বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
লেখকঃ মোহাম্মদ শাহজামান শুভ।
শহরের এক কোণে, পুরনো একটা চায়ের দোকান। টিনের ছাউনি, বাঁশের বেঞ্চ, আর চায়ের কাপে ধোঁয়া ওঠা গন্ধ। এই দোকানেই নিয়মিত আড্ডা জমে বন্ধুদের। আজও বিকেলের দিকে দুই পুরনো বন্ধু সঞ্জয় আর রবি বসেছে, হাতে চায়ের কাপ, সামনে বিস্কুটের প্লেট।
সঞ্জয় একটু দার্শনিক টাইপের মানুষ। ফেসবুকে প্রায়ই বড় বড় স্ট্যাটাস লিখে—“জীবন মানেই সংগ্রাম, সংগ্রাম মানেই সৌন্দর্য” বা “টাকার চেয়ে জ্ঞান বড়” ইত্যাদি। অপরদিকে রবি হলো পুরো উল্টো। সে বিশ্বাস করে টাকা থাকলে দুনিয়ার সবকিছু সম্ভব, এমনকি জ্ঞানও কেনা যায়।
চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতেই সঞ্জয় হঠাৎ বলে উঠল—
“আচ্ছা, তোকে যদি জ্ঞান আর টাকা—এ দুটার মধ্যে একটা নিতে বলি, তুই কোনটা নিবি?”
রবি এক চুমুক দিয়ে, কাপে টুং করে শব্দ করে উত্তর দিল—
“আমি টাকাটাই নেব।”
সঞ্জয় ভুরু কুঁচকে গম্ভীর ভঙ্গিতে বলল—
“আরে, আমি হলে জ্ঞানই নিতাম।”
রবি হেসে উত্তর দিল—
“যার যেটা অভাব সে তো সেটাই নেবে।”
চায়ের দোকান গমগম করে হাসিতে। আশেপাশের অন্য ক্রেতারাও হাসতে লাগল। দোকানদার আব্দুলও গরম চা ঢালতে ঢালতে বলল—
“বাহ, বেশ বলছে! তবে টাকা না থাকলে আমার দোকান চলবে কীভাবে?”
________________________________________
এই কথার পর থেকে পুরো আড্ডাই ঘুরল জ্ঞান আর টাকার মধ্যে মহাযুদ্ধ নিয়ে।
সঞ্জয় বলল—
“দেখ, জ্ঞান থাকলে টাকা আসবেই। আলবার্ট আইনস্টাইন কি টাকার পেছনে দৌড়েছিল? না, সে জ্ঞান অর্জন করেছিল। এখন পুরো বিশ্ব তাকে চেনে।”
রবি ঠোঁট বাঁকিয়ে উত্তর দিল—
“আইনস্টাইনের কথা ছাড়, আমার পাশের বাড়ির শামসু মিয়ার কথা শুন। সে কোনোদিন স্কুলে যায়নি, কিন্তু এখন তিনটা বাড়ি, চারটা গাড়ি, এক হালি গরু, সব আছে। কই, তার তো জ্ঞান লাগল না!”
সঞ্জয় একটু হকচকিয়ে গেলেও হার মানল না।
“শামসু মিয়া হয়তো চালাক, কিন্তু সত্যিকার জ্ঞানী না। সে শুধু টাকার জোরে বেঁচে আছে।”
রবি মুচকি হেসে বলল—
“তা ঠিক, কিন্তু তার গরুগুলো দুধ দিয়ে যাচ্ছে। তোর জ্ঞান কি দুধ দেবে?”
চায়ের দোকান আবার হো হো করে হাসল।
________________________________________
আড্ডা জমতে জমতে এবার পাশে বসা বৃদ্ধা খালা কথায় যোগ দিলেন। তিনি সাধারণ মানুষ, ভিক্ষা করেন, তবে খুব তীক্ষ্ণবুদ্ধি। তিনি বললেন—
“বাবারা, জ্ঞান আর টাকা—দুটোই দরকার। টাকা ছাড়া পেট ভরে না, জ্ঞান ছাড়া মাথা ভরে না। পেট না ভরলে মাথা কাজ করে না, আর মাথা কাজ না করলে টাকা আসে না। বুঝছ?”
সঞ্জয় আর রবি দুজনেই মাথা চুলকাতে লাগল।
________________________________________
এমন সময় হঠাৎ পাশের টেবিল থেকে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উঠে দাঁড়াল। সে বলল—
“স্যাররা, আমি পড়াশোনা করি দর্শনে। দর্শনের বইয়ে লেখা আছে, জ্ঞান হলো মোমবাতি, টাকা হলো বাতাস। বাতাস থাকলে মোমবাতি নিভে যায়, আবার বাতাস থাকলেই আলো দূরে ছড়ায়। তাই দুটো মিলেই দরকার।”
রবি তাকিয়ে বলল—
“তুই দর্শনে পড়ছিস বলেই হয়তো এভাবে ভাবছিস। কিন্তু বাজারে গেলে দর্শন দিয়ে তো আলু কেনা যায় না!”
ছাত্রও হার মানল না।
“কিন্তু আলু সেদ্ধ করে খাওয়ার নিয়মটা জানার জন্যও তো জ্ঞান লাগে।”
সবাই আবার হেসে উঠল।
________________________________________
আড্ডার এই পর্যায়ে সঞ্জয় একটু নাটকীয় ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিল—
“আমি প্রমাণ করব, জ্ঞানই আসল শক্তি।”
সে দোকানদারকে ডেকে বলল—
“আব্দুল ভাই, আমি যদি আপনাকে একটা নতুন ব্যবসার আইডিয়া দিই, যা দিয়ে আপনার আয় দ্বিগুণ হবে, তাহলে কি সেটা জ্ঞান না টাকার ফল?”
আব্দুল হেসে বলল—
“বলেন তো দেখি, কী আইডিয়া?”
সঞ্জয় গর্ব করে বলল—
“আপনি যদি চায়ের সঙ্গে ফ্রি ওয়াইফাই দেন, তাহলে এখানে আরও বেশি লোক আড্ডা দিতে আসবে। তারপর চায়ের বিক্রিও বাড়বে।”
সবাই তালি দিয়ে উঠল।
রবি মুচকি হেসে বলল—
“কিন্তু ভাই, ওয়াইফাই দিতে টাকা লাগবে। সেই টাকা যদি না থাকে, তাহলে তোর জ্ঞান কই কাজে লাগবে?”
আবারো আড্ডায় হাসির রোল পড়ে গেল।
________________________________________
এভাবে ঝগড়া-তর্ক চলতেই থাকল। শেষমেশ সন্ধ্যা নামল, দোকান বন্ধ হওয়ার সময় হলো।
দোকানদার আব্দুল দাঁড়িয়ে বলল—
“দেখেন ভাই, আমি যা বুঝলাম, জ্ঞান আর টাকা দুইটাই দরকার। টাকা না থাকলে ব্যবসা শুরু করা যায় না, আর জ্ঞান না থাকলে ব্যবসা চালানো যায় না। যেমন আমি চা বানাই টাকায় কেনা চিনি, দুধ আর পাতার সাহায্যে। কিন্তু কেমন করে ফুটাতে হবে, কতক্ষণ চুলায় রাখতে হবে—ওটা আমার জ্ঞান। তাই দুইটাই চাই।”
সঞ্জয় আর রবি দুজনেই থমকে গেল।
রবি একটু নরম গলায় বলল—
“হ্যাঁ রে, আসলেই তো! শুধু টাকা থাকলে মাথা খাটাতে হবে। আর শুধু জ্ঞান থাকলে খাওয়ার মতো ভাত মিলবে না।”
সঞ্জয়ও হাসল।
“তাহলে আমরা এক কাজ করি—আমি জ্ঞান দেব, তুই টাকা দিবি, তারপর আমরা দুজন মিলে একদিন ব্যবসা শুরু করব।”
রবি হাত বাড়িয়ে বলল—
“চল, এই হলো আসল সমাধান।”
________________________________________
চায়ের দোকানে বসা সবাই হাততালি দিল। আড্ডা শেষ হলো হাসির স্রোতে।
জ্ঞান আর টাকা নিয়ে তর্ক হলেও শেষে মিলন ঘটল এই উপলব্ধিতে—
জ্ঞান ছাড়া টাকা অন্ধ, আর টাকা ছাড়া জ্ঞান অনাহারী।
আর সেই থেকে সঞ্জয় আর রবি যেখানে যায়, সেখানেই হাসতে হাসতে বলে—
“আমরা দুই বন্ধু, একজন হলো জ্ঞানের ব্যাগ, আরেকজন হলো টাকার ব্যাগ। দুটো ব্যাগ একসাথে থাকলেই জীবন ভরপুর।”
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now