বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
মিজান সাহেব নিষ্ফল আক্রোশে স্ত্রীর দিকে
তাকালেন। ছেলে বলল, “হ্যাঁ, তুমি বলছ না কেন
বাবা?
কি তোমার সিক্রেট?” তার চোখে শিশুসুলভ
সারল্য। মিজান সাহেব নিশ্চিত হলেন, এই কাজ মা
ছেলের নয়। হতেই পারে না। মা ছেলেকে
অবাক করে জবাব না দিয়ে নিঃশব্দে উঠে চলে
এলেন তিনি। শোবার আগে টেবিল ল্যাম্পের
আলোয় লেখাটা একবার দেখলেন মিজান সাহেব।
কি ছোট্ট একটা লেখা, একটা মাত্র বাক্য, তাতে
আবার মাত্র পাঁচটা শব্দ, অথচ কি আশ্চর্য শক্তিধরই না
এই ছোট্ট বাক্যটি, এই ছোট্ট শব্দগুলো! এই
একটা লেখাই কি আশ্চর্য পরিবর্তন এনেছে তার
নিয়মতান্ত্রিক রুটিন মাফিক কর্পোরেট জীবনে!
মিজান সাহেব আগে লক্ষ্য করেন নি, এখন
দেখলেন, লেখাটা লেখা সবুজ কালি দিয়ে। আর
তার চেম্বারে কোন সবুজ কালির কলম নেই,
যেটা আছে সেটা তিনি পকেটে নিয়ে
ঘোরেন। সেটা সবসময় তার কাছেই থাকে।
বাসায়ও তিনি অনেকদিন সবুজ কালির কলম দেখেন
নি। বাসায় কেউ সবুজ কালি ব্যবহার করে না।
লেখাটার দিকে খুব ভালোভাবে তাকালেন তিনি।
ফাউনটেন পেনের কালিতে লেখা মনে হল।
কারণ এক
জায়গায় কালিটা ছড়ে গেছে, শুধু ফাউনটেন
পেনের কালিতেই এমন হয়। আকস্মিক এই
আবিষ্কারে হঠাৎ আবার মন ভাল হয়ে যায় মিজান
সাহেবের। তার বিশ্লেষণশক্তি তো অসাধারণ!
আগে তিনি এভাবে ব্যাপারটা দেখেন নি কেন?
মিজান সাহেব ভেবে দেখলেন, তার পকেটের
কলমটাও ফাউনটেন। তবে কি এটা দিয়েই রহস্যময়
লেখাটা লেখা হয়েছে? কলমটা প্যান্টের পকেট
থেকে এনে ঐ লেখাটার পাশে একটা দাগ
দিলেন তিনি।
গাঢ় দাগটা শুকিয়ে আস্তে আস্তে হালকা হয়ে
আসতে লাগলো। একটু পরে সেটা পুরো
শুকিয়ে গেল। মিজান সাহেব অবাক হয়ে
দেখলেন, দুইটার কালি একেবারে মিলে যায়।
অর্থাৎ মিজান সাহেবের রোগী দেখার সময়েই
কেউ এই কাজটা করেছে। তার চোখের
সামনেই, তার অজান্তে। কারণ চেম্বারে
রোগী দেখার সময় কলমটা তার টেবিলের
উপরই থাকে। নাকি তিনি নিজেই করেছেন? এমন
কি হতে পারে না যে অবচেতন মনে তিনি নিজেই
লিখে রেখেছেন এই লেখা? কিন্তু কেন?
মিজান সাহেব লেখাটার নিচে নিজের হাতের
লেখায়
লিখলেন, "তোমার গোপন কথা আমি জানি।"
একবার না, দুই তিন বার লিখলেন। কিন্তু কিছুতেই
নিজের ডাক্তারসুলভ দুর্বোধ্য হাতের লেখার
সাথে মেয়েলি বাচ্চা বাচ্চা লেখাটার মিল পেলেন
না তিনি। মিজান সাহেব মনে মনে তার স্ত্রী এবং
ছেলেকে সাসপেক্ট লিস্ট থেকে বাদ দিয়ে
দিলেন। নিজেকেও। নিজে লিখলেও তিনি তো
গত কয়েকদিনের মধ্যেই লিখেছেন, সুতরাং
মনে না থাকার তো কিছু নেই! তার স্মৃতিশক্তি
তো এত দুর্বল না। নাহ, রোগীগুলোকে
নিয়ে ভাবতে হবে। কেন, কোন রোগীর
তিনি কোন সর্বনাশ করেছেন? নাকি এটা
কোম্পানির
কারো কাজ? নাকি কোন রোগীর বেশে
এসেছিল সে নিজেই...নাহ, তার তো এখন
বিদেশে থাকার কথা...
নাকি অনেক আগেই এই লেখাটা প্যাডে লিখে
রেখেছিলেন তিনি? অথবা অন্য কেউ? নিছক
ফাজলামো করে?
অসম্ভব কিছু নয়।
সেদিনের মত ঘুমাতে গেলেন মিজান সাহেব।
ঘুমাবার আগে তরুণ বয়সের মত লাজুক গভীর
ভালবাসায় লাবণ্যকে জড়িয়ে ধরলেন তিনি। লাবণ্য
প্রথমে অবাক হলেন, তারপর মুচকি হাসলেন।
পরদিন চেম্বারে গিয়ে মিজান সাহেব সিরিয়ালের
খাতা দেখে রোগীদের যে বিশাল লিস্ট
করেছিলেন সেখান থেকে অনেকের ফোন
নাম্বার ম্যানেজ করলেন। প্রত্যেককে
“আর্জেন্ট চেক আপে”র জন্য চেম্বারে
ডেকে পাঠানো হল। অনেকেই এলেন
সেদিন।
মিজান সাহেব প্রত্যেককেই একটা করে চিঠি
ধরিয়ে দিলেন। চিঠির মধ্যে “তোমার”,
“গোপন”,
“কথা”, “আমি”, “জানি” শব্দগুলো আছে।
রোগীর দায়িত্ব পুরোটা একবার লিখে ফেলা।
রোগীদের সপ্রশ্ন দৃষ্টির জবাবে মিজান সাহেব
বললেন, এটা হচ্ছে স্নায়ুতন্ত্রের কগনিটিভ ফাংশন
ঠিক আছে কি না তার টেস্ট। এটা সবাইকেই পাশ
করতে হবে, না করলে বুঝতে হবে তার
অনেক বড় রোগ হয়েছে। সেই রোগের
চিকিৎসাও খুব ব্যয়বহুল। রোগীরা ভয়ে ভয়ে
লেখা শুরু করে। মিজান সাহেব কারো লেখার
সাথেই আসল লেখার মিল খুঁজে পান না। পরের
দিনই তিনি কোম্পানির লোকদের টার্গেট করেন।
কিন্তু তাদের লেখার সাথেও মিজান সাহেব আসল
লেখাটার মিল খুঁজে পান না। মিজান সাহেব কেমন
অপ্রকৃতিস্থের মত হয়ে যান। রাতে বাসায় গিয়ে
তিনি বিদেশি একটা নাম্বারে ফোন করেন। বেশ
কয়েকবার ডায়াল হবার পর ওপাশ থেকে ফোনটা
ধরা হয়। কেউ একজন বিদেশি ভাষায় নেশাগ্রস্থ
কণ্ঠে বলে, “কে?”
মিজান সাহেব স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেলেন। নাহ,
সে এখনও বিদেশেই আছে।
তারমানে কাজটা সে নিজের হাতে করে নি।
মিজান সাহেব ফিসফিসিয়ে বলেন, “আমি। আমি তো
তোমার সব টাকা মিটিয়েই দিয়েছি। তুমি যা চাইছ তাই
দিয়েছি। তবু কেন এরকম করছ?”
ওপাশ থেকে বলা হয়, “কিরকম করছি?”
মিজান সাহেব ক্ষেপে উঠে বলেন, “এরকম।
আমাকে হুমকি দিচ্ছ কেন? তুমি যা চেয়েছ আমি
তো সবই দিয়েছি”। ওপাশের কণ্ঠটা হা হা করে
হাসতে শুরু করে। তারপর ফোন রেখে দেয়।
মিজান সাহেব আবার একই নাম্বারে ফোন করেন।
কিন্তু এবার কেউ তার কলে সাড়া দেয় না। মিজান
সাহেব আবার চেষ্টা করেন। আবার। ওপাশে
ফোনটা বাজতেই থাকে, ক্রিং ক্রিং, ক্রিং ক্রিং। মিজান
সাহেবের বুকের মাঝে কেমন যেন করে।
হঠাৎ করেই যেন তিনি বুঝতে পারেন, রউফকেই
হাত করেছে বিদেশী নাম্বারের রহস্যময় মালিক।
প্রচুর টাকা দিয়ে রউফকে দিয়েই লিখিয়েছে এই
হুমকি...অথবা কোন রোগীর বেশে আসা
কাউকে দিয়ে...অথবা কোম্পানির কাউকে
দিয়ে...অথবা... মিজান সাহেব ঠিক করেন,
আগামীকালই তিনি স্ত্রী ও ছেলেকে তার
গোপন কথাটা খুলে বলবেন। অন্য কেউ এসে
তার আগে এটা বলে দিলে সেটা ঠিক হবে না। তার
নিজের মুখে শুনলেই হয়তো তার স্ত্রী ও
ছেলে তাকে ক্ষমা করতে পারবে। নাহলে তারা
হয়তো তাকে কখনো ক্ষমা করবে না।
পরের দিন রাতে স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে লং
ড্রাইভে বের হন মিজান সাহেব। বাসা থেকে
অনেকদূর আসার পর তিনি বলা শুরু করেন,
“আসলে তোমাদের একটা কথা অনেক আগেই
বলা উচিৎ ছিল আমার। এতদিন বলি নি, কারণ বলার সাহস
পাই নি। আজ বলব, কারণ আমি চাই আমার নিজের
মুখেই তোমরা কাহিনীটা শোন। আমার বয়স যখন
বিশ বছর তখন আমি আমার বাসার কাজের মেয়ের
প্রেমে পড়ি। প্রেমের আট মাস পরেই
মেয়েটা জানায়, সে গর্ভবতী। আমার নাকি তাকে
তখনই বিয়ে করতে হবে। এটা শুনে আমার মাথায়
বাজ পড়ে। কারণ আমি তখন বিদেশের একটা
মেডিকেল কলেজে স্কলারশিপ পেয়ে গেছি,
আর কদিন পরেই বিদেশ চলে যাব। আর এদিকে
মেয়েটার গর্ভস্থ সন্তানেরও বয়স বাড়ছে,
মেয়েটাও বেশিদিন এই ঘটনা মানুষের কাছ থেকে
লুকিয়ে রাখতে পারবে না। এই সমস্যা থেকে
বাঁচতে আমার এক বন্ধুর শরণাপন্ন হই আমি। সেই
বন্ধুর সহযোগিতায় আমি মেয়েটাকে গভীর
জঙ্গলে নিয়ে হত্যা করি। কিন্তু তখন বন্ধু
বেঁকে বসে। তার কাছে নাকি আমার খুনের সকল
প্রমাণ আছে। বছরে বছরে একটা নির্দিষ্ট
অঙ্কের টাকা দাবি করে বসে সে। অর্থাৎ,
ব্ল্যাকমেইলিঙের শিকার হই আমি। আমি তড়িঘড়ি
করে বিদেশে চলে যাই। আমার কুকীর্তির কথা
বাবা ঘুণাক্ষরেও কিছু টের পান না। তিনি পুলিশি
ঝামেলাকে টাকা দিয়ে মিটিয়ে ফেলেন। ব্যস,
আমাদের পরিবার
থেকে মেয়েটার নাম সম্পূর্ণভাবে মুছে যায়।
বিদেশ থেকে আমি নিয়মিতই বন্ধুর অ্যাকাউন্টে
টাকা পাঠাতাম। আমি যখন ডাক্তারি পাস করে বের হই
তখন তার চাওয়ার পরিমাণ আরও অনেক বেড়ে যায়।
ঠিক এমন একটা সময়ে বাবা মারা যাওয়ায় তার স্থাবর
অস্থাবর সব সম্পত্তির মালিক হই আমি। ব্যস, বন্ধু দাবি
করে বসে, ঢাকায় আমাদের ইন্ডাস্ট্রির অর্ধেক
তার নামে লিখে দিতে হবে। আমি তাকে শর্ত
দিয়ে দিই, অর্ধেক নয়, পুরোটাই আমি তাকে
দিয়ে দেব, কিন্তু এর পর যেন সে দেশ
ছেড়ে চলে যায়, আমার কাছে আর কিছু না চায়।
সে রাজি হয়। এতদিন সে কোন ঝামেলা করে নি,
কিন্তু এখন আবার করছে। আমার ভয় হচ্ছিল সে
নিজেই তোমাদের সত্যিটা বলে দেবে, তাই
আমি নিজেই নিজের দোষ স্বীকার করলাম।
তোমরা পারলে আমায় ক্ষমা কর”।
লাবণ্য আর সৌম্য স্তব্ধ হয়ে কথাগুলো শোনে।
গাড়ি রাতের রাস্তায় চলতে থাকে। অনেকক্ষণ
কেউ কারো সাথে কথা বলে না।
একটু পরে লাবণ্য ব্যাগ থেকে একটা ভাঁজ করা
কাগজ বের করে মিজান সাহেবের হাতে দেন।
মিজান সাহেব যন্ত্রের মত তার প্রেসক্রিপশনের
অতিপরিচিত কাগজটা খোলেন। লাবণ্য বলেন,
"তোমার টেবিল থেকে নিয়ে এসেছি।" মিজান
সাহেব অতি আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করেন, কাগজটার
নিচের
দিকে তার নিজের হাতের লেখায় তিন বার লেখা
রয়েছে, "তোমার গোপন কথা আমি জানি।" সবুজ
কালিতে একটা দাগও রয়েছে ওখানে। অথচ
কাগজের ঠিক মাঝখানের মেয়েলী বাচ্চা বাচ্চা
হাতের
লেখাটা আর নেই। তারপরেই পাশের জঙ্গলে
একটা শিয়াল ডেকে ওঠে।
আর ঠিক তখনই মিজান সাহেব বুঝতে পারেন এটা
আসলে তার বউয়ের লেখা ছিল না। তার
ছেলেরও লেখা ছিল না। রউফেরও লেখা ছিল না,
তার কোন রোগীরও লেখা ছিল না, কোম্পানির
কোন প্রতিনিধিরও লেখা ছিল না। তার সেই
ব্ল্যাকমেইলার বন্ধুরও লেখা ছিল না এটি। এমনকি
তার নিজেরও লেখা ছিল না এটি।
এটা আসলে কারোই লেখা ছিল না।
এই লেখার লেখক ছিল স্বয়ং নিয়তি।
(সমাপ্ত)
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now