বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন
বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

বীভৎস্য এক পূর্ণিমারাত

"ভৌতিক গল্প " বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিয়েন সরকার (০ পয়েন্ট)

X ( বীভৎস্য এক পূর্ণিমারাত ) . || Jubyda baset || . জিপ থেকে নেমেই চোখ জুড়িয়ে গেল তিশানের। সামনে বাশের তৈরি ছোট আধ খোলা গেট আর তার ওপাশেই খুব সুন্দর সাজানো গোছানো বাগান। গেট ঠেলে ভেতরে পা রাখতেই একটু থমকে দাঁড়ালো , যেন বাগানের সৌন্দর্য অবলোকন এ এক মিনিট নিরবতা পালন করছে। গোলাপ, গাদা, জবা, পাতাবাহার , ঘাসফুল, গেটের একপাশে হাস্নাহেনা অন্য পাশে শিউলি, আরো কত চেনা অচেনা ফুলের সমারোহ যা বলে শেষ করা যাবে না। কেয়ারটেকার এর ডাকে তিশানের নিরবতা পালনে বিঘ্ন ঘটল। -- ছোট বাবু, বড় বাবু আর ঘন্টা খানেক বাদেই চলে আসবেন আপনি ভেতরে চলুন মালকিন অপেক্ষায় আছেন সেই কখন থেকে। তিশান আরেকবার সমস্ত বাগানে চোখ বুলিয়ে বাংলোটার দিকে তাকালো । আবারো আরেকদফা ভালো লাগা ঘিরে ধরলো। খুব ছোট্ট এবারের বাংলোটি। আকারে একদম গোল , সামনে ইউ এঙ্গেলের বারান্দা। বারান্দার মাঝ বরাবর ছোট্ট একটি গোল টেবিল যেন বাংলোর আকৃতির সাথে মিলিয়ে কেনা আর টেবিলের চারপাশে মাত্র তিনটি চেয়ার। দেখে মনে হলো চেয়ার দু'টি থাকে একটি ওর জন্য আজ যোগ করা হয়েছে । ঠোটে একচিলতে হাসি ফুটে উঠল। কারন বাংলোটি ওর ছোট মামার, মানে চাকরির সুবাদে এখন এই বাংলোতে থাকেন ছোট মামা ও মামি। এনাদের কোন সন্তান নেই, তিশান কে নিজের সন্তানের মতোই ভালোবাসেন মামা মামি। তাইতো স্কুল, কলেজ ছুটি হলেই মামা যেখানেই থাকুক সেখানেই তিশান কে ছূটতে হয়। মাঝে মাঝে মামা মাকে বলেন বুবুরে তোর তিশান কে আর দেবনা আমি রেখে দেব। তাদের ভালোবাসায় মনে হয় তিশানের দুটি বাবা আর দুটি মা। নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয়। বারান্দায় পা রাখতেই ছোট মামী ছুটে এসে বুকে টেনে নিলেন । তিশান কিছুটা লজ্জা পেয়ে বলল, মামী আমি এখন ইন্টার প্রথম বর্ষের ছাত্র তুমি এমন ভাবে আদর করো যেন আমি আট বছরের বাচ্চা। মামী হেসে বলেন বাচ্চা যত বড়ই হোক না কেন বাবা মার কাছে সে আজীবন বাচ্চাই থাকেরে। যা বাবা হাত মুখ ধুয়ে নে, আমি খাবার টেবিলে দিচ্ছি খেয়ে একটু বিশ্রাম কর। -- না মামী আগে ঘর গুলি ঘুরে দেখে নেই তারপর ফ্রেশ হয়ে মামার জন্য অপেক্ষা করবো, একসাথে খাবো। মামী আরেকবার কপালে চুমু এঁকে ভিতরে চলে গেলেন আর তিশান ঘর গুলি ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো । সর্বকুল তিনটি বেডরুম কোন ড্রয়িং বা ডাইনিং রুম নেই। আর একটি রান্নাঘর। তিনটি বেডরুম এর একটিতে সোফা সাজিয়ে ড্রয়িংরুম করা হয়েছে। খুব বেশি অতি সজ্জিত নয় দুটি সিঙ্গেল সোফা আর একটি ডাবল মাঝখানে গোল টি টেবিল। মজাই লাগলো গোল বাংলোয় দেখছি গোলের সমারোহ । ঘরের এক কর্ণারে বেশ বড় একটি ঝাউগাছ আর অন্য পাশে টিভিট্রলিতে টিভি শোভা পাচ্ছে। দেয়ালে বিভিন্ন তৈলচিত্র ও একটি আজব আকৃতির ঘড়ি ঝুলছে। আজব এজন্যই যে বিশাল এক সিংহের ঠিক পেট বরাবর ঘড়িটি বসানো । এমন জিনিষ যে মামা কোত্থেকে জোগার করে তা আল্লাহই ভালো জানেন। রান্নাঘরে প্রবেশ করে বেশ অবাক হয়ে গেল। তেকোনা রান্নাঘরটি বেশ প্রশস্ত , একপাশে রান্নার সরঞ্জামাদি দিয়ে সাজানো আর অন্যপাশে ডাইং টেবিল। বাংলোটির নির্মাণ কর্তার রুচির তারিফ করতে হয়। হাত মুখ ধুয়ে ওর জন্য নির্ধারিত রুমে এসে খাটের উপর পা ঝুলিয়ে আধশোয়া হয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলো । চোখ লেগেই এসেছিলো এমন সময় মামার ডাকে লাফ দিয়ে উঠে বসলো । মামা ওর বন্ধুর মতো , এসেই বলে উঠলেন, আরে ইয়াং ম্যান এটুকুতেই ক্লান্ত হলে চলবে? এখনো বুড়িয়ে যাওনি, চটপট চলো কিছু খেয়ে নেবে। দুজনেই বারান্দার গোল টেবিলটায় এসে বসল, মামী খাবার তুলে তুলে দিতে লাগলেন। খাওয়া শেষ হতেই মামা হাঁক ছাড়লেন, আব্দুল,,,, ও আব্দুল.... কেয়ার টেকার এসে দাঁড়াতেই মামা বললেন, আজ বিকাল থেকে তোমার ছোট বাবু কে তুমি বনটা ঘুরে ঘুরে দেখাবে আর হ্যাঁ এক মূহুর্ত একা ছাড়বে না। আর সন্ধ্যের আগেই ফিরবে। কাল সকালে পূবের নদীর দিকে নিয়ে যাবে ওখানে শীতের পাখি আসে। -- জ্বী বড় বাবু আপনি চিন্তা করবেন না। আমি সব সময় ছোট বাবুর সাথেই থাকব। এবার তিশানের দিকে ঘুরে বললেন শোন বাবা গ্রামের কারো সাথে কোন কথা বলার দরকার নেই, আমি জানি তুমি খুব কৌতুহল প্রবণ ছেলে তাই আগে ভাগেই বলে রাখছি এই গ্রামের মানুষ কুসংস্কারাচ্ছন্ন। তাই তাদের থেকে দূরেই থেকো । মামা কাজে চলে গেলেন আর তিশান কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আব্দুল চাচাকে সঙ্গে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো বন ঘুরে দেখতে। ঘুরতে ঘুরতে চাচা একসময় বলে উঠল, ছোট বাবু আজ অনেক হয়েছে সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে ফিরতে দেরি হলে বড় বাবু রাগ করবেন। তারপর দুদিন কেটে গেলো পাখি শিকার আর বনের আশপাশ দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে। পরদিন সকাল সকাল বেরিয়ে গেলো তিশান। কেয়ারটেকার কে বলল, চাচা আজ একটু বনের ভিতরের দিকে যাব, প্রতিদিন একই জিনিষ দেখতে ভালো লাগছে না। হাটতে হাটতে অনেকটা ভেতরে চলে এল ওরা। যত ভিতরের দিকে যাচ্ছে বনটা ততো ঘন হয়ে আসছে। সূর্যের আলো ততোটা ম্লান হয়ে আসছে। হঠাৎ একটা গাছের উপর চোখ পড়তেই দেখতে পেলো মোটা একটা ডালে মাচার মত করে তৈরি করে একটা লোক ওতে রাইফেল হাতে বসে আছে। ও বুঝতে পারলো বন পাহারায় নিয়োজিত । উপরে উঠার বাহানা করতেই আব্দুল চাচা তুলে দিলেন মাচায়। আর বললেন ছোট বাবু আপনি ওখানে একটু বসেন আমি আসতেছি বলেই বনের একদিকে হাটা ধরলো। আর তিশান জাপান থেকে বড় মামার পাঠানো বাইনোকুলার চোখে লাগালো। আকারে অতি ক্ষুদ্র কিন্তু বিশাল শক্তিশালী । অনেক দূরের জিনিষও অনেক কাছে দেখা যায়। বাইনোকুলার চোখে লাগাতেই সামনের গাছপালা যেন এক লাফে ওর হাতে কাছে চলে এল। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে দেখতেই উত্তরের দিকে একটা জায়গায় কি যেনো চিকচিক করে উঠলো । ভালো করে দেখার জন্য উঠে দাঁড়াতেই দেখতে পেল ছোট্ট একটি জলাশয় আর তার উপর সূর্যের আলো পড়ায় পানি চিকচিক করছে আর তাতে কিছু পদ্ম তার পাতা বিস্তৃত করে ভেসে আছে। পাহারাদার কে ওই জায়গাটা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেই তার মুখ শুকিয়ে গেল, বলল বাবু ও জায়গা খুব খারাপ জায়গা, ওই ঘটনার পর থেকে আর কেউ ওদিকটায় যায় না তবে প্রতি পূর্ণিমারাতে ওখানে লাশের ছড়াছড়ি থাকে। তাও আবার জলদস্যুদের। পুলিশ অনেক চেষ্টা করেছে রহস্য জানার জন্য কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ সেই রহস্যভেদ করতে পারেনাই। তবে জলাশয়ের পাশে একটা ছোট্ট কুঠুরি আছে ওতে এক কাঠুরে আর তার তেরো কি চৌদ্দ বছরের মেয়েকে নিয়ে থাকতো। বড়ই নিরিহ আর অভাগা ছিলো বেচারা। এক পূর্নিমার রাতে উত্তর পাশে যে গ্রাম আছে ওখানকার কিছু লোক বনের মধ্য থেকে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ পায়। ভয়ে তারা আর বনের মধ্যে আসেনি আর সেই রাতের পর থেকে সেই কাঠুরে আর তার মেয়েকে কেউ কোনদিন দেখেনি। গ্রামের অনেকেরই ধারণা ওদের সাথে পূর্ণিমারাতে খারাপ কিছু হয়েছিলো যার বদলা এখনো চলছে কিন্তু সেদিন কি হয়েছিল সেটাই একটা রহস্য। তিশান মনে মনে বেশ রোমাঞ্চ অনুভব করলো । আর মনে মনে ঠিক করলো একদিন আব্দুল চাচার চোখ ফাকি দিয়ে ও একাই যাবে ঐ জায়গায় আর রহস্য ওর উম্মোচন করতেই হবে। ও আবার জানতে চাইলো , পূর্ণিমা ছাড়া কি কোন লাশ পাওয়া যায় না? --- না বাবু, শুধু পূর্নিমা রাতেই পাওয়া যায়। -- পূর্ণিমা কবে??? -- এইতো আর দিন পাঁচেক পর। তিশান মনে মনে দমে গেলো । এখনো পাঁচদিন অপেক্ষা করতে হবে ওদিকে আবার ওর ফিরার সময় হয়ে এলো। দু'তিনদিন এদিক সেদিক ঘুরাঘুরিতে কাটিয়ে দিলো। মামা এসে বললেন বাবা তুমি কাল ফিরে যাও তোমার মা যেতে বলেছেন। কিন্তু তিশান ঠিকি বুঝতে পেরেছে মামা ওকে কেন পাঠাতে এতো ব্যস্ত। কারন মামা চাননা যে তিশান গ্রামে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি জানুক। পরদিন তিশান অসুস্থতার ভান করে সারাদিন পড়ে রইলো। আর মামাও যাওয়ার জন্য চাপ দিতে পারলেন না। চলে এলো ওর কাঙ্ক্ষিত সেই দিন। আজই পূর্ণিমা। সকাল থেকেই কেমন উত্তেজনা অনুভব করছে। একদিকে ভয়ও লাগছে আবার অন্যদিকে কৌতুহল যেনো বুকে চেপে বসেছে। এমন সময় মামা ঘরে এসে বললেন, তিশান বাবা তুমি অসুস্থ বাহিরে যেওনা আজ, আমি আব্দুলকে নিয়ে একটু কাজে যাচ্ছি বিকালেই ফিরে আসব। তিশান না চাইতেই যেন হাতে চাঁদ পেয়ে গেলো , আরে এটাইতো চাইছিলাম মনে মনে বলে উঠল। দুপুর তিনটা, মামী শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন এই সুযোগে চুপি চুপি বাংলো থেকে বেরিয়ে বনের উত্তরের পথ ধরলো। বাইনোকুলার এ যতোটা কাছে দেখা গিয়েছিলে আসলে অতো কাছে না তা এবার হাটতে হাটতেই হাড়ে হাড়ে টের পেলো। টানা তিন ঘন্টা হেটে ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে পৌঁছালো সেই ঝিলের ধারে। প্রথমে ভেবেছিল পথ হারিয়ে ফেলেছে তাই কিছু দূর পর পরই ওকে উঁচু ডালে উঠে ঝিলের পথ চিনে নিতে হয়েছিলো। ঝুপ করেই যেন সন্ধ্যা নেমে এলো। চারপাশে ঝিঝিপোকার ডাকে মুখরিত বন। মাঝে মাঝে শেয়াল ও কিছু অন্যান্য জন্তু জানোয়ার এর ডাকও ভেসে আসছে তবে তা বহু দূর হতে। কেমন গাঁ ছমছম করতে লাগলো । ভূল করলাম না তো? নিজের কাছেই শুধালো যেন। এখন যদি বিপদ আসে তো বাঁচানোর কেউ নেই আশেপাশে । আর থাকলেও ও যতদূর জানে আজ রাতে কেউ বের হবে না। আজ রাত ওদের কাছে বিভীষিকার রাত। আজ ওরা অপেক্ষা করবে ভোরের আর অপেক্ষা করবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লাশের। অন্ধকার নেমে আসতেই হাতের টর্চ জালিয়ে ঝিলের পাশেই গড়া কুটিরে ঢুকে গেলো । রহস্য উম্মোচন করতে এসেছে তাই টর্চ, দিয়াশলাই , বাইনোকুলার , মোমবাতি আর একটি চাদর সঙ্গে করেই নিয়ে এসেছে। বড্ড ভুল হয়ে গেছে একটা মাসুদ রানা আর একটা মশার কয়েল আনলে ভালো হতো। সময় টা দারুন উপভোগ করা যেত। কি আর করার লাইট ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কুটিরের ভেতর টা দেখতে লাগলো। বেশ ছিমছাম , একটা কাঠ দিয়ে বানানো মাচা খাট হিসাবে ব্যাবহার করা হত। একটা মাটির চুলা, কিছু টিনের বাসন কোসন। কুটিরের বেড়ার সাথে ছোট একটা আয়না ঝুলছে আর কিছু দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র এদিক সেদিক গুছিয়ে রাখা। প্রতিটি জিনিশপত্রের উপর ধুলোর বেশ মোটা আস্তরণ পড়ে আছে। দেখেই বেশ বোঝা যাচ্ছে কয়েক বছর এখানে কোন মানুষের পা পড়েনি। কিছুটা জায়গা পরিস্কার করে চাদর বিছিয়ে বসল। খেয়াল করলো হঠাৎই যেন চারপাশ টা নিস্তব্ধতায় ডুবে গেছে। একটু আগে যে ঝিঝিপোকার ডাক শোনা যাচ্ছিল এখন সেটাও আর শোনা যাচ্ছে না। বনের ভেতর রাতের এত নিস্তব্ধতা যেন বড়ই বেমানান। কেমন ভয় ভয় করতে লাগলো। ভাবলো একা না এসে কাউকে সঙ্গে আনলে ভালো হতো, বরই বোকামি হয়ে গেছে। আচমকা কাছেই কাঠ কাটার আওয়াজ ভেসে এল। এক নাগারে যেন কেউ খট খট খট করে কাঠ কেটেই চলেছে। এই রাতে কে কাঠ কাটে দেখার জন্য কুটিরের আধ ভাঙা খিড়কি দিয়ে উকি দিতেই দেখলো অদূরেই একটি বাশ দিয়ে বানানো মশাল হাতে দাঁড়িয়ে তেরো কি চৌদ্দ বছরের একটি মেয়ে আর তার সামনে দু তিন হাত দূরে একটি লোক খালি গায়ে লুঙ্গি কাছা দিয়ে কাঠ কাটছে। দুজনের কারো মুখ তেমন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে না। প্রায় ঘন্টা পেরিয়ে গেলো কিন্তু লোকটা কাঠ কেটেই চলেছে যেন দেহে কোন ক্লান্তি নেই এদিকে তিশানের দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা দুটি ব্যথা হয়ে এল। তিশান মাচায় এসে বসতেই অনেকগুলি পায়ের আওয়াজ ও মৃদু ফিসফিসানি শুনতে পেল। শুকনো পাতার মড়মড় আওয়াজ কানে খুব বাজলো । গায়ে কাটা দিয়ে উঠল। আবারো উকি দিলো , দেখলো প্রায় দশ থেকে পনেরো জন হবে কুটিরের সামনে দিয়ে যেখানে কাঠুরে কাঠ কাটছে ওদিকে যাচ্ছে। একটু পরেই একটি মেয়ের গগন বিদারী আর্তচিৎকার কানে এলো। দেখলো লোকগুলির একজন মেয়েটিকে কাধে তুলে নিয়েছে আর বাকিরা কাঠুরে কে তারই কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে চলেছে। কি বিভৎস্য দৃশ্য, সহ্য করতে না পেরে নিজের অজান্তেই চিৎকার দিয়ে উঠল। কিছুক্ষণ পর মেয়েটির উপর পাশবিক অত্যাচার চালিয়ে ওকেও কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেললো । তিশান কুটিরের দরজা খোলার অনেক চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না আবারো জানালায় এসে চিৎকার করতে লাগলো ,, বাচাও কেউ ওদের বাচাও,, মেরে ফেললো ,, খুন, খুন, খুন। কিন্তু কেউ যেন ওর চিৎকার শুনতেই পেলো না। লোকগুলি কাঠুরে আর মেয়েটির লাশ বড় বড় কাঠের গুড়ি বেধে জলাশয়ে ফেলে কুটিরের সামনে দিয়ে চলে গেল। আবারো নিস্তব্ধতায় ভরে গেলো । তিশান থরথর করে কাঁপতে লাগলো , একি দেখলো, ও ভাবতেও পারেনি জীবনে এতো বিভৎস্য ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখতে পাবে। ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে মাচায় বসে থরথর করে কাঁপতে লাগলো । কিছুক্ষণ পর অনেকগুলি লোকের ভয়ার্ত চিৎকার ভেসে এল যেদিকে লোকগুলি গিয়েছিলো সেদিক থেকে। মনে হলো হুরপার করে অনেকগুলি লোক এদিকে ছুটে আসছে। তিশান দেখলো এই সেই নরপিশাচ গুলি যারা একটু আগে দুটি নিরপরাধ মানুষকে পশুর মতো কুপিয়ে মেরেছে। লোকগুলি কুটিরের দরজা ধাক্কাতে লাগলো আর ভয়ার্ত চোখে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। হঠাৎ করেই আবির্ভাব হলো দুটি ছায়ামূর্তির, একটি মেয়ে আরেকটি ছেলে মানুষের মুর্তি আকারে অনেকটা তাই মনে হলো। ছায়ামূর্তি দুটি একে একে দশ -- পনেরো জন মানুষ কে কুপিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেললো ঠিক যেমন এরা মেরেছিলো কাঠুরে আর তার মেয়ে কে। তারপর ছায়ামূর্তি দুটি এগিয়ে চললো জলাশয়ের দিকে.... .... ...... ..... এখনো প্রতিবছর পূর্ণিমা রাতে কুটিরের সামনে জলদস্যুদের বিভৎস্য লাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়। ( কাল্পনিক )


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২০৯৫৭ জন


এ জাতীয় গল্প

→ বীভৎস্য এক পূর্ণিমারাত

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now