বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
একটি শহর, একটি রাত, আর একটি খুন।
শহরের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, সোহেল রহমান, তার বিলাসবহুল বাড়িতে খুন হলেন। তিনি শুধু একজন ব্যবসায়ী নন, এক রাজনৈতিক পরিবারের সাথে তার যোগাযোগ ছিল, ব্যবসায়িক দুনিয়ায় তার প্রভাব ছিল বিস্তৃত। সোহেলের মৃত্যু ছিল যেন এই শহরের অন্ধকার দুনিয়ার পেছনের দরজায় ফেলা এক সিগন্যাল। কারো কাছে তিনি হিরো, আবার কারো কাছে একজন খলনায়ক ছিলেন। কিন্তু তার মৃত্যুতে শুধুমাত্র ব্যবসায়িক জগতে নয়, পুরো শহরের রাজনীতিতে ভোর হলো এক নতুন বিপদ।
আরিফ সিদ্দিকী একজন অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসার। শহরের অপরাধমূলক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে রাখতে তার অপ্রতিরোধ্য খ্যাতি ছিল। তার কঠোর মনোভাব এবং ঠান্ডা মাথার বিশ্লেষণ ক্ষমতা শহরের অনেক হত্যাকাণ্ডের সমাধান করেছে। তবে, তার ব্যক্তিগত জীবন ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন। অতীতে সে নিজেও কিছু ভয়াবহ অপরাধে জড়িত ছিল, কিন্তু তা কোনোদিন সামনে আসেনি। সোহেল রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর, আরিফের জীবনে সেই পুরনো অন্ধকার অতীতের কিছু ক্ষণিকের ছায়া ফিরে আসতে শুরু করে।
তবে, তার সহকারী মমতা সাহা ছিলেন এক তাজা বাতাসের মতো। তিনি এখনও নতুন ছিলেন, তবে তার মেধা, বুদ্ধি এবং সাহস তাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে তুলেছিল। মমতা খুব তাড়াতাড়ি উপলব্ধি করতে পারল, যে সোহেল রহমানের খুনের পেছনে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব নয়, কিছু গভীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কাজ করছে। তার সন্দেহ আরও বেড়ে যায় যখন হত্যার স্থান থেকে পাওয়া যায় এক রক্তমাখা হাতে লেখা লিপি—“বিশ্বাস”।
সোহেলের বাড়ি থেকে যে রক্তমাখা লিপি পাওয়া যায়, তা তদন্তকারীদের কাছে একটি রহস্যময় চিহ্ন হয়ে দাঁড়ায়। কিভাবে সোহেল মারা গেল? একদিকে তার গলা কাটার চিহ্ন, অন্যদিকে সেই অদ্ভুত হাতে লেখা শব্দ, “বিশ্বাস”। প্রথমবারের মতো, সিলেম, একজন আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন, সন্দেহজনকভাবে তদন্তের আওতায় আসে। সে সোহেলের প্রাচীন বন্ধু, কিন্তু সোহেলের ব্যবসায়িক জীবন এবং তার মৃত্যুর সাথে তার সম্পর্ক ছিল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
তাদের তদন্ত আরও জটিল হয়ে ওঠে, যখন তারা জানতে পারে, সোহেল রহমানের প্রভাবশালী বন্ধুদের মধ্যে কেউ একজন হয়তো তার মৃত্যুর পেছনে হাত রয়েছে। সোহেলের ব্যবসা এবং রাজনৈতিক জগতের গোপন চুক্তি, একাধিক বিশ্বাসঘাতকতা এবং প্রতিহিংসার যে এক বিশাল জাল গড়ে উঠেছিল, তাতে আরিফ এবং মমতা দুইজনেই আটকে পড়তে থাকে।
এদিকে, খুনির সঠিক উদ্দেশ্য পরিষ্কার হতে থাকে। রিতা, সোহেলের প্রেমিকা, যাকে একসময় সবাই জানতো না, সে এখন তদন্তকারীদের সন্দেহের তিরে। রিতা একজন রহস্যময়ী নারী, যার সাথে সোহেলের সম্পর্ক ছিল দারুণ জটিল। সোহেল তার জীবনজীবিকা নিয়ে সবকিছু গোপন রাখতো, কিন্তু রিতার সাথে তার সম্পর্কের মধ্যে কিছু ছিল যা অনেক পুরনো গোপন চুক্তির অঙ্গ ছিল। এর মধ্য দিয়ে সোহেল একটি বিপজ্জনক খেলা খেলছিল।
তদন্তকারীরা জানে না, রিতা সোহেলের প্রেমিকা ছিল না শুধু, বরং তার পেছনে অনেক গভীর এবং বিপজ্জনক পরিকল্পনা ছিল। সোহেলের মৃত্যু শুধু তার ব্যক্তিগত প্রতিশোধ ছিল না, বরং অনেক বড় ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল। রিতা এবং সোহেলের অন্ধকার জগতের সম্পর্কের সুত্রগুলোর দিকে তাদের মনোযোগ চলে আসে।
এখন, আরিফ এবং মমতা দুজনেই একত্রে কাজ করতে থাকে, তবে তারা একে অপরের প্রতি সন্দেহ আর আস্থাহীনতায় ভুগতে থাকে। মমতার কাছে বেশ কিছু অস্বস্তিকর প্রশ্ন আসে—কি ছিল তার অতীত, কেন সে এতটাই চাপ অনুভব করছে? কিভাবে সে সত্যের দিকে পৌঁছাবে? আরিফ কি তাকে বিশ্বাস করবে, নাকি তার নিজের অন্ধকার অতীত তাকে এই রহস্যের পেছনে প্রবাহিত করে যাবে?
তাদের তদন্তে এখন একজন অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে—শহরের রাজনৈতিক নেতারা, তাদের অজানা চাহিদা এবং এক বিরাট প্রতিহিংসার অংশ হিসেবে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। হত্যার পেছনে অনেক পুরনো কাহিনি লুকিয়ে ছিল। ধীরে ধীরে আরিফ এবং মমতার সামনে উন্মোচিত হতে থাকে, যে সোহেলের মৃত্যু ছিল শুধুমাত্র একটি প্রথম ধাপ—শহরের এক বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ।
তাদের তদন্ত যত এগোতে থাকে, তারা বুঝতে পারে, সোহেল রহমানের মৃত্যুর পেছনে এক গভীর ষড়যন্ত্র চলছে, এবং এই পরিকল্পনা তার মৃত্যু ছিল কেবল একটি ছোট্ট ধাপ। আরিফ এবং মমতা শহরের গভীরে থাকা অন্ধকারকে উন্মোচন করতে শুরু করে, যেখানে খুনি একে একে তাদেরকে এক নতুন খেলায় নেমে আসতে বাধ্য করছে।
শেষপর্যন্ত, যখন তারা খুনির পরিচয় পায়, তখন তারা আবিষ্কার করে, সোহেলের মৃত্যু শুধুমাত্র তার শত্রুদের জন্যই নয়, বরং শহরের সমস্ত পেছনের শক্তির জন্য এক কৌশল ছিল। তবে, সবশেষে তারা বুঝতে পারে, এই রহস্যের মূল যে কেউ, সে তাদের মধ্যে খুব কাছেই ছিল..........
আরিফ এবং মমতা যখন সিলেমের পেছনে পৌঁছায়, তখন তারা এক অদ্ভুত পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। সিলেম, একজন খলনায়ক, যাকে তারা খুনির সন্ধান পাচ্ছিল, সে তাদের সামনে এক অদ্ভুত রূপ ধারণ করে। সিলেম ছিল আসলে একটি বড় ষড়যন্ত্রের অংশ, যার উদ্দেশ্য শুধু সোহেলের মৃত্যু নয়, বরং পুরো শহরের ক্ষমতা কাঠামোকে নিয়ন্ত্রণ করা।
কিন্তু, সিলেমের কাছে যাওয়ার পর, তারা জানায় যে সে তাদের খুব কাছেই, পরিচয়ের সীমার মধ্যে ছিল—আরিফ। সিলেমের প্রকৃত লক্ষ্য ছিল আরিফকে তার প্রাক্তন অতীতের সবকিছু মনে করিয়ে দেওয়া, আর এক পর্দার আড়ালে থাকা কিছু শক্তিশালী ব্যক্তির আদেশ বাস্তবায়ন করা। সিলেমের হাতে ছিল বহু তথ্য, যা শহরের শীর্ষ রাজনীতিবিদদেরও বিপদে ফেলতে পারত।
আরিফ নিজেও অবাক হয়ে যায়, যখন তার মনে পড়ে যায়—কিভাবে তার অতীতের কিছু অজানা ঘটনা সিলেমের পরিকল্পনার সাথে সংযুক্ত। কিছু বছর আগে, তার জীবনে কিছু ভিন্ন রাস্তা অবলম্বন করেছিল, যখন সে রাজনীতির অন্ধকার দিকের সাথে জড়িয়ে পড়েছিল। সিলেম এবং আরিফের মধ্যকার সম্পর্ক ছিল দীর্ঘদিনের, কিন্তু আরিফ বুঝতে পারে, সিলেম তাকে ব্যবহার করেছে।
আরিফ এবং মমতা যখন সিলেমের পেছনে ছুটতে থাকে, তখন তাদের সামনে আরও এক কঠিন সিদ্ধান্ত আসে—শহরের পেছনের শক্তিগুলোকে চিহ্নিত করা। সেই শক্তির মুখোশ উন্মোচন করলে, শহরের অন্ধকার দুনিয়া তাদের হাতের মধ্যে চলে আসবে, কিন্তু এর সাথে জড়িয়ে আছে এক ভীষণ বিপদও। তারা জানে, যদি তারা শহরের পেছনের মানুষের বিরুদ্ধে চলে যায়, তাহলে পুরো পৃথিবী তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাবে।
শেষপর্যন্ত, আরিফ ও মমতা সিদ্ধান্ত নেয়—এই শহরের সত্যিকারের খুনি কেউ আর সিলেম নয়, বরং সেই ব্যক্তিই, যার হাত এই পুরো পরিকল্পনার পেছনে। আরিফ এবং মমতা একযোগে শহরের সবচেয়ে বড় শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তারা জানে, এটা হতে পারে তাদের জীবনের সবচেয়ে বিপজ্জনক সিদ্ধান্ত।
গল্পের শেষ দৃশ্যে, আরিফ এবং মমতা একে অপরকে দেখছে, তাদের চোখে এক অদ্ভুত দৃঢ়তা। তারা জানে, এই যুদ্ধ তারা একে অপরের সাথে মিলিত হয়ে লড়বে, এবং পুরো শহরের অন্ধকার রহস্য উন্মোচন করতে হবে। শেষ পরিণতির জন্য তাদের যে পথে যাওয়া লাগবে, তা একেবারে অনিশ্চিত, কিন্তু তারা প্রস্তুত।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now