বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন
বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

একটি অসমাপ্ত দৌড়ের গল্প-১৩ সমাপ্ত

"উপন্যাস" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিয়েন সরকার (০ পয়েন্ট)

X একটি অসমাপ্ত দৌড়ের গল্প (১৩ খণ্ডে প্রকাশিত উপন্যাস) -১৩ - সালেহ তিয়াস ২৭ অবশেষে দৌড়ানো শুরু করলাম। আর কি করব? আমি তো মন্ত্রি মিনিস্টার না যে আমার প্রাইভেট হেলিকপ্টার বা ঐ জাতীয় কিছু থাকবে। দৌড়াচ্ছি আর জীবনের পাওয়া না পাওয়ার হিসাব মিলানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু কিছুতেই পারছি না। কিছুতেই না। কত অসংখ্য কেন তখন আমার মাথায় গিজগিজ করছে... কেন মামা কেন? আমি তো নিজেই চলে যাচ্ছিলাম তোমাদের কাছ থেকে। তোমাদের নিমকহারামি করেছি যখন, প্রায়শ্চিত্তটাও তো আমাকেই করতে হবে। কেন মামা কেন, প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ আমায় দিলেনা? কেন মামী কেন? কেন কালরাতে ওরকম নাটক করলে? আমাকে আর ভালো লাগছে না, আমাকে বললেই তো আমি বেরিয়ে যেতাম। কেন ওরকম করলে? ভাই কি কখনও বোনের ইজ্জত লুটতে পারে? এ কথা কিভাবে বললে তুমি? কাছের মানুষ ভুল বুঝলে যে হৃদয়ছেঁড়া কষ্ট হয় তা কি তুমি জানো না? কেন ... কেন? কেন আমায় বললে না যে আমার সংস্পর্শ থেকে বাঁচার জন্য তুমি দূরে সরে যাচ্ছ? আমায় বললে আমি তো নিজেই সরে যেতাম। চিরতরে হারিয়ে যেতাম তোমার জীবন থেকে। আর কেউ তোমাকে তাচ্ছিল্য করত না, আর কেউ তোমার ডাকে সাড়া না দিয়ে চুপ করে বসে থাকত না। আর কেউ তোমাকে কষ্ট দিত না। কেন বললে না আমায়? কেন মামা কেন? আমি জানি তুমি পড়াশোনার জন্য তোমার দুলাভাইর টাকা চুরি করে চোরের মত পালিয়ে এসেছিলে...এজন্য রাগ করে তোমার দুলাভাই তোমার অন্তঃসত্ত্বা বোনকে রেখে বিদেশ চলে যায়...নিজের চেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হবার পর বোনের ঋণ সবসময় শোধ করতে চাইতে তুমি...কিন্তু তোমার পাঠানো টাকা সব ফিরে আসত...কিন্তু বোনকে ফেস করার সাহস তোমার ছিল না...কিন্তু প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ তুমি পেয়ে গেলে...একমাত্র ভাগ্নে ভাগ্যের জোরে তোমার কাছে এসে পড়ল...তুমি তাকে নিজের ছেলের চেয়েও বেশি ভালবাসলে...এখন যখন দেখলে পরের ছেলে আর নিজের মেয়ে অ্যাডজাস্ট করতে পারছে না একদমই...তখন ভাবলে পরস্পরের থেকে দূরে না রাখলে এদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত...নিজের মেয়ের উপর আমার প্রাধান্য দিলে তখন তুমি...আমার বদলে মেয়েকেই দূরে ঠেলে দিলে...কি দরকার ছিল মামা এতটা ভালবাসার...এই ভালবাসা শোধ করার সাধ্য তো আমার নেই... গ্রীষ্মের কাঠফাটা দুপুরে ঢাকা শহরের এক ঝাঁক মানুষ দেখল, একটা উনিশ বছরের কিশোর ফুটপাথ দিয়ে দৌড়াচ্ছে। ঘেমে তার জামাকাপড় সব ভিজে গেছে। কিন্তু সে কোনদিকে ভ্রূক্ষেপ না করে দৌড়াচ্ছে। মুখে তার স্মিত হাসি। পরিশিষ্ট-১ ছয় বছর পর। ও আজ বাংলাদেশে আসছে। আমি হাসপাতালে নাইট ডিউটি আরেকজনের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে প্রায় দৌড় দিলাম। এয়ারপোর্টে পৌঁছালাম। মামা মামী আগেই চলে এসেছে। একটু পরে ও বেরিয়ে এল। আরে! অবিকল আগের মতই আছে। একটুও বদলায়নি! আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম, সরি। তারপর হাতে তুলে দিলাম আসার পথে কেনা ফুলের তোড়াটা। আনন্দে ওর চোখে পানি এসে গেল। বলল, আমার জন্যেই অপেক্ষা করছিলে বুঝি? আমি ওর হাত ধরলাম। পৃথিবী স্তব্ধ হয়ে গেল, সব আলো গেল নিভে, খালি আমরা দুজন নিজেদের ভালবাসার আলোয় নিজেদের উদ্ভাসিত করলাম। সারা পৃথিবী থাকল সাক্ষী। কিন্তু বাস্তবে এমন হয় না। বাস্তবে ও ফিরে আসে ঠিকই, আমি এয়ারপোর্টে যাই ঠিকই, ফুলের একটা তোড়া তার দিকে আগিয়ে দিই ঠিকই...কিন্তু ভালবাসা বিচার করার ক্ষমতা তখন তার আর অবশিষ্ট নেই। কদিন আগে রোড এক্সিডেন্টে মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পায় ...। তারপর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে পাগল হয়ে যায় সে। অবশ্য আমি ছেড়ে দেবার পাত্র নই, আমি নিউরোসার্জারিতে থিসিস করছি, সাবজেক্ট হিসেবে ওকে আমার কাছেই রেখেছি। আমি ওকে খাইয়ে দিই, গোসল করিয়ে দিই, কাপড় পরিয়ে দিই, সাজিয়ে গুছিয়ে দিই,ঘুম পারিয়ে দিই...তবে ও কিছু বোঝে না। একমনে সামনের দিকে চেয়ে থাকে। আর মাঝে মাঝে জান্তব একটা শব্দ করে, গরর...গরর... পরিশিষ্ট-২ মানুষ মানুষই, সুপারম্যান না। সুপারম্যান হলে সে সাঁই করে উড়ে এয়ারপোর্টে পৌঁছে যেত। গিয়ে মামার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলত, এই ভালবাসার যোগ্য আমি নই, আমি নিজেই চলে যাচ্ছি, আমায় তোমরা ক্ষমা কর। তারপরেও মামা গাইগুই করলে প্লেনের সামনে গিয়ে ব্লেড ধরে দাঁড়িয়ে থাকত সে। প্লেনটা মোটেও উড়তে পারত না। পুলিশ এসে বলত, আপনার সমস্যাটা কি? সে বলত, ঐ যে ছলছল চোখের সুন্দরমত একটা মেয়ে আছে না, ওকে আপনারা নিয়ে যেতে পারবেন না। মেয়েটাকে না নিয়েই উড়াল দিত প্লেন। তারপর সবার কাছে বিদায় নিয়ে উড়াল দিত সুপারম্যান। চোখের জলে সবাইকে ভাসিয়ে। কিন্তু মানুষ মানুষই, সুপারম্যান না। তাই তো সে এয়ারপোর্টেও পৌঁছাতে পারে না, মেয়েটাকে থামাতেও পারে না, ক্ষমাও চাইতে পারে না। অসমাপ্ত দৌড়ের গল্প অসমাপ্তই থেকে যায়। পরিশিষ্ট-৩ অনেক দিন পর। আমি আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছি। অনেক টাকা আমার। শুধু টাকা কেন, বাড়ি, গাড়ি, সম্মান, প্রতিপত্তি...কো নকিছুর বিন্দুমাত্র অভাব নেই আমার। কেবল একটা রোগী দেখলাম, কিশোর, পায়ে ফ্র্যাকচার হয়েছে, ডান পায়ের মাঝামাঝি প্রচণ্ডভাবে ফুলে গেছে। ছেলেটা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। রোগীর লোককে জিজ্ঞাসা করলাম, কিভাবে হল? সে বলল, স্যার, রাস্তায় জ্যামের মধ্যে পার হতে গিয়েছিল, হঠাৎ একটা সিএনজি... আমি বললাম, তা সে দেখে পার হবে না? লোকটা বলল, বাচ্চা মানুষ স্যার, দৌড় দিতে গিয়েছিল... দৌড়! এই ‘দৌড়’ শব্দটাই হঠাৎ আমাকে বর্তমান থেকে আলাদা করে অনেক দিন আগের কোন একটা দৃশ্যপটে নিয়ে গেল... কি হত যদি আমি দৌড়ে দৌড়েই এয়ারপোর্টে পৌঁছে যেতাম? ওরা কি অবাক হয়ে যেত? আমি কি মামার পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে বলতাম, মামা আমায় ক্ষমা কর, তোমাদের মেয়ে তোমাদের কাছেই থাক, আমি নিজেই চলে যাচ্ছি? তখন কি মামা আমার কথা মেনে নিত? মেয়েটা কি বাসায় ফিরে যেত? তারপর কি আমি নিজেই নিরুদ্দেশ হয়ে যেতাম? একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলি আমি। কি হবে এখন এসব ভেবে? যদি পৌঁছাতে পারতাম তবে আমার জীবনেও ডাক্তার হওয়া হত না। এই পর্যন্ত আসা হত না। এত কিছু যে পেয়েছি তার কিছুই পাওয়া হত না। তবুও, এগুলো কি আমার অপ্রাপ্য ছিল না? আমি কি মেয়েটার প্রাপ্যকে অন্যায়ভাবে ছিনিয়ে নিই নি? আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলি আমি। জীবনের দিন তো ফুরিয়েই এসেছে, এখন আর এসব প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির খতিয়ান বিশ্লেষণ করে কি হবে? এখন তো শুধু দিন ফুরানোর অপেক্ষা। স্যার! হঠাৎ বাস্তবে ফিরি আমি। কিশোরটির যন্ত্রণাকাতর মুখের মধ্যে কেমন যেন নিজের চেহারা খুঁজে পাই। চিৎকার করে বলি, ওকে বেডে শুইয়ে দাও...এক্সরে করাতে হবে... ( প্রিয় পাঠক, এই উপন্যাসিকার এখানেই সমাপ্তি। কোন ফিনিশিং টা ভালো লেগেছে জানালে বাধিত হব। - বিনীত, লেখক। )


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২০৯৭৪ জন


এ জাতীয় গল্প

→ একটি অসমাপ্ত দৌড়ের গল্প-১৩ সমাপ্ত

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now