বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
লেখকঃ মোহাম্মদ শাহজামান শুভ।
গাজার খান ইউনিসের সেই অর্ধভাঙা ঘরে আজ রাতটা অন্যসব রাতের মতোই। অন্ধকার, ধুলো, ধ্বংসস্তূপ আর ভয়ের ছায়ায় মোড়া। বাইরে থেকে যখনই বোমার গর্জন শোনা যায়, সাত বছরের মরিয়ম কেঁপে ওঠে। তার হাত স্বতঃস্ফূর্তভাবে মায়ের আঁচল আঁকড়ে ধরে। কিন্তু আঁচলটা আজ আর নরম নেই— ধুলো-ময়লায় শক্ত হয়ে আছে।
মরিয়মের পেট চুঁইয়ে ওঠে বারবার। ক্ষুধার যন্ত্রণা তাকে জাগিয়ে রাখে। সে চোখে চেয়ে থাকে মাটির কোণে রাখা পাতিলটার দিকে। পাতিলের ভেতর খুব সামান্য ভাত। সেটা মা একটু একটু করে ভাগ করছেন। মরিয়ম ভাবে— “এ ভাত কি আমাদের সবার জন্য যথেষ্ট হবে?”
সে ফিসফিস করে মাকে জিজ্ঞেস করে—
— আম্মা, কাল কি আমরা বেশি ভাত পাবো?
সামিয়া কিছু না বলে শুধু মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তার চোখে জল চিকচিক করে, কিন্তু অন্ধকারে মরিয়ম তা স্পষ্ট দেখতে পায় না।
হঠাৎ আবার দূরে এক বিস্ফোরণ। ঘরটা কেঁপে ওঠে। জানালার ভাঙা কাচ ঝরে পড়ে মেঝেতে। মরিয়ম কুঁকড়ে যায়।
— আম্মা, এটা কি আবার বোমা?
— হ্যাঁ মা, কিন্তু ভয় পেও না, আমরা এখানে আল্লাহর আশ্রয়ে আছি।
বৃদ্ধ দাদা ফারুক গম্ভীর কণ্ঠে বলে ওঠেন—
— যুদ্ধের আগুন মানুষের ভাত কেড়ে নিচ্ছে। কিন্তু মরিয়ম, তুমি মনে রেখো, ক্ষুধা আর ভয় একসাথে মানুষকে মেরে ফেলে না। সাহস থাকলে মানুষ বেঁচে যায়।
মরিয়ম তার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ে। কিন্তু তার ক্ষুধা সাহসকে গিলে ফেলে।
পাতিল থেকে একমুঠো ভাত বের করে সামিয়া মরিয়মের হাতে দেয়। সে সেই ভাত মুঠোয় চেপে ধরে। মুখে দেয়ার আগে সে শুঁকে দেখে, যেন জীবনের সুবাস। তার চোখে জল এসে যায়। “ভাত মানে বেঁচে থাকা”— এই কথাটা সে না বলেও বুঝে ফেলে।
তার পাশে ভাই ইউসুফ বসে আছে। মুখ শুকনো, চোখে ক্রোধ। সে বললো—
— আমি আর সহ্য করতে পারছি না আম্মা। কেন তারা আমাদের ভাত খেতে দেয় না? কেন তারা আমাদের পানি বন্ধ করে রাখে?
মা সামিয়া নিরব। তার ঠোঁট নড়ে, কিন্তু কোনো শব্দ বের হয় না।
মরিয়ম তার ভাতের দানা একেকটা করে মুখে দেয়। প্রতিটি দানা যেন একেকটা তারা, যা তার বুকের ভেতর আলোকিত করে। তবুও ক্ষুধা মেটে না। সে আবারও ফিসফিস করে—
— আম্মা, আমার পেট ব্যথা করছে।
বাইরে আবার গর্জে ওঠে বিস্ফোরণ। এবার এত কাছাকাছি যে ছাদের এক কোণা ভেঙে পড়ে যায়। মরিয়ম ভয় পেয়ে ভাইয়ের গায়ে লেপ্টে যায়। ইউসুফ তার কাঁধে হাত রেখে ফিসফিস করে—
— কিছু হবে না মরিয়ম, আমি আছি।
তারপর দাদা ফারুক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন—
— এক থালা ভাত যদি পৃথিবী ভাগাভাগি করে খেতে জানতো, তবে আজ এ যুদ্ধ হতো না।
মরিয়ম সেই কথা বুঝে না। তার কাছে ভাত মানে শুধু তৃপ্তি। কিন্তু তার কচি মনেও প্রশ্ন জাগে— “সত্যিই কি ভাত না থাকার জন্যই এত বোমা পড়ে?”
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now