বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন
বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

নিঃস্বার্থ ভালোবাসা

"রোম্যান্টিক" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিয়েন সরকার (০ পয়েন্ট)

X নিঃস্বার্থ ভালোবাসা -আপন সকাল ছয়টা। কৃষ্ণচূড়া গাছটির নিচে দাড়িয়ে এক দৃষ্টিতে ধূসর রঙের বাড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে নীল। না, পুরো বাড়িটি দেখছে না নীল। ওর চোখ শুধু দক্ষিণের খোলা বারান্দাটির দিকে। রোজ এখানে এসে এই বারান্দাটির দিকে তাকিয়ে থাকে নীল। উদ্দেশ্য একটি মেয়েকে দেখা। অসম্ভব রুপবতী একটি মেয়ের জন্যই প্রতিদিন এই গাছটির নিচে দাড়িয়ে অপেক্ষা করে নীল। মেয়েটি রোজ সকালে এখানে এই বারান্দায় এসে বেশ কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকে। মুখে থাকে মিষ্টি সুরের গুনগুন করে গাওয়া গান। যেদিকে তাকায় সেদিকে অপলক তাকিয়ে থাকে। চোখে একটি কালো চশমা। নীল প্রথমে এই কালো চশমার রহস্য বুঝতে না পারলেও পরে খুঁজ খবর নিয়ে জানতে পারে মেয়েটি অন্ধ। শুনে প্রথমে নীলের খারাপ লাগলেও পরে ঠিক হয়ে যায়। ভেবে নেয় এই মেয়েকে ই ওর জীবন সঙ্গীনি করতে হবে। মেয়েটি কে প্রথম যেদিন দেখেছিলো সেদিন ই প্রেমে পরে যায় নীল। সেদিন নীলাদ্রি ওর আম্মুর সাথে বের হয়েছিলো। সেদিন ও চোখে কালো চশমা ছিলো। পরনে ছিলো গাড়ো নীল রঙের থ্রি-পিস। সেদিন নীল প্রথম দেখেই অবাক হয়ে তাকিয়েছিল মেয়েটির দিকে। আর ভেবেছিল যে বিধাতা সব সৌন্দর্য দিয়ে নিজের হাতে এই মেয়েকে বানিয়েছেন। নীল সেদিন মেয়েটির পিছু নেয়। যেতে যেতে মেয়েটিরর বাড়ি পর্যন্ত যায়। যে বাড়িতে মেয়েটি উঠেছে তা দেখে নীল বুঝে ফেলে যে রা এই এলাকায় নতুন। তারপর নীল মেয়েটির সব খবর নিয়ে জানতে পারে মেয়েটির নাম নীলাদ্রি। বাবা নেই। ভাইয়ের উপর সংসার। এখানে এসেছে বেশ কয়েকদিন হয়। কিন্তু মেয়েটির একটা সমস্যা। সে অন্ধ। তবে জন্ম থেকে নয়। একটা দুর্ঘটনা ওর চোখ দুটু কেরে নেয়। কথাটা নীলের মনে খুব আঘাত করে। কিন্তু যে মেয়েকে দেখে ওর প্রথম ভালোলাগা অনুভব হয়েছে সেই মেয়ে কে যাই হোক জীবনে চায় নীল। তাই প্রতিদিন এইখানে এসে নীলাদ্রির জন্য অপেক্ষা করে। কিন্তু কোনদিন নীলাদ্রির সাথে কথা বলতে যায় নি। আজ যে করেই হোক নীলাদ্রির সাথে কথা বলবেই নীল। তাই আগে থেকে যা করার করতে হবে। নীল আস্তে আস্তে নীলাদ্রির বারান্দার পাশে বকুল গাছটির নিচে যায়। গাছটি নীলাদ্রির বারান্দার উপরে উঠে গিয়েছে। নীল বুঝে যায় কি করতে হবে ওকে। গাছটি বেয়ে উঠে যায় নীলাদ্রির বারান্দায়। চুপ করে বসে থাকে সেখানে। যেহেতু সকাল বেলা তাই অনেক মানুষ ই ঘুম থেকে জেগে উঠেনি এখনো। তাই ওকে কেউ দেখার ভয় ও নেই। বারান্দায় পেতে রাখা চেয়ারে চুপ করে বসে আছে নীল। একটু পরই নীলাদ্রি বের হয় রুম থেকে। নীলাদ্রির কাছে অন্যদিনের থেকে আজ একটু অস্বাভাবিক বারান্দাটি। কথায় আছে মানুষের একটা ইন্দ্রিয় অচল হলে আরেকটি সচল হয়। নীলাদ্রির ও তাই হয়েছে। নীলাদ্রি প্রথম এসেই জিজ্ঞেস করে..... -এখানে কে....?(কন্ঠে ভয়ের বিন্দুমাত্র রেশ নেই) -ইয়ে মানে আমি....(হালকা একটু ভয় পায় নীল। যদি আবার নীলাদ্রি চিৎকার করে বসে) -আমি কে..? আর আপনি বা এখানে কি করছেন? -আমি নীল... এখানে আপনার জন্যই এসেছি। -আমার জন্য..? -হ্যা আপনার জন্য। তারপর নীলাদ্রি কে সব খুলে বলে নীল। ওর ভালো লাগার কথা। নীলাদ্রি কে ভালোবাসার কথা। সবকিছুই খুলে বলে নীলাদ্রি কে। নীলাদ্রি কিছু বলতে যাবে এমন সময় নীলাদ্রির আম্মু ওকে ভেতর থেকে ডাক দেয়। তাই নীল তারাহুরো করে নিচে নেমে যায় বকুল গাছটি দিয়ে। যাওয়ার সময় বলে যায় নীল আবার আসবে। নীলাদ্রি ও কিছুটা চিন্তায় পরে যায় যে এই ছেলে কি চায় ওর কাছে? পরদিন সকাল ছয়টা বাজে নীল যায় নীলাদ্রির কাছে। অনেক্ষন কথা বলে দুজন। নীলাদ্রির সাথে কথা বলে নীল জানতে পারে নীলাদ্রির অন্ধ হওয়ার ঘটনা। নীল আরো জানতে পারে নীলাদ্রি অন্ধ বলে ওকে কেউ ভালোবাসে না। সবাই অবহেলা করে। শুধুমাত্র নীলাদ্রির মা ই ওকে একটু বুঝে। সব শুনে নীল নীলাদ্রি কে আশ্বাস দেয় যে ওর জীবনের সব দায়ীত্ব নীল নিবে। কিন্তু নীলাদ্রি তাতে ভয় পায় এই ভেবে যে নীল হয়তো ওকে করুনা করছে। কিন্তু ছেলেটির কথা শুনে মনে হয় ছেলেটি সত্যি ওকে ভালোবাসে। কিন্তু প্রথমে নীলাদ্রি নীলের ভালোবাসায় সারা দেয় না। কিছুদিন নীলের পাগলামি দেখে একসময় নীলাদ্রি ও বাধ্য হয় নীল কে ভালোবাসতে। শুরু হয় ওদের জীবনের নতুন এক অধ্যায়। দুজন দুজন কে অনেক ভালোবাসে। অনেক কেয়ার করে। নীলাদ্রির কাছে কোন ফোন ছিলো না। তাই নীল প্রতিদিন সকালে নীলাদ্রির সাথে দেখা করে যেত। আবার বিকেলেও আসতো। এভাবেই বেশ কিছুদিন কেটে যায় ওদের এই মিষ্টি মধুর ভালোবাসায়। কিন্তু হঠাৎ একদিন নীলাদ্রির মা সবা দেখে ফেলে। নীল নীলাদ্রির মায়ের সামনে পরে যায়। কিন্তু তিনি কিছু বলেন নি ওদের। নীল কে ডেকে ঘরে নিয়ে যায়। নীল নীলাদ্রি দের ড্রইং রুমে বসে নীলাদ্রির আম্মুর সাথে কথা বলছে। কথা বলার সময় নীল লক্ষ্য করে নীলাদ্রির আম্মু কাঁদছে। নীলাদ্রির আম্মু নীল কে বলে:- -বাবা, আমার মেয়ে কে যদি তুমি সত্যি ভালোবেসে থাকো তাহলে ওকে কখনও কষ্ট দিও না। ও এমনিতেই অনেক দুঃখি। -ছি ছি... কি বলছে আন্টি..? আমি নীলাদ্রি কে আমার জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসি। আমি বেঁচে থাকতে নীলাদ্রির কোন কষ্ট হতে দিবো না কখনও। -আমার মেয়ে তুমি আমার মেয়েকে করুনা করছো না তো? জানো ওকে সবাই অবহেলা করে। মেয়েটা অন্ধ হওয়ার পর ওর ভাই বোনেরা ওর সাথে কথাও বলে না ঠিক করে। ওর বাবা নেই। আমার বড় ছেলে আমাদের দেখে। মেয়েটি কে চিকিৎসা করলে ও ঠিক হয়ে যেত। কিন্তু ওর ভাবির সংসার বুঝইত। তুমি ওকে কখনও কষ্ট দিবে না তো বাবা..?(বলে নীলাদ্রির আম্মু কাঁদতে থাকে) -আমার উপর বিশ্বাস রাখতে পারেন আন্টি। তারপর নীলাদ্রির আম্মু ওদের বসিয়ে রেখে চা বানাতে চলে যায়। নীলাদ্রি আর নীল বসে থাকে ড্রইং রুমে। নীল হঠাৎ নীলাদ্রি কে প্রশ্ন করে... -নীলাদ্রি তোমার এখন কি দেখতে খুব বেশি ইচ্ছে করছে? -আমি যদি এখন দেখতে পেতাম, তাহলে দুই নয়ন ভরে শুধু তোমাকেই দেখতাম। -তুমি আবার দেখতে পাবে নীলাদ্রি। আমার চোখ দিয়ে দেখতে পাবে। আমি আজই ডাক্তারের সাথে কথা বলবো। নীল এর কথা শুনে নীলাদ্রির চোখে পানি চলে আসে। আড়াল থেকে নীলাদ্রির আম্মু শুনে ওনার এ চোখে পানি চলে আসে। নীল উঠে চলে যায় তখনকার মত। সেখান থেকে সোজা চলে যায় একজন আই স্পেশালিষ্ট এর কাছে। গিয়ে কথা বলে জানতে পারে নীলাদ্রির চোখে সঠিক কর্নিয়া লাগালে আবার সে দেখতে পাবে। আর নীলাদ্রি কে অবশ্যই ওনার কাছে নিয়ে আসতে বলে ডাক্তার। পরদিন নীলাদ্রি ও ওর আম্মু কে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যায়। সাথে ছিলো নীলের বাবা মা। নীল আগেই ওনাদের সব খুলে বলে রেখেছিলো। আর এও বলে রেখেছে যে ওর একটি চোখ দিয়েই নীলাদ্রি কে আবার পৃথিবীর আলো দেখাবে। ওনারা নিজেদের একমাত্র ছেলের মুখে হাসি ফুঁটাবার জন্য বুকে পাথর বেঁধে সব মেনে নেয়। ডাক্তার সব পরিক্ষা করে জানায় যে নীলের কর্নিয়া দিয়ে নীলাদ্রি দেখতে পাবে। আর যত দ্রুত সম্ভব অপারেশন করে ফেলা উচিৎ। ডাক্তারের কথা মত তার পরদিন ই অপারেশন হয় নীল আর নীলাদ্রির। ডাক্তার বলেছেন তিনদিন পর ওদের চোখের পট্টি খুলতে হবে। অবশেষে আসে সেই কাঙ্ক্ষিত দিনটি। নীল আর নীলাদ্রি সামনাসামনি দুটি বেডে বসে আছে। পাশে দাড়িয়ে আছে নীলাদ্রির মা ও নীলের বাবা মা। নীল একটি চোখ দিয়ে দেখতে পারে। তাই ডাক্তার আগে নীলাদ্রির চোখের ব্যান্ডেজ খুলে। তারপর নীলাদ্রি কে বলে আস্তে আস্তে চোখ খুলতে। ততক্ষনে নীলের ও ব্যান্ডেজ খুলা শেষ। নীলাদ্রি আস্তে আস্তে চোখ খুলে। চোখ খুলেই অপলক তাকিয়ে থাকে সামনে বসা মানুষটার দিকে। নীলাদ্রি মনে মনে ভাবে... "এত সুন্দর একটা মানুষ আমার জন্য ওর একটা চোখ দিয়ে দিলো? এতটা কেন ভালোবাসে আমাকে?" নীলের ডাকে নীলাদ্রির ভাবনার জগত থেকে ফিরে আসে। নীল প্রশ্ন করে:- - কি দেখছ এমন করে? পছন্দ হয়নি আমাকে? -হয়েছে.. কিন্তু....... -কিন্তু কি...... -ভাবছি আজই বিয়ের কাজটা সেরে ফেলবো। কথাটা বলেই বোকা হয়ে যায় নীলাদ্রি। কারণ ওর খেয়াল ই ছিলো না পাশে বাবা মা দাড়িয়ে আছে। কিন্তু ওর কথা শুনে বাবা মা বাহিরে চলে যায়। একান্তে রেখে যায় দুজন কে। দুজন তাকিয়ে আছে দুজনের দিকে। চোখে অসীম ভালোবাসা দুজনের। চোখ দিয়ে মনের কথা আদানপ্রদান করছে দুজন। এ যেন এক মধুর দৃশ্য।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২১০৫৫ জন


এ জাতীয় গল্প

→ নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
→ ""নিঃস্বার্থ ভালোবাসা""
→ নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
→ নিঃস্বার্থ ভালোবাসা

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now