বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
৷
কাঠফাটা রোদের মধ্যে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটছে নিতু । একটা রিকশাওয়ালা ও টি এস সি রাজী হলোনা । পিপাসায় গলা শুকিয়ে কাঠ । টি এস সি গিয়ে এক গ্লাস ঠাণ্ডা লেবুর শরবত ঢকঢক করে গিলতে হবে ।
আজ নিতুর বিয়ে । বাসা থেকে পালিয়ে এসেছে । মালিবাগ কাজী অফিসে বিয়ে করবে সৌরভকে ।পরণে মায়ের একটা নীল শাড়ি । মাথার ওপরের আকাশটার মত নীল । সবাই লাল শাড়ি পড়ে বিয়ে করে । কিন্তু নিতুর কাছে কোন লাল শাড়ি নেই । মায়ের ড্রেসিং টেবিলে একটা চিরকুট লিখে এসেছে । এতক্ষনে মা হয় দেখেও ফেলেছে । বাবার হার্টের অসুখ । না জানি কি হয় ।
মা ,
আমি আজ একটা বেকার ছেলেকে বিয়ে করতে যাচ্ছি । তোমরা যার সাথে আমার বিয়ে দেবার কথা ভাবছ ।ছেলেটা ভাল তবে একটু বেশী বোকা । কেমন যেন বোকার মত চেয়ে থাকে ।দেখতে বিরক্ত লাগে । বোকা ছেলেরা নাকি স্বামী হিসেবে খুব ভাল হয় । তারপর আমি এই চালচুলোহীন ছেলেটাকেই বিয়ে করব । কারণ আমি তাকে ভালবাসি ।আর ভালবাসার মানুষকে ঠকাতে নেই ।
ইতি
তোমার মেয়ে নিতু ।
একটু তাড়াতাড়ি হাটতে গিয়ে স্যান্ডেলটা ছিড়ে যায় । স্যান্ডেলটা হাতে নিয়ে হাটতে হাঁটতে ভাবে কোন অশুভ লক্ষণ নয়ত ।
কাঠফাটা রোদের মধ্যে এক তরুণী খালি পায়ে একজোড়া ছেঁড়া স্যান্ডেল হাতে হাঁটছে ।এই দৃশ্য দেখতে উৎসুক মানুষের অভাব নেই । তরুনীরা যাই করে তাতেই মানুষ চোখ রসগোল্লার মত করে তাকায় ।
নিতু নীলক্ষেত থেকে হেঁটে হেঁটে টি এস সি এসে পৌঁছেছে মাত্র । রোদে গলা শুকিয়ে কাঠ । তার ওপর ছেড়া সান্ডেলটা ঠিক করাতে হবে । নতুন স্যান্ডেলও কেনা যায় তবে একটু পরে বিয়ে করবে । এখন থেকে অলপ টাকায় চলতে হবে ।বেহিসেবী খরচ করা যাবে না একেবারেই। সৌরভ এর দুইটা টিউশনির টাকায় কেমনে চলবে কে জানে । নিতুকে ও টিউশনি যোগাড় করতে হবে হয়ত ।ভাবতে ভাবতে একটা দোকানে ঢোকে ।
মামা ঠান্ডা ড্রিঙ্কস কি আছে দেন তো ?
সেভেন আপ ,মাউনটেন ডিউ আর পেপসি ।
পেপসি দ্যান মামা ।
বোতলটা খুলে ঢকঢক করে গিলে ফেলে নিতু ।
নিতু ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে সৌরভ এর কোন খোঁজ নেই । ২.৩০ বাজে । ফার্মগেট থেকে আসতে এতক্ষণ লাগে নাকি ।৩ টার মধ্যে মালিবাগ পৌঁছাতে হবে ।আজকের দিনটাতে তো ছেলেটা একটু আগে আসতে পারে ।
বাসা থেকে বেরুবার আগে কথা হয়েছে । বলল আসছি । তুমি কাছাকাছি এসে ফোন দেবে ।
নিতু কল করল , একবার দুইবার কেউ ধরছে না ।
নিতু টি এস সি তে গিয়ে বসল এককাপ চা হাতে ।
তখনি এক টোকাই এসে বায়না ধরল আফা একটা ফুল লন না ।
নাম কি রে তোর
ইয়াকুব ।
থাকিস কোথায় ?
এইখানেই পইড়া থাকি ।
আফা আপনেরে ম্যালা দিন দেখছি এইহানে
তাই নাকি ?
হুম ।একবার আমার সব ফুল কিন্ন্যা নিছিলেন ।
ভাইজান আইব না ?
আসবে । জানিস আজ আমাদের বিয়ে ।
আফা এই ফুলটা লন ।ট্যাহা লাগব না । এইডা আমার পক্ষ থেইক্যা আপনাগো বিয়ার উপহার ।
মুচকি হেসে পিচ্চিটা চলে গেল ।
ঠিক তখনি অন্য একটা নম্বর থেকে একটা ফোন ।
হ্যালো ,
হ্যালো্ ,
একজন রোড এক্সিডেন্ট করেছে । উনার মোবাইলে লাস্ট ডায়াল আপনার ছিল তাই আপনাকেই ফোন করেছি । উনি এখন পিজি তে । উনার অবস্থা খুব খারাপ । সেন্স থাকা পর্যন্ত বারবার নিতু নামের কাউকে ডাকছিল । আপনি তাড়াতাড়ি আসুন।
নিতু ঝড়ের বেগে পিজিতে পৌছায় । ততক্ষণে সৌরভ পাড়ি জমিয়েছে মেঘের ওপারে ।
নিতু কান্নায় ভেঙে পড়ে ।
এরপর নিতু উদ্ভ্রান্তের মতন রাস্তায় ঝুম বৃষ্টিতে হাঁটছে । অসম্ভব রুপবতী এক তরুনী রাস্তায় হাঁটছে । দেখে মনে হবে মেয়েটা নীল শাড়িতে বৃষ্টিবিলাস করতে বেড়িয়েছে । বৃষ্টির পানিতে মিশে যাচ্ছে প্রিয়জনের জন্যে ঝরা চোখের জল ।
নিতু যে রিকশাওয়ালাকেই দেখছে তাকেই বলছে যাবেন মামা ,মালিবাগ কাজী অফিস । আজ আমার বিয়ে । দেরী হয়ে যাচ্ছে ।
রিকশাওয়ালা গুলো ভ্রু কুচকে চলে যাচ্ছে । হয়ত ভাবছে মাথা খারাপ নাকি ? পাগল রিকশায় উঠিয়ে লাভ নেই ।আজকাল মানুষ নিজে থেকে অহেতুক ঝামেলায় জড়াতে চায় না । সময়টাই বুঝি এমন ।
- ওয়াহিদা হাসান প্রিয়া
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now