বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
"শ্যাডো অব দ্য ওয়্যারউলফ"
লেখক : গাই. এন. ক্রিস্টি
অনুবাদ : অনীশ দাস অপু
-------------------------
পর্ব ১৪
" আমার আনা এই বইগুলোতে তার ব্যাখ্যা কিছুটা পাবে", শেরিল বলল, " বইগুলোর সাথে খবরের কাগজের ক্লিপিং এর একটা খাতাও রয়েছে। ওগুলো পড়লেই তুমি কিছুটা বুঝতে পারবে। আমি ওয়্যারউলফের অস্তিত্ব বিশ্বাস করি। "
ক্যারেন উৎসাহিত হয়ে বলল, " শেরিল, তুমি ওয়্যারউলফ সম্পর্কে যা জান, আমায় বল। আচ্ছা, ওরা কি ভ্যাম্পায়ারের মতো হয়? রক্ত শুষে খায়? কিভাবে ওদের আটকানো যায়? জানলায় ক্রুশ ঝুলিয়ে দিলে কি ঠেকানো যায় ওদের আসা?"
"না", মাথা নাড়ল শেরিল। বলল, " দুটো জিনিসে ওদের বধ করা যায়।"
" কি কি?"
" আগুন আর রূপোর বুলেট। শুধুমাত্র এই দুটো জিনিসেই ওদের বধ করা সম্ভব। "
" জানো শেরিল", হতাশ গলায় বলল ক্যারেন, " গত কয়েকদিন ধরে আশেপাশে যা সব দেখছি, ভয় পেয়ে যাচ্ছি আমি। হয়ত আমি খুব বেশী কল্পনা করছি।"
" উঁহু, খুব বেশী কল্পনা করছ না তুমি, ক্যারেন"।
" আচ্ছা, ওয়্যারউলফরা কি শুধুমাত্র জ্যোৎস্না আর পূর্ণিমার রাতেই আত্মপ্রকাশ করে?"
" না, তার কোনও ঠিক নেই। তবে দিনের সূর্যের আলোয় ওরা কিছুই করতে পারে না। সূর্যাস্তের পরই কেবলমাত্র ওরা রূপান্তরিত হতে পারে।"
এরপর ওরা বই ঘেঁটে ওয়্যারউলফ সম্পর্কে নানা তথ্য বের করতে লাগল। পৃথিবীর কোথায় কোথায় ওয়্যারউলফ দেখা গেছে, এদের অতীত, বর্তমান অবস্থা। সর্বশেষ পৃথিবীতে ওয়্যারউলফ দেখা গিয়েছিল ১৯৫৯ সালে।
শেরিল বলল, " আমার মনে হচ্ছে, সেদিন যে তরুন যুগল এসেছিল তোমার এখানে, তারা ফেরার সময় ওয়্যারউলফের পাল্লায় পড়েছিল।"
" বলো কি?" আঁৎকে উঠল ক্যারেন।
" কাল তুমি তোমার বাগানে যে নেকড়েটাকে দেখেছো, হতে পারে, ওটাই ওদেরকে নিকেশ করেছে।"
" কিন্তু...."!
" এর মধ্যে আবার 'কিন্তু' র কি দেখলে? " শেরিল ঘন গলায় বলল, " এই বাড়িতে আগে যারা ছিল, তারা কোথায় বলতে পারো, ক্যারেন?"
" তুমি কি অদ্ভুত কথা বলতে চাইছ, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না, শেরিল।"
" অবিশ্বাস্য লাগছে? কিন্তু আশ্চর্য কি জানো?"
" কি?"
শেরিল বলতে লাগল, " আশ্চর্য এই যে, আমি এতদিন ওয়্যারউলফ নিয়ে কাজ করছি, অথচ আজ পর্যন্ত একদিনও ওয়্যারউলফ দেখতে পেলাম না। তোমায় ভাগ্যবতী বলতে হবে, তুমি ওয়্যারউলফ দেখেছো। "
" ভাগ্য নাকি দূর্ভাগ্য, কে জানে?"
" তা ঠিক। তবে তোমায় জানিয়ে রাখছি, ওয়্যারউলফ যখন আহত হয়, পরদিন তুমি সেই মানুষটার সেই একই অঙ্গে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাবে।"
" তার মানে তুমি বলতে চাইছ, এই গ্রামে এই মূহুর্তে এমন একজন মানুষ রয়েছে, যার একটা কান ছেঁড়া?"
" খোঁজ নিলেই দেখতে পাবে।"
" একটা কান ছেঁড়া মানুষ দেখতে পেলে সেই মূহুর্তে কি করতে হবে শেরিল?"
শেরিল কি বলতে যাচ্ছিল, এই সময় ঘরে এসে ঢুকল ক্রিস। সদ্য ঘুম থেকে উঠেছে। বলল, " এক কাপ কফি দিতে পারো, ক্যারি?"
" নিশ্চয়ই এখুনি দিচ্ছি।"
ক্যারেন উঠতে যাচ্ছিল, পরক্ষণেই কি ভেবে নিয়ে ক্রিস মত পালটে বলল, " থাক এখন দেবার দরকার নেই। বাগান থেকে একটু জগিং করে আসি। জড়তাটা কাটবে।"
" কিন্তু তোমার সঙ্গে যে আমার কয়েকটা দরকার ছিল, ক্রিস", ক্যারেন বলল, " কয়েকটা ব্যাপার জানতে চাই।"
" বাদ দাও ওসব এখন। ভাল্লাগছে না।" ক্রিস বেরিয়ে গেল।
ক্রিস বেরিয়ে গেলে শেরিল বলল, " চল ক্যারেন, আমরা একটু গ্রামটা ঘুরে আসি। কাউকে কানে ব্যান্ডেজ বা টুপিতে ঢাকা কান দেখলেই আমরা তাকে সন্দেহ করব।"
ওরা দুজন বেড়িয়ে পড়ল। একটু দূরে গাড়ি রেখেছে শেরিল। সেই পর্যন্ত যেতে যেতে কোথাও ক্রিসকে দেখতে পেল না ক্যারেন। ভাবল, বোধহয় কাছে পিঠেই কোথাও আছে।
ওরা প্রথমে গেল অলিভার্স প্রভিসন স্টোরে। ক্যারেনের প্রথম সন্দেহ মার্সিয়া আর তার স্বামী উইলিয়াম অলিভারকে।
হাসিমুখে ওদের অভ্যর্থনা জানাল মার্সিয়া। না, মার্সিয়ার কানে ব্যান্ডেজ নেই। তবে আজ দোকানে ওর স্বামী উইলিয়াম অলিভারকে কোথাও দেখল না ক্যারেন।
ক্যারেন মার্সিয়ার সাথে শেরিলের পরিচয় করিয়ে দিল।
" কিছু লাগবে না ফোন করবে ক্যারি?" মার্সিয়া জানতে চাইল।
" না, ফোন করব না। আমায় কার্স্টার্ড এক প্যাকেট, কর্নফ্লাওয়ার, ছটা ডিম, এক পাউন্ড চিনি আর হাফ প্যাকেট হাফ ওনিয়ন দাও।"
মার্সিয়া জিনিসগুলো একটা বড় প্যাকেটে গুছিয়ে দিল। দাম চুকোনর সময় ক্যারেন জিজ্ঞেস করল, " তোমার হাজব্যাণ্ডকে দেখছি না যে আজ দোকানে?"
" আর বোল না। ঘরে শুয়ে আছে।"
" কেন কি হয়েছে?" গলায় উদ্বেগ ঢেলে জানতে চাইল ক্যারেন।
" মাইগ্রেন। মাথায় দারুণ যন্ত্রণা। বছরে দুইবার এই জিনিসটা হয়। একেবারে কাবু করে ফেলে বেচারাকে।"
ক্যারেন ভাবল, 'মাথার যন্ত্রণা না আরও কিছু! কানটি হারিয়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে লুকিয়ে আছে। বছরে তার মানে বার দুই ওয়্যারউলফ হন ভদ্রলোক।' মনে মনে দারুণ উত্তেজনা অনুভব করল ক্যারেন। কিন্তু চেহারায় তার প্রকাশ হতে দিল না। মুখে সহানুভূতির ভাব ফুটিয়ে বলল, " তবে তো উনি খুবই কষ্ট পাচ্ছেন। দোয়া করি যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠেন।"
দোকান থেকে বেরিয়ে এল ওরা। গাড়িতে উঠতে উঠতে শেরিলকে জিজ্ঞেস করল, " কি মনে হচ্ছে?"
" বলতে পারছি না", শেরিল বলল, " তবে একজন সাসপেক্ট তো বটেই। কিন্তু এভাবে তো আসল লোককে খুঁজে বের করা যায় না। দেখি......"
ক্যারেন হঠাৎ বলে উঠল, " ওহো, তোমায় বলতে ভুলে গিয়েছি। এই গ্রামে একজন ডাক্তার আছেন। ডাঃ গোয়েজ। লোকে আহত হলে ওনার কাছেই যায়। ভালো ডাক্তার।"
" কোন ডাক্তার? যে তোমায় সুস্থ করে তুলেছিল?"
" হ্যাঁ। চল, একবার তাঁর ওখানে ঢুঁ মেরে আসি।"
চেম্বারেই ছিলেন ডাঃ গোয়েজ। শেরিল আর ক্যারেনকে দেখে হেসে বললেন, " কি খবর মিসেস হ্যালোরান? শরীর তো সুস্থই আছে দেখছি? আমার ওষুধে তাহলে কাজ হয়েছে?"
" নিশ্চয়ই, তবে আজ কিন্তু চিকিৎসার জন্য আসিনি। একটা খবর জানতে এসেছি।"
" বলুন। "
" আপনার সময় নষ্ট করছি না তো?"
" না, না। বলুন। "
" অলিভার্স প্রভিসন স্টোরের উইলিয়াম অলিভার কি গত রাতে বা আজ সকালে আপনার কাছে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন? "
হাসলেন ডাক্তার। " গোয়েন্দাগিরি করছেন? তা না হলে প্রশ্নটা মার্সিয়াকে বা উইলিয়ামকে না জিজ্ঞেস করে আমার কাছে কেন করতে এসেছেন?"
" ওদের জিজ্ঞেস করতে অসুবিধে আছে।"
" কিসের অসুবিধে? "
এ কথায় ক্যারেন আর শেরিল দুজনে মুখ চাওয়াচাওয়ি করল। ঢিল ছুঁড়ে দিয়েছেন ডাক্তার, এখন ফেরাবে কি করে!
ডাক্তার এবার হাসলেন। রহস্যময় হাসি। বললেন, " উইলিয়াম অলিভার মাঝে মাঝে মাথার যন্ত্রণায় ভোগেন। তবে এজন্য উনি গত তিন-চারদিনেও আমার এখানে আসেননি। এবার বলুন, আপনি এই প্রশ্ন আমায় কেন জিজ্ঞেস করতে এসেছেন?"
ক্যারেন তখন টাইগারের কাহিনী থেকে শুরু করে গতরাত পর্যন্ত যা কিছু ঘটেছে সব খুলে বলল ডাক্তারকে। শেরিল যোগ করল এসপেন সম্পর্কে কিছু তথ্য। সুযোগ পেয়ে ওয়্যারউলফ সম্পর্কে নিজের জ্ঞান ভান্ডারও খুলে দিল ডাক্তারের কাছে।
ডাঃ গোয়েজ সব মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। তারপর বললেন, " কিন্তু আপনাদের ধারণা ভুল। উইলিয়াম সত্যিই মাইগ্রেনে ভোগে। বছরে দুইবার এই রোগ ওকে একেবারে শয্যাশায়ী করে ফেলে। আপনার গুলিতে ওর কান কাটা পড়েনি।"
" মাথা বা কানের চিকিৎসা করাতে আপনার কাছে আর কেউ এসেছিল?" ক্যারেন প্রশ্ন করল।
" না।"
হতাশ ক্যারেন এবার মরিয়া হয়ে বলল, " আমার কথা কি আপনার কাছে অবিশ্বাস্য লাগছে, ডাঃ গোয়েজ? নাকি ভাবছেন, আমার মাথার গোলমাল হয়েছে?"
" না, তা ভাবছি না", ডাঃ গোয়েজ বললেন, " এসপেনে সত্যিই রহস্যময় অনেক কিছুই ঘটে থাকে। দশ বছর আছি এই গ্রামে। এখানকার প্রত্যেককে চিনি। এদের অনেকের গোপন খবরও জানি। কিন্তু মাঝে মাঝে এখানে এমন সব ঘটনা ঘটতে দেখেছি, যেগুলোর আমিও কোনও ব্যাখ্যা খুঁজে পাইনি। মিস শেরিল থমাস যে ঘটনাগুলোর কথা বললেন, সেইসব রহস্যময় মৃত্যু বা নিরুদ্দেশের কিনারা হয়ত করতে পারতাম কিন্তু করিনি। কারণ, এসবের সঙ্গে আমি নিজেকে জড়াতে চাইনি। কিন্তু আমারও বিশ্বাস, এই গ্রামে রহস্যময় কিছু একটা আছে।"
" আচ্ছা, ওয়্যারউলফ সম্পর্কে আপনার কি ধারণা, ডাঃ গোয়েজ?" শেরিল প্রশ্ন করল।
এ কথায় গম্ভীর হয়ে গেলেন ডাঃ গোয়েজ। একটু চুপ করে থেকে বললেন, " দেখুন, আমি বিজ্ঞানের ছাত্র। যুক্তি প্রমাণ ছাড়া কিছু বিশ্বাস করি না। কিন্তু মাঝেমাঝে চোখের সামনে এমন সব ঘটনা ঘটতে দেখি, যেগুলোর কোনও ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই। তখনি মনে খটকা লাগে। উড়িয়ে দিতে পারি না।"
" তা হলে আমাদের কথা আপনি একেবারে ফেলে দিচ্ছেন না?" ক্যারেন আর শেরিল প্রায় একসঙ্গে জিজ্ঞেস করল।
ডাঃ গোয়েজ বললেন, " তাই বলে ভাববেন না, আমি এখন আপনাদের সাথে ভৌতিক নেকড়ে খুঁজতে বেরবো। তবে দরকারে অবশ্যই আসতে পারেন। সাহায্য করতে আপত্তি নেই।" হাসতে হাসতে বললেন ডাঃ গোয়েজ।
" ধন্যবাদ ডাক্তার।"
" আচ্ছা, এসব কাহিনী আপনারা এখানকার আর কাউকে বলেছেন?"
" না, " ক্যারেন বলল, " আপনাকেই প্রথম বললাম। প্রমাণ ছাড়া কাউকে কিছু বলতে চাই না আমরা।"
" তাই ভাল।"
" আচ্ছা, ধন্যবাদ। "
ওরা বেড়িয়ে এল।
আস্তে আস্তে গাড়ি চালাচ্ছে শেরিল থমাস। পাশে বসে ইতিউতি দেখছে ক্যারেন।
ক্যাজুরিনার কাছে এসে শেরিলকে থামতে বলল ক্যারেন।
" এই থামো। "
" কেন?"
ক্যারেন বলল, " ঐ যে বারান্দার নীচে টুপি মাথায় একটা লোক দেখছ, ও হল টেবর ইভান্স। এই গ্রামের স্বঘোষিত শেরিফ। "
ভাল করে তাকিয়ে দেখল শেরিল। ব্যাক গিয়ারে গাড়িটাকে পিছিয়ে নিয়ে এল প্রায় বিশগজ।
" এই কি করছ?" ক্যারেন জিজ্ঞেস করল।
" দেখছ না, লোকটার মাথার বাঁ দিকে ব্যান্ডেজ বাঁধা।" ফিসফিস করে বলল শেরিল।
" তাই তো।"
" চলো ডাক্তারের কাছে ফিরে যাই।"
" থাক। বেচারাকে খামোখা বিরক্ত করা হবে। উনি তো বললেনই, কারও চিকিৎসা করেন নি", ক্যারেন চাপা গলায় বলল।
" কিন্তু ওর মাথার বাঁ দিকে ব্যান্ডেজ কেন?" শেরিল চাপা গলায় জিজ্ঞেস করল।
" নিশ্চয়ই....."
" হতে পারে", ক্যারেন বলল, " চলো, লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে।"
" চলো।"
গাড়ি এগিয়ে গেল।
যেতে যেতে ক্যারেন বলল, " এসব কথা ক্রিসকে কি জানানো উচিত হবে শেরিল?"
শেরিল একটু ভেবে বলল, " আমার তো মনে হয় সব জানানোই উচিত।"
" কিন্তু ওর যা মেজাজ হয়েছে গতকাল থেকে!"
" ও কিছু না!" শেরিল বলল, " অমন মেজাজ খারাপ সকলেরই হয় মাঝেমাঝে। "
গাড়ি এসে পৌঁছল ক্যাজুরিনার গেটে।
ক্যারেন বলল, " তুমি গাড়িতেই থাকো শেরিল। আমি ভেতরে গিয়ে দেখছি ক্রিস এসে গেছে কিনা। ও এখনো না ফিরলে আমরা আবার বেরবো। "
বাড়িতে ঢুকে ক্যারেন দেখল, ক্রিস একতাড়া প্রুফ নিয়ে বসেছে। হাতে লম্বা সবুজ পেন্সিল। ক্রিসের হাতে সবুজ পেন্সিল কেন! অবাক হল ক্যারেন। ক্রিস তো সাধারণত কালো পেন্সিলে কাজ করে।
কোনওরকম ভূমিকা না করেই ক্যারেন বলল, " তোমার সঙ্গে জরুরী কথা আছে ক্রিস।"
পেন্সিলটা প্রুফের ওপর ফেলে দিয়ে ভ্রু কোঁচকাল ক্রিস। বলল, " খুবই জরুরী? এখন না বললেই নয়?"
" বেশ জরুরী "।
" তবে বলে ফ্যালো", অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল ক্রিস।
একটু ইতস্তত করল ক্যারেন। ভাবল, যাক বলে ফেলাই ভাল। তারপর বলল, " ক্রিস, তুমি কি জানো, এই গ্রামে একটা ওয়্যারউলফ আছে?"
" ওয়্যারউলফ? মানে পূর্নিমার রাতে নেকড়ে হয়ে মানুষ খায় যারা?"
"হ্যাঁ।"
" বেশ, তাতে আমাদের কি? ওয়্যারউলফের ভয়ে কাজকর্ম সব বন্ধ করে দিয়ে দরজা জানলা বন্ধ করে বাসায় বসে থাকতে হবে নাকি?" তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলল ক্রিস।
" কিন্তু ব্যাপারটা সিরিয়াস ক্রিস! " ক্যারেন বলতে লাগল, " ওয়্যারউলফটা আমাদের টাইগারকে মেরেছে। কাল রাতে আমাদের বাগানে এসেছিল। আমি ওকে গুলি করেছিলাম। তুমি রক্ত আর ছেঁড়া কানও দেখেছ। আর...আর আমার বিশ্বাস এসপেনের সেই শেরিফ টেবর ইভান্স হচ্ছে সেই ওয়্যারউলফ।"
" কি যা তা বলছ? বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নাকি এটা যে অস্বাভাবিক সব ঘটনা ঘটবে!"
" ক্রিস বিশ্বাস কর এই গ্রামে একটা ওয়্যারউলফ আছে।"
ক্রিস আর কিছু বলল না। প্রুফগুলো গুটিয়ে নিয়ে একটা চুরুট ধরিয়ে লম্বা লম্বা টান দিতে লাগল। মেজাজটা গরম হয়ে গেছে তার।
ক্যারেন জিজ্ঞেস করল, " কিছু খেয়েছ ক্রিস?"
" হ্যাঁ। ডিম, স্যান্ডুইচ, কফি। আর শোন ক্যারেন, সব জিনিস গুছিয়ে ফেল। কালই আমরা এখান থেকে চলে যাব। সোজা রিজেন্ট পার্কে।"
" আমি ফিরে যাবার কথা বলছি না। ওয়্যারউলফ রহস্যের কিনারা না হওয়া পর্যন্ত এখানেই থেকে যেতে চাই।"
ক্রিস মাথা নেড়ে বলল, " না, ওসব হবে না। কালই আমরা এখান থেকে স্টার্ট করব। প্যাক আপ।"
ক্রিস পরেছিল শর্টস আর গেঞ্জি। তার ওপর প্যান্ট আর শার্ট চড়িয়ে বলল, " চুরুটের তামাকটা ফুরিয়ে গেছে। আমি একটু আসছি বাইরে থেকে।"
ক্রিস বেরিয়ে গেল।
ক্যারেন বাড়ির গেটে এসে দেখে, শেরিল একমনে নখ কাটছে নেল কাটার দিয়ে। ক্যারেনকে দেখে বলল, " কি ব্যাপার ক্যারি? ক্রিসকে দেখলাম হনহন করে বেরিয়ে গেল! আমার দিকে ফিরে তাকাল না পর্যন্ত!"
ক্যারেনের চোখে পানি এসে গেল। বলল, " আমরা কাল রিজেন্ট পার্ক ফিরে যাচ্ছি, শেরিল।"
" কেন?"
" ওয়্যারউলফের কথা বলতেই ক্রিস খেপে গেল। কোনও কথাই শুনল না। কি করি বল তো?"
শেরিল বলল, " কি আর করবে? চটিও না ওকে। ফিরে যেতে চাইলে যাও। আমি এখানে একাই কাজ চালিয়ে নেব।"
গাড়ি থেকে নেমে ক্যারেনের কাঁধে হাত রাখল শেরিল। বলল, " বোধহয় তোমাদের ডাক্তারের প্রেমে পড়ে গেছি।"
" উঁহু....সুখবর! "
" উঁহু, সুখবর এখনো নয়। একতরফা চলছে। আজ যাই তাহলে?"
শেরিল থমাস ক্যারেনকে জড়িয়ে ধরে গাঢ় করে চুমু খেল প্রেমিকের মতো। তারপর গাড়িতে উঠে হাত নেড়ে চলে গেল। যতক্ষণ গাড়িটা দেখা গেল, ক্যারেন তাকিয়েই রইল সেদিকে।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে ক্রিস হ্যালোরান হেঁটে চলল হনহন করে। উদভ্রান্তের মতো। লক্ষ্যহীন ভাবে হেঁটে চলেছে সে। লক্ষ্যহীন ভাবে হাঁটতে হাঁটতে সে চলে এল জায়গামতো।
সূর্য হেলে পড়েছে পশ্চিমে। পথের দুপাশের গাছের পাতার ঘন ছায়ায় আবৃত পথ। পাখির গান। উদাস হাওয়া।
কিছুদূর এই পথে হাঁটার পর ক্যারেনের ওপর থেকে রাগ পড়ে গেল ক্রিসের। না, এইভাবে ক্যারেনের ওপর রাগ দেখানোটা তার ঠিক হয়নি। ক্যারেনের মন শান্ত করতেই তার এখানে আসা। কিন্তু কি সব আজগুবি কথা বলছে ক্যারেন? কি? ওয়্যারউলফ? নেকড়ের কান্না শুনছে প্রতি রাতে? কাজের সময় এসব কথা ভাল লাগে না ক্রিসের।
তবু ভাল লিন্ডার মতো একটা মেয়ে আছে এই গন্ডগ্রামে। যার সঙ্গ উপভোগ করে ক্রিস। কাল যে ওরা চলে যাচ্ছে, সেটা লিন্ডাকে জানান দরকার।
লিন্ডা। এক আশ্চর্য মেয়ে এই লিন্ডা কক্স। কি এক তীব্র দুর্নিবার আকর্ষণ রয়েছে এই সবুজ নয়নার মধ্যে। একে ছেড়ে থাকতে পারবে তো ক্রিস।
বন্ধ দরজা ঠেলতেই ভেতরে ঘণ্টা বেজে উঠল। সবুজ পর্দা ঠেলে দোকানের ভেতরে ঢুকল লিন্ডা। আজ তার পরনে মোজার মতো আঁটোসাঁটো পোশাক। তাতে শরীরের প্রতিটি ভাঁজ স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে। ক্রিস লিন্ডার মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল।
" হ্যালো ক্রিস, জানতাম তুমি আসবে। এত তাড়াতাড়ি এলে যে!"
ক্রিস কোনও কথা বলতে পারল না। হাঁ করে তাকিয়ে রইল লিন্ডার দূর্ধর্ষ শরীরটার দিকে। হাসল লিন্ডা। তবে তাতে ঠোঁটের বা মুখের রেখা পরিবর্তিত হল না। হাসি ঝলকে উঠল শুধু তার সবুজ চোখে।
" দাঁড়িয়ে রইলে যে। ভেতরে এসো "। লিন্ডা ডাকল ক্রিসকে। ওর আহ্বানে কিসের যেন অশুভ ইঙ্গিত। ক্রিসের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় যেন সাবধান করে দিল ওকে। " কি হল, ভেতরে আসবে না? এসো। " লিন্ডা আবার ডাকল।
আর অপেক্ষা করতে পারল না ক্রিস। পোষা কুকুরের মতো লিন্ডার পিছু পিছু তার শোবার ঘরে ঢুকল ক্রিস।
শোবার ঘরে ঢুকে একমাত্র পাতা চেয়ারে ধপ করে বসল ক্রিস। লিন্ডা বলল, " চা বানাচ্ছিলাম। তোমার জন্যও এক কাপ নিয়ে আসি।"
তানপুরার মতো নিতম্বে আটলান্টিকের ঢেউ তুলে হেঁটে গেল লিন্ডা। সূচাগ্র স্তন ঝাঁকি খেল ওর হাঁটার তালে। সেদিকে তাকিয়ে গলার ভেতরটা শুকিয়ে উঠল ক্রিসের। তামার কেটলিতে পানি চড়াল লিন্ডা। একটা বোতল থেকে ঘন সবুজ কি একটা ঢালল চায়ের পটে।
চা বানিয়ে দুই হাতে চায়ের দুটো কাপ হাতে নিয়ে ক্রিসের পাশে এসে বসল লিন্ডা। চা থেকে কেমন একটা অন্যরকম সুবাস আসছে। গন্ধটা আরও বিবশ করে তুলল ক্রিসকে।
লিন্ডা বলল, " আমার বিশেষ অনুপান এটা। এটা খেলে তোমার ভেতর এক বিশেষ ধরনের উদ্দীপনার সৃষ্টি হবে।"
চায়ের কাপে চুমুক দিল ক্রিস। গন্ধটা মস্তিষ্কে ঢুকে শুরু হয়ে গেছে তোলপাড়। ঠিকই বলেছে লিন্ডা। এক বিশেষ ধরনের উদ্দীপনা টের পাচ্ছে ক্রিস। তার বুকের ভেতর দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল কামনার আগুন। চোখ বুজে এল।
ওকে ধাক্কা মারল লিন্ডা। " কি ঘুমিয়ে পড়লে নাকি?"
" না লিন্ডা। আমরা কাল এসপেন ছেড়ে চলে যাচ্ছি।"
" এসপেন ছেড়ে চলে যাচ্ছ?", লিন্ডার সবুজ চোখে বিস্ময়।
" হ্যাঁ।"
এবার সিধে হয়ে দাঁড়াল লিন্ডা। সবুজ চোখ কুঁচকে লক্ষ্য করতে লাগল ক্রিসকে। ভয় পেয়ে গেল ক্রিস। সর্বনাশ ঘনিয়ে আসছে বুঝি।
হঠাৎ লিন্ডার পেশীতে ঢিল পড়ল। স্বাভাবিক হয়ে এল সবুজ চোখের ক্রুর চাহনি। নিজের দুই স্তনে দু হাত বুলোতে বুলোতে বলল, " কবে যাবে?"
" কাল।"
" বেশ। চা খাও। চামচে নেড়ে নাও ভাল করে।"
অপরিচিত বুনো ফলের স্বাদ চায়ের।
ক্রিস বলল, " তোমায় ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না লিন্ডা। তুমি যা আমায় দিয়েছ, পৃথিবীর আর কোনও নারীর কাছ থেকে আমি তা পাব না। অত আনন্দ, অত পরিতৃপ্তি কখনো পাইনি আমি।"
হাসল লিন্ডা। " চা টা কেমন হয়েছে?"
" চমৎকার। তবে তোমার চুম্বনের মতো চমৎকার নয়।"
উত্তেজনায় শরীর কাঁপছে ক্রিসের। ওর উরুর ওপর হাত রাখল লিন্ডা। জায়গাটা যেন পুড়ে গেল। চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেল ক্রিসের। এখন ও সামনে লিন্ডাকে ছাড়া আর কিছু দেখতে পাচ্ছে না। শূন্যতার মাঝে শুধু একখণ্ড উজ্জ্বল আলো....লিন্ডা।
ওর ঠোঁটে চুমু খেল লিন্ডা। ওকে শুইয়ে দিল বিছানায়।
" তোমায় আমি ভালবাসি লিন্ডা।"
" বাজে কথা ক্রিস। তুমি শুধু আমার শরীরটাকে ভালবাসো।"
" আমি কি চাই, তা তুমি জানো। "
" জানি। আমার শরীর।"
ক্রিসের চোখ লাল হয়ে গেছে। উত্তেজনায় শরীর মুচড়ে আসছে। বলল, " হ্যাঁ, তাই চাই আমি।"
" বেশ নাও", বলে লিন্ডা তার পরনের জামা খুলতে যাচ্ছিল। ক্রিস উঠে বসে ওকে জড়িয়ে ধরল। একটানে খুলে ফেলল লিন্ডার জামা। সুন্দর চন্দনের গন্ধ আসছে লিন্ডার শরীর থেকে। কামনায় শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে তার দুই স্তনের বোঁটা। উন্মত্ত পশুর মতো লিন্ডার শরীরকে তছনছ করে দিতে লাগল ক্রিস। তারপর আর কিছু জানে না সে। এত আনন্দ, এত পরিতৃপ্তি, এত তৃষ্ণা। এ তৃষ্ণার কাছে ক্যারেন বিবর্ণ পানি, আর লিন্ডা যেন তীব্র মদিরা।
শ্রান্তিতে, পরিতৃপ্তিতে লিন্ডা আর ক্রিস ঘুমিয়ে পড়ল। জাগল যখন তখন সন্ধ্যা আরও ঘন হয়েছে।
নিজের জামাকাপড়গুলো গুছিয়ে গায়ে চড়াল ক্রিস। লিন্ডাও জেগে উঠে বসেছে বিছানায়। নগ্ন ক্রিস ডাকল, " লিন্ডা"!
লিন্ডা উবু হয়ে মোম জ্বালছিল। ওর খাড়া খাড়া স্তনে মোমের আলো পড়ে চকচক করছে, গা থেকে যেন পিছলে পড়ছে আলো। বলল, " চুপ। আর কোনও কথা নয়। বাড়ি যাও এখনি। "
কণ্ঠস্বর বদলে যাচ্ছে লিন্ডার। যেন প্রচণ্ড তাড়ার মধ্যে আছে। " যাও, আর দেরী কোর না। বাড়ি যাও এক্ষুনি। শিগগীর বেরিয়ে যাও।"
লিন্ডার বাড়ি থেকে ক্যাজুরিনার দিকে যেতে শর্টকাট রাস্তা ধরল ক্রিস হ্যালোরান। চাঁদ উঠেছে। গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে আলো এসে পড়ছে রাস্তায়। এরই মধ্যে রাত হয়ে গেল? ভাবল ক্রিস। এতক্ষণ লিন্ডার বাহুলগ্ন হয়ে শুয়েছিল ক্রিস। আহ, কি যে আনন্দ, কি যে উন্মাদনা তার শরীরে! কাউকে বলে বোঝান যাবে না। লিন্ডা যেন অজগরের মতো তাকে পেঁচিয়ে ধরে রেখেছিল। কে কার শিকার ছিল? এই মদালসা নারীকে ছেড়ে কাল কিভাবে যাবে ক্রিস! অথচ লিন্ডা তাকে একরকম আজ তাড়িয়েই দিল তার বাড়ি থেকে। কেন?
ভাবতে ভাবতে আপন মনে বিড়বিড় করতে করতে পথ চলেছে ক্রিস হ্যালোরান। হঠাৎ ওর মনে হল, কেউ পিছু নিয়েছে ওর। একটা মৃদু থপথপ পায়ের শব্দ শোনা গেল। পেছন ফিরল ক্রিস। কিছু দেখতে পেল না। কিন্তু মনে হল, বনের ভেতর দিয়ে কিছু একটা ওর পাশ দিয়ে চলে গেল।
সামনে এক চিলতে ফাঁকা জায়গা। চাঁদের আলো এসে পড়েছে সেখানে। ক্রিস দেখতে পেল, সেই ফাঁকা জায়গাটায় সামনের দিকে থাবা গেড়ে বসে আছে এক বিশাল নেকড়ে। স্পষ্ট দেখতে পেল ও। নেকড়েটা ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। ওটার দৃষ্টিটা খুব পরিচিত মনে হল ক্রিসের। সবুজ একজোড়া চোখের রহস্যময় দৃষ্ট কোথায় যেন দেখেছে ক্রিস!
নেকড়েটা গুড়ি মেরে ওর দিকে এগিয়ে আসতে লাগল।
(ক্রমশ)
-------------------
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now