বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
লেখকঃ মোহাম্মদ শাহজামান শুভ।
বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানটা মূলত একপ্রকার দীর্ঘস্থায়ী নাটক। যেখানে নায়ক-নায়িকা দুজনেই, কিন্তু গল্প লিখে দেন জীবন নামের রহস্যময় পরিচালক। এই নাটকে প্রেম-অভিমান, ঝগড়া-মান-অভিমান সবকিছুই থাকে, তবে সবচেয়ে বেশি থাকে হাস্যকর সংলাপ।
যেমন ধরুন, রফিক আর শিউলির সংসার। বিয়ের পাঁচ বছর হলো। এদিক থেকে দেখলে এটা যথেষ্ট সময়, আবার ওদিক থেকে দেখলে কিছুই না—কারণ তাদের প্রেমের রসায়ন প্রতিদিনই নতুনভাবে রঙ পাল্টায়।
সেদিন রাতের ঘটনা।
শিউলি হঠাৎ আকাশের দিকে তাকিয়ে টুক করে বলল—
“শোনো, তুমি কি আমাকে চাঁদ-তারা এনে দেবে?”
রফিক তখন চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিল। সে একটু নাটকীয় ভঙ্গিতে গম্ভীর গলায় বলল—
“অবশ্যই দেব। তবে আগে এক কাপ চা শেষ করতে দাও। তারপর শুরু করি।”
শিউলি ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল—
“মানে? চা শেষ না হলে ভালোবাসা শুরু হয় না নাকি?”
রফিক শান্ত গলায় চায়ের ধোঁয়া উড়িয়ে উত্তর দিল—
“না, আমি তো এনার্জি ছাড়া মহাকাশে উঠতে পারব না!”
এই উত্তর শুনে শিউলি প্রথমে ভড়কে গেলেও পরে হো হো করে হেসে উঠল।
________________________________________
রফিক আসলে চা ছাড়া কিছু ভাবতেই পারে না। সকালে উঠেই প্রথমে চা, অফিসে বসে প্রথম কাজ চা, বাসায় ফিরে টিভি দেখার সাথেও চা, এমনকি রাতের ঘুমানোর আগেও ‘লাস্ট চা’। সে প্রায়ই বলে—
“চা না থাকলে জীবন হলো ডিম ছাড়া ডিমের তরকারি।”
শিউলি প্রথমে বিরক্ত হতো। বিয়ের পর ভেবেছিল, স্বামী রোমান্টিক হবে, কানে কানে কবিতা শোনাবে, মাঝে মাঝে ফুল এনে দেবে। কিন্তু রফিক যা করে তা হলো—চায়ের কাপে ভাসমান লেবু নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর দুধ-চা বনাম লিকার-চায়ের ওপর গবেষণা।
তবে এ সবের মাঝেও শিউলি মজা পায়।
________________________________________
সেই রাতেই শিউলি ঠিক করল, রফিককে একটু চ্যালেঞ্জ দেওয়া যাক।
—“ঠিক আছে, চাঁদ-তারা না হোক, অন্তত ছাদে গিয়ে আমাকে একটা তারা দেখাও।”
রফিক চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বলল—
“এত সহজ নাকি? ছাদে গেলে প্রথমে মশার কামড় খেতে হবে, তারপর চোখ কুঁচকে তাকাতে হবে। তবু যদি মেঘ না থাকে তবে একটা তারা দেখা যাবে। এভাবে মহাকাশ অভিযানের আগে মহড়া দেওয়া যায়, বুঝলে?”
শিউলি হেসে বলল—
“তুমি না একেবারে বাজে রোমান্টিক!”
________________________________________
তাদের হাসাহাসি দেখে পাশের ফ্ল্যাটের প্রতিবেশী রহিম সাহেব জানালা দিয়ে উঁকি দিলেন। উনি একেবারে বাস্তববাদী মানুষ। এত রাতে কারও হাসাহাসি তার সহ্য হলো না। তিনি গলা উঁচু করে বললেন—
“এই যে রফিক সাহেব, প্রেম করার জন্য কি রাতটাই বাকি ছিল? কাল সকালে অফিস নেই?”
রফিক এবারও শান্তভাবে উত্তর দিল—
“প্রেমের অফিস তো চব্বিশ ঘণ্টাই খোলা থাকে, রহিম ভাই!”
শিউলি তখন খিলখিলিয়ে হেসে গড়িয়ে পড়ল।
________________________________________
রাত বাড়তেই গল্প আরও জমল। শিউলি এবার সিরিয়াস গলায় বলল—
“শোনো, মেয়েরা আসলে চাঁদ-তারা আনার কথাটা সিরিয়াসলি বলে না। এটা একধরনের ইশারা—মানে আমরা চাই তুমি আমাদের খুশি করার জন্য কিছু করো।”
রফিক গম্ভীর মুখ করে জবাব দিল—
“বুঝেছি। মানে তুমি চাঁদ-তারা না চেয়ে মূলত নতুন সোনার দুল চাইছো, তাই না?”
শিউলি চোখ কপালে তুলে বলল—
“বাহ! তুমি কি আমাকে গহনার দোকানের বিজ্ঞাপন বানাতে চাইছো?”
রফিক হাসল—
“না না, আমি আসলে বলতে চাইছি—তুমি যাই চাও না কেন, সেটা আমি দিব। তবে এক শর্তে—আমার এক কাপ চায়ের ব্যবস্থা থাকতেই হবে।”
________________________________________
পরদিন সকালের দৃশ্য আরও মজার। শিউলি বাজার থেকে কিছু সবজি আর ফল কিনে আনল। রফিক তখনও চায়ের কাপে ডুবে আছে।
শিউলি হঠাৎ বলল—
“দেখো, এই ফলগুলোকে আমি আকাশের তারা মনে করছি। এবার তুমি আমার জন্য এই ‘তারাগুলো’ এনে দিলে।”
রফিক কাপে শেষ চুমুক দিয়ে বলল—
“অসাধারণ! আমি তো ভাবছিলাম সত্যি সত্যি রকেটে চড়ে যেতে হবে।”
শিউলি উত্তর দিল—
“তোমার পেট্রোল খরচ বাঁচল, শুধু আমায় ফলগুলো খাইয়ে দাও।”
________________________________________
এভাবে দিনগুলো কাটতে থাকে হাসাহাসির মধ্য দিয়ে। রফিকের চায়ের ভক্তি আর শিউলির চাঁদ-তারার কল্পনা মিলেমিশে তাদের সংসার এক রকম কমেডি-ড্রামায় রূপ নেয়। বন্ধুবান্ধব এসে আড্ডা দিলেই বলে ওঠে—
“তোমাদের প্রেম তো আসলে এক কাপ চায়ের ভেতরে ডুবসাঁতার।”
রফিক গর্ব করে উত্তর দেয়—
“হ্যাঁ, কারণ চা ছাড়া এনার্জি নেই, আর এনার্জি ছাড়া প্রেম নেই।”
শিউলি তখন লাজুক ভঙ্গিতে যোগ করে—
“আর প্রেম ছাড়া সংসার নেই।”
________________________________________
সেদিন রাতে তারা দুজন আবার ছাদে দাঁড়িয়ে ছিল। আকাশে মেঘ কেটে গিয়ে সত্যিই কয়েকটা তারা ফুটে উঠল।
শিউলি আঙুল দেখিয়ে বলল—
“দেখো, ওই তারাটা আমার। তুমি আমাকে এনে দিয়েছো।”
রফিক মাথা নেড়ে বলল—
“হ্যাঁ, তবে শর্ত আছে। ওই তারা দেখতে হলে আগে এক কাপ চা খেতে হবে।”
শিউলি চোখ ঘুরিয়ে দিলেও শেষ পর্যন্ত হেসে ফেলল।
কারণ সে জানে, চায়ের কাপই হোক বা চাঁদের আলো—রফিকের সবকিছুতেই তার জন্য অগাধ ভালোবাসা লুকিয়ে আছে।
________________________________________
শেষ পর্যন্ত বোঝা গেল—প্রেম মানে চাঁদ-তারা আনা নয়, বরং এক কাপ চায়ের ভেতরে হাসি খুঁজে পাওয়া। আর সংসারের সবচেয়ে মধুর মুহূর্তগুলো তৈরি হয় সেইসব ছোটখাটো কথোপকথনে, যেগুলো হয়তো অন্যের কাছে মজার, কিন্তু দুজনের কাছে তা অমূল্য।
রফিক আর শিউলি জানত, চা-প্রেমই হোক বা তারা-প্রেম—শেষ পর্যন্ত প্রেম মানে হলো একে অপরের কাছে থেকে হাসতে পারা।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now