বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
আমাদের আড্ডার কথা তো আগেই বলেছি। সাপ্তাহিক আডল্ডা। শিক্ষামূলক বটে। একেক সপ্তাহে একেক টপিকের উপর আলোচনা চলে।
আমি আর সাজিদ মাগরিবের নামায পড়ে এগোচ্ছিলাম। উদ্দেশ্য আন্ডাস্থল। আজ আন্ডা হচ্ছে সেন্ট্রাল মসজিদের পেছনে। ওই দিকটায় একটা মাঝারি সাইজের বটগাছ আছে। বটতলাতেই আজ আসর বসার কথা।
খানিকটা দূর থেকে দেখলাম আন্ডাস্থলে বেশ কয়েকজনের উপস্থিতি। কেউ একজন যেন দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে নেড়ে কথা বলছে। তাকে দেখে শামসুর । রাহমানের কবিতার দুটি লাইন মনে পড়ে গেল- স্বাধীনতা তুমি- বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর শাণিত কথার ঝলসানি লাগা সতেজ ভাষণ ।
আডডাস্থলে পৌছে দেখি হুলস্থূল কাণ্ড । আলোচনা তখন আর আলোচনায় নেই, বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেছে। দাড়িয়ে হাত নেড়ে যে কথা বলছিল, সে হলো রূপম। ঢাবির ফিলোসফির টুডেন্ট। এথেইজমে বিশ্বাসী। তার মতে, ধর্ম কিছু রূপকথার গল্প ছাড়া আর কিছু না। সে তর্ক করছিল হাসনাতের সাথে। হাসনাত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যানথ্রাপোলজিতে পড়ে। রূপমের দাবি একমাত্র নাস্তিকতাই স্বচ্ছ, সৎ আর বিজ্ঞানভিত্তিক কথা বলে। কোনো প্যাচগোছ নেই, কোনো দুই নাম্বারি নেই, কোনো ফ্ৰডগিরি নেই। যা বাস্তব, যা বিজ্ঞান সমর্থন করে তা-ই নাস্তিকতা। মোদ্দাকথা, নাস্তিকতা মানে প্রমাণিত সত্য আর স্বচ্ছতার মশাল।
হাসনাতের দাবি, ধর্ম হলো বিশ্বাসের ব্যাপার। আর বিশ্বাসের ব্যাপার বলেই যে।একেবারে রূপকথাবলে চালিয়ে দিতে হবে, তা কেন? ধর্ম ধর্মের জায়গায় আর বিজ্ঞান বিজ্ঞানের জায়গায়। ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের সামঞ্জস্যতা দেখাতে গিয়ে সে আলবার্ট আইনস্টাইনসহ বড় বড় কিছু বিজ্ঞানী আর দার্শনিকদের মন্তব্য কোড করতে লাগল।
আমি গিয়ে সাকিবের পাশে বসলাম। তার হাতে বাদাম ছিল। একটি বাদাম ছিলে মুখে দিলাম। সাজিদ বসল না। সে রূপমের পাশে গিয়ে তার কাধে হাত রাখল। বলল-এত উত্তেজনার কী আছে রে?'
‘উত্তেজনা হবে কেন?' রূপম বলল।
“তোকে দেখেই মনে হচ্ছে অনেক রেগে আছিস। অ্যানিথিং রং?'
হাসনাত বলে উঠল-উনি নাস্তিকতাকে ডিফেন্ড করতে এসেছেন। উনার নাস্তিকতা কত সাধু লেভেলের, তা প্রমাণ করার জন্যই ভাষণ দেয়া শুরু করেছেন।
সাজিদ হাসনাতকে ধমক দেয়ার সুরে বলল-তুই চুপ কর ব্যাটা। তোর কাছে জানতে চেয়েছি আমি?'
হাসনাতকে সাজিদের এইভাবে ঝাড়ি দিতে দেখে আমি পুরো হা করে রইলাম। হাসনাত সাজিদের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুদের একজন। আর এই রূপমের সাথে সাজিদের পরিচয় কদিনের? মনে হয় একবছর হবে। রূপমের জন্য তার এত দরদ কীসের? মাঝে মাঝে সাজিদের এসব ব্যাপার আমার এত বিদঘুটে লাগে যে, ইচ্ছে করে তার কানের নিচে দু-চারটা লাগিয়ে দিই।
সাজিদের ধমক খেয়ে বেচারা হাসনাতের মনটা খারাপ হয়ে গেল। হওয়ারই তো কথা। সাজিদ আবার রূপমকে বলল-বল কী হয়েছে?
‘আমি বলতে চাইছি ধর্ম হলো গোজামিলপূর্ণ একটা জিনিস। সেই তুলনায় নাস্তিকতাই স্বচ্ছ, সত্য আর বাস্তবতাপূর্ণ । কোনো দুই নম্বরি তাতে নেই ।
সাজিদ বলল-তাহ?
হুম, Any Doubt?'
সাজিদ হাসল। হাসতে হাসতে সে এসে মিজবাহর পাশে বসল। রূপম বসল। আমার পাশে। বটগাছের নিচের এই জায়গাটা গোলাকার করে বানানো হয়েছে। সাজিদ আর রূপম এখন মুখোমুখি বসা।
সাজিদ বলল-‘বন্ধ, তুই যতটা স্বচ্ছ, সত্য আর সততার সার্টিফিকেট তোর বিশ্বাসকে দিচ্ছিস, সেটা এতটা স্বচ্ছ, সত্য আর সৎ মোটেও নয়।
রূপম বলল- ? কী বলতে চাস তুই? নাস্তিকরা ভুয়া ব্যাপারে বিশ্বাস করে? দুই নম্বরি করে?'
‘হুম। করে তো বটেই। এটাকে জোর করে বিশ্বাসও করায়।
মানে?
সাজিদ নড়েচড়ে বসল। বলল-খুলে বলছি।
এরপরে সাজিদ বলতে শুরু করল-বিজ্ঞানীরা যখন DNA আবিষ্কার করল। তখন দেখা গেল আমাদের শরীরের প্রায় ৯৬-৯৮% DNA হলো নন কোডিং, অর্থাৎ এরা প্রোটিনে কোনো প্রকার তথ্য সরবরাহ করে না। ২-৪% DNA ছাড়া বাকি সব DNA-ই নন-কোডিং । এগুলোর তখন নাম দেয়া । হলো Junk DNA । Junk শব্দের মানে তো জানিস, তাই না? Junk শব্দের অর্থ হলো আবর্জনা। অর্থাৎ, এই ৯৮% DNA-র কোনো কাজ নেই বলে। এগুলোকে বাতিল DNA বা Junk DNA বলা হয়।
ব্যস, এটা আবিষ্কারের পরে বিবর্তনবাদী নাস্তিকরা খুশিতে লক্ষঝাম্প শুরু করে দিল। তারা ফলাও করে প্রচার করতে লাগল যে, আমাদের শরীরে যে ৯৮% DNA আছে, সেগুলো হলো Junk, অর্থাৎ, এদের কোনো কাজ নেই। এই ৯৮% DNA ডারউইনের বিবর্তনবাদের পক্ষে অনেক বড় প্রমাণ। তারা বলতে লাগল মিউটেশনের মাধ্যমে এক প্রজাতি থেকে আরেক প্রজাতিতে রূপান্তরিত হওয়ার সময় এই বিশাল সংখ্যক DNA আমাদের শরীরে রয়ে গেছে। যদি কোনো বুদ্ধিমান স্রষ্টা আমাদের সৃষ্টি করত, তাহলে এই বিশাল পরিমাণ অকেজো, অপ্রয়োজনীয় DNA তিনি আমাদের শরীরে রাখতেন না। কিন্তু কোনো বুদ্ধিমান সত্তার হাত ছাড়া, প্রকৃতির অন্ধ প্রক্রিয়ায় আমরা অন্য একটি প্রাণী থেকে বিবর্তিত হয় অপ্রয়োজনীয়, অকেজো DNA আমাদের শরীরে এখনো বিদ্যমান। বিবর্তনবাদীদের গুরু বিখ্যাত বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্স তো এই Junk DNA-কে বিবর্তনবাদের পক্ষে বড়সড় প্রমাণ দাবি করে করে একটি বিশাল সাইজের বইও লিখে ফেলেন। বইটির নাম The Selfish Gene' । কিন্তু বিজ্ঞান ঐ Junk DNA তে। আর বসে নেই। বর্তমানে এপিজেনেটিক্সের গবেষণা থেকে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে, এতদিন যে DNA কে Junk বলে বিবর্তনের পক্ষে প্রমাণ বলে চালিয়ে দেয়া। হয়েছিল, তার কোনোকিছুই Junk নয়। আমাদের শরীরে এগুলোর রয়েছে নানা রকম বায়োকেমিক্যাল ফাংশন। যেগুলোকে নাস্তিক বিবর্তনবাদীরা এতদিন অকেজো, বাতিল, অপ্রয়োজনীয় বলে বিবর্তনের পক্ষে বড়সড় প্রমাণ বলে লাফিয়েছে, অকেজো সাম্প্রতিক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে, এসব DNA মোটেও অপ্রয়োজনীয়, নয় এদের রয়েছে বলত,। মানবদেহে নানান ফাংশন। নাস্তিকরা প্রকৃতির অন্ধ। প্রক্রিয়ায় মানুষ অন্য একটি প্রাণী থেকে বিবর্তিত হয়েছে বলেই এরকম অকেজো, নন-ফাংশনাল DNA শরীরে রয়ে গেছে। যদি কোনো সৃষ্টিকর্তা বিশেষভাবে মানুষকে সৃষ্টি করত, তাহলে এরকম অপ্রয়োজনীয় জিনিস আমাদের শরীরে থাকত না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে এসব DNA মোটেও নন-ফাংশনাল নয়। আমাদের শরীরে এদের অনেক কাজ রয়েছে। তাহলে বিবর্তনবাদীরা এখন কী বলবে? তারা তো বলেছিল। অপ্রয়োজনীয় বলেই এগুলো বিবর্তনের পক্ষে প্রমাণ। কিন্তু এগুলোর প্রয়োজন যখন জানা গেল, তখনও কি তারা একই কথা বলবে? ডকিন্স কি তার The Selfish Gene'
বইটা সংশোধন করবে? বিবর্তনবাদীরা কি তাদের ভুল শুধরে নিয়ে ক্ষমা চাইবো কল দোহ, এটা কি দুই নাম্বারি না?'
লম্বা একটা ব্রিফের পর সাজিদ থামল। রূপম বলল-বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে এরকম দু-একটি ধারণা পাল্টাতেই পারে। এর মাধ্যমে কি চিটিং করা হয়?
সাজিদ বলল-না। এটা চিটিং নয়। কিন্তু বিজ্ঞান কোনো ব্যাপারে ফাইনাল কিছু জানানোর আগেই তাকে কেন নির্দিষ্ট কিছু একটার পক্ষে প্রমাণ বলে। চালিয়ে দেয়া, প্রতিপক্ষকে এটা দিয়ে একহাত নেয়া এবং এটার পকে কিতাবাদি লিখে ফেলাটা চিটিং এবং নাস্তিকরা তা-ই করে।
সাজিদ বল-“শুধু Junk DNA নয়। আমাদের শরীরে যে অ্যাপেন্ডিন্স আছে, সেটা নিয়েও কত কাহিনি তারা করেছে। তারা বলেছে, অ্যাপেন্ডিস হলো। আমাদের শরীরে অপ্রয়োজনীয় অঙ্গ। আমাদের শরীরে এটার কোনো কাজ। নেই। যদি কোনো বুদ্ধিমান সত্তা আমাদের সৃষ্টি করত, তাহলে অ্যাপেন্ডিসের মতো আমাদের শরীরে না। ‘এপ অপ্রয়োজনীয় অঙ্গ রাখত আমরা ' থেকে একতির অন্ধ প্রক্রিয়ায় বিবর্তিত বলেই এরকম অপ্রয়োজনীয় অঙ্গ আমাদের শরীরে রয়ে গেছে। এটার কোনো কাজ নেই। এটাকে তারা বিবর্তনের পক্ষে প্রমাণ বলে চালিয়ে দিত। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, অ্যাপেভিক্স মোটেও কোনো অপ্রয়োজনীয় অঙ্গ নয়। আমাদের শরীরে যাতে রোগ জীবাণু, ভাইরাস ইত্যাদি প্রবেশ করতে না। পারে, তার জন্য যে টিস্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, সেটার নাম লিফ টিস্য। এই টিস্য আমাদের শরীরে সৈনিক তথা প্রহরীর মতো কাজ করে। আর আমাদের অনেকটা বৃহদন্ত্রের মুখে প্রচুর লিফ টিস্য ধারণকারী যে অঙ্গ আছে, তার নাম অ্যাপেভিন্ন। যে অ্যাপেন্ডিক্সকে একসময় ‘অকেজো ভাবা হতো, বিজ্ঞান।এখন তার অনেক ফাংশনের কথা আমাদের জানাচ্ছে। বিবর্তনবাদীরা কি আমাদের এ ব্যাপারে কোনোকিছু নসিহত করতে পারে? এখনো কি পৰে অ্যাপেন্ডিক্স অকেজো? বিবর্তনের পক্ষে প্রমাণ?'
রূপম চুপ করে আছে। সাজিদ বলল-’এ তো গেল মাত্র দুটি ঘটনা। তুই কি মিসিং লিঙ্কের ব্যাপারে জানিস রূপম?
আমার পাশ থেকে রাকিব বলে উঠল-মিসিং লিঙ্ক আবার কী জিনিস?'
সাজিদ রাকিবের দিকে তাকাল। বলল-বিবর্তনবাদীরা বলে থাকে একটা প্রাণী থেকে ধীরে ধীরে অন্য একটা প্রাণী বিবর্তিত হয়। তারা বলে থাকে, এপ’ থেকে আমরা, মানে মানুষ এসেছে বিবর্তন প্রক্রিয়ায় । যদি এরকম হয়, তাহলে এপ’ থেকে কিন্তু এক লাফে মানুষ চলে আসেনি। অনেক অনেক ধাপে এপ' থেকে মানুষ এসেছে। ধর, ১ সংখ্যাটা বিবর্তিত ১০-এ যাবে।
হয়ে এখন ১ সংখ্যাটা কিন্তু এক লাফে ১০ হয়ে যাবে না। তাকে অনেকগুলো। মধ্যবর্তী পর্যায় (২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯) আতক্রম করে ১০ হতে হবে। এই যে ১০-এ আসতে সে অনেকগুলো ধাপ (২, ৪, ৭, ৮, ৯) অতিক্রম করল, এই ধাপগুলোই হলো ১ এবং ১০-এর মিসিং লিঙ্ক।
রাকিব বলল-‘ও আচ্ছাবুঝলাম। 'এপ' থেকে যখন মানুষে বিবর্তিত হবে, প্রাথমিক পর্যায়ে তার কিছু মানুষের এবং ‘এপ-এর বৈশিষ্ট্য মধ্যে কিছু আসবে। এই বৈশিষ্ট্য সংবলিত পর্যায়টাই মিসিং লিঙ্ক, তাই না?'
হুম। যেমন ধর, মৎস্যকন্যা। তার অর্ধেক শরীর মাছ, অর্ধেক শরীর মানুষ। তাহলে তাকে মাছ এবং মানুষের একটি মধ্যবর্তী পর্যায় হিসেবে ধরা যায়। এখন। কেউ যদি দাবি করে যে, মাছ থেকে মানুষ এসেছে, তাহলে তাকে ঠিক মস্য কন্যার মতো কিছু একটা এনে প্রমাণ করতে হবে। এটাই হলো মিসিং লিঙ্ক।
রূপম বলল-“তো এটা নিয়ে কী সমস্যা?
সাজিদ আবার বলতে লাগল-বিবর্তনবাদ তখনই সত্যি হবে, যখন এরকম। সত্যিকার মিসিং লিঙ্ক পাওয়া যাবে। পৃথিবীতে কোটি কোটি প্রাণী রয়েছে। সেই হিসাবে বিবর্তনবাদ সত্য হলে কোটি কোটি প্রাণীর বিলিয়ন বিলিয়ন এরকম মিসিং লিঙ্ক পাওয়া যাওয়ার কথা। কিন্তু মজার ব্যাপার, এরকম কোনো মিসিং লিঙ্ক আজ অবধি পাওয়া যায়নি। গত দেড় শ বছর ধরে অনেক অনেক ফসিল পাওয়া গেছে। কিন্তু সেগুলোর কোনোটিই মিসিং লিঙ্ক নয়। বিবর্তনবাদীরা তর্কের সময় এই মিসিং লিঙ্কের ব্যাপারটা খুব কৌশলে এড়িয়ে যায়। কেউ কেউ বলে আরও সময় লাগবে।
বিজ্ঞান একদিন ঠিকই সব পেয়ে যাবে, ইত্যাদি। কিন্তু, ১৯৮৩ সালে বিবর্তনবাদীরা একটা মিসিং লিঙ্ক পেয়ে গেল যা প্ৰমাণ। করে যে মানুষ 'এপ’ থেকেই বিবর্তিত। এটার নাম দেয়া হলো ‘Ida' ।
বিবর্তনবাদ দুনিয়ায় রাতারাতি তো ঈদের আমেজ নেমে এলো। তারা এটাকে বলল The Eighth Wonder of The World'। কেউ কেউ তো বলেছিল আজ থেকে কেউ যদি বলে বিবর্তনবাদের পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই, তারা যেন Ida-কে প্ৰমাণ। হিসেবে হাজির করে। বিবর্তনবাদীদের অনেকেই এটাকে ‘' Our Monalisaবলেও আখ্যায়িত করেছিল। হিস্ট্রি, ন্যাশনাল জিগ্রাফি, ডিসকভারি চ্যানেলে এটাকে ফলাও করে প্রচার করা হলো। সারা বিবর্তনবাদ দুনিয়ায় তখন সাজ সাজ রব কিন্তু, বিবর্তনবাদীদের ২০১০ কান্নায় ভাসিয়ে সালের মার্চে টেক্সাস ইউনিভার্সিটি, ডিউক ইউনিভার্সিটি আর ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগোর গবেষক বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করে দেখালেন যে, এই Ida কোনো মিসিং লিঙ্ক নয়। এটা। Lamour নামক একটি প্রাণীর ফসিল। তাদের এই রিসার্চ পেপার যখন বিভিন্ন নামিদামি। সাইন্স জার্নালে প্রকাশ হলো, রাতারাতি বিবর্তনবাদ জগতে শোক নেমে আসে।
বল রূপম, এটা কি জালিয়াতি নয়? একটা আলাদা প্রাণীর ফসিলকে মিসিং লিঙ্ক বলে সাধারণ মানুষকে ধোকা দেয়া কি চিটিং নয়?'
‘এর চেয়েও জঘন্য কাহিনি আছে এই বিবর্তনবাদীদের। ১৯১২ সালে । ‘Piltdown Man' নামে ইংল্যান্ডের সাসেক্সে একটি জীবাশ পাওয়া যায় মাটি খুঁড়ে। এটিকেও রাতারাতি 'এপ' ও মানুষের মিসিং লিঙ্ক বলে চালিয়ে দেয়া হয়। এটাকে তো ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল জাদুঘরে প্রদর্শনীর জন্য রেখে দেয়া হয়। 'এপ’ ও মানুষের এই মিসিং লিঙ্ক দেখতে হাজার হাজার দর্শনার্থী আসত। কিন্তু ১৯৫৩ সালে কার্বন টেস্ট করে প্রমাণ করা হয় যে, এটি মোটেও কোনো মিসিং লিঙ্ক নয়। এটাকে কয়েক শ বিলিয়ন বছর আগের বলে। চালিয়ে দেয়া হয়েছিল। গবেষণায় দেখা যায়, এই খুলিটি মাত্র ৬০০ বছর আগের আর এর মাড়ির দাঁতগুলো ‘ওরাং ওটাং' জাতীয় অন্য প্রাণীর। রাতারাতি বিবর্তন মহলে শোক নেমে আসে।
বুঝতে পারছিস রূপম, বিবর্তনবাদকে জোর করে প্রমাণ করার জন্য কত রকম। জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে? একটা ভুয়া জিনিসকে কীভাবে বছরের পর বছর ধরে প্রমাণ হিসেবে গেলানো হয়েছে? ইন্টারনেট ঘাটলে এরকম জোড়াতালি দেয়া অনেক মিসিং লিঙ্কের খবর তুই এখনো পাবি। মোদ্দাকথাএই নাস্তিকতা, এই বিবর্তনবাদ টিকে আছে কেবল পশ্চিমা। বস্তুবাদীদের অব্যাহত মিথ্যাচার, ক্ষমতা আর টাকার জোরে। এই বিবর্তনবাদের সর্বশেষ অস্ত্র ধর্মকে বাতিল বলে বয়কট করা। এই দর্শনকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য, মানুষকে গেলানোর জন্য তাদের যা যা করতে হয়, তারা করবে। যত ধরনের জালিয়াতির আশ্রয় নিতে হয়, তারা নিতে পিছপা হবে না। এরপরও কি। বলবি তোর নাস্তিকতা সাধু? সৎ? প্রতারণাবিহীন নির্ভেজাল জিনিস?'
রূপম কিছু না বলে চুপ করে আছে। হাসনাত বলে উঠল-ইশ! কিরে রূপম, এতক্ষণ তো নাস্তিকতাকে নির্ভেজাল, সৎ, সুফি, কোনো দুই নম্বরি নেই কোনো ফ্ৰডবাজি নেই বলে লেকচার দিছিলি। এখন কিছু বলবি না?
এশার আজান হলো। আমরা নামাযে যাওয়ার জন্য উঠে দাড়ালাম। আমাদের সাথে রাকিব আর হাসনাতও আছে। অল্প একটু পথ হাটার পরে আমি হঠাৎ থেমে গেলাম। সাজিদ বলল-“তোর আবার কী হলো রে?'
আমি রাগিরাগি চেহারায়, বড় বড় চোখ করে বললাম-তুই ব্যাটা হাসনাতকে তখন ঐভাবে ঝাড়ি দিয়েছিলি কেন?'
সাজিদ হাসনাতের দিকে তাকাল। মুচকি হেসে বলল-শেক্সপিয়র বলেছে । 'Sometimes I have to be cruel just to be kind ।
আমরা সবাই হা হা হা করে হেসে ফেললাম।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now