বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
সূচনা পর্ব
সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা নিহিতা মাঝ রাস্তায় দাড়িয়ে আছে। প্রবল বেগে বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু এই বৃষ্টির মধ্যেও নিহিতা যেন কিছুই অনুভব করছে না।এতো দিনের বিশ্বাস, ভরসা, ভালোবাসা সবই যেন এক নিমেষে শেষ হয়ে গেছে।
কিছুক্ষণ আগে,
ডাক্তারের কাছে চ্যাক-আপের জন্য গিয়েছিল নিহিতা।মাহিনের ব্যস্ততায় কখনোই তার সাথে চ্যাক-আপের সময় হসপিটালে যায় না। কিন্তু আজ হসপিটাল থেকে ফেরার পথে মাহিনকে রেস্টুরেন্টে একটা মেয়ের সাথে হাত ধরে বসে থাকতে দেখেছে।ঐ মেয়ের সাথে যে মাহিনের সম্পর্কটা শুধুমাত্র হাত ধরার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটা একজন পথযাত্রী খুব সহজেই বলে দিতে পারবে।তবে এটাই কি মাহিনের বদলে যাওয়ার কারণ। বেশ কয়েক মাস থেকেই নিহিন মাহিনের মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করছে, তাহলে এটাই কি সেই বদলে যাওয়ার কারণ। এটা সে কখনো কল্পনাও করতে পারে নি।
বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে মাহিনের অপেক্ষা করছে সে। দু'চোখ যেন মরিচের মতো জ্বলছে।বৃষ্টিতে ভেজার জন্য হয়তো জ্বর আসতে পারে।
রাত ১০ টা______________
নিহিতা সোফায় বসে বসে মাহিনের জন্য অপেক্ষা করছে।প্রায় ঘন্টা খানেক পর মাহিন ফিরেছে। ওর হাসিখুশি মুখটা নিহিতাকে দেখেই যেন কালো মেঘের আধারে ঢেকে গেলো।
~" ফ্রেশ হয়ে আসো, টেবিলে খবার দিচ্ছি।"
~"আমি খেয়ে এসেছি, তুমি খেয়ে নাও। "
~" আমার সাথে অল্প একটু খাও, প্লিজ।"নিহিতার কথায় কিছু একটা ছিলো।কেনো যেন নিহিতার এই কথার বিপরীতে কিছুই বলতে পারে নি।
খাবার টেবিলে____
মাহিন একটু একটু করে খাবার খাচ্ছে, নিহিতা খাবার খাচ্ছে কম নাড়াচাড়া করছে বেশি।কেউ-ই কিছু কথা বলতে পারছে না। এক টেবিলে বসেও তাদের মধ্যে যোজন-যোজন দূরত্ব।অবশেষে নিরবতাটা নিহিতাই ভঙ্গ করলো।
~ "তুমি কি আমায় কিছু বলতে চাও, মাহিন।"
~ "কই না তো কিছুই বলার নেই।"
~ "সত্যিই কি তোমার কিছুই বলার নেই মাহিন।আমি তোমাকে একটা শেষ সুযোগ দিতে চাচ্ছি, আমাকে সবকিছু এক্সপ্লেইন করার জন্য।তুমি কি শিওর যে তোমার কিছুই বলার নেই?"
মাহিন চুপচাপ খাবার নাড়াচাড়া করছে। ভয় পাচ্ছে, নিহিতা সব জেনে গেলো না তো। সত্যিটা জানলে কি রিয়েক্ট কে জানে? কিন্তু তার যে কিছুই করার নেই।সে সত্যিই তার জীবনে অন্যকারো অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে।
~ "মেয়েটা কে মাহিন?"
ভাবনার মাঝেই চমকে উঠলো মাহিন।নিহিতা কি সব জেনে গেছে?
~ "কত দিন থেকে চলছে এসব?আমি তোমাকে একটা রেস্টুরেন্টে দেখেছি এক অপরিচিতার সাথে?"
~ "আট মাস থেকে। আমি তিশাকে ভালোবাসি নিহিতা।"
~ " তাহলে আমি কে? তোমার জীবনে আমার জায়গাটা কোথায় মাহিন।কয়েকদিন পর আমাদের বেবি আসবে আর তুমি এখন এসে অন্য মেয়েকে ভালোবাসার কথা বলছো।"
~ " আমি তোমাকে মায়ের জন্য বিয়ে করেছি।মা চেয়েছে তাই তোমাকে মেনে নিয়েছি।কিন্তু তিশা যখন ফিরে এসেছে আমি তাকে ফিরাতে পারি নি। আমি তাকে হারাতে পারবো না। "
~ "আমার কোনো মূল্য নেই আপনার জীবনে।আমি আপনার জীবনে আসি নি, আপনি নিয়ে আসেছেন আমায়।দু'বছরে আপনি হাজারবার আমায় ভালোবাসি বলেছ,ওইসব কি নাটক ছিলো? উত্তর দাও, কথা বলছ না কেন?" কথাগুলো বলেই চিৎকার করে উঠল নিহিতা।ভাতের প্লেটটা তুলে ফেলে দিলো ফ্লোরে।
নিহিতার এই রাগ মাহিন কখনোই দেখে নি।বরাবরই নদীর মতো শান্ত এক রমনীকে দেখে অভ্যস্ত সে।তাই সে খানিকটা ভড়কে গেলো।
হড়বড়িয়ে বললো,আমি তিশাকে বিয়ে করবো৷ তুমি চাইলে থাকতে পারো এই সংসারে। পুরুষ মানুষ তো চার বিয়ে করতে পারে, তাই না?
নিহিতা কিছুই বললো না। চুপচাপ গিয়ে বেড-রুমের দরজা বন্ধ করে দিলো।
মাহিন নিথিতার নিরবতাকে সম্মতি ধরে নিলো। ভাবলো, নিহিতা তার কথা মেনে নিবে। উচ্ছিষ্টের মতো তার সংসারে পড়ে থাকবে।
________________________________
পরদিন সকাল বেলা,
মাহিন অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যাওয়ার পর, নিহিতাও বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে। তার অনেক কাজ বাকি আছে এখনো। সে সমাজের অন্য দূর্বল নারীদের মতো নয়, যার শ্বামীই তাদের দুনিয়া;একমাত্র দূর্বলতা।কিন্তু মাহিন হয়তো জানে না ও কেমন মেয়ে!নিহিতা দূর্বল নয়, নিহিতা লড়াই করতে জানে;লড়াই করে বাঁচতে জানে।
নিহিতা ওইদিন রেস্টুরেন্টে মাহিন আর তিশার কিছু ছবি তুলে রেখেছিলো। এক ফ্রেন্ডের মাধ্যমে মাহিনের কল-রেকর্ডও বের করেছে।
এখন সে সোজা যাবে মাহিনের অফিসের বসের কাছে। সে বেঈমান আর প্রতারক কে কখনো ক্ষমা করবে না। এর শেষ সে দেখেই ছাড়বে।সে তো মাহিনের সাথে মোভ অন করেছিলো,মাহিনের সাথে একটা সুন্দর সংসারের স্বপ্ন দেখেছিল,একটা সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছিল।এখন সবই যেন ধোয়াশা।
মাহিনের অফিসের কাজকর্ম শেষ করে সে বাসায় ফিরে নিজের সবকিছু গুছিয়ে নিলো।সে কাল সারারাত ভেবেছে।নিজের বাচ্চাকে নিয়ে সে ভালো থাকবে।তাকে ভালো থাকতে হবে।সে কোনো প্রতারকের জন্য কখনো নিজেকে কষ্ট দিবে না।খুব শীগ্রই সে মাহিনকে ডিবোর্স দিবে।তবে তার সাথে করা সবকিছুই সে সুদ সমেত ফিরিয়ে দিবে। সে দুর্বল না। কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই তার চোখের কোণা দিয়ে এক ফোঁটা জল বেরিয়ে গেলো।
ব্যাগ গুছানো শেষ করে দরজার কাছে আসতেই আসতেই তার বুকটা হাহাকার করে উঠলো।একসময় হুহু করে কান্না করে দিলো সে। মাহিনের সামনে যতই নিজেকে শান্ত দেখাক, ভিতরে ভিতরে তো সে ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। বারবার সবাই তাকেই কেনো ভেঙে দিতে চায়।না তাকে ভেঙে পরলে চলবে না। তাকে বাঁচতে হবে, কঠিনভাবে বাঁচতে হবে।সে জানে সে পারবে।
কিন্তু গত দু'বছরে এই সংসারটা সে নিজের হাতে যত্ন করে সাজিয়েছে, গুছিয়েছে।এটাকেই নিজের দুনিয়া ভেবে নিয়েছিল। ভেবেছিলো মন দিয়ে সংসার করবে; একটা সুখী মানুষ হবে, সত্যিকারের সুখী মানুষ। কিন্তু নিয়তি যে বড়ই নিষ্ঠুর।
তার দুনিয়ায় আপন বলতে শুধুই তার বাবা, যার জন্য সে সব করতে পারে। আর এখন এই বাচ্চাটা। সে এগুলো নিয়েই বেঁচে থাকবে,ভালো থাকবে।________কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই সে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে এলো।ড্রয়ারে মাহিনের জন্য একটা চিঠি রেখে আসছে।এটাই শেষ, সে মাহিনের সাথে আর কোনো যোগাযোগ রাখতে চায় না। সময়মতো ডিবোর্স লেটার পাঠিয়ে দিবে।সে কোনো পিছুটান রাখতে চায় না।যে একবার ধোকা দিয়েছে সে বারবার দিতে পারে, সহস্রবার দিতে পারে। বিশ্বাসটা কাচের গ্লাসের মতো ,একবার ভেঙে গেলে আর জোড়া লাগানো যায় না।
একটা সিএনজি ডেকে উঠে উঠে পড়লো সে, গন্তব্য নিজের আপন মানুষটার কাছে। কিন্তু গাড়িটা বড় রাস্তায় উঠতেই সংঘর্ষে মুখোমুখি হলো বড় একটা ট্রাকের।মুহূর্তেই গাড়িটা উলটে গেলো,যেন পুরোটা থেথলে গেলো।
এখানেই বুজি নতুন জীবনের ইতি টানলো নিহিতা।জীবনের প্রদীপটা হয়তো নিভে গেলো নতুবা এক নব্য জীবনের সূচনা।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now