বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

কৃপণ জমিদার

"শিক্ষণীয় গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান মনির চৌধুরী (০ পয়েন্ট)

X কৃপণ জমিদার মনির চৌধুরী অধিক পরিমাণ অর্থ সম্পদ থাকার পরও চাহিদা অনুযায়ী ব্যয় না করাকে কৃপণতা বলে। আর এই কৃপণতা একটি পরিত্যাজ্য ও ঘৃণিত কাজ। ঠিক তেমনি ছিলেন ভবানীপুরের এক জমিদার মশাই। কৃপণতা ছিল তিনার একটা বড় ব্যাধি। তিনি প্রচুর অর্থ-সম্পদের মালিক হওয়ার সত্ত্বেও, কোন সময় গরিব-দুঃখীদের মাঝে দান-খয়রাত করতেন না। তিনার কাছে কোন অসহায় মানুষ সাহায্য চাইতে গেলে, তাকে ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দিতেন। এমনকি দান-খয়রাতের ভয়ে তিনি সমাজের মানুষের সাথে ঠিক মত মেলামেশা করতেন না। তিনি সব সময় ভাবতেন, সমাজের মানুষের সাথে বেশি মেলামেশা করলে আমার গচ্ছিত অর্থ-সম্পদ কম হয়ে যাবে। রাতের আঁধারে লুণ্ঠন হয়ে যাবে। এমনিতেই গ্রামাঞ্চলে ফকির-মিসকিনদের উৎপাত বেশি হয়ে গেছে। এই জন্য এখন থেকে আর সমাজের মানুষের সাথে বেশি মেলামেশা করা যাবে না। বাড়ির বাইরে ঘন ঘন যাওয়া যাবে না। অধিকাংশ সময় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেই দিন কাটাতে হবে। আর গচ্ছিত অর্থ-সম্পদ গুলো চোখের নজরে রাখতে হবে। একবার এক দরিদ্র কৃষক তার মেয়ের বিয়ে জন্য জমিদার মশাইয়ের কাছে টাকা ধার চাইতে গিয়েছিল। সেদিন জমিদার মশাই দরিদ্র কৃষককে টাকা ধার না দিয়ে, প্রচণ্ড রাগান্বিত হয়ে বলেছিলেন, ‘‘আমার গচ্ছিত অর্থ-সম্পদ তোর বাপের রেখে যাওয়া সম্পত্তি নাকি? তাই যখন-তখন আমার বাড়িতে টাকা ধার চাইতে ছুটে আসিস। লজ্জা করে না তোদের, আমার বাড়িতে টাকা ধার চাওয়ার জন্য ছুটে আসতে। যা অনামুখো আমার সামনে থেকে তাড়াতাড়ি সরে যা। নয়তো তোকে গলা ধাক্কা দিয়ে মারতে মারতে গেটের বাইরে, বাহির করে দিয়ে আসব।’’ সেদিন জমিদার মশাইয়ের দুর্ব্যবহারে দরিদ্র কৃষক খুব কষ্ট পেয়েছিল । হতাশার প্রহরে দরিদ্র কৃষক বাড়ি ফেরার সময় পথের মধ্যে ভাবছিল, বড় আশা নিয়ে জমিদার মশাইয়ের কাছে টাকা ধার চাইতে এসেছিলাম। কিন্তু, জমিদার মশাই তো টাকা ধার দিলো না। বরং মারধর করে আমাকে তাড়িয়ে দিল। বাড়ি ফিরে গিয়ে গিন্নীর কাছে আমি আজ কি জবাব দেব? কয়দিন পরে তো লক্ষ্মী মেয়েটির বিয়ে। কয়েক দিনের ভিতরে অনেক টাকা জোগাড় করতে হবে। আর এই টাকা জোগাড় করতে না পারলে তো, মেয়ের বিয়েটা ভেঙ্গে যাবে। এখন আমি কি করব? এই মুহূর্তে কার কাছে গিয়ে হাত পাতবো। আমি তো আর বুঝে উঠতে পারছি না। এদিকে সেদিন দরিদ্র কৃষকের গিন্নী ঘরের দোয়ারে বসে অপেক্ষা করছিল, না জানি কখন স্বামী বাড়ি ফিরে আসবে। বাড়ি ফিরে এসে আমার হাতে টাকার পুঁটলা তুলে দেবে। আর ঐ টাকার পুঁটলা আলমারিতে যত্ন সহকারে রেখে দেব। সময় মত মেয়ের বিয়েতে খরচ করব। এই আশা-প্রত্যাশা মনের মাঝে রেখে দরিদ্র কৃষকের গিন্নী সারাদিন পথ পানে তাকিয়ে রইল। কখন স্বামী বাড়ি ফিরে আসবে। যাই হোক, সেদিন সন্ধ্যার দিকে দরিদ্র কৃষক মন খারাপ করে খালি হাতে বাড়ি ফিরে আসল এবং বাড়ি ফিরে আসতে না আসতেই তার গিন্নী হাসি মুখে জিজ্ঞাসা করল, ‘‘কি গো, তোমার বাড়ি ফিরতে এত দেরি হল কেনো? সেই যে সকালে দিকে বাসি মুখে জমিদার মশাইয়ের কাছে টাকা ধার চাইতে গেলে আর এখন সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফিরে আসছো? জমিদার মশাই টাকা ধার দিয়েছে নাকি?’’ তখন দরিদ্র কৃষক তার গিন্নীর প্রশ্ন শুনে একেবারে চুপ হয়ে গেল। প্রশ্নের জবাব দেওয়ার মত কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছিল না। কিন্তু, দরিদ্র কৃষকের গিন্নী ছিল নাছোড়বান্দা । তার প্রশ্নের জবাব না পাওয়া পর্যন্ত, সে সেখানে দাঁড়িয়ে রইল। অবশেষে কোন উপায় না পেয়ে, দরিদ্র কৃষক নিজেকে কোন রকম সামলিয়ে তার গিন্নীর সাথে জমিদার মশাইয়ের দুর্ব্যবহারের কথা সব খুলে বলল। তখন জমিদার মশাইয়ের দুর্ব্যবহারের কথা শুনে দরিদ্র কৃষকের গিন্নী প্রচণ্ড রাগান্বিত হয়ে গেল এবং রাগান্বিত অবস্থায় দরিদ্র কৃষককে বলল, ‘‘তোমার সাথে জমিদার মশাই, আজকে যে দুর্ব্যবহার করেছে তার উচিত শিক্ষা দিতে হবে। যাতে পরবর্তী সময়ে জমিদার মশাই কারো সাথে আর দুর্ব্যবহার করতে না পারে। এই জন্য আবার একদিন তোমাকে ছদ্মবেশে জমিদার মশাইয়ের বাড়িতে প্রবেশ করতে হবে।’’ কিছুদিন পর দরিদ্র কৃষক আর তার গিন্নী পাড়া–গাঁয়ে মানুষের মুখে মুখে শুনতে পেল, জমিদার মশাই নাকি খুব অসুস্থ। একেবারে যাই–যাই অবস্থা। আজকালের মধ্যে মারা যেতে পারে। সেই দিন জমিদার মশাইয়ের অসুস্থর কথা শুনে দরিদ্র কৃষক আর তার গিন্নী খুব খুশি হল। আর তারা দু'জন মনে মনে যুক্তি করল, জমিদার মশাই মারা যাওয়ার আগে তার গচ্ছিত অর্থ-সম্পদ মানুষের মাঝে দান করে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সমাজের মানুষের সাথে দুর্ব্যবহারের উচিত শিক্ষা দিতে হবে। এই আশা-প্রত্যাশা মনের মাঝে রেখে, পরের দিন সকালে দরিদ্র কৃষক তার গিন্নী কথা মত বাহারী সাজসজ্জায় জমিদার মশাইয়ের বাড়িতে ছদ্মবেশে প্রবেশ করল। সেদিন দরিদ্র কৃষককে জমিদার মশাইয়ের বাড়িতে প্রবেশ করতে দেখে, একজন প্রহরী দরিদ্র কৃষকের কাছে ছুটে এলো। সে দরিদ্র কৃষককে বাহারী সাজসজ্জা দেখে বলল, ‘দরবেশ বাবা আপনি কাকে খুঁজছেন, আমাদের জমিদার বাবুকে?’ তখন সেই মুহূর্তে দরিদ্র কৃষক দরবেশ বেশে উচ্চ স্বরে বলল, ‘‘হ্যাঁ বৎস, আমি তোমাদের জমিদার মশাইয়ের কাছে এসেছি। পথের মধ্যে শুনলাম, তিনি নাকি কয়দিন ধরে ভীষণ অসুস্থ। দেশ-বিদেশের কোন চিকিৎসক তিনার কোন রোগ ধরতে পারছে না। এই জন্য আমি ওনার সাথে একটু দেখা করতে এসেছি। আমি একবার চেষ্টা করে দেখতে চাই, ওনার কোন রোগ ধরতে পারে কিনা? উনি এখন কোথায় আছেন? ওনার শয়নকক্ষে আমাকে একটু নিয়ে যাবে বৎস?’’ তখন সেই প্রহরী, দরিদ্র কৃষককে জমিদার মশাইয়ের শয়নকক্ষে নিয়ে গেল। দরিদ্র কৃষক জমিদার মশাইয়ের শয়নকক্ষে প্রবেশ করে দেখতে পেল, জমিদার মশাই বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে। কোন রকম হাত-পা নড়াচড়া করছে। একেবারে যাই–যাই অবস্থা। জমিদার মশাইয়ের এমন দুর্দশা দেখে দরিদ্র কৃষক প্রহরীকে বলল, ‘‘আমার সাথে জমিদার মশাইয়ের কথা বলার ব্যবস্থা করুন। আমি ওনার সাথে কথা বলতে চাই।’’ প্রহরী তখন চুপি চুপি জমিদার মশাইয়ের কাছে গিয়ে বলল, ‘‘জমিদার বাবু, এক ভিনদেশী দরবেশ বাবা আপনার সাথে দেখা করতে এসেছে। আপনি একটু উঠে দরবেশ বাবা সাথে কথা বলুন।’’ জমিদার মশাই কোন রকম হাত-পা নড়াচড়া করে উঠে বসলেন এবং প্রহরীকে বললেন, ‘‘দরবেশ বাবার জন্য নাস্তার ব্যবস্থা কর। নাস্তা খেতে খেতে আমি ওনার সাথে কথা বলব।’’ তখন কৌতুহল রূপে দরিদ্র কৃষক বলল, ‘‘জমিদার মশাই আমার জন্য নাস্তা নিয়ে আসতে নিষেধ করুন। আমি আপনার বাড়িতে নাস্তা খেতে আসেনি, শুধুমাত্র আপনার চিকিৎসা দিতে এসেছি। নাস্তার কোন প্রয়োজন নেই। আপনার সুস্থ করে তুলতে পারলেই আমি খুশি।’’ তখন দরিদ্র কৃষকের কথা শুনে জমিদার মশাই খুব খুশি হলেন। তিনি মনে মনে ঠিক করলেন, আমার রোগ মুক্তির জন্য দরবেশ বাবা যা বলবেন, আমি আজকে সব মাথা পেতে নেব। সেদিন প্রথমে দরিদ্র কৃষক তার টুপলাই থেকে কিছু জিনিসপাতি বাহির করে দরবেশদের মত করে তন্ত্রমন্ত্র পাঠকরা শুরু করে দেয় এবং মাঝে মধ্যে উচ্চ স্বরে বলতে থাকে, জমিদার মশাই আপনার কপালে খুব কষ্ট আছে। আপনি আর কোনদিন সুস্থ হতে পারবেন না। কয়েক দিনের মধ্যেই আপনি মারা যাবেন। কারণ, আমি সাধনা করে দেখতে পাচ্ছি আপনি ছিলেন খুব কৃপণ ব্যক্তি। আপনার অঢেল ধন-দৌলাত থাকার পরেও, আপনি অসহায় মানুষের মাঝে কোনদিন দান-খয়রাত করতেন না। আপনার বাড়িতে কেউ সাহায্য চাইতে আসলে, তাকে ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দিতেন। এই জন্যই আজ আপনার এমন দুর্দশা। এদিকে দরিদ্র কৃষকের মুখে মৃত্যুর কথা শুনে জমিদার মশাই বিস্মিত হয়ে যায়। মৃত্যুর ভয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকে। কিছুক্ষণ পর তিনি মনটা খারাপ করে দরিদ্র কৃষককে বললেন, ‘দরবেশ বাবা, আপনার কাছে আমার রোগ মুক্তির কোনো কৌশল আছে নাকি? যদি থাকে আপনি আমাকে রোগ থেকে মুক্তি করুন। প্রয়োজনে যত টাকা-পয়সা লাগে আপনি আমার কাছে থেকে নিয়ে যান।’ জমিদার মশাইয়ের কথা শুনে দরিদ্র কৃষক মনে মনে বলছে, আজকে জমিদার মশাইকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার সু্যোগ পেয়েছি। জমিদার মশাইয়ের এই সরলতার সুযোগটা আমাকে কাজে লাগাতে হবে। তখন দরিদ্র কৃষক বুদ্ধি খাটিয়ে বলল, “জমিদার মশাই, আপনার রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার আর একটা উপায় আছে। আপনি যদি আমার কথা মত কাজ করেন, তাহলে সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহে, হয়তো বা আপনি রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।” তখন জমিদার মশাই তিনার রোগ মুক্তির কথা শুনে দরিদ্র কৃষকের কাছে আকুতি মিনতি শুরু করে দেয়। আর বারবার বলতে থাকে, দরবেশ বাবা আমার রোগ মুক্তির জন্য আমার জীবনের সবকিছু বিসর্জন দিতে রাজি আছি। আমার গচ্ছিত ধন-দৌলাত আপনার নামে লিখে দিতে রাজি আছি। শুধুমাত্র আপনি আমার রোগ মুক্তির পথ সম্পর্কে ধারণা দিন। তখন দরিদ্র কৃষক জমিদার মশাইকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য বলল, ‘‘আপনার গচ্ছিত অর্থ-সম্পদ গরিব-দুঃখীদের মাঝে দান করে দিতে হবে এবং সমাজের মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে। আমার এই আদেশ গুলো মানলে অবশ্যই আপনি রোগ থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন।” অবশেষে কৃপণ জমিদার তার রোগ মুক্তির জন্য গচ্ছিত অর্থ-সম্পদ অসহায় মানুষের মাঝে দান-খয়রাত করে দিলেন এবং দরিদ্র কৃষককে একটুপলা মোহর দিয়ে বিদায় জানালেন। সেদিন দরিদ্র কৃষক মোহরের টুপলা পেয়ে খুশি মনে বাড়ি ফিরে আসল এবং কিছুদিনের মধ্যেই সেই একটুপলা মোহর দিয়ে মেয়ের বিয়েটা সম্পন্ন করল। ঠিকানাঃ দামুড়হুদা, চুয়াডাঙ্গা


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৩৩৯ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now