বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন
বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

হুজুর হুজুরনী (৪র্থ পর্ব)

"রোম্যান্টিক" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান ★ রোদেলা রিদা ‎★ (০ পয়েন্ট)

X ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালো ইশিতা। হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে সে। মাথায় ও ডানহাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা। মাথায় প্রচুর ব্যথা অনুভব করলো। পাশে নার্স দাড়ানো। ইশিতাকে চোখ মেলতে দেখে নার্স ওটির বাহিরে গিয়ে ইশিতার বাবা মাকে বললোঃ আসুন, রোগির জ্ঞান ফিরেছে। চোখের পানি মুছতে মুছতে মেয়ের পাশে গিয়ে বসলেন ইশিতার মা -বাবা। মাঃএখন কেমন বোধ করছিস মা? ইশিতাঃ একটু ভালো, তবে খুব মাথা ব্যথা করছে। বাবাঃ চিন্তা করিসনা মা! তুই তারাতারি সুস্থ হয়ে যাবি! ইন শা আল্লাহ্! ইশিতাঃ মা তোমার জামাই কোথায়? তার কি হয়েছে বলো মা? মাঃ জামাই পায়ে একটু আঘাত পেয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এখানেই ছিলো এতোক্ষণ ,তোর জ্ঞান ফিরতে দেরী দেখে একটু বাসায় গেছে,কিছুক্ষণ পর এসে যাবে। মায়ের কথায় ইশিতা তেমন শান্তনা খুঁজে পায়না। তার টেনশন নিজের জন্য নয়, স্বামীর জন্য। এমন দ্বীনদার স্বামী যে তার জন্য এক পরম নেয়ামত।এ নেয়ামত সে হারাতে চায়না। এক অদ্ভূত টান ও ভালোবাসা অনুভব করে স্বামীর জন্য। ভিতরে ভিতরে ছটফট করতে থাকে কখন আসবে তার স্বামী। মনে মনে দুআ করছে, হে আল্লাহ্! আমার স্বামীকে তুমি সুস্থ করে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও... হঠাৎ কারো আওয়াজে তার ভাবনায় ছেদ পড়লো। "আসসালামু আলাইকুম " আবদুল্লাহ সালাম দিল। --আমি কি ভেতরে আসতে পারি? শাশুড়িঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম! এসো বাবা! তোমার কথাই বলছিলাম।বসো। শশুরঃ তা জামাই বাবাজী! আমার একটু তাড়া আছে। তোমার আম্মা খাবার নিয়ে এসেছে। খেয়ে নাও। আমি কাল আসবো। আবদুল্লাহঃ আব্বু! আপনার কষ্ট করে আসা লাগবে না। আম্মা! আপনিও বাসায় যান। আপনি প্রেশারের রুগী। আপনার বাসায় যাওয়া প্রয়োজন। ওর দেখাশোনার জন্য আমি ই যথেষ্ট। ইন শা আল্লাহ্!" আপনারা কোন টেনশন নিবেন না। শাশুড়িঃ আচ্ছা! ঠিক আছে বাবা! আমি কাল সকালে আসবো। ইশিতার দিকে তাকিয়ে, --যাই মা, বাসা খালী রেখে এসেছি। সকালে আসবো। কোন চিন্তা করিসনা মা! সুস্থ হয়ে যাবি। ইশিতা ঘাড় কাত করে সম্মতি জানাল। শশুর শাশুড়ি চলে গেলেন বাসায়। আবদুল্লাহ দেখলো খাটের পাশে টিফিন ক্যারিয়ারে করে খাবার এনে রেখেছেন আম্মা। ইতোমধ্যে আবদুল্লাহর আব্বা আম্মাও ইশিতাকে দেখে গেছেন। আরো অনেক আত্মীয় স্বজন এসে দেখে গেছেন।তবে গায়রে মাহরাম কেউ আইসিউতে ঢুকার অনুমতি পায়নি। আবদুল্লাহর নিষেধ ছিলো। আত্মীয় স্বজনদের আনা ফলমুলে স্তুপ হয়ে আছে বেডের পাশটা। ইশিতাকে বেডে একটু হেলান দিয়ে বসিয়ে কপালে একটু চুমু খেয়ে.. আবদুল্লাহঃ এখন কেমন বোধ করছো সোনা? ইশিতাঃ ভালো! আমার জন্যই আজ এ বিপদ হলো তোমার! আবদুল্লাহঃ ছিহ্ এভাবে বলতে নেই! আল্লাহ্ যা করেন বান্দাহ বান্দীহর ভালর জন্যই করেন। আমাদের তো এর চেয়েও মারাত্মক কিছু হতে পারতো! ইশিতাঃ'আল্লাহ ক্ষমা করুন।' আবদুল্লাহ কিছু আঙ্গুর ধুয়ে প্লেটে নিলো। দুটো আপেলও কেটে নিলো। ইশিতা চুপচাপ দেখছিলো সব। ইশিতার পাশে বসে একটুকরো আপেল মুখের কাছে ধরে বললোঃ খাও জান! ইশিতা খুশীতে চোখে পানি এসে গেলো। তার স্বামী তাকে খাইয়ে দিচ্ছে এর চেয়ে পরম সুখের বিষয় আর কী হতে পারে! আবদুল্লাহ দেখলো ইশিতার চোখে পানি। --একি তুমি কাঁদছো! খুব চোট পেয়েছো মাথায় সোনা! -না গো স্বামী! এটা যে আমার খুশির কান্না! এতো ভালোবাসো আমায়? --কি বলছো! তুমি হলে আমার স্ত্রী, তোমায় ভালোবাসবোনা তো কাকে ভালোবাসবো!কলাগাছকে! বলে ইশিতার নাকটা একটু টেনে দিয়ে মুচকি হাসতে লাগলো আবদুল্লাহ। -এ্যই! শুধু আমাকেই খাইয়ে দিচ্ছো! তুমি একটু খাও। --উহু! আমি হলাম তোমার চামুচ! অন্যকে খাইয়ে দিতেই চামুচ ভালোবাসে। নিজে না। --তাহলে আমি তোমার চামুচী। দাও আমার হাতে একটু আপেল, তোমাকে খাইয়ে দেই। বলতে বলতে আবদুল্লাহর হাত থেকে একটুকরা আপেল নিয়ে খাইয়ে দিলো। --চামুচী তার চামচকে খাইয়ে দিচ্ছে। বলে আবদুল্লাহ হাসতে লাগল। ইশিতাও যোগ দিলো হাসিতে। এমন সময় যোহরের আযান শুনা গেলো। আবদুল্লাহ ইশিতাকে আলতো করে ধরে শুইয়ে দিয়ে নামাজ পড়তে চলে গেলো মসজিদে। যোহর নামাজ শেষে আবদুল্লাহ মসজিদের কোনে বসে কিছুক্ষণ কুরআন তিলাওয়াত করে, দুরুদ পড়ে দু হাত তুলে স্ত্রীর সুস্থতার জন্য আল্লাহর দরবারে মুনাজাত করল। হসপিটালে ইশিতার বেডে এসে দেখল ইশিতা জেগে আছে। আবদুল্লাহঃ নামাজ পড়বেনা? ইশিতাঃ এ অবস্থায়ও কি নামাজ পড়তে হয়? আবদুল্লাহঃ হুম! প্রত্যেক আকেল বালেগ প্রাপ্তবয়স্ক নর নারীর উপর আল্লাহ্ পাক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরয করেছেন। তবে অসুস্থ হলে তার নামাজও তার অবস্থানুযায়ী আদায় করতে পারে। ইসলামে এমন কোন বিধান আল্লাহ্ পাক দেননি যা বান্দাহ পালন করতে অক্ষম।দাড়িয়ে নামাজ পড়তে না পারলে বসে, বসে পড়তে না পারলে শুয়ে ইশারায়ও নামাজ আদায় করার সুযোগ রয়েছে। ইশিতাঃ সত্যি বলছো! তো আমি এখন কিভাবে নামাজ পড়বো? শিখিয়ে দাওনা! আচ্ছা দিচ্ছি বলে আবদুল্লাহ ইশিতাকে শোয়া থেকে উঠতে হেল্প করলো। হাত ধরে সাবধানে ধীরে ধীরে বাথরুমে নিয়ে ওযু করিয়ে দিলো। ইশিতাঃ বাম হাতে তো ব্যন্ডেজ! এটা ধুবো কিভাবে? আবদুল্লাহঃধুতে হবেনা, ব্যন্ডেজের উপর দিয়ে ভেজা হাত দিয়ে মাসেহ করে নিলেই হয়ে যাবে সোনা। ইশিতাঃসত্যিই! ইসলামের নিয়মগুলো আসলেই সহজ।আফসোস! সুস্থ থাকতে কত নামাযই না কাযা করছি।" ইশিতাকে কিবলামুখী করে বেডে বসিয়ে দেয় আবদুল্লাহ।এরপর কিভাবে ইশারা ইঙ্গিতে নামায পড়তে হবে তা শিখিয়ে দেয়। ইশিতা নামাজ পড়ে নেয়। নামাজ পড়ে অন্তরে এক অনাবিল প্রশান্তি অনুভব করে ইশিতা।ইতোমধ্যে টিফিন ক্যারিয়ার খুলে প্লেটে খাবার সাজিয়ে নিলো আবদুল্লাহ। ইশিতার পাশে বসে একটু মুচকি হেসে বললোঃ এই যে মহারানী আমার! নিন এবার খানার দুআটা পড়ে খাওয়া শুরু করুন! আপনার চামুচ হাজির! স্বামীর কথা বলার ভঙ্গি দেখে ইশিতা না হেসে পারলোনা।ভেংচি কাটলো। --এ্যই! ঢং করোনা তো! তুমি চামুচ হতে যাবে কেনো! তুমি তো আমার হাজব্যান্ড! আর হ্যা, খানার দুআ তো জানিনা। - তাতে কী! আমি আছি কোন দুঃখে! বলো,"বিসমিল্লাহি ওআলা বারাকাতিল্লাহ্" ইশিতা বলার সাথে সাথেই আবদুল্লাহ এক লোকমা খাবার ইশিতার মুখে তুলে দিলো।ইশিতা খুশিতে চোখের পানি ছেড়ে দিলো। এ এক অদ্ভুত ফিলিংস।অন্যরকম অনুভুতি। আবদুল্লাহ খাইয়ে দিতে দিতে বললোঃ জানো,স্বামী তার স্ত্রীকে খাইয়ে দেয়াও একটা সুন্নত। সাওয়াবের কাজ। আল্লাহর রাসুল (সা) বলেন, ‘…তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্যেশ্যে যা ব্যয় করবে তার উত্তম প্রতিদান পাবে। এমনকি স্বীয় স্ত্রীর মুখে তুলে দেওয়া লোকমার বিনিময়েও।" ইশিতা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ স্বামীর মুখপানে। যত দেখে মন ভরেনা।মনে মনে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে, এমন স্বামী আল্লাহ্ পাক তার ভাগ্যে রেখেছেন। ইশিতাঃ এ্যই যে হুজুর সাহেব,শুধু স্ত্রীকেই খাইয়ে দিবা! তা হবেনা! নাও, হা করো আমিও তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি। আবদুল্লাহ মুচকি হেসে ইয়া বড় একটা হা করে বলল,জো হুকুম মহারানী! এই যে হা করলাম! --এভাবে বোয়াল মাছের মত হা করলে তো আমার হাত শুদ্ধই খেয়ে ফেলবে, বলে স্বামীর মুখে খাবার তুলে দিয়ে ইশিতা হাসতে লাগলো। এভাবেই খাওয়া শেষ হয় দু্জনার। আবদুল্লাহ উঠে গিয়ে তোয়ালেটা দিয়ে সুন্দর করে হাত মুখ মুছে দেয় ইশিতার।নার্স ঔষধ রেখে খাওয়ার নিয়ম বলে গেছে আগেই।আবদুল্লাহ ঔষধ খাইয়ে দেয় ইশিতাকে পরম মমতায়। তিনদিন পর হসপিটাল থেকে মোটামুটি সুস্থ হয়ে নিজেদের বাসায় চলে আসে ইশিতা। এই তিনদিন ইশিতার মনে হলো সে হসপিটালে নয় বরং জান্নাতে ছিলো। তার স্বামী সর্বদা কেয়ার করেছে। নিজের আরাম বিসর্জন দিয়ে দিনরাত তার খেদমতে ছিলো তার স্বামী। এটা ভাবতেই একরাশ লজ্জা ঘিরে ধরে তাকে।মনের অজান্তেই লোকটার প্রতি তার মনে জন্ম নেয় একরাশ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে, আর কখনও মানুষটাকে কষ্ট দিবেনা। কিছুদিন পর আবদুল্লাহর পিতা মাতা ইশিতাদের বাসায় এলেন। ইশিতার পিতা মাতাকে জানালেন, তারা তাদের পুত্রবধুকে আনুষ্ঠানিক করে ঘরে তুলে নিতে চান।,, চলবে


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২১০০৩ জন


এ জাতীয় গল্প

→ হুজুর হুজুরনী (৪র্থ পর্ব)

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now