বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
কাসেদ কোন মন্তব্য করলো না।
কথার ফাঁকে সালমা এসে বসেছে একপাশে। একটু গভীর। একটু যেন অন্যমনস্ক।
খালু বললেন, আজকাল মেয়ে বিয়ে দেবার মত ঝকমারী আর নেই বড়বু। যাদের টাকা আছে তারা টাকা-পয়সা নিয়ে ভালো ভালো ছেলে বেছে নেয়।
খালা বললেন, শুধু মেয়ে কেন, ছেলে বিয়ে দিতেও কি কম ঝামেলা!! একটা ভালো মেয়ে পাওয়া যায় না, আমাদের নজরুলের জন্য মেয়ে খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে গেলাম, যা-ও পাওয়া গেলো, ও খোদা মেয়ের বাবা সি. এস. পি. সি. এস. পি. করে পাগল। সি. এস. পি. ছাড়া মেয়ে বিয়ে দিবেন না।
মা বললেন, আগের দিনে লোকে বংশ দেখতো। এখন সি. এস. পি. ছাড়া দেখে না।
খালু বললেন, ও কিছু না বড়বু, যুগের হাওয়া। যেমন আদি যুগ, মধ্যযুগ, আর কলিযুগ আছে, তেমনি বিয়ের ব্যাপারেও কতগুলো যুগ রয়েছে। ডাক্তার যুগ, ইঞ্জিনিয়ার যুগ, সি. এস. পি, যুগ। এখন সি. এস. পি, যুগ চলছে। বলে শব্দ করে হেসে উঠলেন তিনি। অন্যমনস্ক সালমাও না হেসে পারলো না।
হাসলো সবাই।
খাওয়ার ডাক পড়ায় বৈবাহিক আলোচনা আর এগুলো না। আসর ছেড়ে সকলে উঠে পড়ল।
সালমা সামনে এগিয়ে এসে ফিসফিস করে বললো, খাওয়ার টেবিলে তোমার পাশের চেয়ারটিতে আমি ছাড়া আর কাউকে বসতে দিয়ো না যেন, তুমি যাও, আমি বিপাশাকে বিছানায় রেখে আসি।
কাসেদ কিছু বলার আগেই সামনে থেকে সরে গেলো সালমা। সে শুধু বোকার মত তাকিয়ে রইলো। ওর চলে যাওয়া পথের দিকে।
দিন কয়েক পরে অফিসে এসে শিউলির কাছ থেকে আরেকখানা টেলিফোন পেলো কাসেদ।
শিউলি বললো, আহ গলাটা চিনতে পারছেন তো?
কাসেদ জবাব দিলো, অবশ্যই পারছি।
শিউলি বললো, তাহলে শুনুন, আপনাকে কয়েকটা খবর দেবার আছে। বাবা কুমিল্লায় বদলী হয়ে গেলেন।
তাই নাকি?
আজ্ঞে হ্যাঁ, আমি এখন বাসা ছাড়া পাখি।
তার মানে?
মানে এখন হােস্টেলে আছি।
হােষ্টেলো?
জী।
ওটা কি মুক্ত বিচরণ ভূমি নাকি?
কেন বলুন তো?
নিজেকে এইমাত্র বাসা ছাড়া পাখির সঙ্গে তুলনা করলেন কিনা, তাই।
ওই যা, আমি ভুলে গিয়েছিলাম যে, আপনি কবি মানুষ। টেলিফোনে মিহি হাসির শব্দ শোনা গেলো। ওর। শিউলি হাসছে।
কাসেদ শুধালো, আপনার খবর বলা শেষ হলো?
শিউলি বললো, না আছে। হ্যালো, শুনুন, প্রত্যেক শুক্রবার আর রোববার আমাদের বাইরে বেরুতে দেয়া হয়।
ভালো কথা, তারপর?
সামনের শুক্রবার আপনার কোন কাজ আছে কি?
আছে কি-না এখনো বলতে পারি নে।
না থাকলে আসুন না বিকেলের দিকে একটু বেড়ানো যাক।
কাসেদ কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। তারপর বললো, হঠাৎ বেড়াবার সাথী হিসেবে..
শিউলি পরীক্ষণে জবাব দিলো, আপনাকে ভাল লাগে বলে। সেই পরিচিত শব্দে হেসে উঠলো সে।
কাসেদ বিব্ৰত বোধ করলো। রিসিভারটা ডান হাত থেকে বা হাতে সরিয়ে নিয়ে আস্তে করে বললো, এবার রেখে দিই?
কেন, কথা বলতে বিরক্তিবোধ করছেন বুঝি?
না, তা নয়। কাসেদ ইতস্ততঃ করে বললো, অনেকক্ষণ ধরে ফোনটা আটকে রেখেছি কিনা।
বুঝলাম। শিউলি মৃদু গলায় বললো, ফোনটা কষ্ট পাচ্ছে, রেখে দিন। বলে আর দেরি করলো না সে। রিসিভারটা রাখার শব্দ শুনতে পেল সে।
দু’টার পর থেকে অফিসে আর কারো মন বসতে চায় না।
কখন চারটা বাজবে আর কখন তারা এই চেয়ার-টেবিল আর ফাইলের অরণ্য থেকে বেরিয়ে বাইরে মুক্ত আকাশের নিচে গিয়ে দাঁড়াবে সে চিন্তায় সবার মন উদ্বিগ্ন হয়ে থাকে।
দুটো থেকে চারটের মাঝখানকার সময়টা তাই কাজের চেয়ে আলাপ-আলোচনা আর গল্প করেই কাটে বেশির ভাগ সময়।
এ সময় হেড ক্লার্কের পানের ডিবে দ্রুত ফুরিয়ে আসতে থাকে। হয়তো তাই কথা বলার মাত্রা বেড়ে যায়। মেজাজ রুক্ষ থাকলে সকলকে গাল দেয়। প্ৰসন্ন থাকলে সবার সঙ্গে হেসে কথা বলে। সকলের কুশল জিজ্ঞেস করে। আজ বিকেলে অফিস থেকে বেরুবার আগে হেড ক্লার্ক বললেন, আজ আপনি আমার বাসায় যাবেন কাসেদ সাহেব, আপনার ছাতাটা নিয়ে আসবেন। শুনছেন?
কাসেদ বললো, আমি তো আপনার বাসা চিনি না। চেনেন না, চিনে নেবেন। পান চিবুতে চিবুতে হেড ক্লার্ক আবার বললেন, চলুন না আমার সঙ্গে আজ যাবেন বাসায়। বিকেলে বিশেষ কারো সঙ্গে কোন এনগেজমেন্ট নেই তো? শেষের কথাটার ওপর যেন তিনি বিশেষ জোর দিলেন।
কাসেদ মুখ তুলে তাকালেন ওর দিকে। হেড ক্লার্কের কথা বলার ভঙ্গটা ভালো লাগলো না। ওর। ভেবেছিলো চুপ করে যাবে। কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। তবু বাড়াতে হলো, আমার বিশেষ কেউ আছে সেটা আপনি জানলেন কোথেকে?
আহা, রেগে গেলেন নাকি? হেড ক্লার্ক পরীক্ষণে বললেন, কথাটা যদি বলেই থাকি এমন কি অন্যায় করেছি। বলুন? এ বয়সে সবার বিশেষ কেউ একজন থেকে থাকে, আমাদেরও ছিলো। ক্ষণকাল থেমে আবার শুধোলেন তিনি, আপনার বুঝি কেউ নেই?
থাকলেই বা আপনাকে বলতে যাবে কে? কাসিদের হয়ে জবাবটা দিলেন এক নম্বর কেরানী।
হেড ক্লার্ক সরোষ দৃষ্টিতে তাকালেন তার দিকে। তারপর বললেন, আপনাকে যে কাজটা করতে দিয়েছি ওটা হয়েছে?
এক নম্বর কেরানীর মুখখানা মুহুর্তে স্নান হয়ে গেলো। হেড ক্লার্ক মুখে একটা পান তুলে দিয়ে বললেন, আগে কাজ শেষ করুন, তারপর কথা বলবেন।
ঘাড় নিচু করে কাজে মন দিলো এক নম্বর কেরানী।
কিছুক্ষণ কেউ কোন কথা বলতে পারলো না।
হেড ক্লার্ক চুপ।
কাসেদ নীরব।
দেয়ালে কুলান বড় ঘড়িটা শুধু আওয়াজ তুলে এগিয়ে চলেছে তার নির্দিষ্ট গতিতে।
আর কোন শব্দ নেই।
অফিস থেকে দু’জনে এক সঙ্গে বেরিয়ে এলো ওরা।
দু’জন গম্ভীর।
রাস্তায় নেমে এসে কাসেদ প্রথমে কথা বললো, আপনি কি এখন সোজা বাসায় যাবেন?
গুমোট অবস্থােটা কেটে যাওয়ায় যেন খুশি হলেন ভদ্রলোক, অফিস থেকে বেরিয়ে আমি অন্য কোথাও যাইনে।
কাসেদ বললো, বেশ তাহলে চলুন আপনার বাসায় যাওয়া যাক।
বলে হেড ক্লার্কের মুখের দিকে তাকালো কাসেদ। তাঁর কোন ভাবান্তর হয়েছে কিনা লক্ষ্য করলো, কিন্তু কিছু বুঝা গেল না।
হেড ক্লার্ক মৃদু গলায় বললেন, বেশ তো চলুন। আপনার ছাতাটা–বলতে গিয়ে থেমে গেলেন তিনি, কথাটা শেষ করলেন না।
অফিস থেকে মকবুল সাহেবের বাসাটা বেশ দূরে নয়, তবু অনেক দূর। পল্টন থেকে লালবাগ।
মাসের শুরুতে বাসে চড়ে অফিসে আসেন। তিনি। বাসে চড়ে বাসায় ফেরেন। মাসের শেষে বাস ছেড়ে পদাতিক হন। হেঁটে আসেন, হেঁটে যান। কিছুদূর এসে মকবুল সাহেব বললেন, আমি পারতপক্ষে বাসে চড়িনে বুঝলেন। ওতে বড় ভিড়, আমার মাথা ঘু্রোয়। আগে রিক্সায় করে আসতাম যেতাম। কিন্তু ব্যাটারা এমন হুড়মুড় করে চালায়, দু’বার ট্রাকের নিচে পড়তে পড়তে অল্পের জন্যে বেঁচে গেছি। সেই থেকে আর রিক্সায় চড়িনে। আজকাল শ্ৰীচরণ ভরসা করেছি। এতে কোরে বিকেল বেলায় বেড়ানোটাও হয়ে যায়।
কী বলেন?
তাকে সমর্থন জানাতে গিয়ে শুধু একটুখানি হাসলো কাসেদ, কিছু বললো না। কারণ কিছু বলতে গেলে বিকেল বেলায় বেড়ানোর চেয়ে টাকাকড়ির সমস্যাটা এসে পড়ে সবার আগে।
লালবাগে একটা সরু গলির ভেতরে একখানা আস্তর উঠা একতলা দালান, আর একটা দোচালা টিনের ঘর নিয়ে থাকেন মকবুল সাহেব। বড় পরিবার। ছেলে, মেয়ে, নাতি, নাতনি।
বাইরের একখানা ঘর বৈঠকখানা এবং স্কুল পড়ুয়া দুই ছেলের শোবার ঘর হিসেবে ব্যবহার করছেন তিনি।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now