বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন
বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

দু:স্বপ্ন

"রহস্য" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান নুর মোহাম্মদ (০ পয়েন্ট)

X লেখক : নুর এক রাতে হঠাৎ করেই ঘুমটা ভেঙে গেল আমার। ঘুমের মধ্যে মনে হলো কেউ যেন আমাকে ডাকছে। নাইট ল্যাম্পের আলোয় দেওয়াল ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই দেখলাম রাত ২টো ১০ বাজে। এত রাতে আবার কে ডাকবে? স্বপ্ন দেখছিলাম হয়তো। ভাবলাম সকাল ৭টার ট্রেন, এখন ঘুমিয়ে পড়াই ভালো। যাচ্ছি সিলেট, একটা দারুণ বিজনেস ডিল পেয়েছি। শৈশবে বাবা-মাকে হারিয়ে মামাবাড়িতেই মানুষ হয়েছি। বিপত্নীক ও নিঃসন্তান মামা, আমাকে নিজের ছেলের মতো কোলেপিঠে মানুষ করেছিলেন। মামার কাছেই ব্যবসার হাতেখড়ি। তাঁর ছোট্ট ইলেকট্রিক্যাল পণ্যের দোকান ছিল। মামার মৃত্যুর পর সমস্ত দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে নিরলস পরিশ্রমে সেই ব্যবসাকে বড় করেছি, আজ প্রতিষ্ঠিত ইলেকট্রিক্যাল সাপ্লায়ার্স আমি। এই করতে করতেই বয়স বেড়ে গেছে, বিয়ে আর করা হয়নি। একাই থাকার অভ্যাস হয়ে গেছে। বিছানায় উঠে বসে সাইড টেবিল থেকে জলের গ্লাসটা নিতে যাবো, হঠাৎ চোখ গেল সামনের দেওয়ালের আয়নায়। যা দেখলাম তাতে বুকটা কেঁপে উঠলো। আমি নিজেকে সাহসী দাবি করি না, কিন্তু ভীতুও নই। তবু দৃশ্যটা শিরদাঁড়ায় ঠান্ডা স্রোত নামিয়ে দিল। আয়নার ভেতরে যে প্রতিচ্ছবি, সেটা আমারই! কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার, আমি তো খাটে বসে আছি। অথচ আয়নার ভেতরের আমি যেন সরাসরি সামনে দাঁড়িয়ে। যেন আয়নার ওপারের সেই "আমি" আমাকেই ডেকে উঠলো, “শুনতে পাচ্ছো? বড়ই বিপদ..!” হাত-পা অবশ হয়ে আসছিল, সংজ্ঞা হারাব যে কোনো মুহূর্তে। এর আগেই আবার শুনলাম, “নীল..কাল যেয়ো না... খুব বিপদ... যে করেই হোক কাল সিলেট যেয়ো না।” সকাল ৭টা। দ্রুত গতিতে ট্রেন তার গন্তব্যে ছুটে চলছে। গতরাতের দুঃস্বপ্নটা মনে পড়তেই বুকের ভেতর কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছিল, তবে ভাবলাম, এসব না ভাবাই ভালো। খামোখা এক দুঃস্বপ্নের ভয়ে এত বড় সুযোগ হাতছাড়া করা বোকামি হবে। ভাগ্য ভালো নিজের পছন্দের আপার সাইড বার্থ পেয়েছি। মোবাইলে অ্যালার্ম দিয়ে শুয়ে পড়লাম। হঠাৎ প্রবল ঝাঁকুনি আর ভীষণ যন্ত্রণায় ঘুম ভাঙলো। সারা শরীর অবশ হয়ে আসছিল। দেখি কামরার দেয়াল দুমড়ে মুচড়ে শরীরের ওপর চেপে বসেছে। আমার ডান হাতটা কনুই থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন। ভীষণ র*ক্তা*ক্ত বী*ভ*ৎ*স*ৎ দৃশ্য... সঙ্গে সঙ্গেই সংজ্ঞা হারালাম। চোখ খুলেই ধড়মড় করে উঠে বসলাম। নিজের ঘরে, একদম অক্ষত অবস্থায়। ঘাম ঝরছে সারা শরীরে। স্বপ্ন? কিন্তু এত নিখুঁত, এত বাস্তব, যেন সত্যিই ঘটেছে। জলের গ্লাস নিতে গিয়ে খেয়াল করলাম, সাইড টেবিলটা নেই! ভালো করে তাকাতেই বুঝলাম ঘরের সবকিছু উল্টোপাল্টা। আসবাবপত্র থেকে ক্যালেন্ডার, এমনকি দরজা-জানলাও উলটো দিকে। সবকিছু যেন আয়নার ভেতরের প্রতিচ্ছবি। ক্যালেন্ডারের দিকে চোখ পড়তেই স্পষ্ট হলো ঘর, আসবাব, সবকিছু মিরর ইমেজে রূপান্তরিত। হয়তো এটাও এক দুঃস্বপ্ন...!! কিন্তু নিজেকে চিমটি কেটে বুঝলাম নাহ, এটা বাস্তব। হঠাৎ মাথায় এলো, "আয়না!" দৌড়ে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালাম। কিন্তু অবাক হওয়ার মতো কিছুই ঘটলো না, কারণ আমার কোনো প্রতিবিম্ব পড়লো না। আয়নার ভেতরে দেখতে পেলাম আমার আসল ঘর, যেমনটা এতকাল ছিল। খাটের পাশে রাখা ট্রাভেল ব্যাগ, ব্রিফকেস... সবকিছু যথাস্থানেই আছে। আর বিছানায় শুয়ে আছে স্বয়ং আমি। এক মুহূর্তেই সব পরিষ্কার হলো। গত রাত থেকে এখন পর্যন্ত কোনো কিছুই নিছক স্বপ্ন ছিল না। সবটাই কঠিন বাস্তব। আয়নার ভেতরে যে আমি আছি, তার সামনে আজ ভয়ানক বিপদ অপেক্ষা করছে। তাই নিজেকে, অর্থাৎ আয়নার ভেতরের আমাকে, যেভাবেই হোক সাবধান করতে হবে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আমি নিজের প্রতিবিম্বকে আকুলভাবে ডাকছি, "নীল, শোনো! কাল সিলেট যেও না!" আমার কণ্ঠস্বর কাঁচের পুরু দেওয়াল ভেদ করে ওপারে পৌঁছচ্ছে কিনা, জানি না। কিন্তু আমার ভেতরের রাজকে যেকোনো মূল্যে এই আসন্ন বিপদ থেকে বাঁচাতে হবে। আয়নার ওপাশের আমি ঘুমিয়ে আছে, হয়তো তার কানে আমার আর্তনাদ পৌঁছচ্ছে না। হতাশায় মুষ্টিবদ্ধ হাত কাঁচের ওপর সজোরে আঘাত করলাম। আয়নাটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। সেইসঙ্গে ভেঙে গেল আমার শরীরটা। অনুভব করলাম যেন আমি শত শত টুকরো হয়ে যাচ্ছি, তীব্র যন্ত্রণা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। আমার সামনে, আমার আয়নার ভেতরের যে ঘর, সেটাও টুকরো টুকরো হয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে। আমি যেন এক অতল শূন্যতার মধ্যে ভেসে যাচ্ছি। সবকিছু ক্রমশ আবছা হয়ে আসছে। হঠাৎ করেই তীব্র ঝাঁকুনিতে আমার ঘুম ভেঙে গেল। ধড়মড় করে উঠে বসলাম। মাথাটা ভোঁ ভোঁ করছে। সারা শরীরে ঘাম। চারপাশে তাকালাম। আমারই ঘর। পরিচিত আসবাবপত্র, দেয়ালের ঘড়ি, সাইড টেবিল... সবকিছু স্বাভাবিক জায়গায় আছে। ক্যালেন্ডারটা দেখলাম। তারিখটা ঠিকই আছে। রাত ২টো ১০। তার মানে, এতক্ষণ যা দেখলাম, সবটাই একটা দুঃস্বপ্ন? অবিশ্বাস্য লাগছে। দুঃস্বপ্নটা এত বাস্তব ছিল যে এখনো আমার হাত-পা কাঁপছে। এখন রাত ২টো ১০। হঠাৎ আমার চোখ গেল সামনের দেওয়ালের আয়নায়। আমি নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে পেলাম। খাটে বসে থাকা আমার দিকেই আয়নার ভেতরের আমি তাকিয়ে আছে। অদ্ভুত একটা শান্তি অনুভব করলাম। আমি এখনো সুরক্ষিত আছি। ধীরে ধীরে গত রাতের ঘটনা মনে পড়ল। গতকাল রাতে আমি ডিনার সেরে শোবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ এক তীব্র ভূমিকম্পে আমার ঘরের দেওয়াল ভেঙে পড়ে। মাথার ওপর ছাদ ভেঙে পড়ছিল। ভাগ্যের জোরে আমি অল্পের জন্য রক্ষা পাই। পরের দিন আমি আর বেরোতে পারিনি। ট্রেনযাত্রার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। পরের দিন সকালের খবর দেখে শিউরে উঠলাম। সিলেটগামী সেই ট্রেনটা লাইনচ্যুত হয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যাদের মধ্যে আমি একজন হতে পারতাম। আমার কাছে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেল। রাতের দুঃস্বপ্নটা দুঃস্বপ্ন ছিল না, সেটা ছিল এক প্রতিচ্ছবি। আয়নার ভেতরের আমি আসলে আমিই। তবে আয়নার ভেতরের যে আমি, সে এমন এক বাস্তবতায় ছিল যেখানে ভূমিকম্প হয়নি। আর সেই আমি, তার সামনে আসন্ন বিপদ দেখতে পেয়েছিল। তাই সে আয়নার দেওয়াল ভেদ করে আমাকে ডেকেছিল। "নীল... কাল যেয়ো না... খুব বিপদ..."। সেই ডাক আমি শুনতে পেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা আমার দুঃস্বপ্নের মতো মনে হয়েছিল। তবুও সেই দুঃস্বপ্নের ভয়ঙ্কর বাস্তবতার ধাক্কায় আমি আর ট্রেন ধরতে যাইনি। আমি আয়নার দিকে তাকিয়ে হাসলাম। আয়নার ভেতরের নীল যেন আমার দিকে তাকিয়ে হাসল। আমাদের দুই জীবনের পথ ভিন্ন ছিল, কিন্তু সেই আয়নার মধ্য দিয়ে আমাদের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। আমরা একে অপরকে বাঁচিয়েছিলাম। আমি আজ নতুন করে বেঁচে থাকার আনন্দ অনুভব করলাম। আর প্রতি রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে, একবার আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখতে ভয় হয়, যদি আবার দুঃস্বপ্ন দেখি...!! #রহস্যময় #ভয় #বাংলাগল্প #ভ্রমন


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২১ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now