বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
#কবরস্থান এবং শ্মশান ঘাট থেকে কিছু মাটি এনে দিতে পারবে ?
তাছাড়া আমার কথামতো যদি কিছু কাজ করতে পারো তাহলে আমি তোমার স্ত্রীকে ভালো করে দিতে পারবো ।
সাদা চাঁদরে শরীরের উপরের অংশ মোড়ানো বৃদ্ধ লোকটির কথা শুনে আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে রইলাম ।
সে আমাকে আবারো অবাক করে দিয়ে বললো,
--'মাটিগুলো কিন্তু অমাবস্যা রাতে আনতে হবে তাছাড়া এতে তোমারো কিছু ঝুঁকি থাকবে তবে আমার কথামতো চললে তুমি তেমন একটা বিপদে পড়বে না।'
কথাগুলো বলেই লোকটা খিলখিল করে হেঁসে উঠলো ।
এতক্ষণ যে লোকটা এই কথাগুলো বললো তাকে আমি একদমই চিনি না।লোকটাকে সেদিন কৃষ্ণগড়ের নদীর পাড়ে পড়ে থাকতে দেখে গ্রামের সবাই লোকটাকে ধরাধরি করে এনে আমাদের বাড়ির উঠানে রাখলো।
বৃদ্ধার এই করুন অবস্থা দেখে আমি পাশের বাড়ির যতীন্দ্রকে খবর দিলাম। যতীন্দ্র
হাতুড়ে ডাক্তার,ওর চিকিৎসায় এই গ্রামের অনেক রোগী ভালো হয়। যতীন্দ্রকে ডাকা মাত্রই দৌঁড়িয়ে এলো। বেচারা এই কাঠফাটা রোদে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলো। যতীন্দ্র বৃদ্ধাকে দেখে বললো তার শরীর খুব দুর্বল এবং কিছু ওষুধের নাম লিখে প্রেসক্রিপশন আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো।
একটুপরে ভীড় ভেঙে সবাই বৃদ্ধার জন্য আফসোস করতে করতে চলে গেলো,বৃদ্ধা এসে জুটলো আমার ঘাড়ে। আমার এই বিশাল প্রকান্ড বাড়িতে আমি আমার স্ত্রী এবং একমাত্র আদরের মেয়ে মৃত্তিকা মিলে থাকি।
এই গ্রামে এসেছি ছ'মাস হলো।বাবার পছন্দ করা বাড়িতে এসে উঠেছি। এই বাড়ি বাবা কিনে রেখেছেন প্রায় বছর তিনেক হলো কিন্তু এখানে এসে একদিনও তিনি বসবাস করেননি তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই এই বিশাল পুরনো বাড়িতে থাকা। এই ছ'মাসে এ গ্রামের মানুষগুলো আমাদের খুব আপন করে নিয়েছে কারণ সবার বিপদে আপদে আমি যথেষ্ট সাহায্য করার চেষ্টা করি।যাই হোক,কিছু মানুষের সাহায্য নিয়ে লোকটাকে আমি আমাদের বাড়ির নিচতলায় এনে রাখলাম।
আমাদের সাথে রহিম চাচা নামের একজন লোক থাকে, যে আমাদের বাহিরের কাজগুলোতে সাহায্য করে এবং সবকিছু দেখেশুনে রাখে। রহিম চাচার উপর লোকটার দায়িত্ব দিয়ে আমি নিশ্চিতে রুমে চলে এলাম।মৃত্তিকা আমাকে দেখেই দৌঁড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো, আমিও আহ্লাদে মৃত্তিকাকে জড়িয়ে ধরে ওর বড়বড় চুলে বিলি কেটে দিলাম । মৃত্তিকার বয়স ছয় বছর।
বিকেলে ছাদে এসেছি মৃত্তিকাকে নিয়ে ফুলগাছে পানি দিবো বলে। ভেবেছি ছাদ থেকে গিয়ে নিচতলায় বৃদ্ধাকে একবার দেখে আসবো।রহিম চাচাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তার ব্যাপারে, সে বলেছে লোকটা নাকি এখন মোটামুটি সুস্থ।
গাছে পানি দিয়ে নিচে নামতেই হঠাৎ কাউকে দেখে কলিজা টা ধক করে উঠলো। একটুপরে দেখি সেই বৃদ্ধ লোকটা লাঠিতে ভর করে পা টেনে টেনে সিঁড়ি বেয়ে উপরের দিকে আসছে। অচেনা কারো বাড়ির ছাঁদে আসা খুবই খারাপ এই বৃদ্ধ লোকটা কি তা জানে না?
এই বলে রাগে ফুলতে লাগলাম।
প্রায়ই মিনিট পাঁচেক পর লোকটা ছাঁদে পা রেখেই বললো,
--'বাবা তুমি রাগ করোনা আমি একটু হাঁটতে এসেছি।'
--'আমি রাগ করেছি কে বললো আপনাকে? তাছাড়া আমার এতবড় প্রকান্ড বাড়িতে আপনি হাঁটার জায়গা খুঁজে না পেয়ে ছাঁদে আসলেন?
তাছাড়া আপনি এই শরীর নিয়ে এখানে আসলেনই বা কি করে?'
লোকটা তার ছোট ছোট চোখ মেলে জবাব দিলো,
--'আমি সব বুঝতে পারি বাবা,
চলো নিচে চলে যাই।'
--'আপনি ছাঁদে কেন এসেছেন বললেন না?'
লোকটা বললো,
--'তোমার স্ত্রীর জন্য বড্ড মায়া হয় বাবা! এই বয়সেই কি অবস্থা মেয়েটার।'
বিস্ময় হয়ে লোকটাকে প্রশ্ন করলাম
--'আপনি আমার স্ত্রীকে দেখেছেন?'
--'না দেখেনি তবে আমি সব জানি।আমি যা জানি তা তুমি নিজেও জানো না!'
--'আপনি কি শুধু আমার স্ত্রীর ব্যাপারেই জানেন?'
--'আরে না,আমি মানুষের মনের ভাষা পড়তে পারি।
এই বলে লোকটা হাসতে হাসতে নিচে নেমে গেলো কিন্তু কি আশ্চর্য! পিছন থেকে লোকটাকে দেখতে একদমই বৃদ্ধ বলে মনে হচ্ছে না !
রাত ১ঃ৩০ মিনিটে হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙে গেলো।বিছানায় বসে রুমের আশেপাশে তাকাতেই খেয়াল করলাম আমার স্ত্রী মিথি রুমে নেই, মৃত্তিকা পাশে ঘুমাচ্ছে।
দরজার দিকে চোখ পড়তেই খেয়াল করলাম সেটা ভিতর থেকে লাগানো কিন্তু মিথি কোথাও নেই!
বুকটা ধক করে উঠলো আসন্ন কোন বিপদের আভাস টের পেয়ে।এতবড় বাড়িতে এখন ওকে আমি কোথায় খুঁজব?
এক দৌড়ে ছাঁদে চলে গেলাম, গিয়ে দেখি মিথি খোলা চুলে, ছাঁদের মেঝেতে বসে আছে, ওর পরনের শাড়িটাও এলোমেলো। আমি দৌড়ে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম, ওকে স্পর্শ করার সাথে সাথে ও অজ্ঞান হয়ে গেলো।কোনরকম ওকে রুমে এনে শোয়ালাম।
রহিম চাচাকে ডাকতেই সে নিচতলা থেকে দৌঁড়ে এলো,সাথে ঐ বৃদ্ধ লোকটাও এলো।রহিম চাচাকে বললাম দৌঁড়ি গিয়ে যতীন্দ্রকে ডেকে আনতে কিন্তু বৃদ্ধ লোকটি বললো সে মিথিকে সুস্থ করতে পারবে না
বরং সে এসেই মিথির হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুলটা চেপে ধরলো এবং বললো,
--'তোমাদের দীঘির পাড়ের পশ্চিম সাইড থেকে একটু মাটি নিয়ে এসো,সাথে একটা জবা ফুল আনতে ভুলো না যেনো।'
লোকটার কথা শুনে রাগ হলো, সে কি এই বিপদে মজা নিতে এসেছে?
রহিম চাচার পিড়াপিড়িতে বাধ্য হয়েই ঘরের বাহিরে পা রাখলাম,দীঘির পাড়ে যেতেই একটা ভয়ংকর রকমের হোঁচট খেলাম, ভাগ্যিস এতরাতে দীঘির জলে গিয়ে পড়িনি৷রহিম চাচা আমাকে ধরেই বলে উঠলেন,
সামনে কোনো বড় বিপদ আসতেছে না তো বাবা?
রহিম চাচার কথার কোনো জবাব না দিয়েই মাটি খুঁড়ে একটু মাটি হাতে নিলাম।
দীঘির পাড়ে জবা গাছ থেকে একটা জবা ছিঁড়তেই মনে হলো সেখান থেকে কয়েক ফোঁটা লাল রংয়ের কি যেনো গড়িয়ে পড়লো!
রহিম চাচাকে তৎক্ষনাৎ জিজ্ঞেস করলাম,
--'চাচা আপনি কিছু খেয়াল করেছেন?'
--'কই না তো বাবা !'
আচ্ছা চলেন।
এগুলো নিয়ে যথারীতি রুমে এলাম। বৃদ্ধ লোকটা বললো,
রুমের সবজানালাগুলো খুলে দাও আর একটু আগুন নিয়ে এসো।জানাল খুলতেই প্রচন্ড এক বাতাস এসে রুমের সবকিছু ওলোট পালোট করে দিয়ে গেলো।একটুপরে বৃদ্ধ লোকটা তার সাদা জামার পকেট থেকে একটা আগরবাতি বের করে জ্বালালো,যেনো সে আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলো।
একটুপরে এগুলো দিয়ে সে আরো কি কি যেনো করলো।এরপর হঠাৎ মিথির জ্ঞান ফিরলো এবং ৬ মাস আগেরকার মতো মিথি সম্পূর্ণ এক সুস্থ মানুষের মতো কথা বলতে লাগলো।মিথি প্রায় ৬ মাস ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছে, শুধু কি মানসিক সমস্যা? সে ভয়ংকর রকমের কাজ করে বেড়ায় যেগুলো অন্য কেউ শুনলে তাদের রক্ত পর্যন্ত হিম হয়ে যাবে। হঠাৎ কেন যেনো বৃদ্ধ লোকটার প্রতি আমার শ্রদ্ধা বেড়ে গেলো,তার দিকে তাকাতেই দেখলাম সে এক রহস্যময় হাসি দিলো। তার হাসির মাঝে আমি কিছু শঙ্কা খুঁজে পেলাম।
একটুপরে বৃদ্ধ লোকটা বলে উঠলো,
--'খুশির কোন কারণ নেই, ও কয়েকদিনের জন্য সুস্থ হয়ে উঠেছে। ওকে সুস্থ করে তুলতে হলে অনেক মূল্যবান জিনিস তোমার জীবন থেকে বিসর্জন দিতে হবে।তুমি বড্ড ভুল করেছো ছেলে!'
এই বলে সে উঠে আস্তে আস্তে হাঁটতে হাঁটতে নীচে নেমে গেলো। হঠাৎ আমার চোখ পড়লো বিছানার পাশে পড়ে থাকা ফুলটির উপর।কি আশ্চর্য! লাল রংয়ের ফুলটা একদম সাদা হয়ে আছে,যেনো মনে হচ্ছে ওর শরীর থেকে লাল রংয়ের আবরণটা কেউ শুষে নিয়েছে।আমি অচিরেই বলে উঠলাম,
--'রক্ত জবা কখনো সাদা রংয়ে রুপান্তরিত
হয়?'
কিন্তু কেউ আমার প্রশ্নের উত্তর দিলো না বরং বাহিরে সমস্ত অন্ধকার এসে আমায় গ্রাস করলো।
সকালে সবাই মিলে উঠোনে চা খেতে বসলাম। মিথি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ,ও নিজের হাতে চা বানিয়ে নিয়ে এসেছে এমনকি আজ মৃত্তিকাকেও আদর করছে।এতদিন ও ওর নিজের মেয়েকে পর্যন্ত সহ্য করতে পারেনি।হঠাৎ বাড়ির দিকে নজর পড়লো আমার,
বাড়িটার আশেপাশে একেবার ঝোপজঙ্গলে ছেয়ে গেছে, বাড়িটা একটু পরিষ্কার করতে হবে।
হঠাৎ বৃদ্ধ লোকটার আগমন।
সে এসেই বললো,
--'বাবা আমার নাম হরিদাস এবং
আমার বাড়ি রায়পুর। এখান থেকে অনেকদূর, আমি আমার মেয়েরবাড়ি যাচ্ছিলাম কিন্তু এই বৃদ্ধ বয়সে পথ হারিয়ে ফেলেছি তাই তোমাদের এখানে আসা।আমি আমার ছেলের কাছে একটা চিঠি লিখে পাঠাতে চাই যেনো সে খুব দ্রুত এসে এখান থেকে আমাকে নিয়ে যায়।তাই এই কিছুদিন আমাকে তোমাদের এই বাড়িতে থাকতে দেবে বাবা!'
লোকটার কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো, তাই বললাম,
--সমস্যা নেই দাদু,আপনি যতদিন ইচ্ছে এখানে থাকতে পারেন।'
আমার কথা শুনে মৃত্তিকা চিৎকার দিয়ে বললো,
--'না বাবা, এই লোকটা খুব দুষ্টু,আমাদের ক্ষতি করতে চায়। তুমি এখানে উনাকে থাকতে দিও না,প্লিজ বাবা!
মৃত্তিকার কথা শুনে ওকে ধমক দিলাম, ও কাঁদতে কাঁদতে রুমে চলে গেলো।
মিথি হঠাৎ বলে উঠলো,
--'থাকুক না সে এখানে,বাড়িতে মানুষজন বেশী থাকলে ভালোই লাগে।তুমি আজই বাবা-মা,সুপ্তি আর ইফতিকে আসতে বলে দাও।'
মিথির কথা শুনে ভালো লাগলো।বাবা-মাকে খবরটা দিতে যাবো এরমধ্যে লোকটা বলে উঠলো,
--'আপনাদের এই বাড়িতে একটা ভাঙ্গা মন্দির আছে, আপনারা জানেন? তাছাড়া আপনাদের বাড়ি থেকে একটুদূরে একটা জঙ্গলের মাঝে একটা পুকুর আছে, এবং প্রত্যেক অমাবস্যায় সেই পুকুরের পানি লাল হয়ে যায়, আপনারা জানেন?
হরিপদ দাদুর কথা শুনে চমকে গেলাম, বোধ করি আমার থেকেও বেশী চমকে গেছে মিথি। আচ্ছা, আমরা জানি না অথচ,এই আগন্তুক এতকিছুর কাহিনী কিভাবে জানে?
#TN
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now