটের ঢেলা ছুঁড়ে মারল শেয়ালটাকে লক্ষ্য করে। যেই না মারা, শেয়ালটা ' খ্যা খ্যা' করে মানুষের গলায় হেসে সেখান থেকে পালিয়ে গেল। কিন্তু এই বাঁশবন তারাপদ পার হবে কি করে? ওর মনে হতে লাগল, কারা যেন বাঁশবনের ভেতর ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওর কানের পাশ দিয়ে সোঁ সোঁ করে বাতাস বয়ে যাচ্ছে। এবার দারুণ ভয় পেয়ে গেল তারাপদ। ও বুঝল, যা সে এতদিন ধরে অবিশ্বাস করে এসেছে, তা এখন বিশ্বাস করা ছাড়া উপায় নেই। আজ সে সত্যিই ভূতের পাল্লায় পড়েছে। যখন মনের অবস্থা এইরকম, তখন দেখা গেল, একজন লোক লণ্ঠন হাতে বাঁশবনের ভেতর দিয়ে চলেছেন। কিন্তু এই রাতে বাঁশবনের ভেতর কেন? ওঁর কি ভূতের ভয় নেই? অথবা সাপখোপের? তারাপদ চেঁচিয়ে ডাকল, " ও মশাই, শুনছেন?" মানুষটি কোনও সাড়াশব্দ না দিয়েই চলতে লাগলেন। কালা নাকি? সে হোক, তবু একজন চলমান মানুষ তো। তারাপদ দৌড়ে গিয়ে ধরে ফেলল তাঁকে। তারাপদ কাছে গিয়ে বলল, " আমি আনগুনোতে গিয়েছিলাম যাত্রা শুনতে। ফেরার সময় পথে প্রকৃতির ডাকে আটকা পড়ে ভূতের খপ্পরে পড়ে যাই। আমায় দয়া করে বাঁশবনটা একটু পার করে দেবেন?" মানুষটি হ্যাঁ বা না কিছুই বললেন না। এমনকি ফিরেও চাইলেন না। একভাবে পথ চলতে লাগলেন। বাঁশবন আর শেষ হয় না। পথও আর ফুরায় না। তারাপদর অবস্থা তখন শোচনীয়। হঠাৎ সে দেখল, তার বুকে যেটা আঁকড়ে ধরা, সেটা মাছ নয়, মাছের কঙ্কাল। আঁতকে উঠে সে কাঁটাসার মাছটাকে ফেলে দিল মাটিতে। মাছটা হঠাৎ তার পূর্বরূপ ফিরে পেয়ে জীবন্ত হয়ে উঠে ঘাই মেরে শূন্যে লাফ দিয়ে উঠে পুকুরের জলে গিয়ে পড়ল। এইসময়ই তারাপদ খেয়াল করল, এতক্ষণ ধরে হেঁটেও সে পুকুরের ধারেই দাঁড়িয়ে আছে। মাছটা জলে পড়তেই চলমান লোকটি হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে হাতের লন্ঠনটা পুকুরের দিকে তুলে ধরে, সেদিকে তাকিয়ে বলল, " যা, বেঁচে গেল ওটা।" লন্ঠনের আলোয় লোকটির মুখের ওপর ভাল করে নজর করতেই তারাপদর অবস্থা আরও শোচনীয় হল। ওর শিরদাঁড়া বেয়ে বরফঠান্ডা স্রোত নেমে গেল। কোনওরকমে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, " একি সিধুজ্যেঠু, আপনি!" " চিনতে পেরেছিস তাহলে?", লোকটি মানে সিধুজ্যেঠু বললেন। "আ...আ... আপনি এখানে কেন?" " এখানে ছাড়া কোথায় থাকব বল?এই বাঁশবাগানেই তো আমায় সাপে কেটেছিল। বাঁশবাগানের পাশের খালধারেই তো পোড়ান হয়েছিল আমায়। সেই থেকেই এখানে আছি।" তারাপদ তখন প্রাণের দায়ে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটছে। বাঁশবন পার হয়ে সে পীরবাবার থানের কাছে চলে এল। অনেক আগে এখানে এক বৃদ্ধ ফকির থাকতেন। এখন তিনি নেই। তবে ভগ্ন স্থানটুকু রয়েছে। কিছু পোড়ামাটির ঘোড়া আরও কিছু রয়েছে। তারাপদ সেখানে এসে হাঁফাতে লাগল। এদিকে পুকুরঘাটের সেই গরু, কুকুর, বিড়াল আর উল্কামুখী শেয়ালটা ওর পিছু পিছু দৌড়ে এসেছে, ওকে তাড়া করে। তারা শরীর ছোটবড় করে, চোখের মণিতে নানারকম রঙের খেলা দেখিয়ে তাকে ভয় দেখাতে লাগল। তারাপদ বুঝল, এদের হাত থেকে আজ ওর নিস্তার নেই। তাই সে কাতরভাবে ফকিরবাবার থানে মাথা কুটে কাতরভাবে বলল, " হে ফকিরবাবা, আমায় এই ভীষণ বিপদ থেকে রক্ষা কর। তুমি ছাড়া আমায় এখন এই প্রেতের কবল থেকে আর কেউ রক্ষা করতে পারবে না, বাবা গো। আমার শত অপরাধ ক্ষমা করো বাবা, আমায় তুমি বাঁচাও।" বলার সঙ্গে সঙ্গে একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটল। সেই গোরু, কুকুর, বেড়াল আর শেয়ালটা হঠাৎ প্রচণ্ড ভয় পেয়ে, কুঁকড়ে গিয়ে পিছু হটতে লাগল। তাদের চোখ দেখে মনে হল, তারা যেন অদৃশ্য কাউকে দেখেছে। কোথায় উবে গেল তাদের গর্জানি। পিছু হটতে হটতে তারা একেবারে দৃষ্টির আড়ালে চলে গেল। অদৃশ্যলোক থেকে কে যেন তারাপদকে বলল, " যা চলে যা। আর ভয় নেই।" অতি কষ্টে সাহস সঞ্চয় করে উঠে দাঁড়াল তারাপদ। ভয়ে ভয়ে সেই অদৃশ্য কন্ঠকে জিজ্ঞেস করল, " আপনি কে?" " যা বলছি", আবার ভেসে এল সেই কণ্ঠস্বর। ততক্ষণে ভোরের আলো ফুটেছে। ধীরেসুস্থে ঘরে ফিরে এল বিপদমুক্ত তারাপদ। তবে সেই থেকে সে আর কখনো রাতদুপুরে শাঁখটিয়া দিয়ে যাওয়া আসার চেষ্টা করে নি। copied :


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২০৯৮২ জন


এ জাতীয় গল্প

→ শাঁখটিয়ার আতঙ্ক

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now