বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন
বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

ছায়াশ্বাপদ-০৩

"ভৌতিক গল্প " বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিয়েন সরকার (০ পয়েন্ট)

X তিন 'আচ্ছা, আপনে কি খালি কুত্তার কথাই বোঝেন নাকি অন্য পশু পাখিরগুলাও বোঝেন?' হাসি হাসি মুখ করে প্রশ্ন করলেন সালাম সাহেব। আমার কলিগ। কাল রাতের ঘটনার পর মনটা কুঁকড়ে আছে আমার। সালাম সাহেবের ধূর্ত চোখ এড়ায়নি সেই বৈরী ছাপ। কাজের ফাঁকে ফাঁকে সুযোগ পেলেই "ঘটনা" জানতে চাইছেন। শেষ পর্যন্ত কিছুটা বিরক্ত হয়ে আর বাকিটা মনকে হালকা করার উদ্দেশ্যে ক্যান্টিনে বসে ঘটনা খুলে বললাম। এরপর থেকেই মনে হচ্ছে, ভুল করে ফেলেছি। এই "কাহিনি" পছন্দ হয়নি সালাম সাহেবের। তিনি সম্ভবত নারী ঘটিত রগরগে কোনো "কাহিনি" আশা করেছিলেন। গম্ভীর মুখে পুরোটা শুনে আচমকাই প্রশ্ন করে বসলেন। আমার ভ্রু কুঁচকে গেল। 'মানে?' সালাম সাহেব হাতের আঙ্গুলের দিকে গভীর মনোযোগে তাকিয়ে ওগুলো কুৎসিত ভঙ্গিতে চাটতে চাটতে বললেন, 'না মাইনে, আপনে কি খালি কুত্তার ভাষাই বোঝেন? মশা মাছির ভাষা বোঝেন না? এই যে দেখেন আপনের প্লেটের পাশে একখান মাছি ঘোরাফিরা করতেছে। ও কি কইতে চায় আপনে বুঝতে পারবেন?' আমার গা জ্বলে গেল। 'সালাম সাহেব, আমি কি বলেছি আমি কুকুরের ভাষা বুঝতে পারি?' 'কইলেন না আপনার মহল্লার সব কুত্তা রাইতে আপনের ঘরে আসে। গল্পগুজব করে।' আমি কয়েকমুহূর্ত কিছুই বলতে পারলাম না। মানুষ তিলকে তাল বানায়, এই লোক তো আস্ত তালগাছ বানিয়ে ফেলেছে। আমি কিছু না বলেই উঠে পড়লাম। বেসিনে হাত ধুতে ধুতে ফিরে তাকিয়ে দেখি সালাম সাহেব আমার আরেক কলিগকে হাসি হাসি মুখে কী যেন বলছে। বলতে বলতেই আঁড়চোখে বারকয়েক তাকাল আমার দিকে। ভুল করে ফেলেছি - আবারও ভাবলাম আমি। অফিস ছুটি হতে না হতেই আমি উপলব্ধি করলাম গোটা অফিস আমার 'মস্তিষ্কবিকৃতি'র খবর জেনে গেছে। কেউ সরাসরি চোখে চোখে তাকাচ্ছে না। সকালেও যে হেসে কুশল বিনিময় করছিল তার দৃষ্টিও সন্ধ্যায় এসে বাঁকা হয়ে যাচ্ছিল। আমি প্রবল হতাশা নিয়ে বাড়ির পথ ধরলাম। *** পরদিন কলম পিষছি অফিসে বসে। একগাদা ফাইল গন্ধমাদনের মত উঁচু হয়ে রয়েছে আমার সামনে। আজকের মধ্যে এগুলো ক্লিয়ার করতে হবে। আরো দুজনের কাজ আমার ঘাড়ে চেপেছে। চাপানো হয়েছেও বলা যায়। দাঁত মুখ খিঁচে কাজ করে যাচ্ছি, এমন সময় বুঝতে পারলাম আমার কাঠবোর্ড ঘেরা কিউবিকলে কেউ একজন প্রবেশ করেছে। চোখ তুলে তাকাতেই একরাশ বিরক্তি ছেঁকে ধরতে চাইল। সালাম সাহেব হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকছেন। চেহারা গম্ভীর। 'তাহের সাহেব, একখান উপকার চাই।' ধপাস করে বসে পড়ে বললেন সালাম সাহেব। আমি ভাল করে লক্ষ্য করলাম তাকে। নাহ, রসিকতার চিহ্ন নেই চেহারায়। দেখে মনে হচ্ছে কোনো বিপদে পড়েছেন। 'কী উপকার, সালাম সাহেব?' আমি কাজ বন্ধ করে জিজ্ঞেস করলাম। 'আমার ছোট মাইয়াটা কাইল থেইকা খায় না। আপনেই পারবেন ওরে ঠিক করতে।' 'আমি? কীভাবে?' রীতিমত বিস্ময় বোধ করছি। 'ওর একটা বিলাই আছে। সেইটা কী কারণে জানি কাইল থেইকা খাওয়া বন্ধ কইরা দিছে। আপনে ইকটু বিলাইডার সাথে আলাপ কইরা দেখবেন কী সমস্যা?' আমার চোখে পানি চলে এল। আমি জানি না কুকুরগুলো কেন আমার আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে। কিংবা হতে পারে এটা আমারই কোনো মানসিক সমস্যা। কিন্তু মানুষের দুর্বলতা নিয়ে এ কেমন নিষ্ঠুর রসিকতা? আমি মাথা নীচু করে ফেললাম দুঃখে। প্রায় সাথে সাথেই আবার ঝট করে মুখ তুলতে হল। সালাম সাহেব ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আমার পেছন দিকে তাকিয়ে আছেন। ওদিকে ফাইল কেবিনেট। কী এমন সাক্ষাৎ যমদূত ওখানে সেঁধিয়েছে যে এমন গোল্লা চোখে তাকাতে হবে? দুঃখের উপর বিরক্তি চাপল। আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই সালাম সাহেব ফিসফিস করে বললেন, 'কুত্তা!' ইলেক্ট্রিক শক খেলাম যেন। প্রায় লাফিয়ে উঠে পেছনে ঘুরে তাকালাম। আরেকটু হলেই চেয়ারটা ওল্টাত। পেছনে কিছুই নেই। অসংখ্য ধুলো জমা ফাইল নির্বাক বিদ্রুপ করছে আমাকে। তারচাইতেও রুঢ় রসিকতার হাসি ভেসে এল পেছন থেকে। সালাম সাহেব খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলেন রুম ছেড়ে।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২০৯৫৬ জন


এ জাতীয় গল্প

→ ছায়াশ্বাপদ-০৩

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now