বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন
বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

ছায়াশ্বাপদ-০৪

"ভৌতিক গল্প " বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিয়েন সরকার (০ পয়েন্ট)

X চার আজকাল এমনটাই ঘটছে। প্রতিদিন রাতের একটা নির্দিষ্ট সময়ে আমার ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছে। কোনো কারণ ছাড়াই। নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছে, এই ব্যাপারটা আমি আন্দাজ করেছি। প্রতিবার ভাবি আজ ঘড়ি দেখব। কিন্তু ঘড়ি দেখার আগেই আমি আবার সম্মোহিতের মত ঘুমিয়ে পড়ছি। যেন পুরো ব্যাপারটার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে অদৃশ্য কোনো শক্তির হাতে। আমাকে কিছু একটা দেখাতে চাইছে। অপার্থিব জগৎ এর দৃশ্য। নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলছে কিন্তু কোনো কারণে দৃশ্যটা না দেখিয়েই আবার ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে। প্রথম সে রাতের পর আর কিছু দেখিনি আমি। মাঝে চারদিন পেরিয়ে গেছে। মতিন এখনো দেশ থেকে আসেনি। বাড়িতে কী এক ঝামেলা হয়েছে। আসতে আসতে আরো কয়েকদিন। এ ক'দিনে আর কেউ কুকুর দেখতে পায়নি আমার আশেপাশে। আমি নিজেও না। কিন্তু যা সর্বনাশ করার করে রেখে গেছে। পুরো অফিসে রটে গেছে আমার কুকুর দর্শনের খবর। নির্লজ্জ রসিকতা চলছে আমাকে নিয়ে। নেতৃত্বে রয়েছেন সালাম সাহেব। খুব শিঘ্রই হয় আমাকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেয়া হবে নয়ত আমি নিজেই ছেড়েছুড়ে চলে আসব। কুকুরগুলো যে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলাম। ছিলাম, এখন আর নই। ঘুম ভাঙ্গার পর থেকেই নই। আজ সেই অদৃশ্য শক্তি মনঃস্থির করে ফেলেছে। আমাকে দেখাবে কিছু একটা। এই মুহূর্তে আমি শুধু তিনজোড়া জ্বলন্ত অঙ্গার দেখতে পাচ্ছি পায়ের কাছের মেঝেতে। হ্যা হ্যা জাতীয় আওয়াজ আসছে। পরক্ষণেই বদলে যাচ্ছে চাপা গুড়গুড় শব্দে। আমি শব্দের উৎসের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখে উঠে বসলাম সন্তর্পণে। সেদিনের পর থেকে শিথানের কাছে একটা লাঠি রাখা হয়। আন্দাজে হাতড়ে সেটার নাগাল পেতে চাইছি। জ্বলন্ত তিনজোড়া চোখ যেন নীরব বিদ্রুপে আমার ছেলেমানুষি দেখে যাচ্ছে। লাঠিটা পেয়ে গেলাম আমি। শক্ত মুঠোয় চেপে ধরলাম। মনোবল জাগাল কাঠের দন্ডটা। আমি এখন তৈরী। আয় কুত্তার বাচ্চারা! আমার নিভৃত আবাহন শুনতে পেয়েই কিনা লাফ দিল তিন শ্বাপদ। একযোগে। শূন্যে ভেসে ধেয়ে আসছে। আমি নির্ভীক হয়ে বসে রইলাম। টানানো মশারিতে ওরা বাধা পাবে, জানি আমি। কিন্তু একটা কথা জানা ছিল না আমার, রাতের এই সময়টা বড়ই অদ্ভুত। এমন অনেক কিছুই এ সময় ঘটে যায় যাকে কোনো ব্যাখ্যার ছাঁচে ফেলা যায় না। যেমন এই এখন। তিনটে শ্বাপদের ভীষণ জ্বলতে থাকা ছয়টা চোখ উন্মাদ ট্রাকের হেডলাইটের মত মশারি ভেদ করে গেল। ভয় কিংবা অবিশ্বাসের অনুভূতি জাগ্রত হবার আগেই আমার দেহ সক্রিয় হয়ে পড়ল। বিদ্যুৎ বেগে এলোপাথাড়ি লাঠি চালালাম। কারো না কারো গায়ে লেগেই যাবে। কিন্তু আমি আবার ভুলে গিয়েছিলাম মধ্যরাতের পাগলা আইনের ধারাগুলো। বাতাস কেটে সাঁই করে বেরিয়ে গেল লাঠিটা। এরা নিছকই শ্বাপদ নয়, ছায়াশ্বাপদ। ছায়াশ্বাপদের কায়া না থাকলেও নখরের ধার ঠিকই টের পেলাম। প্রথম সুযোগেই আমার গালে আঁচড়ে দিয়েছে এক শয়তান। বিচ্ছিরি গভীর ক্ষতটা থেকে দরদর করে রক্ত ঝরছে। বা পাশের গাল পেরিয়ে কানের খাঁজে গিয়ে জমা হচ্ছে গরম রক্ত। কুকুরটা পঁচা গন্ধ মাখা জিভ বের করে সে রক্ত ছুঁতে চাইছে। আরেকটা তীক্ষ্ণ নখরের লক্ষ্য আমার ভয়ার্ত চোখ। আমি প্রাণপণে যুঝে চলেছি। আরেকটা কুকুর আমার গোড়ালি কামড়ে ধরেছে। প্রবলবেগে মাথা ঝাঁকিয়ে ছিঁড়ে নিতে চাইছে পোয়াটাক মাংস। চোখ বাঁচাতে এতটাই ব্যস্ত ছিলাম তিন নাম্বারটা কখন চড়ে বসেছে আমার বুকে-খেয়ালই ছিল না। ইতোমধ্যেই পাতলা গেঞ্জিটা ছিড়ে ফেলেছে। এবার ছিঁড়তে চাইছে আমার উন্মুক্ত বুক। আমি আর পারছি না। তিন দানব সারমেয়র সাথে লড়াই করবার মত দৈহিক ও মানসিক, কোনো শক্তিই আমার নেই। শুধু ওদের নখের স্পর্শ পাচ্ছি আমার দেহে। আমি ছুঁতে গেলেই বাতাসে খামচি পড়ছে। আর পাচ্ছি পঁচা সেই গা ওগড়ানো গন্ধটা। মাত্র ইঞ্চি কয়েকের ব্যবধানে। এই গন্ধটাই আমার সমস্ত জীবনী শক্তি টেনে নিল। আমি হাল ছেড়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। সেই মুহূর্তেই চোখের পাতা ভেদ করে একটা তীক্ষ্ণ নখ ঢুকে গেল। সমস্ত দুনিয়া আঁধার হয়ে গেল। অতলে তলিয়ে যাবার আগ মুহূর্তের উপলব্ধি - বুক চিড়ে হৃৎপিন্ডে পৌঁছে যাচ্ছে নখর যুক্ত হিংস্র এক থাবা...।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২০৯৬১ জন


এ জাতীয় গল্প

→ ছায়াশ্বাপদ-০৪

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now