বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
১
কিংরোডের এক জায়গায় এসে রাস্তার পূর্ব পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়ল আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন। ঘুরে দাঁড়িয়ে আহমদ মুসাকে লক্ষ্য করে বলল, ‘স্যার, এবার আমাদের কিংরোড ছাড়তে হবে। কাতান পাহাড়কেও। এখন পূর্ব দিকে এগোতে হবে।’
আহমদ মুসা এগোলো রাস্তার পূর্ব পাশের দিকে। পূর্ব দিকের ল্যান্ড স্পেসের দিকে তাকিয়ে দেখল আহমদ মুসা, যা চিন্তা করেছিল তাই। কিংরোডের চার-পাঁচ গজ পরেই এক খাড়া খাদ। খাদের মুখ তিরিশ-চল্লিশ গজের মতো প্রশস্ত।
‘গিরিখাদের গভীরতা কেমন আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন?’ জিজ্ঞেস করল আহমদ মুসা।
‘স্যার, থাই-মালয়েশিয়া পর্বতমালার এটাই সবচেয়ে বড় ক্যানিয়ন (গিরিখাদ)। এটা শুধু কাতান পর্বত শ্রেণী থেকে তেপাং পর্বতকেই আলাদা করেনি, কাতানকেও প্রায় বিভক্ত করে উত্তরে বহুদূর এগিয়ে গেছে। গভীরতাও স্যার দেড় হাজার ফুটের কম হবে না।’ বলল আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন।
‘তাহলে ক্যানিয়নটা পার হয়ে তেপাংগে পৌঁছার কোনো প্রাকৃতিক ব্যবস্থা ক্যানিয়নের কোথাও আছে নিশ্চয়?’ বলল আহমদ মুসা।
‘ঠিক ধরেছেন স্যার। ক্যানিয়ন বেয়ে একশ’ ফিটের মতো নামলেই অদ্ভুত একটা জায়গা পাওয়া যাবে যেখানে কাতান থেকে বেরিয়ে যাওয়া ও তেপাং থেকে বেরিয়ে আসা দু’টি বারান্দা পরস্পরের দিকে এগিয়ে একটা সেতুর সৃষ্টি করেছে। ওটা পার হয়ে ওপারের ক্যানিয়নের দেয়াল বেয়ে আবার তেপাং-এর মাথায় উঠতে হবে।’ আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন বলল।
আহমদ মুসারা ক্যানিয়নের দিকে এগোলো। ক্যানিয়নের ধারে পৌঁছে নিচের দিকে উঁকি দিয়ে বলল, ‘তোমার সে বারান্দা তো দেখা যায় না। ও, এখানে ক্যানিয়নের এপার-ওপার দুই ধারকেই পরস্পরের দিকে এক টু ঝুঁকে যেতে দেখা যাচ্ছে। এতেই আড়াল হয়ে গেছে বারান্দাটা।’
‘এটাও আল্লাহর একটা কুদরত স্যার। এর ফলে বারান্দাটা আড়াল হয়ে গেছে এবং আগন্তুকদের জন্যে এই ক্যানিয়নটা অনতিক্রম্য হয়ে গেছে।’ আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন বলল।
‘হাবিব হাসাবাহরা জানে না?’ জিজ্ঞাসা আহমদ মুসার।
‘হাবিব হাসাবাহই শুধু জানে স্যার, দলের আর কেউ জানে না। তবে মি. হাবিব হাসাবাহও এটা দেখেনি, বর্ণনা শুনেছে মাত্র। সে এদিক দিয়ে আসা-যাওয়ায় আগ্রহী নয় সময়সাপেক্ষ ও কষ্টকর বলে। এজন্যেই সম্ভবত তার টেপাংগো ঘাঁটি থেকে এদিকে আসার একমাত্র সংকীর্ণ গিরিপথটি পাথরের দেয়াল তুলে বন্ধ করে দিয়েছে।’ বলল আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন।
‘আসতে চায় না এ পথে, এর চেয়ে তোমরা যাতে তোমাদের ইচ্ছেমতো পেছন দরজা দিয়ে তাদের টেপাংগো ঘাঁটিতে না যেতে পার, এটা নিশ্চিত করা ছিল তার কাছে বেশি জরুরি।’ আহমদ মুসা বলল।
আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন ও সরদার জামাল উদ্দিন দু’জনেই হাঁ করে তাকাল আহমদ মুসার দিকে। তাদের চোখে-মুখে বিস্ময়। বলল সরদার জামাল উদ্দিন, ‘ঠিক বলেছ ভাই। একবার এ পথ দিয়ে আমি অনাহূতভাবেই গিয়েছিলাম তাদের টেপাংগো ঘাঁটিতে। মুখে কিছু না বললেও খুবই বিরক্ত হয়েছিলেন। তারপরই ঐ পথে দেয়ালটা ওঠে। তখন আমরা বুঝিনি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, তোমার কথাই শতভাগ ঠিক।’
‘এ থেকে এটাও পরিষ্কার হয়ে যায় যে, তারা আমাদের একটুও বিশ্বাস করে না, ব্যবহার করে মাত্র।’ আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন বলল।
‘বিশ্বাসের তো প্রশ্নই ওঠে না, যাদের ধ্বংস করাই লক্ষ্য, তাদের ওরা বিশ্বাস করবে কেন? ঠিক আছে। চল, এবার ক্যানিয়নের বারান্দার দিকে নামি।’ বলল আহমদ মুসা।
‘ঠিক আছে স্যার, আসুন।’ বলে আবদুল কাদের বিশেষ স্থান দিয়ে ক্যানিয়নের গা বেয়ে নিচে নামতে শুরু করল।
দুই ঘণ্টা লাগল ক্যানিয়ন পার হয়ে ওপারে তেপাং পর্বতের উপরে পৌঁছতে।
আহমদ মুসা তেপাং-এ পৌঁছে সামনে তাকিয়ে দেখল, ছোট-বড় অসংখ্য চূড়ায় আকীর্ণ এবড়ো-থেবড়ো পাহাড়ের বুক। বলল আহমদ মুসা, ‘আবদুল কাদের, সামনে তো চলার মতো ট্র্যাক নেই কিংরোডের মতো?’
আবদুল কাদের কিছু বলার আগেই তার দাদা সরদার জামাল উদ্দিন বলল, ‘সামনে চেয়ে দেখ, সব চূড়ার ওপর দিয়ে প্রায় পিরামিডের মতো একটা চূড়া দেখা যাচ্ছে। ওটাই তেপাং পর্বতের প্রাণকেন্দ্র। ওটার গোড়াতেই সেই পুরানো ঘাঁটি, যেখানে এখন হাবিব হাসাবাহরা আড্ডা গেঁড়ে বসেছে। ঐ চূড়ার গোড়াতেই ঘাঁটিতে একটা সুড়ঙ্গ পথ রয়েছে। পথটার বাইরের মুখ পাথরের দেয়াল তুলে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। চূড়াটিকে আমাদের নাক বরাবর রেখে পথ ডিঙিয়ে টিলা এড়িয়ে আমাদের অগ্রসর হতে হবে।’
‘ধন্যবাদ দাদাজী। চূড়ার পথটা নিশ্চয় চার-পাঁচ মাইলের বেশি হবে না।’ বলল আহমদ মুসা।
‘কিঞ্চিৎ বেশি হবে স্যার। আসুন চলতে শুরু করি।’
বলে হাঁটা শুরু করল আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন।
চলতে শুরু করল সবাই। আরও দু’ঘণ্টায় তারা এসে পৌঁছল পিরামিড আকারের চূড়ার গোড়ায়।
সুড়ঙ্গ মুখের দেয়াল দেখতে পেল আহমদ মুসা। মুখের দেয়ালটা দেখা যায় না ছড়ানো ছিটানো স্তূপীকৃত পাথরের জন্যে। দেয়ালটাকে আড়াল করার জন্যেই এই ব্যবস্থা। এগোচ্ছিল দেয়ালটাকে পরখ করে দেখার জন্যে। তার পকেটের মোবাইল বেজে উঠল।
মোবাইল ধরল আহমদ মুসা।
ওপ্রান্ত থেকে থাইল্যান্ডের সহকারী গোয়েন্দা প্রধান পুরসাত প্রজাদিপকের কণ্ঠ শুনতে পেল। শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর আহমদ মুসা বলল, ‘বলুন জনাব। আমরা তেপাং পাহাড়ে।’
‘ধন্যবাদ আহমদ মুসা। কিন্তু নতুন মারাত্মক একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তোমার মতামত সবাই আমরা আশা করছি।’
‘বলুন জনাব। পরিস্থিতিটা কি?’ আহমদ মুসা বলল।
‘খুবই উদ্বেগের আহমদ মুসা। ঘণ্টাখানেক আগে হাবিব হাসাবাহ শেষ হুমকিটা দিয়েছে। বলেছে, আগামী পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে যদি হেলিকপ্টার তার তেপাং পাহাড়ের লাল পতাকা চিহ্নিত স্থানে না পৌঁছে, তাহলে পাঁচ ঘণ্টা এক মিনিটে জাবের জহীর উদ্দিনকে হত্যা করা হবে।’
শুনে আহমদ মুসা একটুও না ভেবেই বলল, ‘জনাব, এ আল্টিমেটামের কোনো গুরুত্ব নেই। নিশ্চিত থাকুন, হাবিব হাসাবাহ পালিয়ে নিরাপদ হওয়ার আগে জাবের জহীর উদ্দিনকে হত্যা করবে না। জাবের জহীর উদ্দিন এখন তার বর্ম। নিজেকে নিরাপদ করার আগে সে বর্ম পরিত্যাগ করতে পারে না।’
‘ধন্যবাদ আহমদ মুসা। কিন্তু এ আল্টিমেটামের তাহলে অর্থ কি?’ পুরসাত প্রজাদিপক বলল।
‘আমার ধারণা, সে ইতোমধ্যেই পালিয়েছে বা পালাচ্ছে। আল্টিমেটামের মাধ্যমে সে জানিয়ে দিয়েছে যে, পাঁচ ঘণ্টা সে লাল পতাকার ঐ ঘাঁটিতেই থাকবে। এটা জেনে চারদিকের পাহারা শিথিল হবে, এটাই চেয়েছে সে।’ আহমদ মুসা বলল।
‘বুঝেছি আহমদ মুসা। কিন্তু ওরা হঠাৎ পালানোর ইচ্ছা প্রকাশ করার মতো দুর্বলতা প্রকাশ করল কেন?’ বলল পুরসাত প্রজাদিপক।
‘আসলে ওদের অনেক লোক মারা গেছে এবং ধরা পড়েছে। আমার মনে হয়, বেতংগে ওদের মূল বাহিনী শেষ হয়ে গেছে। আর ওদের অবস্থানের স্থানটাও ধরা পড়ে গেছে, এটা ওরা নিশ্চিত হয়েছে। সুতরাং পালানো ছাড়া পথ নেই।’ আহমদ মুসা বলল।
‘পালাতে পারবে না। উপত্যকার সব পথ বন্ধ। হ্রদ ও পাহাড়ের মধ্যের জলপথেও শক্ত পাহারা বসানো আছে, সে তো তুমি জানই।’
হঠাৎ থেমে গেল পুরসাত প্রজাদিপক। কয়েক মুহূর্ত পরেই আবার বলে উঠল, ‘কিন্তু আহমদ মুসা, জলপথটা অনেক প্রশস্ত। পাহারা বসানো আছে শুধু উত্তর তীরে। জরুরি মুহূর্তে এই পাহারা তো গোটা জলপথ কভার করতে পারবে না।’
‘চিন্তার কিছু নেই। দক্ষিণ তীরে অবস্থান নেয়ার জন্যে দু’জনকে আমি পাঠিয়েছি। ওরা দক্ষিণ তীরে জেলেদের যে ছাউনি আছে, সেখানে জেলে বেশে বসে থাকবে।’ আহমদ মুসা বলল।
‘ধন্যবাদ আহমদ মুসা। আহমদ মুসা, আমাদের গোটা নির্ভরতা কিন্তু তোমার ওপর। আল্টিমেটাম দেয়ার পর এদিক থেকে ঘাঁটির দিকে অগ্রসর হওয়া অসম্ভব। তোমার পরিকল্পনা কি?’ বলল পুরসাত প্রজাদিপক।
‘আমরা তেপাং পাহাড়ে পৌঁছে গেছি। সামনে কি পরিস্থিতি আমি জানি না। তবে আল্টিমেটামে যে সময় দিয়েছে, তার একাংশ সময়েই ওখানে আমরা পৌঁছে যাব ইনশাআল্লাহ।’ আহমদ মুসা বলল।
‘গড ব্লেস ইউ ইয়ংম্যান। আমরা এদিকে হেলিকপ্টার সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করছি- এই কথা বলে কালক্ষেপণ করব। এর মধ্যে তোমার অপারেশন শেষ হবে আশা করছি। আর আমি যয়নব যোবায়দাদের জানিয়ে দিচ্ছি, তুমি ভালো আছ। ওরা জাবের জহীর উদ্দিনের ব্যাপারে যতটা উদ্বিগ্ন, তার চেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন তোমার ব্যাপারে। ওরা আল্টিমেটাম দেয়ার পর যয়নব যোবায়দারা একটু বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। বার বার টেলিফোন করছে। বেশি ভেঙে পড়েছে আমার মেয়ে সিরিত থানারতা। তবে সিরিত ও যয়নব নিশ্চিত যে, তুমি জাবের জহীর উদ্দিনকে উদ্ধার করবেই। ঈশ্বর তাদের বিশ্বাসকে রক্ষা করবেন নিশ্চয়ই। আর কোনো পরামর্শ কিংবা কোনো কথা আছে আহমদ মুসা?’
‘ধন্যবাদ, তেমন কিছু থাকলে জানাব।’
‘ওকে, গুডবাই সালাম।’ বলে ওপার থেকে টেলিফোন রেখে দিল পুরসাত প্রজাদিপক।
মোবাইল পকেটে রেখে আহমদ মুসা আবদুল কাদেরদের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘শুনলেন তো সব। এখন আমাদের দ্রুত ঘাঁটিতে পৌঁছতে হবে এবং সেটেল করতে হবে ওরা জানবে না এমন ভাবে। জাবের জহীর উদ্দিনের জীবন সত্যি ঝুঁকির মুখে।’
‘আঁকাবাঁকা সুড়ঙ্গটা খুব দীর্ঘ নয়। চার-পাঁচশ’ গজের বেশি হবে না। ঘাঁটি পর্যন্ত পৌঁছতে আমাদের সময় বেশি লাগবে না।’ বলল আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন।
‘শুধু সুড়ঙ্গে দেয়াল নয়, সুড়ঙ্গ পথে আরও প্রতিবন্ধকতা তারা রাখতে পারে। দেয়ালের চেয়ে সেগুলো আরও মারাত্মক হতে পারে আবদুল কাদের। সে হিসেব তোমাকে রাখতে হবে।’ আহমদ মুসা বলল।
কথা শেষ করে আহমদ মুসা এগোলো সুড়ঙ্গ মুখের দিকে। লক্ষ্য, পাথরের ফাঁক দিয়ে দেয়ালের গাঁথুনি পরখ করে দেখা।
আবদুল কাদের কামাল উদ্দিনও তার পিছে পিছে যাচ্ছে।
সুড়ঙ্গ মুখে পৌঁছতেই পকেটের মোবাইলটি আবার বেজে উঠল আহমদ মুসার।
মোবাইল ধরে ‘হ্যালো’ বলতেই ওপার থেকে সালাম ভেসে এল থাইল্যান্ডের সহকারী গোয়েন্দা প্রধান পুরসাত প্রজাদিপকের কণ্ঠ থেকে।
সালাম নিয়ে বলল, ‘বলুন জনাব, নতুন কোনো খবর নিশ্চয়?’
‘হ্যাঁ আহমদ মুসা। তুমিও পেয়ে থাকতে পার। পঁচিশ-তিরিশ মিনিট আগের ঘটনা। তেপাং পাহাড়ের দিক থেকে একটি ইঞ্জিনচালিত দ্রুতগামী বোট হ্রদের দিকে যাচ্ছিল। উত্তরের অবস্থান থেকে আমাদের লোক চ্যালেঞ্জ করলে দ্রুত দিক পরিবর্তন করে ক্যানেলের দক্ষিণ দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে। কিন্তু দক্ষিণ দিক থেকে গর্জে ওঠে হেভি মেশিনগান। তারা গুলির দেয়াল সৃষ্টি করে। কয়েকটা গুলি নাকি বোটকেও হিট করে। বোটটি গতি পরিবর্তন করে পাহাড়ে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। এই খবর তোমাকে দেবার জন্যেই এই টেলিফোন করা।’ ওপার থেকে বলল পুরসাত প্রজাদিপক।
‘আলহামদুলিল্লাহ। সন্দেহ নেই হাবিব হাসাবাহ পালাচ্ছিল। ব্যর্থ হয়েছে তার প্রথম উদ্যোগ।’ আহমদ মুসা বলল।
‘তুমি ঠিকই সন্দেহ করেছিলে আহমদ মুসা। আল্টিমেটামটা তার ছিল ট্র্যাপ। কিন্তু সে তো আল্টিমেটাম না দিয়েই পালাতে পারতো।’ বলল পুরসাত প্রজাদিপক।
‘সে জানে, তার পথে টাইট পাহারা বসেছে। সে চেয়েছিল পাহারাটাকে শিথিল করতে। স্বাভাবিকভাবে সবারই মনোযোগ আল্টিমেটামের সময়ের দিকে থাকবে, এটাই সে ধারণা করেছিল।’ আহমদ মুসা বলল।
‘তুমি বললে, ওটা তার প্রথম উদ্যোগ। আরও উদ্যোগ সে কোন দিকে নেবে?’ বলল পুরসাত প্রজাদিপক।
‘পাহাড়ের পথসহ সম্ভব-অসম্ভব সব উদ্যোগই সে নেবে।’ আহমদ মুসা বলল।
‘আমাদের লোকরা এলার্ট আছে। সবাইকে বলে দিয়েছি। পাহাড়ের দিকে তো তোমরাই আছ।’ বলল পুরসাত প্রজাদিপক।
‘অবশ্যই। আমরা এ দিকটা দেখছি জনাব।’
‘ওকে, ধন্যবাদ। সালাম।’ বলল পুরসাত প্রজাদিপক।
মোবাইল লাইন কেটে গেল ওপার থেকে।
আহমদ মুসা মোবাইল রেখে সরদার জামাল উদ্দিনের দিকে তাকাল। বলল, ‘আমার মনে হয়, হাবিব হাসাবাহ পালাবার জন্যে অতঃপর এই পথই বেছে নেবে।’
‘কিন্তু এ পথ তো সে চেনে না।’ বলল আব্দুল কাদের কামাল উদ্দিন।
‘চেনা পথের চেয়ে তার নিরাপত্তা এখন বেশি প্রয়োজন। পথ না চিনলেও কোন দিকের কোথাও সে পৌঁছতে পারবেই।’
‘ঠিক বলেছেন স্যার। এখন তাহলে আমাদের কি করণীয়?’ আবদুল কাদের বলল।
‘সুড়ঙ্গের প্রাচীর আমরা ভাঙছি না, তাকেই ভেঙে বেরিয়ে আসতে দাও। আমরা তার জন্যে অপেক্ষা করব।’ বলল আহমদ মুসা।
কথা শেষ করেই চাপা আওয়াজের একটা ‘দুপ’ শব্দ শুনতে পেল। তার সতর্ক হয়ে ওঠা দুই চোখ সংগে সংগেই দেখতে পেল, সুড়ঙ্গের দেয়ালের দিক থেকে মার্বেল আকারের একটা সাদা বল গুলির মতো বেরিয়ে এল।
আহমদ মুসা পরিচিত শব্দ শুনেই আঁচ করতে পেরেছিল। এবার সাদা বলটা দেখেই চিৎকার করে উঠল, ‘দূরে ছুটে পালাও তোমরা।’ বলটা কোন গ্যাস বোমা হবে, বুঝতে পেরেছিল আহমদ মুসা।
বলে আহমদ মুসা নিজেও দেয়ালের গোড়া থেকে একটা লাফ দিল যেদিকে বলটি গিয়ে পড়ল তার বিপরীত দিকে। কিন্তু দূরে যেতে পারল না। লাফ দিয়ে সে গিয়ে পড়ল একটা পাথরের প্রান্তে। পাথরটা ছিল আলগা। চাপে পাথরটা উল্টে গেলে আহমদ মুসা ছিটকে অন্য একটা পাথরের ওপর আছড়ে গিয়ে পড়ল।
ততক্ষণে গ্যাস বলটা ফেটে সাদা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল চারদিকটা।
আহমদ মুসা ধরে নিয়েছিল, ওটা সংজ্ঞালোপকারী বোমাই হবে। হাবিব হাসাবাহ চায় আমাদের সংজ্ঞাহীন করে বিনা লড়াইয়ে হত্যা বা বন্দী করে রেখে নিজে সরে পড়বে।
আহমদ মুসা পাথরের ওপর আছড়ে পড়েই নিঃশ্বাস বন্ধ করেছিল। সে জানে, এ ধরনের বোমার কার্যকারিতা দেড়-দু’মিনিটের বেশি থাকে না।
আহমদ মুসা শ্বাস বন্ধ করার সাথে আরেকটা কাজ করল। সেটা হলো, জ্যাকেটের পকেট থেকে রিভলভার বের করে রিভলভারসমেত ডান হাত দেহের নিচে চাপা দিয়ে রাখল।
উপুড় হয়ে পড়ে আছে আহমদ মুসা। কিন্তু মুখ তার ডান দিকে কাত হয়ে আছে। কপালের বাম পাশটা ফেটে যাওয়ায় রক্ত গড়িয়ে এসেছে পাথরের ওপর। চোখ দু’টি তার বন্ধ। ডান হাত ডান পাঁজরের নিচে আটকা। আর বাম হাতটা পাশের একটা পাথরের ওপর দিয়ে ঝুলছে। নিরেট সংজ্ঞাহীন দেহের একটা অবস্থা।
আহমদ মুসা পাথরের ওপর পড়েই ভাবতে শুরু করেছে, যে ভাবেই হোক, হাবিব হাসাবাহ এখনি বেরিয়ে আসবে। সে তাদের অজ্ঞান অবস্থার সুযোগ নেবে। দেয়ালের গায়ে কোন গোপন দরজা আছে? গোপন দরজা রেখেই হয়তো দেয়াল তৈরি হয়েছে। তারপর পাথর ছড়িয়ে তাকে আরও আড়াল করে ফেলা হয়েছে। এমনটা খুবই স্বাভাবিক! আর দেয়ালের গায়ে চোখ রেখে দেখার মতো কোন ঘুলঘুলি নিশ্চয় ছিল। সেই ঘুলঘুলি দিয়েই গ্যাস বোমা ছোঁড়া হয়েছিল।
এক মিনিটও তখন পার হয় নি। দেয়ালের দিকে বোমা ফাটার একটা আওয়াজ হলো। আহমদ মুসা চোখ একটু ফাঁক করে দেখল, দেয়ালের এক প্রান্তে বোমার বিস্ফোরণ ঘটেছে।
বুঝল আহমদ মুসা, তাহলে গোপন দরজা নেই। বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেয়ালের গায়ে সুড়ঙ্গ সৃষ্টি করা হলো বেরিয়ে আসার জন্যে। দু’মিনি্ট হয়নি, তাই আহমদ মুসা শ্বাস তখনও বন্ধ রেখেছে।
আবার চোখ বুজল আহমদ মুসা। ওরা এখনই বেরিয়ে আসবে।
বোমা বিস্ফোরণের আগুন নিভে গেছে।
সুড়ঙ্গের দেয়ালের গায়ে প্রায় এক গজ ব্যাসের একটা গোলাকার পথ খুলে গেছে।
হাবিব হাসাবাহ তাকালো তার পাশে দাঁড়ানো জহীর উদ্দিনের দিকে।
জাবের জহীর উদ্দিনের বিধ্বস্ত চেহারা। চুল উষ্কখুষ্ক। কাপড় ময়লা। দুই হাত পিছমোড়া করে বাঁধা। পায়েও শিকল পরানো।
হাবিব হাসাবাহর পেছনে দাঁড়িয়ে আছে দু’জন। তাদের দু’জনের হাতে স্টেনগান। দু’জনেরই পিঠে ভারি ব্যাগ।
হাবিব হাসাবাহর হাতে রিভলভার এবং কাঁধে ঝুলানো একটা ব্যাগ।
হাবিব হাসাবাহ জাবের জহীর উদ্দিনের দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে পেছনের একজনকে বলল, ‘তুমি জাবেরকে নিয়ে বাইরে যাও। দেখ ওদের তিন জনের কি অবস্থা। স্টেনগানের ট্রিগারে আঙুল রেখে বাইরে যাবে। দেখ যদি কেউ জ্ঞান না হারায়, তাহলে সংগে সংগেই শেষ করে দেবে।’
লোকটা নীরবে একটা স্যালুট করে জাবের জহীর উদ্দিনকে ঠেলে নিয়ে দেয়ালের পথ দিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল।
লোকটা বাইরে বেরিয়ে দেয়ালের গোড়া পার হয়ে সুড়ঙ্গ মুখের সামনেই সরদার জামাল উদ্দিন ও আবদুল কাদের কামাল উদ্দিনকে পাশাপাশি পেল। দু’জনই সংজ্ঞাহীন। তারপর সে জাবের জহীর উদ্দিনকে নিয়ে এগোলো আহমদ মুসার কাছে। জাবেরকে দিয়ে পাথরের ওপর দিয়ে ঝুলন্ত তার হাত নেড়ে দেখল সংজ্ঞা নেই।
লোকটি পেছনে হটে সুড়ঙ্গ মুখের দিকে একটু এগিয়ে বলল, ‘স্যার, সবাই সংজ্ঞাহীন।’
হাবিব হাসাবাহ তার দ্বিতীয় বডিগার্ড নিয়ে বেরিয়ে এল।
হাবিব হাসাবাহর চোখ প্রথমেই পড়ল সরদার জামাল উদ্দিন ও আবদুল কাদের কামাল উদ্দিনের ওপর। তার ঠোঁটে ক্রুর হাসি ফুটে উঠল। কয়েক ধাপ এগিয়ে তাদের দু’জনের পাঁজরে দু’টি লাথি মেরে চিৎকার করে বলল, ‘এ গাদ্দার দু’জনকে শান্তিতে মরতে দেব না। জীবন্ত টুকরো টুকরো করব। এরা শুধু আহমদ মুসাকে সাহায্য করেনি, আমাদের অনেক লোকের হত্যার নিমিত্তও তারা।’
রিভলভার পকেটে রেখে একটা চুরুট ধরাল হাবিব হাসাবাহ। এগোলো এবার আহমদ মুসার দিকে। আহমদ মুসাকে এক নজর দেখে বলল, ‘এ হারামজাদাই তাহলে আহমদ মুসা। সাধারণ একজন হয়েও অসাধারণ সবার কাছে। আজ হাবিব হাসাবাহর হাতে এর সব লীলাখেলার শেষ। আমাদের কত যে ক্ষতি করেছে, তার হিসেব দুঃসাধ্য, একে একবার নয়, লাখো বার মারলেও এর পাপ মোচন হবে না।’
হাবিব হাসাবাহ যখন কথা বলছিল, তখন জাবের জহীর উদ্দিন চোখ ছানাবড়া করে তাকিয়ে ছিল আহমদ মুসার দিকে। এই তাহলে তাদের স্বপ্নের নায়ক আহমদ মুসা! স্বপ্নপুরুষ! গোটা দেহে তার শিহরণ জাগল। তার সাথে বুকের ভেতরটা তার মোচড় দিয়ে উঠল আহত আহমদ মুসাকে সংজ্ঞাহীনভাবে পাথরের ওপর পড়ে থাকতে দেখে। আজই কি এই অবস্থায় এই মহান বিশ্বনায়কের জীবনের ইতি ঘটতে যাচ্ছে? হাহাকার করে উঠল তার মন। সে চিৎকার করে বলল, ‘হাবিব হাসাবাহ, তোমরা একে মের না। তোমরা আমার কাছে, আমাদের কাছে যা চাও তা দেব, যা করতে বলবে তা করব। আমি থাইল্যান্ডের প্রতি ঘরে ঘরে তোমাদের পক্ষে কাজ করব, তোমরা শুধু একে মের না।’ কান্নাঝরা কণ্ঠ জাবের জহীর উদ্দিনের।
হো হো করে হেসে উঠল হাবিব হাসাবাহ। বলল, ‘থাইল্যান্ডে আমাদের এখন করার কিছুই নেই। আমরা আর কিছু চাই না। তোমার এবং তোমাদের আর কোন মূল্য আমাদের কাছে নেই। সবই ফাঁস হয়ে গেছে। এখন আমাদের শুধু প্রতিশোধের পালা। তোমাকে মারব সবার শেষে। তোমাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেই আমরা দুঃসময় পাড়ি দেব। আমাদের যখন মুক্তি, তখনই তোমার ঘটবে মৃত্যু।’
বলেই হাবিব হাসাবাহ দু’জন গার্ডকে লক্ষ্য করে বলল, ‘তোমরা গিয়ে আহমদ মুসাকে চিৎ করে শুইয়ে জ্ঞান ফেরাবার চেষ্টা কর। ওর জ্ঞান ফিরলে তবেই নাটক জমবে। জ্ঞান ফিরলে ওর ডান হাতটা আগে কাটবো। ঐ হাতই করেছে আমাদের বেশিরভাগ সর্বনাশ।’
গার্ড দু’জন হাবিব হাসাবাহকে নীরবে স্যালুট দিয়ে তার হুকুম পালনের জন্যে এগোলো।
ওরা পাশাপাশি হেঁটে এগোচ্ছে আহমদ মুসার দিকে। পাহাড়ের পাদদেশে পিন-পতন নীরব পরিবেশে তাদের পায়ের শব্দ খুবই স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে আহমদ মুসা। তারা কতটা এগোলো, তারা কতটা এখনো দূরে তা সহজেই পরিমাপ করতে পারছে আহমদ মুসা চোখ বুজে থেকেই।
আহমদ মুসা আত্মরক্ষার জন্যে আক্রমণকেই বেছে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। প্রথম সুযোগকেই সে কাজে লাগাবে।
ওদের পায়ের শব্দ যখন আহমদ মুসার পায়ের কাছাকাছি পৌঁছল, তখন আহমদ মুসা চোখ খুলল এবং তার রিভলভার ধরা ডান হাতও বেরিয়ে এল পাঁজরের নিচ থেকে।
আহমদ মুসার দিকে এগিয়ে আসা দু’জনের দৃষ্টি আহমদ মুসার দিকেই নিবদ্ধ ছিল। দেখতে পেল ওরা আহমদ মুসার চোখ এবং রিভলভার নিয়ে ডান হাত বেরিয়ে আসার দৃশ্য।
ভূত দেখার মতো আঁতকে উঠে কাঁধে ঝুলানো স্টেনগানে ওরা হাত দিতে যাচ্ছিল।
আহমদ মুসার রিভলভার বেরিয়ে আসার পর এক সেকেন্ডও অপেক্ষা করেনি। আহমদ মুসার তর্জনী পর পর দু’বার ট্রিগারে চেপে বসল।
দু’জনেই কপালের মাঝ বরাবর গুলি খেয়ে নিঃশব্দে ছিটকে পড়ল মাটিতে।
দ্বিতীয় গুলির পর তৃতীয় একটা গুলিও আহমদ মুসার রিভলভার থেকে বেরিয়ে গেল প্রায় সংগে সংগেই।
আহমদ মুসা দেখতে পেয়েছিল, হতচকিত হাবিব হাসাবাহও হাতের চুরুট ফেলে দিয়ে পকেটে হাত দিয়েছিল রিভলভার বের করার জন্যে।
আহমদ মুসার তৃতীয় গুলি গিয়ে বিদ্ধ করল হাবিব হাসাবাহর রিভলভার ধরা ডান হাতকে।
তার হাত থেকে রিভলভার ছিটকে পড়ে গেল।
হাত থেকে রিভলভার ছিটকে পড়ার সাথে সাথে হাবিব হাসাবাহর বাম হাত চলে গেল বাম পকেটে। বিদ্যুৎ বেগে বেরিয়ে এল ডিম আকৃতির একটা গোলাকার বস্তু নিয়ে।
তার দু’চোখে আগুন। গুলিতে গুঁড়িয়ে যাওয়া রক্তাক্ত ডান হাতের দিকে তার বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ নেই। মরিয়াভাব তার চোখে-মুখে।
আহমদ মুসা বুঝল কি ঘটতে যাচ্ছে।
এবার চতুর্থ গুলি ছুঁড়ল আহমদ মুসা।
হাবিব হাসাবাহর হাত হাতের বস্তুটিকে ছোঁড়ার পর্যায়ে উঠে আসার আগেই আহমদ মুসার চতুর্থ বুলেটটি গিয়ে বিদ্ধ করল হাবিব হাসাবাহর বুককে।
গুলি খেয়ে তার দেহ টলে উঠলেও হাবিব হাসাবাহ ছুঁড়তে চেষ্টা করেছিল তার হাতের বস্তুটি। হাতটা তার সামনের দিকে এগিয়েও আবার ঢলে পড়ে গেল। তার সাথে সাথে সে টলে চিৎ হয়ে পড়ে গেল একটা পাথরের ওপর।
জাবের জহীর উদ্দিন বোবা বিস্ময় নিয়ে তাকিয়েছিল আহমদ মুসার দিকে।
আহমদ মুসা জাবের জহীর উদ্দিনের দিকে এগোবার জন্যে পা তুলে বলল, ‘জাবের তুমি ঠিক আছ তো?’
কোন উত্তর না দিয়ে জাবের জহীর উদ্দিন পাগলের মতো ছুটে এসে আহমদ মুসার পায়ের ওপর আছড়ে পড়ল। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল, ‘আপনাকে ভাই বলব, না স্যার বলব, না মহান আমীর বলব কিছু বুঝতে পারছি না। বদর যুদ্ধে মহানবী স.-এর বাহিনীর সাহায্যে আসা সেই ফেরেশতার মতো আপনি এসেছেন। কল্পনাতেও যাকে ছোঁয়া যায় না, সেই আপনাকে পাঠানোর মতো এত করুণা আল্লাহ করেছেন আমাদেরকে!’
আহমদ মুসা রিভলভার পকেটে রেখে জাবের জহীর উদ্দিনকে তুলে বুকে জড়িয়ে ধরল। বলল, ‘তোমার ওপর দিয়ে অনেক নির্যাতন-নিপীড়ন গেছে। বদরের সাহাবীদের মতো ত্যাগ, ঈমান ও দৃঢ়তার পরিচয় তোমরা দিতে পেরেছ বলেই আল্লাহর সাহায্য তোমাদের জন্যে এসেছে।’
কথা শেষ করেই আহমদ মুসা বলল, ‘চল জাবের, সরদার জামাল ও আবদুল কাদের কামাল উদ্দিনদের জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করি। তুমি ওদের চেন না? কোহেতান কবিলার লোক এরা।’
‘আমার আব্বার কাছ থেকে এই কবিলার গল্প শুনেছি। এরা নাকি আমাদের পরিবারের খুব অনুগত। তবে এরা পাহাড় থেকে খুব একটা বাইরে যেত না। আমার সাথে দেখা হয়নি। হাবিব হাসাবাহদেরকে এদের ব্যাপারে খুব গল্প করতে শুনেছি। প্রথম দিকে প্রশংসা শুনেছি, কিন্তু দু’দিন থেকে এদের বিশ্বাসঘাতক বলে গাল দিচ্ছে। ওদের ব্ল্যাক ঈগলের সবচেয়ে মূল্যবান লোকদের নাকি তারা আপনার সাহায্যে হত্যা করেছে।’
আহমদ মুসার পাশে হাঁটতে হাঁটতে কথা বলছিল জাবের জহীর উদ্দিন। আবদুল কাদেরদের পাশে এসে গেছে আহমদ মুসারা। আহমদ মুসা পকেট থেকে সরু ইঞ্চিখানেক লম্বা এক অ্যালুমিনিয়াম টিউব বের করে জাবের জহীর উদ্দিনের হাতে দিয়ে বলল, ‘টিউবের মুখটা ওদের নাকে ধরে দু’পাশের লাল বোতামে একসাথে দু’তিনবার চাপ দাও।’
জাবের জহীর উদ্দিন টিউবটা নিয়ে এগোলো আবদুল কাদেরের দিকে।
আহমদ মুসা পকেট থেকে মোবাইল বের করে বলল, ‘জাবের, তোমার কথা যয়নব যোবায়দা ও ফরহাদ ফরিদ উদ্দিনদের জানিয়ে দেই।’
একটু থেমেই আবার বলল, ‘জাবের, তোমার হবু শ্বশুর পুরসাত প্রজাদিপককেও জানিয়ে দেই। সিরিত থানারতা ওদিকে পাগলের মতো হয়ে আছে।’
থমকে দাঁড়িয়েছে জাবের জহীর উদ্দিন। ফিরে তাকিয়েছে আহমদ মুসার দিকে। লজ্জায় রাঙা হয়ে গেছে তার মুখ। বলল সে, ‘আপনি সিরিত থানারতাকে চেনেন? স্যারকে চেনেন?’
‘শুধু চিনব কেন? ওদের বাড়িতে থাকলাম, খেলাম। সব বলব, যাও তুমি ওদের জ্ঞান ফেরাও।’ বলল আহমদ মুসা।
চলার জন্যে ফিরে দাঁড়াতে গিয়েও আবার বলল, ‘স্যার, দাদী ও যয়নবকেও এটা বলেছেন?’
মিষ্টি হাসল আহমদ মুসা। বলল, ‘শুধু বলেছি নয়, সিরিত থানারতার সাথে ওদের কথা বলিয়েও দিয়েছি। কি, খুশি তো! তোমার কঠিন কাজটা আমি করে দিয়েছি।’
জাবের জহীর উদ্দিন লাজনম্র একটু হাসি হাসল। বলল, ‘স্যার, আপনার সাক্ষাৎ যে পায়, তার এমন সৌভাগ্যই হয়। আমি সংগ্রামী আহমদ মুসাকেই চিনতাম স্যার এতদিন। কিন্তু এই মিনিটখানেকের পরিচয়েই আমার মনে হচ্ছে, ভাই আহমদ মুসা, মানুষ আহমদ মুসা তার চাইতে অনেক বড়।’
কথাগুলো বলতে গিয়ে জাবের জহীর উদ্দিনের কণ্ঠ ভারি হয়ে উঠেছে। চোখের কোণ তার ভিজে উঠেছে।
কথা শেষ করেই জাবের জহীর উদ্দিন ঘুরে দাঁড়িয়ে আবদুল কাদেরের কাছে যাবার জন্যে পা বাড়াল।
আহমদ মুসা মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল হাবিব হাসাবাহর শেষ খবরটা এবং জাবের জহীর উদ্দিনের সুস্থ থাকার কথাটা যয়নব ও পুরসাত প্রজাদিপকদের জানানোর জন্যে। কথা বলল আহমদ মুসা থাই প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও এদিকে আয়েশা আলিয়াদের সাথেও।
তারপর টেলিফোন করল আন্দামানে আহমদ শাহ আলমগীর-সুষমার কাছে, সুস্মিতা বালাজীর কাছে, স্বরূপা সিংহাল-সাজনা সিংহালের কাছে, শাহবানুদের কাছে এবং হাজী আবদুল্লাহ ও খালাম্মার কাছে।
শেষ টেলিফোনটা করল মদীনা শরীফে ডোনা জোসেফাইনের কাছে।
টেলিফোন শেষ করতে বেশ সময় লেগেছে।
মোবাইল বন্ধ করে আহমদ মুসা তাকাল আবদুল কাদেরদের দিকে। দেখল, ওদের জ্ঞান ফিরেছে। গল্পে ব্যস্ত ওরা।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now