বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
শাহরবনুর প্রেমে শাহজাদার অবস্থা পাগলের মতো হয়ে গেল। বাদশার স্ত্রী ছেলের চিকিৎসার জন্য শহরের যত ডাক্তার ছিল সবাইকে হাজির করলো। ডাক্তারদের বললো যে করেই হোক আমার ছেলেকে সুস্থ করে তুলতে হবে। আমার ছেলের কষ্ট যে করেই হোক দূর করতে হবে। চিকিৎসকেরা শাহজাদাকে পরীক্ষা করে বুঝলেন বাদশার ছেলের আসলে কোনো রোগব্যাধি হয় নি সে কোনো এক মেয়ের প্রেমে পড়েছে। ওই মেয়ের এক পায়ের জুতাও তার কাছে আছে। বাদশার স্ত্রী একথা জানতে পেরে ছেলেকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো: চিন্তা করো না বাবা! যে মেয়েকে তুমি চাও সেই মেয়ে যদি রূপকথার পাহাড়ের পেছনেও থাকে বের করে আনা হবে এবং তোমার হাতে তার হাত সঁপে দেওয়া হবে।
এরপর বাদশার স্ত্রীর আদেশে জুতা বিশেষজ্ঞ কয়েকজন বৃদ্ধাকে ওই জুতোটা দিয়ে পাঠানো হলো শহরের প্রতিটি ঘরে গিয়ে খোঁজ নিতে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে কোনো কাজ হলো না। জুতোর জোড়া মিললো না মানে জুতার মালিককে পাওয়া গেল না। ওই জুতা যে মেয়ের পায়েই পরানো হয়েছে হয় ছোট না হয় বড় হয়েছে। ঠিকমতো কারো পায়েই হয় নি। অবশেষে শাহরবনুর বাবার ঘরে যখন গেল বুড়িরা মোল্লাবাজি তখন শাহরবনুকে নিয়ে লুকিয়ে রাখলো তন্দুরি বানাবার চুল্লির ভেতর। ফার্সিতে এই চুল্লিকে বলা হয় তানুর। তানুরের মুখটাকে একটা বড়ো ডালা দিয়ে ঢেকে দিলো যাতে বুঝতে পারা না যায় যে ভেতরে কেউ আছে।
ওই ডালায় শস্যদানাও রাখল। এরপর মোল্লাবাজি তানুরের কাছে মোরগকেও ছেড়ে দিলো যাতে মোরগ সেখানে ঘুরে বেড়ায় এবং টুক টুক করে ডালায় রাখা শস্যদানা খায়। এর ফলে শাহরবনু যদি শব্দ করার চেষ্টাও করে মোরগের শব্দের কারণে কেউ তা বুঝে উঠতে পারবে না।
রাজদরবারের মহিলারা মোল্লাবাজির ঘরে ঢুকে জিজ্ঞেস করলো: ঘরে কোনো মেয়ে নেই?
মোল্লাবাজি বললো: থাকবে না কেন। অবশ্যই আছে এবং ভালো মেয়ে আছে।” এই বলে মোল্লাবাজি নিজের মেয়েকে এনে হাজির করলো। মহিলারা শাহজাদার দেওয়া জুতাটা পরতে বললো মেয়েকে। কিন্তু যতই চেষ্টা করলো মেয়ের পায়ে কিছুতেই ওই জুতা লাগলো না।
সব ঘরই দেখা শেষ হয়ে গেছে। তাই দরবারের মহিলারা মোল্লাবাজিকে জিজ্ঞেস করলো ঘরে আর কোনো মেয়ে নেই? মোল্লাবাজি বললো: না, আমার একটাই মেয়ে,এ-ই সে। হঠাৎ করে মোরগ ডেকে উঠলো:
কুক্ কুরু কুক.. কুক্ কুরু কুক/
শস্যের ডালা তানুরের মুখ,
শস্যের ডালা তানুরের মুখ।
কুক্ কুরু কুক, কুক্ কুরু কুক
চাঁদকপালি তানুরের বুক
চাঁদকপালি তানুরের বুক ।
কুক্ কুরু কুক, কুক্ কুরু কুক
তানুরের মুখের ডালা সরাও
চাঁদকপালি বের করে নাও।
দরবারের মহিলারা মোরগের এই গান শুনে হতবাক হয়ে গেল। তারা বললো: এই মোরগ খী বলছে এগুলো? মোল্লাবাজি একটা পাথর ছুঁড়ে মারলো মোরগের দিকে। তারপর বললো: এই মোরগটা একদম পাজি। কালই তাকে জবাই করবো। নৈলে তার অত্যাচার থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই।
পাথর ছুঁড়ে মারার ফলে মোরগ ভয়ে দেয়ালের উপরে উড়ে গিয়ে বসলো এবং আবারও ওই গানটা গাইতে শুরু করলো। দরবারের বৃদ্ধারা একে অপরের দিকে তাকালো এবং বললো: চলো তানুরের কাছে যাই, দেখি ব্যাপারটা আসলে কী? বুড়িরা সেখানে গিয়ে তানুরের মুখের ডালা সরাতেই দেখতে পেল চতুর্দশী চাঁদের মতো সুন্দরী এক বালিকা তানুরের ভেতর বসে আছে। এক বৃদ্ধা তার হাত বাড়িয়ে দিলো শাহরবনুর দিকে। শাহরবনু বুড়ির হাত ধরে বেরিয়ে এলো তানুর থেকে। বৃদ্ধারা আনন্দে চীৎকার দিয়ে উঠলো। বেশি আনন্দ এজন্য যে এত সুন্দরী মেয়ে তারা জীবনে আর দেখে নি। এমন চাঁদকপালি মেয়ে তারা কখনোই দেখেনি,যার কাঁধে ফুটে আছে তারা।
কেউ আবার জুতা নিয়ে এসে পরানোর চেষ্টা করলো এবং সহজেই শাহরবনুর পায়ে জুতোটা ঠিকঠাকমতো লেগে গেল। মহিলারা এবার মোল্লাবাজির দিকে তাকিয়ে বললো: রাজপুত্র এই কন্যার প্রেমে পড়েছে। ওকে না দেখতে পেয়ে রাজপুত্রের নাওয়া-খাওয়া-ঘুম সব হারাম হয়ে গেছে। এখন বলো তোমার কন্যার জন্য কী চাও রাজপুত্রের কাছ থেকে! মোল্লাবাজি বললো: বেশি কিছু না। নীল রঙের দুই মিটার ক্যানভাসের কাপড় আনলেই চলবে। তবে একটা আছে। শর্তটা হলো এই মেয়েকেও নিয়ে যেতে হবে কোনো মন্ত্রীর ছেলের জন্য। বৃদ্ধারা বললো যে তারা বাদশাকে শর্তের কথাটা জানাবে এবং বাদশা আদেশ দিলে অবশ্যই কোনো না কোনো মন্ত্রী তার ছেলের জন্য তোমার মেয়েকে নিতে রাজি হবে। কিন্তু মহিলাদের মাথায় ঢুকছিলো না যে এত অপরূপ সুন্দরী একটা মেয়েকে কেন এভাবে কোনো চাহিদা ছাড়াই দিয়ে দিচ্ছে।
মোল্লাবাজি এবার শাহরবনুর বদনামি শুরু করে দিলো। মহিলারা বললো তাদের সঙ্গে এসবের কোনো সম্পর্ক নেই। এই বলে তারা চলে গেল এবং পরদিন দুই মিটার নীল ক্যানভাসের কাপড়, আধা মণ রসুন আর আধা মণ পেঁয়াজ নিয়ে মোল্লাবাজির বাসায় এলো শাহরবনুকে নিয়ে যেতে। কিন্তু মোল্লাবাজি জিজ্ঞেস করলো: তার মেয়েকে কখোন নেবে? মহিলারা বললো রাজপুত্রের বিয়ের পরের রাতে। এভাবে কথাবার্তা শেষ হবার পর মোল্লাবাজি বললো: ঠিকাছে! তোমরা বিকেলে এসে শাহরবনুকে নিয়ে যেও। মহিলারা জানতে চাইলো: কেন বিকেলে?#
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now