বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
যেহেতু আমি ছাত্র হিসাবে তেমন ভাল না তাই শত চেষ্টার পর ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ হল না।বাকিদের মত আমারো জায়গা হল ঢাকা শহরের বিখ্যাত একটা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে।
সেই সুবাদে আমাকে ঢাকা শিফট্ হতে হচ্ছে। ঢাকা শহরের যান্ত্রিকতা,পরিবেশ আমার পছন্দের বাহিরের। তবুও উপায় নেই,যেতেই হবে।
আমি শিফট্ হচ্ছি আমার ফুপিদের বাসায়। চিন্তা হচ্ছে সোহানাকে নিয়ে,যার কাজ আমার দুর্বলতা কে নিয়ে উপহাস করা আর আমাকে পঁচানো!
সোহানা আমার ফুপাতো বোন। আমি যথাসম্ভব তাকে এড়িয়ে চলি,কারন সে সুযোগ সন্ধানী।এইতো সে দিন আমি শিফট্ হচ্ছি শুনে আমাকে ফোন দিল...
-কিরে ভাইয়া,তোকে নাকি বাড়ী থেকে বের করে দিচ্ছে? আমাদের বাসায় চলে আসিস্ কেমন?হা হা হা।
-খুব মজায় আছ তাই না?আমি আসি বুঝবে মজা!
-এ.....তোকে আমি বাড়ীতে ডুকতেই দিব না,তখন কি করবা?
-তবেরে... দাড়া....।
-আমি বসে আছি,দাড়াবো কেন?হি হি হি...।
-একটা থাপ্পর খাবি, ফোন রাখ।
-এ্যা...এ্যা.... এ্যা..তুই আমাকে মারবি?
রাঘে আমিই ফোন রেখে দিলাম।
বয়সে আমার দুই-তিন বছরের ছোট হবে। এবার ইন্টার ফার্ষ্ট ইয়ারে পড়ছে। ছাত্রী যথেষ্ট ভালো। এর জন্য অবশ্য আমাকে বার বার কথা শুনতে হয়-
সোহানা মেয়ে হয়ে পারে,আমি পারি না কেন?
সোহানা ভাত খায়,আমি কি খাই না?
ব্লা... ব্লা...ব্লা
ধুর.....
নির্দিষ্ট দিনে ব্যাক্তিগত জিনিসপত্র নিয়ে হাজির হলাম।
দশতলা একটা বিশাল বাড়ী!ফুপিদের ফ্লাট সৌভাগ্য ক্রমে দ্বিতীয় তলা।না হয় মালামাল নিতেই কোমড় ব্যাথা হয়ে যেত।
ফুপি আর সোহানা নিচে আসল
-কিরে আসতে কোন সমস্যা হয়নি?সবকিছু ঠিক আছে?(ফুপি)
-না ফুপি,সবকিছু ঠিক আছে।
-আচ্ছা তবে আস্তে আস্তে চলে আয়..।
-আচ্ছা।
ফুপি বলেই চলে গেল।সোহানা তুই আমাকে একটু হেল্প কর না প্লিজ...
-আসলে ভাইয়া আমার টেডি বিয়ারটার না খুব জ্বর আসছে,ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে এখন।আমি বিজি, সরি তোকে হেল্প করতে পারছি না!
-কি?টেডি বিয়ার,জ্বর???
-হুম,ঔ যে আমার বড় টেডি বিয়ার পুতুলটার।
রাঘে আমার মুখ থেকে কখা বের হচ্ছে না।ইচ্ছা করছে একটা বসিয়ে দিতে...
লাগবেনা তোর হেল্প।যা ভাগ এখান থেকে।
মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেল।
মেয়েরা আর যাই পারুক,মুখ ভেংচি খুব পারে।
দিন কিভাবে যাবে সেটাই ভাবছি।
সোহানার আর কোন ভাই বোন নেই,একা।যত জ্বালা আমাকে সইতে হবে।
অনেক কষ্টে নিজের জিনিস একা একা তুললাম।
শেষ যখন উপরে উঠছি তখন সিড়ির পাশে রাখা একটা গোলাপের টপ আমার পায়ে লেগে ভেংঙ্গে গেছে।সদ্য ফুটন্ত কয়েকটা কলি যুক্ত।
আমি আশে পাশে তাকাচ্ছি,কেও দেখল কিনা?
না,কেও দেখেনি...বাঁচা গেল।
ভাংঙ্গা টপটা অনেকটা লুকিয়ে আমার রুমের বারান্দায় রেখে দিলাম।
আমার রুমটা খুব সুন্দর,তারচেয়ে সুন্দর বারান্দা।যাই হোক বারান্দায় বসে বই পড়া যাবে..।মনে মনে খুশি হলাম।
রাতে বই পড়ছিলাম,সোহানা ডাক দিল-নাজ ভাইয়া খেতে আয়...
আসছি।
খাবার সময় ফুপিকে বিশাল এক নালিশ দিল যে আমি তার বান্ধবীর টপ ভেঙ্গে ফেলেছি।তার বান্ধবী নাকি কান্নাকাটি করে ভাসিয়ে ফেলেছে!
-কিরে ভেঙ্গেছিস?(ফুপি)
আমি আমতা আমতা করে বললাম..
-কৈ না তো।
-আর মিথ্যা বলিস না,আমার বান্ধবী তোকে এই অকাজটা করতে দেখে ফেলেছে।
-মানে?তোর বান্ধবী আমাকে চিনে?
-জি না,তবে বিকালে তো জিনিস পত্র নিয়ে একমাত্র তুই আমাদের রুমে ডুকেছিলি তাই না?
-আমি তো জেনে শুনে করিনি।
ধরা খেয়ে গেছি।কথা না বাড়িয়ে চুপ থাকাই ভাল।তা না করলে সোহানার খুঁচানো আরো বাড়তে থাকবে।
-তোর এই বান্ধবীটা কে?
জবাবে আন্টি বলল-বাড়ীওয়ালার মেয়ে।পাশের ফ্ল্যাট এ থাকে।সোহানার সাথে একিই কলেজে পড়ে।নাম আফরিন।
-ও আচ্ছা।
-তুই কালকে সরি বলে দিবি(সোহানা)
সামান্য একটা টপের জন্য সরি বলতে হবে?
-তা নয়ত কি?তুই অন্যায় করেছিস।
চুপ করে থাকলাম।
রাতে একটু চিন্তা করলাম,আসলেই সরি বলা উচিৎ।
কাল যেয়ে সরি বলে দিব।
ইতিমধ্যে জানতে পেরেছি আফরিনের বাবা একজন বিশিষ্ট শিল্পপতি!অনেক নাম ডাক।যথেষ্ট ক্ষমতাবান একজন ব্যাক্তিক্ত।
সকালে নক করলাম।
কয়েকবার নক করার পর ব্রাশ হাতে সম্ভবত অষ্টাদশী এক মেয়ে দরজা খুলল।অতিরিক্ত মাত্রার সুন্দরী।
আমাকে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকাল,মনে হয় আকাশ থেকে পড়ল!
আমি সালাম দিলাম আর ওমনি মুখের উপর ধাম করে দরজাটা লাগিয়ে দিল!!
যাক বাবা...কি এমন করলাম যে এমন করল?
বুঝতে বাকি রইলনা যে তিনিই আফরিন।
রুমে এসে মন খারাপ করে বসে থাকলাম।
ভার্সিটি যাওয়ার সময় ফুপি বলল সোহানাকে নিয়ে যা।সোহানার কলেজ পেরিয়ে আমার ভার্সিটি।
-না মা,আমি আর আফরিন চলে যাব।ওর সাখে যেতে হবে না।
যাক ভালই হল।
ভার্সিটি থেকে ফিরছি এমন সময় দুর থেকে আফরিনকে দেখলাম বাড়ীর সামনে দাড়িয়ে আছে।
কথা বলার এটাই সুযোগ।আমি কাছে এসেই সালাম দিলাম..
-আসলে আমি ঐ দিন ভুল করে আপনার টপটা ভেঙ্গে ফেলেছিলাম।দয়া করে আমাকে মাফ করবেন,আর আপনার টপটা আমি আবার...
-থামেন,থামেন দয়া করে আপনি আমার সামনে আসবেন না প্লিজ!আমি আপনাকে সহ্য করতে পারি না বুঝতে পারেন না?
বলেই দ্রুত চলে গেল।আমার কথা শুনলই না!
বুঝতে পারছি না আমার অন্যায়টা বড়,না তার অহংকার!
সুন্দরী মেয়েরা অহংকারী হয় শুনেছি কিন্তু এতটা!
নিজের জন্য চিন্তা হচ্ছে খুব।প্রচন্ড গিল্টি ফিল হচ্ছে।একদিকে সোহানা আরেক দিকে আফরিন।আমার জন্য দুইটা বাঘ স্বরুপ।
আমি কি শেষ পর্যন্ত থাকতে পারব?
বাঘের খাঁচায় থাকতে হলে বাঘের সাথে যুদ্ধ করে নয়, বন্ধুত্ব করে থাকতে হবে।
যুদ্ধে বিজয় অনিশ্চিত কিন্তু বন্ধুত্ব কিভাবে করব?
কাছে যাওয়া তো দুরের কথা কথাই বলতে পারি না!তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে,কি আশ্চর্য!!!
সামান্য একটা জিনিসকে এত বড় করে দেখে।
বিকালে বাইরে থেকে সেম একটা টপ,একিই রং এর দেখে খুঁজে খুঁজে কিনে আনলাম।
গাছটা যত্ন করে লাগিয়ে পানি দিয়ে রেখে দিলাম।
পুরু ব্যাপারটা ফুপিকে বললাম।
ফুপি আমাকে অভয় দিয়ে বলল..
-চিন্তা করিস্ না, রাতে তোকে নিয়ে আমি যাব আফরিনের মার কাছে।পরিচয় করিয়ে দেব,দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।
যথারীতি রাতে আমি,সোহানা,ফুপি তাদের বাসায় এলাম।আফরিনের মা-ই দড়জা খুলল।
ফুপি আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল।
আমি সালাম দিয়ে জ্বিগেস করলাম
..
-কেমন আছেন আন্টি?
-এই তো বাবা ভাল আছি,তুমি কেমন আছ?
-জি আন্টি আলহামদুলিল্লাহ্ ভাল আছি।
ফুপির উদ্দেশ্যে বলল...
-আসুন ভাবি ভিতের আসুন, বসুন।
-জি ভাবি,আসলে আমরা একটা উদ্দেশ্যে এখানে আশা।(ফুপি)
-জি বলুন..
অতঃপর আমি পুরো ঘটনাটা বললাম এবং আমি আমার ভুল স্বীকার করলাম।
জবাবে আন্টি বলল..
-আচ্ছা তাইতো ঐ দিন আফরিন এত চেঁচামেচি করেছিল।আসলে ঔ গাছটা তার স্কুল থেকে দেওয়া হয়েছিল তাই ওটার কদর একটু বেশী।অনেক যত্ন করত। আচ্ছা আমি ওকে ডাকছি--
এই আফরিন এইদিকে আয়,দেখ কে এসেছে...
আফরিন আমাদের দেখে অবাক!
-এই লোকটা কেন এসেছে মা?ওনাকে যেতে বল এক্ষুনি....
-দেখ মা ও তোকে সরি বলতে এসেছে, তুই কথা বল।
-কোন কথা না মা এই ছোট লোকটার সাথে,ওনি যদি এখন না যায় আমি কিন্তু চিৎকার করব!
-আরে কি আশ্চর্য,এভাবে কথা বলছিস কেন?সামান্য একটা টপ-ই তো নাকি?
-সামান্য না কি সেটা আমি বুঝি মা।ওনি ছোটলোকই না একটা চোর ও বটে।টপটা ভেঙ্গে কেও যেন না দেখে আবার সঙ্গে করে নিয়ে গেছে।
আপনি ভুল বুঝছেন, আসলে আমি আপনার টপটা সাথে করে...
-আমি আপনার কোন সাফাই শুনতে চাচ্ছি না (চিৎকার করে)।মা ওনি যাবেন কিনা?
আচ্ছা ঠিক আছে,আমি চলে যাচ্ছি।দয়া করে আপনি আর উত্তেজিত হবেন না।আমি আন্টিকে সালাম দিয়ে ফুপি,সোহানাকে রেখেই বেড়িয়ে আসলাম।
চড়ম অপমানবোধ হচ্ছে।রাঘ আর দুঃখ্যে রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম।
এই বাড়ীতে আর নয়।মেসে শিফট হতে হবে।আজ-কালকের ভিতরেই সব ব্যাবস্থা করতে হবে।
ভার্সিটি এসে মেসের ব্যাবস্থা করলাম।
কাল পরশু উঠে যাব।মাঝখানে দুইটা রাত কোন রকম কাটাতে পারলেই হল।
বাসায় ছিরে একটুর জন্যও বাহিরে বেড় হলাম না।একটু পড়ে,খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে রেডি হচ্ছিলাম এমন সময় আফরিনের মা আসল..
-বাবা এই প্যাকেট টা একটু আফরিনের কাছে পৌছে দিবে?ও এইমাত্র রাঘ করে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা করেছে,প্লিজ বাবা যাওনা,আর কেও নেই।
-আচ্ছা ঠিকআছে আন্টি আমি যাচ্ছি,দিন প্যাকেট টা আমাকে দিন।
এক দৌড়ে নিচে নামলাম।
আফরিন আর সোহানাকে এক সাথেই দেখলাম।দুর থেকেই ডাকদিলাম-এই আফরিন শুনছেন?একটু দাড়ান...
আফরিন পিছন ফিরে তাকাল।আমাকে দেখেই বিরক্তিকর একটা ভাব নিয়ে আবার হাটা শুরু করল।
-এই আফরিন একটু দাড়ান,কথা আছে....
আমি দৌড়ে কাছে আসলাম।আফরিন হাঁটছেই...আমি ওকে থামাতে ওর হাতটা ধরলাম-
-আরে একটু দাড়ান,এই প্যাকেট টা....
-ঠাসসসসসসস!!!
সোহানার সামনেই আমাকে চড় মারল!
-এই সোহানা?তোর এই ভাইটা এত ছ্যাচড়া কেন?শুধু ছোট লোকেই সীমাবদ্ধ না!সব বাজে গুণের অধিকারী। কেমন গায়ে পরা স্বভাব দেখছিস্?সুন্দরী মেয়ে দেখেছে তো পিছে পরে গেছে। ছিঃ....
থাপ্পরটা আমার গালে না,মনে হচ্ছে কলিজায় লেগেছে।চোখের পাতা ভিজে আসছে।সোহানাও অবাক চোখে তাকিয়ে আছে!
হায় কপাল!যার জন্য করি চুরি,সেই বলে চোর!আমি এক হাতে নিজের গালে হাত দিয়ে অনেক কষ্ট নিয়ে আফরিনের দিকে তাকালাম...
-দেখেন আপনি যথেষ্ট সুন্দরী মানতেই হবে।কিন্তু আমি আপনার সাথে লাইন মারার জন্য এমন করছি না।আমার এই গায়ে পরা স্বভাবটা শুধুমাত্র অপরাধবোধ থেকেই আসছে।আর সামান্য একটা ব্যাপারে আপনি যা করলেন,তার কথা নাই বললাম।এখানে এসেছিলাম আপনাকে এই ব্যাগটা দিতে।আপনার আম্মু দিয়েছিল।মনে হচ্ছে ব্যাগটা এনে আরেকটি বড় ভুল করে ফেলেছি।এই নিন আর ভালো থাকবেন...
ব্যাগটা হাতে দিয়ে সোজা পিছনে ফিরে হাটা শুরু করলাম।
বাসায় এসে দড়জা বন্ধ করে শুয়ে থাকলাম।ভার্সিটি আর গেলাম না।
কিচ্ছু ভাল্লাগছে না।মাথায় ঘুরে ফিরে শুধু চড়ের ব্যাপারটাই আসছে।প্রতিশোধ নিতে ইচ্ছা করছে খুব।
কিন্তু আমি তা পারব না কারন আমি কিছু একটা করতে গেলে তার ইফেক্ট পরবে ফুপি আর সোহানার উপর।
দুপুরে খাবার টেবিলে ফুপিকে বলে দিলাম যে আমি মেসে উঠছি।
সোহানা আমার কথা শুনে অসহায় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।
ফুপি কিছু একটা বলতে চাইল কিন্তু আমি শুনলাম না।
খাওয়া শেষে বারান্দায় একটা বই নিয়ে বসে পরলাম।
টপটার দিকে চোখ পরল।তিনটা ফুল ফুটেছে।গোলাপী রং এর গোলাপ।অসহায় দৃষ্টিতে টপটা দেখছি।
সামান্য একটা টপ এত কিছুর কারন!যাওয়ার আগে হস্তান্তর করতে হবে।
সরাসরি আফরিনকে টপটা দেবার ইচ্ছা নেই।
তাই বিকাল বেলা টপটাতে ছোট্ট একটা স্মাইলি এঁকে যেখান থেকে এনেছি সেখানে রেখে দিলাম।
আফসোস্ স্মাইলির কারনটা যদি সে একটু বুঝত!
অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস আসল...
রাতে রুমে বসে একটা গল্পের বই পড়ছিলাম।হঠাৎ আন্টি আর আফরিনের আগমন!
অবাক আর চমক দুইটাই হচ্ছি।
আবার কিছু করে বসলাম নাকি?
-বাবা তোমার সাথে নাকি আফরিন খারাপ ব্যাবহার করছে যার জন্য তুমি বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছ?
আমাকে প্রশ্ন করে কঠিন লুক নিয়ে আন্টি আফরিনের দিকে তাকাল।আফরিন করুণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
-না আন্টি,তেমন কিছু না।এমনি ভাবছি মেসে শিফট হব।আফরিনের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই।আপনি চিন্তা করবেন না।
আন্টির প্রতি আমি একটা কৃতজ্ঞ সূলভ হাসি দিলাম।
পুরু ব্যাপারটা আফরিনের মাথার উপর দিয়ে গেল।
সে হয়ত বুঝতে পারছে না যে কোথায় আমি কমপ্লিন দিব তা না করে কিছুই বললাম না!
হা হা হা আমার অবশ্য ভালই লাগছে।গুণীরা বলেছেন-শত্রুতা শেষ করতে শত্রুর সাথে বন্ধুসুলভ আচারন কর।
আমিও তাই করলাম।
আন্টি চলে গেছেন কিন্তু আফরিন আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
এই পরিস্থিতিতে আমার কি করা উচিৎ বুঝতে পারছি না।
হঠাৎ দেখলাম আফরিন কান ধরে দাড়িয়ে আছে।
আমার প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে,কিন্তু বাহিরে তা প্রকাশ করলাম না।
নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।খুব কষ্টে হাসি চাপা দিয়ে রাখছি।
আফরিনই নিরবতা ভাঙ্গল...
-দিন না ক্ষমা করে,এই কান ধরে দাড়িয়ে আছি।
আমি একবার তার দিকে তাকিয়ে আবার নিচের দিকে তাকালাম।
-বুঝতে পারছি বিশাল অন্যায় করে ফেলেছি।কিন্তু তাই বলে আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন না প্লিজ...।
-আমি ছোট লোক,গায়ে পরা স্বভাব,সুন্দরী মেয়েদের বিরক্ত করি, তারপর চোর!!আমার না থাকাই ভালো...।
-আর কত লজ্জা দিবেন আমাকে?আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি তো?
-থাকতে পারি একটা শর্তে..।
-কি শর্ত?
আমি এবার তার মুখোমুখি আসলাম,তার চোখে চোখ রেখে বললাম...
-আমার ভবিষ্যৎ কন্যার আম্মু হতে হবে...?
-কি?কি বললেন?
-যা বলেছি ঠিকি বলেছি।
-ছিঃআপনি আসলেই একটা খারাপ মানুষ!
-ঠাসসসসসস...
এইবার চড়টা আমি দিয়েছি!!
আহ্ কি শান্তি...হা হা হা
মনে হচ্ছে ভিতরে কষ্টের আগুনে কেও পানি ঢেলে দিল।
বেচারি চড় খেয়ে কান্না করে দিল!
আমার দিকে তাকিয়ে বাম হাত বাম গালে ধরে বোবার মত তাকিয়ে আছে।
নাহ্ প্রচন্ড মায়া লাগছে এখন।
ধুর...কেন যে মারতে গেলাম?কাজটা ঠিক হয় নি! নিজের-ই খারাপ লাগছে এখন।
আমার নিরবতা দেখে আর কিচ্ছু না বলে রুম ত্যাগ করল।
আমি স্পস্ট বুঝতে পেরেছি যাওয়ার আগে তার চোখ আমাকে যেতে মানা করল।
মনটা আবার খারাপ হয়ে গেল।
সকালেই সরি বলতে হবে।
এই-সেই চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পরলাম।
সকালে দড়জায় সোহানা দাড়িয়ে..
-আসব ভাইয়া?
-আয় আয়...
হাতে এক গ্লাস দুধ হাতে সোহানার প্রবেশ!
আমি পুরাই থ!!!
-কিরে আজ এত ভালোবাসা,এত আদর!ব্যাপারটা কি?
-ভাল হবে না বলে দিচ্ছি,তুই এমন কেন?
-আমি কেমন?আর দুধটা দে,কত কষ্ট করে আমার জন্য এই প্রথম তুই দুধ আনলি,তাড়াতাড়ি খাই।
সোহানা আমাকে দুধের গ্লাস দিয়ে বলল...
-তুই কি সত্যিই চলে যাবি?
-হা,এখানে মিথ্যার কি দেখলি?
সোহানা চুপ করে আমার পাশে বসল...
-আমি জানি তুই আমার জন্য চলে যাচ্ছিস।অনেক জ্বালাই তোকে না?আমি আর এমন করব না তোর সাথে,এই প্রমিজ করছি।প্লিজ ভাইয়া তবুও তুই আমাকে ছেড়ে যাস না।
আমি অতিরিক্ত মাত্রায় অবাক!
সোহানা কাঁদছে!!!
আমি সোহানাকে বললাম...
-আরে তুই কাঁদছিস কেন?কান্নার কি হল?
-তো কি করব?আমার ভাইতো তুই একটাই।তুই চলে গেলে আমি কাকে ভাইয়া ডাকব?আমার খুব একা একা লাগে।তুই চলে গেলে আমি আরো একা হয়ে যাব!অনেক ভালবাসি আমার ভাইটাকে।
-আচ্ছা ঠিক আছে আমি যাব না!আয় আমার কাছে আয়।তবুও আর এভাবে কাঁদিস না প্লিজ।আমার কিন্তু খারাপ লাগছে...
-এই তো লক্ষী ভাই আমার।
সোহানাকে আমি জড়িয়ে ধরে তার মাথায় হাত বুলাচ্ছি আর মনে মনে ভাবছি আমার পাগলি বোনটা কত ভালবাসে আমাকে!অথচ আমিই সর্বদা উল্টা-পাল্টা ভাবি।
-এই সোহানা তুই জানিস্? তুই কাঁদলে তোকে পেঁচার মত লাগে?
-কি বললি ভাইয়া?ভাল্লাগে না কিন্তু..
-সত্যি বলছি..হা হা হা... পেঁচী... পেঁচী।
-যা তুই একটা হারামি।
আয় নাস্তা করবি চল।
তুই যা আমি আসছি...
সকালে নাস্তা সেরে আফরিনদের বাসায় নক করলাম।তার আগে হাতে করে একটা গোলাপ নিলাম সেই বিখ্যাত গাছ থেকে যার জন্য এতকিছু।
আন্টি দড়জা খুলল..
আমি সালাম দিলাম আর জ্বিগেস করলাম আফরিন কোথায় আন্টি?
-ওর রুমে,তুমি বস আমি ডেকে দিচ্ছি।
-না আন্টি আমিই যাচ্ছি।
-আচ্ছা যাও...
আফরিনের রুমে নক করলাম।
-কে আম্মু?খোলাই আছে ভিতর আস....
আমি রুমে ঢুকে দেখি আফরিন ওপাশ ফিরে শুয়ে আছে।
কাশি দিলাম...
আমাকে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।
আমি ফুলটা এগিয়ে দিয়ে বললাম...সরি।
সাথে সাথে মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইল!চোখে মুখে অনেক অভিমানের ছাপ।
-এত্ব অভিমান ভাল না...
-....(চুপ)।
-ফুলটা নিবে না?
-ফুল এনেছেন কেন?
-প্রপোজ করতে..।
-প্রপোজ রিজেক্টেড..।
-কি?করার আগেই রিজেক্টেড?
-হা..।
-একটা বার ভেবে দেখা যায় না?
-না!
-ফুলটা কিন্তু তোমার গাছের...।
-কি? তুমি আমার গাছের ফুল ছিড়েছ কেন?
(তুমি করে বলেছে!তার মানে সামথিং সামথিং!)
-আবার শুরু করলা?ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি..
ফিরে যাচ্ছিলাম,
আফরিন দড়জা আটকে দাড়াল।অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়েই বলল...
-কোত্থাও যেতে হবে না।আমার ঝগড়া করার জন্য একজন ছেলে লাগবে।
-সংবাদ পত্রে বিজ্ঞাপন দাও যে "একজন ঝগড়াটে ছেলে আবশ্যক"।তোমার এই পোষ্টে আমি কাজ করতে রাজি নই!
-বেশী বেশী হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।
আফরিন জ্বল ভরা চোখে আমার দিকে তাকাল।
আমি দেখছি আমার জন্য বিন্দু বিন্দু ভালবাসা জমছে তার চোখে।
ডান হাতটা তার গালে ছোঁয়ালাম,যে গালে চড় মেরেছিলাম।ফর্সা গালটা এখনো লাল হয় আছে..
-খুব লেগেছে না?
আফরিন মাথা নেরে হা বলল।
-সরি আমার বাবুটা,আর এরকম হবে না।এখন শুধু ভালবাসব তোমায়।ভালবাসবে আমায়?
জবাবে আফরিন শুধু আমার বুকে তার মাথা লুকাল....
আমি তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম-
"অনেক ভালবাসব তোমায়"
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now