বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
লেখকঃ মোহাম্মদ শাহজামান শুভ।
শরিফ মোল্লা মানুষটা অদ্ভুত ধরনের। বয়স চল্লিশের কাছাকাছি, সংসারে একটি স্ত্রী—শিউলি—থাকলেও তিনি প্রায়ই নতুন নতুন গবেষণায় মেতে থাকেন। গ্রামের মানুষ তাঁকে বলে “চিন্তাধারা মোল্লা”, কারণ তাঁর চিন্তাধারা সাধারণ মানুষের থেকে আলাদা। একদিন বিকেলে চায়ের দোকানে বসে সবাই যখন ক্রিকেট, রাজনীতি আর তেলের দাম নিয়ে আলোচনা করছে, শরিফ তখন গম্ভীর মুখে ঘোষণা করলেন,
“দেখেন ভাই, বউকে সুখি রাখতে হলে দুইটা বিয়ে করতেই হবে।”
বাক্যটা শোনার পর দোকানের সবাই হা করে তাকিয়ে রইল। কেউ ভাবল মোল্লা হয়তো মজা করছেন, কেউ আবার চুপচাপ মাথায় হাত দিয়ে বসে গেল। কয়েক সেকেন্ড পরেই দোকানজুড়ে এমন হাসির রোল উঠল যে চায়ের কাপ হাতে থাকা লোকজনের চা পড়ে গেল মাটিতে।
কেউ ঠাট্টা করে বলল, “মোল্লা ভাই, নিজের কবর খুঁড়তে চাইলে সরাসরি গর্ত খুঁড়েন, ঘুরপাক খেয়ে লাভ কী!”
আরেকজন হেসে উঠল, “আরে ভাই, দুই বউ মানে সংসার নয়, যুদ্ধক্ষেত্র।”
কিন্তু শরিফ নিরুত্তর নন। তিনি এমনভাবে ব্যাখ্যা করতে লাগলেন, যেন সংসার জীবন কোনো বৈজ্ঞানিক সমীকরণ। বললেন, স্ত্রী সারাদিন রান্নাঘরে পড়ে থাকে, তিনবেলা চুলার ধোঁয়া খায়, শরীরের অবস্থা একেবারে ম্লান হয়ে যায়। দুই বউ থাকলে ভাগাভাগি করে রান্না করবে, একজন অন্তত বসে টিভি দেখতে পারবে, মায়ের বাড়ি যেতে পারবে, জীবনে একটু প্রশান্তি পাবে।
কেউ প্রশ্ন তুলল, “তাহলে কাজের মেয়ে রাখেন না কেন?”
শরিফ গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন, “কাজের মেয়ে মানে বিপদ। পুরুষ মানুষের চোখে কাজের মেয়ে পড়লে সংসারে আগুন লাগতে কতক্ষণ? দ্বিতীয় বউ নিরাপদ।”
এবার সবাই হো হো করে হেসে উঠল। কেউবা বলল, মোল্লা এবার মনে হয় বউয়ের হাতে জুতো খাওয়ার প্র্যাকটিস করছে। কিন্তু শরিফ আরো যুক্তি সাজালেন। দুই বউ থাকলে একজন বাজার করবে, আরেকজন বাচ্চা দেখবে। একজন ঝগড়া শুরু করলে আরেকজন থামিয়ে দেবে। আবার কোথাও ঘুরতে গেলে একজনের ব্যাগ বহন করবে অন্যজন। সবচেয়ে বড় সুবিধা, স্বামী চাইলে আর চোখ রাঙাতে পারবে না। একসাথে দুইজনকে ভয় দেখানো তো আর সহজ কাজ নয়!
চায়ের দোকান তখন হাসি আর তর্কে মেতে উঠল। তবে শরিফের যুক্তি পুরোপুরি খারিজও করতে পারল না কেউ।
কিন্তু বিপদটা ঘটল বাসায় ফিরে। কে যেন মজা করে শিউলির কানে গিয়ে বলেছে, স্বামী নাকি দ্বিতীয় বিয়ে করার চিন্তাভাবনা করছে, তাও আবার তাঁকে সুখি রাখার জন্য।
শিউলি তখন রান্নাঘরে ভর্তা বানাচ্ছিল। খবরটা শুনেই তাঁর চোখ লাল হয়ে উঠল, হাতে থাকা খুন্তিটা আরও শক্ত করে ধরলেন। শরিফ দরজা খুলেই ঢুকলেন, মুখে বিজয়ীর হাসি। শিউলি শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করল, “শুনলাম তুমি আবার আমাকে সুখি করার জন্য নতুন কিছু আবিষ্কার করেছ?”
শরিফ গর্বভরে বলল, “হ্যাঁ, গবেষণাটা বৈজ্ঞানিক। দুই বউ থাকলে…”
কথা শেষ হওয়ার আগেই খুন্তির শব্দ কানে বাজল—ফটাশ ফটাশ। শরিফ মোল্লা এদিক ওদিক লাফাতে লাগলেন, মুখ থেকে বের হলো শুধু আহ্ উহ্। তখন তাঁর মাথায় নতুন তত্ত্ব ঘুরপাক খেতে লাগল, “আসলে সুখ সংখ্যা বাড়ালে হয় না, সুখ হয় মনোযোগ আর সেবায়।”
পরদিন তিনি আবার চায়ের দোকানে গিয়ে ঘোষণা দিলেন, “ভুল করেছি ভাইয়েরা। এক বউই যথেষ্ট। তবে তাকে সুখি রাখতে চাইলে নিজ হাতে বাজার করতে হবে, মাঝে মাঝে রান্নাঘরে দাঁড়াতে হবে, তার গল্প শুনতে হবে।”
চায়ের দোকানে সবাই হাততালি দিল। কেউ বলল, “এবার বুঝলেন, মোল্লা ভাই, আসল গবেষণা এটাই।”
কিন্তু শরিফের ভেতরে ভেতরে এখনও বিশ্বাস ছিল, যদি পৃথিবীতে বউয়ের হাতে জুতার ঘা নামক জিনিসটা না থাকত, তবে তাঁর দুই বউয়ের থিওরিই সবচেয়ে বৈজ্ঞানিক হতো।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now