বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন
বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

অতৃপ্ত আত্মা-৭ শেষ

"উপন্যাস" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিয়েন সরকার (০ পয়েন্ট)

X অতিপ্রাকৃতিক উপন্যাস "অতৃপ্ত আত্মা" আফজাল হোসেন ------------------ (৭ম ও শেষ পর্ব) সুমি এবং সুমিব বাবা দুজনেই প্রচণ্ড অবাক… হওয়া গলায় বলে উঠল, ‘এটা কী বলছেন, ফকির মা ! ! ! এটা …কেমন করে. . ….. মাকুলি হাত উচিয়ে তাদেরকে… থামিয়ে দিয়ে বলতে লাগলেন, ‘সব না শুনলে বুঝবি না। এই অতৃপ্ত আত্মটি হচ্ছে তােদেব বাড়ির কামলা কালু মিয়ার।’ সুমির দিকে তাকিয়ে আরও বললেন… কালু মিয়া তাের সঙ্গে একদিন খারাপ কাজ করেছিল ৷ তোর বাবা তা জানার পর কালু মিয়াকে রাতের আঁধারে গোপনে রাইস মিলের কয়েকজন শ্রমিকদের দিয়ে মুখ হাত পা বেঁধে, রাইস মিলেব ধান সেদ্ধ করার আগুনে ফেলে দেয়। আগুনে পুড়ে কয়লা হওয়া কালু মিয়ার দেহের হাড় মাংস যা অবশিষ্ট থাকে, তা রাইস বিলের বর্জ্য আবর্জনার স্তূপের নীচে চাপা দিয়ে দেয়।’ এবার সুমির বাবার দিকে তাকিয়ে বললেন… “কি , ঠিক বলছি তাে? সুমির বাবা ইসমাইল তালুকদার মিনমিন করে বললেন, ‘জি, ফকির মা, ঠিক বলছেন। কী করব বলেন?! রাগে আমি অন্ধ হয়ে গেছিলাম ৷ আমারটা খেয়ে পরে, আমার সাথে এত বড় নিমক-হারামি!! ওর তো আমার মেয়ের দিকে কখনই খারাপ দৃষ্টিতে তাকানােও উচিত ছিল না...।’ মাকুলি হাত উঁচিয়ে থামিয়ে আবার বলতে লাগলেন, কালু মিয়ার ওভাবে আগুনে পুড়ে যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু হয় বলে তার আত্মার মুক্তি মেলে না, সে অশরীরী হয়ে পৃথিবীতে রয়ে যায় ৷ যেহেতু তোর মেয়ের কারণে তার মৃত্যু হয়, তাই সে অশরীরী হয়েও তোর মেয়ের পিছু ছাড়ে না। তোর মেয়ের বিয়ে ঠিক হয় পাশের গ্রামের জাহিদ ছেলটার সঙ্গে, অশরীরীটার এতে বিরাট সুযোগ এসে যায়। বাস অ্যাক্সিডেন্টে জাহিদ ছেলেটার মৃত্যু হলে……… সুমি এবং সুমির বাবা প্রচণ্ড ধাক্কা পাওয়া গলায় বলে উঠল, ‘এসব উল্টো পাল্টা কী বলছেন, ফ্কির মা… জাহিদ তো জীবিত। ও এখন ঢাকায়! একটা জ্বলজ্যান্ত মানুষকে মৃত বলছেন কেন?……… মাকুলি তাদেরকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, আগে সব শোন। অ্যাক্সিডেণ্টটাও ঘটায় ওই কালু মিয়ার অশরীরী আত্মা। জাহিদ বিয়ে করার উদ্দেশে ঢাকা থেকে বাসে চড়ে আসছিল। সেই বাসটা একটা ব্রিজের উপর দিয়ে আসার সময় আত্মাটা ড্রাইভারের উপর ভর করে। ড্রাইভারের মতিভ্রম ঘটে। সে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ব্রিজের রেলিং ভেঙে বাসটা নিয়ে নদীতে পড়ে ৷ বাসের প্রায় সব যাত্রীই ডুবে মারা যায়৷ জাহিদেরও মৃত্যু হয়। তবে দেহটা থাকে ত্মক্ষত ৷ জাহিদের সেই অক্ষত মৃত দেহটার উপর ভর করে অশরীরীটা জাহিদ সেজে সুমিকে বিয়ে করে ৷ নিজের উদ্দেশ্য সফল করে ৷ যাকে তােরা জাহিদ বলে জানিস, ওটা জাহিদ নয়। শুধু মাত্র জাহিদের দেহ ৷ ভিতরের আত্মাতা কালু মিয়ার অতৃপ্ত আত্মা। অতৃপ্ত আত্মাটা শুধু জাহিদের দেহটাই ব্যবহার করে না… জাহিদের বুদ্ধিমত্তা, চিন্তা চেতনা, মেধা, জ্ঞান,স্মৃতি ..…সবই ৷ পুরোপুরি জাহিদ হয়ে যায়। হয়তো ভুলে গেছে, সে যে জাহিদ না। মাঝে মাঝে কিছু বিরূপ পরিস্থিতিতে হয়তো তার নিজের কথা খেয়াল হয় ৷ যেমন কাজের মেয়ে পারুলকে ধর্ষণ করে ঘাড় মটকে মেরে ফেলার পরের দিন সুমিকে গ্রামে নিয়ে আসতে বাধা দেওয়ার বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে জাহিদের মা রেগে গিয়ে জাহিদকে চড় মারতে চাইল, তখন দেখিসনি, জাহিদ কীরকম ভয় পেয়ে ছিটকে সরে যায়। কারণ জাহিদের মায়ের ওই হাতের ৰাজুতে একটা তাৰিজ বাঁধা ছিল। যে তাবিজ সঙ্গে থাকলে …কোনও ভূত প্রেত জিন অতৃপ্ত আত্মা কাছে ঘেষতে পারে না। সুমি প্রায় চেচিয়ে ওঠে, ‘ফকির মা,!!আপনার এই উদ্ভট কথা বিন্দু মাত্রও ৰিশ্বাসযোগ্য নয়। একটা জলজ্যান্ত স্বাভাবিক মানুষ সম্পর্কে আপনি এসব আজগুবি কী বলে যাচ্ছেন? যার সঙ্গে আমি প্রায় চার মাস ধরে ঘর করছি, সে কী করে একটা আত্মা ভর করা লাশ হয়?!… ভন্ডামির একটা সীমা থাকা দরকার। সুমি তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, বাবা, ওঠাে তো ৷ এই সব ভণ্ড ফকিরদের কাছে আসাই উচিত নয়। যা ইচ্ছা মিথ্যে বানােয়টি আজগুবি সব গল্প বলে যাচ্ছে।‘ মাকুলি গর্জে উঠলেন, ‘তােদেরকে কে আসতে বলেছে? যা, তােরা …দূর হ আমার সামনে থেকে। আমার কথা মিথ্যে না সত্যি তা সময় হলেই টের পাবি।" ইসমাইল তালুকদার সুমিকে ধমকাতে লাগলেন, তুই ওনার সম্পর্কে ভুল বুঝছিস। উনি মিথ্যা বলতে যাবেন কেন…?জাহিদ মারা গেছে এই কথাটা ছাড়া বাকি সবই তো ওনার বর্ণনার সাথে মিলে গেছে। উনি যেটা বলছেন সেটাই হয়তো ঠিক। আমরা সাধারণ মানুষ বলে তা বুঝতে পারছি না। উনি খুবই আধ্যাত্মিক ক্ষমতাসম্পন্ন একজন ফকির। ওনার ভুল হতে পারে না। ছুটে গিয়ে মাকুলির পা চেপে ধরে কাকুতি মিনতি ভরা গলায় বললেন, ফকির মা… আমার মেয়েকে ক্ষমা করে দেন। ও ছোট মানুষ, ভুল বুঝেছে আপনাকে। দয়া করে ক্ষমা করে দেন। ওর যাতে মঙ্গল হয় সেই ব্যবস্থা নেন ৷ দয়া করুন… । এক পর্যায়ে মাকুলির মন গলল ৷ মাকুলি বলতে লাগলেন, ‘মেয়ের মঙ্গলই যদি চাস_ যা, রাইস মিলের বর্জ্য আবর্জনার নীচ থেকে কালু মিয়ার হাড় গোড় ওঠানাের ব্যবস্থা কর। এরপর সেই হাড় গোড় সমেত কাফ্নের কাপড়, আতর, লোৰান, কর্পূর অর্থাৎ একজন মৃত মানুষ দাফন কাফন করতে যা যা লাগে তাই নিয়ে আমার এখানে আয়। সঙ্গে কম পক্ষে বিশজন লোক। ইসমাইল তালুকদার বললেন, “আমার রাইস মিল থেকে বিশ জনকে আনলে হবে না? ওরা আমার বিশ্বস্ত, লোক জানাজানি হত না। শ্রমিক হোক আর যা ই হোক, মুসলমান হলেই চলবে। তারা তাে শুধু মাত্র জানাজার নামাজ পড়বে ৷ কালু মিয়ার হাড় গোড়কে কাফনের কাপড় পরিয়ে জানাজা দেওয়া হবে। জানাজার নামাজের ইমামতি করবে আমার বশে থাকা এক জিন। জানাজা শেষে পার্শ্ববর্তী জঙ্গলের ভিতর কবর দেওয়া হবে।’ সামনে থাকা গামলার দিকে তাকিয়ে যোগ করলেন. গামলার এই মাটি গুলােও কবরের ভিতরে ছিটিয়ে দেওয়া হবে। মাকুলির সামনের গামলার গাঢ় লাল তরলে তিনি থুতু ফেলার পর আগুন জ্বলে উঠেছিল। বেশ কিছুক্ষণ দাউদাউ করে আগুন জ্বলার পর ধীরে ধীরে আগুন নিভে যায়। আর দেখা যায় লাল তরলের বদলে গামলা ভর্তি ঝুরঝুরে মাটি। তিনি সেই মাটিই কবরে ছিটিয়ে দেবার কথা বলেছেন৷ এগারো সুমির বাবা ইসমাইল তালুকদার ফকিরের নির্দেশ মত সব কিছুই করেছেন৷ গত রাতেই কালু মিয়ার হাড় গোর… রাইস মিলের বর্জ্য আবর্জনার নীচ থেকে তুলে মাকুলির আস্তানার পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে কবর দেওয়া পর্যন্ত যা যা করার সব করেছেন ৷ কালু মিয়ার আত্মার নাকি এখন মুক্তি মিলেছে। আত্মা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। আর কখনওই ফেরত আসবে না। ইসমাইল তালুকদার এখন ঢাকায়। তিনি ও ঢাকায় এসেছেন … খোঁজ নিতে। জাহিদ বাস অ্যাক্সিডেন্টে অনেক আগেই মারা গেছে, জাহিদের মৃতদেহের উপর এতদিন কালু মিয়ার আত্মা ভর করেছিল, মাকুলির বলা এই তথ্য ও তাঁর কাছেও বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। এর পরও তিনি সাহস করে মাকুলির সামনে কিছুই বলেননি। ঢাকায় এসে ইসমাইল তালুকদার জানতে পারেন, কাজের মেয়ে পারুলের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বের হয়েছে ৷ রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, মেয়েটাকে প্রথমে প্রচণ্ড বলবান কেউ ধর্ষণ করে। এরপর এক ঝটকায় ঘাড় মটকে ঘাড়ের ভারটেব্রা ভেঙে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পুলিশের সব সন্দেহ গিয়ে পড়ে জাহিদের উপর। পুলিশ জাহিদকে গ্রেফতার করার জ়ন্য জাহিদের বাসায় হানা দেয়। জাহিদকে পাওয়া যায় না। তবে বাসার বেডরুমের খাটের নীচে একটা লাশ পাওয়া যায়। লাশটা কার বোঝার কোনও উপায় ছিল না। কারণ লাশটা একেবারেই পচা গলা ৷ পচে গলে লাশের সমস্ত মাংস কালো আঠাল তরলে পরিণত হয়ে বেয়ে বেয়ে নামছিল৷ পুলিশ সেই _পচা গলা লাশটা উদ্ধার করে নিয়ে যায়। পুলিশের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের মতে, লাশটা কোনও পুরুষ মানুষের। এবং লাশটা প্রায় চার মাস আগের। অর্থাৎ যে মানুষটার লাশ, সে,প্রায় চার মাস আগে মারা গেছে। আর মৃত্যু ঘটেছে পানিতে ডুবে ৷ গভীর রাত। বাইরে প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে। সুমির চোখে ঘুম নেই। সুমি শুধু বিছানায় এপাশ ওপাশ করছে। সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না… চার মাস ধরে সে একটা আত্মা ভর করা লাশের সাথে ঘর করেছে। সেই লাশটাই পুলিশ খাটের নীচে পচা গলা অবস্থায় পেয়েছে। নাকি ওসব কিছুই না, জাহিদ পুলিশের ভয়ে গা ঢাকা দিয়েছে। লাশ অন্য কারও। হঠাৎ খাটের নীচ থেকে গোঙানির মত শব্দ হতে লাগল। জান্তব ভয়ঙ্কর পা শিউরানো শব্দ। শব্দটা কানে আসতেই সুমির বুক ধক করে উঠল। সুমি ভয়ে কাঠ হয়ে কান খাড়া করে রইল। এক পর্যায়ে গোঙানির সাথে সুমির নাম ধরে ড়াকার শব্দ শোনা গেল ৷ গোঙাতে গোঙাতে ঘড়ঘড়ে স্বরে টেনে টেনে ডাকছে, সুমি এই সুমি সুমি…,… সুমি কোনরকমে কাঁপা গলায় বলে উঠল, কে?!…… কে ডাকছে আমাকে ?!! গোঙানিরত ঘড়ঘড়ে গলার স্বরটা টেনে-টেনে বলতে লাগল, ‘আমি-জাহিদ। আমার-সঙ্গে -তোমার- বিয়ে- ঠিক -হয়েছিল। বিয়ে -করতে -ঢাকা -থেকে -আসবার- পথে- বাস -অ্যাক্সিডেন্টে- আমার -মৃত্যু -হয়। আমার- আত্মার -মুক্তি -মেলেনি ৷ আমি- এখন- অতৃপ্ত- আত্মা।!! (সমাপ্ত) ------------- ।। একাকী কন্যা ।।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২০৯৭২ জন


এ জাতীয় গল্প

→ অতৃপ্ত আত্মা-৭ শেষ

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now