বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
ছায়াশ্বাপদ
-------------
আবুল ফাতাহ মুন্না
----------------------
এক
এই নিয়ে তিনবার।
ব্যাচেলর মানুষ আমি। ছোট-খাট একটা চাকরী করি। থাকি দু’রুমের একটা বাসা নামের “কলংক”-তে। আমার সাথে আরেকজন থাকে। আব্দুল মতিন। ছেলেটাকে পুরো নামে ডাকতে হয়, নইলে রীতিমত ক্ষেপে যায়। আমার মতই ছাপোষা মানুষ আব্দুল মতিন। কোনো রকমে টিকে আছি আমরা এই নগরে।
মতিনের চাকরীটা ঠিক কী, আমি বিস্তারিত জানি না। খুব সকালে বেরিয়ে যেতে দেখি, ফেরে গভীর রাতে। সামান্য মাইনের বেশিরভাগটাই বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। আমি একা মানুষ বলে আর রান্নার ঝামেলায় যাইনি। বাসার পাশের সস্তার হোটেলে মাসকাবারি বন্দোবস্ত আছে। দুইবেলা খাবার দিয়ে যায়। দুপুরের খাবার সারি অফিসের ক্যান্টিনে। বাইরের খাবার খেতে খেতে আজকাল জিহবাটা আড়ষ্ট হয়ে গেছে।
সকালবেলাটায় হোটেলের বিক্রি বেড়ে যায়। প্রায়দিনই আমাকে গিয়েই খেতে হয়। যদি না অফিসে লেট করতে চাই। নাস্তা সেরে ওখান থেকেই অফিসে দৌড়।
আজ সকালে নাস্তা খেতে বের হতেই আফজাল সাহেবের সাথে দেখা। পাশের বাসাতেই ফ্যামিলি নিয়ে থাকেন। আলাপী লোক। আমাকে দেখেই হই-হই করে ছুটে এলেন।
‘কি তাহের ভাই, আছেন কেমন?’ একগাল হাসলেন ভদ্রলোক।
আমি আসলে খুব বেশি ভাল নেই। বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এই সামান্য চাকরীটাকে সম্বল করে আরেকজন মানুষের ভার কাঁধে নেবার মত সাহস সঞ্চয় করে উঠতে পারছি না। এসব কথা বলার মত ঘনিষ্টতা নেই আমার আফজাল সাহেবের সাথে। তাই কাষ্ঠ হাসি হেসে বললাম,‘আছি ভাই, ভালই আছি।’
‘হে হে, ভাল তো থাকবেনই। তা ভাই কি গুপ্তধন পাইছেন নাকি?’ ষরযন্ত্রীর মত গলা নামিয়ে বললেন আফজাল সাহেব।
আমি হেসে ফেললাম। ‘আমাকে দেখে কি মনে হয়,আমি গুপ্তধন পেয়েছি?’
‘আপনাকে দেখলে মনে হয় না, কিন্তু আপনার কুকুরগুলা দেখলে তো ঠিকই মনে হয়। গুপ্তধন না পাইলে কি আর এই বাজারে কেউ তিনটা কুকুর পালে?’
আমার বুকের মধ্যে কী যেন একটা ধাক্কা দিয়ে গেল।
‘কুকুর পালি মানে? কবে দেখলেন?’ আমি সতর্ক হয়ে জানতে চাইলাম। বুকটা ধক ধক করছে।
‘এই তো,কালকে রাত্রেই তো। আপনে মনে হয় অফিস থেইকা ফিরতাছিলেন। আমি বারান্দায় দাঁড়ায়ে দেখলাম তিনটা বিশাল কুকুর আপনের পিছে পিছে আসতেছে। তিনটাই কালো রঙের।’
এই নিয়ে তিনবার শুনতে হল কথাটা।
তিনদিন আগে প্রথমবার। সেদিন অফিস থেকে ফিরতে রাত হয়েছিল খানিকটা। মাঝে মধ্যেই হয়। বসেরা কাজ ধরিয়ে দেয়। না করার জো নেই।
পরদিন অফিসে যেতেই বুড়ো দারোয়ান কী কথায় যেন বলল, আগের রাতে আমি নাকি অফিস থেকে বেরুতেই কোত্থেকে এসে আমার পিছু নেয় তিনটা ভীমদর্শন কুকুর। কালো রঙের।
গতকাল শুনলাম আনিসের মুখে। ছোকরা হোটেলের বয়। আমার বাড়িতে ওই খাবার নিয়ে যায়। কাল রাতে খাবার দিয়ে যাবার আগে জানাল, আমার বাসার সামনে নাকি তিনটা কুকুর বসে আছে। শুনে কী মনে করে ওর সাথে বাইরে এলাম। কুকুরের লেজের দেখাও পাইনি।
কী হচ্ছে এসব? আমার আশেপাশে তিনটা কুকুর দেখতে পাচ্ছে কেন মানুষজন? আমি কেন পাচ্ছি না তবে?
আচ্ছা, এমন কি হতে পারে, কুকুরগুলো কোনো কারণে আমার আশেপাশে ঘুরঘুর করছে ঠিকই কিন্তু দুঃশ্চিন্তায় ডুবে থাকা আমার মস্তিষ্ক তাদের শনাক্ত করতে পারছে না। আনমনা চোখদুটো ব্যর্থ হচ্ছে তাদের দেখতে।
উঁহু, “হতে পারে” না, এটাই হয়েছে। লক্ষণ খুবই খারাপ। আমি আমার চারপাশটাকে অস্বীকার করতে পারি না। আমাকে পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হলে প্রকৃতির প্রতিটা পরিবর্তন লক্ষ্য করতে হবে। অথচ আমার আশেপাশে তিনটা জলজ্যান্ত কুকুর ঘুরে বেড়াচ্ছে, আমার সে খবর পর্যন্ত নেই। মানুষের মুখ থেকে শুনতে হয়। এখন থেকে পূর্ণ মনোযোগে লক্ষ্য করব আমার চারপাশের খুঁটিনাটি।
সিদ্ধান্তটা নেয়া হতেই হালকা লাগল নিজেকে।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now