বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন
বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

মিজান সাহেবের নিয়তি-০২

"গোয়েন্দা কাহিনি" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিয়েন সরকার (০ পয়েন্ট)

X যে মিজান গন্ধ শুঁকে, ম্যাগনিফাইং গ্লাসের নিচে দেখেই বের করে দিতে পারে অপরাধীর আসল ঠিকানা। মিজান সাহেবের আর প্লেন বানানো হল না। তিনি এই লেখার সম্ভাব্য লেখকদের কথা ভাবতে লাগলেন। তার চেম্বারে কে কে আসে? রোগী দেখার সময় থাকেন তিনি আর রউফ। অন্য সময় চেম্বার তালা মারা থাকে। রউফ অবশ্য আগেই আসে সিরিয়াল নেবার জন্য। রোগী দেখার সময় সাধারণত ঔষধ কোম্পানির কিছু লোকজন চেম্বারে বসে থাকে। এদের কাজ দুইটা, নানা উপহার দিয়ে ডাক্তারদের বশে রাখা, এবং উপহার পাওয়া ডাক্তার তাদের কোম্পানির ঔষধ আদৌ লিখছে কি না সেদিকে শকুন দৃষ্টি রাখা। দুইটাতেই এরা সমান পারদর্শী। একটা প্যাডে কাগজ থাকে প্রায় ২০০; মিজান সাহেব হিসাব করে দেখলেন, তার পৃষ্ঠা বাকি আছে আর মাত্র ১৭ টি। মানে এর আগে প্রায় ১৮৩ জন রোগীকে তিনি এই একই প্যাড থেকে প্রেসক্রিপশন লিখে ছিঁড়ে দিয়েছেন। তাছাড়া, নতুন প্রেসক্রিপশন প্যাড থাকে আলমারিতে, রোগীরা সেখানে হাত দিতে পারে না। সুতরাং রোগীদের মধ্য থেকে কেউ এই কাজ করে থাকলে গত ১৮৩ জনের মধ্যেই কেউ করেছে। না না, এক রোগী তো এরই মধ্যে দুবার আসতে পারে। তাকে নতুন প্রেসক্রিপশন দেয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে সাসপেক্টের সংখ্যাও কিছুটা কমে যাবে। মিজান সাহেব একটা কাগজে লিখলেন, “প্রাইম সাসপেক্ট - রউফ, সাসপেক্ট নং ২ - গত ১৮৩ টি প্রেসক্রিপশন যে রোগীদের দেয়া হয়েছে, সাসপেক্ট নং ৩ - গত ১৮৩ টি প্রেসক্রিপশন দেবার সময় ঔষধ কোম্পানির যে যে লোক চেম্বারে বসে ছিল” তিনি ঘড়ির দিকে তাকালেন। সাড়ে এগারোটা বাজে। এখন হয়তো ওরা চলে এসেছে। মিজান সাহেব চেম্বারে তালা মেরে রাস্তায় বেরিয়ে এলেন। আজ তিনি হেঁটেই যাবেন বাসায়। নির্জন রাতের রাস্তা আজকে অদ্ভুত কারণে খুব উপভোগ্য মনে হচ্ছে তার কাছে। পরদিন মিজান সাহেব চেম্বারে গিয়েই রউফকে ডাকলেন। বললেন, “রউফ মিয়া, আমি তোমার বুদ্ধির একটা পরীক্ষা নেব”। রউফ বলল, “কেমুন পরীক্ষা?” মিজান সাহেব বললেন, “আমি তোমাকে একটার পর একটা শব্দ বলতে থাকব। তুমি সেগুলো শুনে সাথে সাথে লিখে ফেলবে। একটা শব্দ দুইবার বলব না”। রউফ কেমন গাইগুই করতে লাগল। মিজান সাহেবের মনের মধ্যে কে যেন বলতে লাগল, “এইটাই কালপ্রিট। ধর শালারে। মার শালারে”। কিছুক্ষণ গাইগুই করলেও শেষ পর্যন্ত রউফ রাজি হল। মিজান সাহেব বলা শুরু করলেন, “তুমি”, “কেন”, “মানুষ”, “আমি ”, “ভালোবাসা”, “তোমার ”, “চিনি”, “গোপন ”, “নিয়ন্ত্রণ”, “পায়খানা”, “ কথামালা”, “খেলা”, “জানা জানি ”। রউফ তার প্রায় দুর্বোধ্য হাতের লেখায় শব্দগুলো লিখে ফেলল। মিজান সাহেব তাকে আরও আস্তে লিখতে বললেন, আরও জোরে লিখতে বললেন, বাম হাত দিয়ে লিখতে বললেন। রউফ লেখার ফাঁকে ভ্রূ কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, “স্যারের কি হইছে? এইসব কি পরীক্ষা করতাছেন? চেহারাটাও তো কেমুন কেমুন লাগতাছে”। মিজান সাহেব এ কথার জবাব না দিয়ে গম্ভীর মুখে রউফের লেখাটা হুমকির লেখার সাথে মিলিয়ে দেখতে শুরু করলেন। কিন্তু কোনভাবেই কোন মিল পেলেন না তিনি। তাছাড়া রউফ তার সাথে আছে মাত্র দু বছর। তার পক্ষে মিজান সাহেবের তেমন কোন গোপন কথা জানা সম্ভব না। বিশেষ করে ঐ কথাটা তো কোনভাবেই জানা সম্ভব না...নাকি রউফকে ইতোমধ্যে হাত করা হয়েছে...? রউফ বলল, "স্যার ঐটা কি দেখতেসেন? আমি তো কিছুই দেখতেছি না।" মিজান সাহেব কটমট করে তার দিকে তাকালেন। তারপর হঠাৎ করেই কি মনে করে কাগজটা ভাঁজ করে পকেটে ঢুকিয়ে ফেললেন। রউফকে বললেন, “তুমি এইখানে বস। তোমার সাথে কথা আছে”। রউফ চিন্তিত মুখে বসল। তার স্যারের মাথার স্ক্রু ঠিক আছে কি না এটা নিয়ে সে যথেষ্ট সন্দিহান। কথায় কথায় জানা গেল, রউফ এ লেখার ব্যাপারে কিছু জানে না। আর এই প্যাডটা খোলা হয়েছে চার দিন আগে। এই চারদিনে রউফের যতদূর মনে আছে, আটটি কোম্পানির লোক মিজান সাহেবের চেম্বারে বিভিন্ন সময়ে বসে ছিল। আর গতকাল তার স্ত্রী এবং ছেলে দুপুরের দিকে একবার চেম্বারে এসে অপেক্ষা করছিল, তিনি তখনও সরকারী হাসপাতাল থেকে চেম্বারে পৌঁছান নি। একটু পরে তারা মিজান সাহেবকে না পেয়ে চলে যায়। সেটা তাকে আর জানানোও হয় নি। মিজান সাহেব তার আগের লেখার পাশে লিখলেন, “সাসপেক্ট নং ৪ - আমার ছেলে সাসপেক্ট নং ৫ - আমার স্ত্রী” রউফের নামটা লিস্ট থেকে কেটে দিলেন তিনি। সেদিন রোগী দেখা লাটে উঠল তার। মাথায় শুধু ঐ একটা লাইনই ঘুরতে লাগল মিজান সাহেবের। রোগী তাড়াতাড়ি বিদায় করে সিরিয়ালের খাতা দেখে গত ১৮৩ টি প্রেসক্রিপশন নেয়া রোগীদের বিশাল নামের লিস্ট তৈরি করলেন তিনি। এরপর ম্যানেজ করলেন আটটি কোম্পানির প্রতিনিধিদের নামধাম। সেদিন বাসায় গিয়ে ঘুম ভালো হল না তার। লাবণ্য লক্ষ্য করলেন ব্যাপারটা। তার মুখে কেমন সূক্ষ একটা হাসি ফুটে উঠল। তিনি বললেন, “কি হয়েছে?” মিজান সাহেব বলবেন কি না এই নিয়ে প্রবল মানসিক দ্বন্দ্বের শিকার হলেন। না বলি না বলি করতে করতেও একসময় তিনি ঘটনাটা তার স্ত্রীকে বিস্তারিত বললেন। তারপরই মিজান সাহেব হঠাৎ অপ্রকৃতিস্থের মত চিৎকার করে উঠলেন, “তুমি এটা কেন লিখেছ? আমি তোমার কি ক্ষতি করেছি?” লাবণ্য এই আকস্মিক প্রতিক্রিয়ায় ভয়ানকভাবে চমকে গেলেন। কিন্তু পরক্ষণেই সামলে নিয়ে তিনি বললেন, “আমি এগুলা লিখব কেন? কেন, কি এমন গোপন কথা আছে তোমার? আমাকে তো আগে বল নি!” মিজান সাহেব কেমন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন। লাবণ্য কি জানে? কিভাবে? তার মুখ দিয়ে আর একটা কথাও বের হল না। লাবণ্য কেমন রহস্যময় ভঙ্গিতে স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। সেটা দেখে আরও ভড়কে গেলেন মিজান সাহেব। লাবণ্য বলল, "কাগজটা আমাকে দেয়া যায়? আমি কি একটু দেখতে পারি?" মিজান সাহেব পকেট থেকে আস্তে করে কাগজটা বের করে লাবণ্যের দিকে বাড়িয়ে ধরলেন। লাবণ্য দেখে অবাক হয়ে বলল, "কই এখানে তো কিছুই লেখা নেই।" বলে কি? ছাগল নাকি? মিজান সাহেব ছোঁ মেরে কাগজটা নিয়ে পকেটে পুরলেন। একটু পরেই ঘুমে অচেতন হয়ে নাক ডাকতে শুরু করল তার। পরদিন অফিসে যাবার আগে ছেলে সৌম্যকে কাছে ডাকলেন মিজান সাহেব। বললেন, “বাবা, তোমার স্কুলের বাংলা খাতাটা নিয়ে আসো তো !” ছেলে বলল, “কিন্তু বাবা, আমি তো এখনই স্কুলে যাব!” “আচ্ছা তাহলে এর আগের খাতাটা, যেটা শেষ হয়ে গেছে, নিয়ে আসো”। সৌম্য খুঁজেটুজে একটা পুরনো খাতা এনে বাবার হাতে দিল। খাতাটা হাতে নিয়েই মিজান সাহেব অফিসের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালেন। ছেলে কেন যেন মুচকি হাসল। গাড়িতে উঠেই মিজান সাহেব ছেলের হাতের লেখার সাথে হুমকির হাতের লেখা মিলিয়ে দেখলেন। হ্যাঁ, মিল আছে। বেশ মিল। তবে কি ছেলেই...? কিন্তু কেন? ছেলে কি আসলেই তার কোন গোপন কথা জানে? জানলে কি জানে? ঐটা জানে না তো? ছেলের বয়স তো মাত্র এগার বছর। তাকে কি কেউ ইতোমধ্যে বলে দিয়েছে...? মিজান সাহেবের কেমন গা গোলাতে লাগল। ছেলে কি সব জেনে গেছে? কে বলেছে তাকে? কেন বলেছে? যার বলার কথা সে তো এখন দেশে নেই... চেম্বারে যাওয়া পর্যন্ত মিজান সাহেবের মন খুবই খারাপ ছিল। কিন্তু চেম্বারে যাবার সাথে সাথে একটা কথা মাথায় আসল তার। রউফকে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “আচ্ছা আমার বউ ছেলে তো কালকে চেম্বারে এসেছিল, তাই না?” “জে স্যার”। “তারা যতক্ষণ ছিল, একসাথে ছিল? মানে, এমন কি কখনো হয়েছে যে তোমার ম্যাডাম চেম্বারে একা ছিল, ছেলে বাইরে ছিল? বা ছেলে ভিতরে ছিল কিন্তু ম্যাডাম বাইরে ছিল?” রউফ একটু ভেবে বলল, “না স্যার”। মিজান সাহেব একটু হতাশ হলেন যেন। পরক্ষণেই শিশুর মত উৎফুল্ল হয়ে উঠলেন তিনি। তার গোপন কথাটা জানলে নিশ্চয়ই মা ছেলে একসাথে মিলে এই কাজ করবে না! তাদের রিঅ্যাকশন নিশ্চয়ই অন্যভাবে হবে! কিন্তু...করতেও তো পারে! তিনি প্রিয়তির জন্মদিনে যেতে অপারগতা প্রকাশ করার জন্য রাগ করে মা ছেলে মিলেও তো এই কাজ করতে পারে! কিন্তু সেক্ষেত্রে গোপন বিষয়ের ব্যাপারটা নিশ্চয়ই পুরোটাই ফান! কিন্তু...তবু একটা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। মনের মধ্যে থেকেই যাচ্ছে ছোট্ট একটা খচখচ করা অনুভূতি। সেদিন রাতে গিয়েই স্ত্রী আর ছেলেকে মুখোমুখি বসালেন তিনি। স্পষ্ট করে জিজ্ঞেস করলেন তারাই এই কাজ করেছে কি না। লাবণ্য বললেন, “তুমি আগে শুধু আমার উপর দোষ দিয়েছিলে, এখন দেখি ছেলেটার উপরেও দিচ্ছ। কেন, কি তোমার গোপন কথা? আমাদের বলছ না কেন? কোন গোপন কথা না থাকলে তো তোমার এত উত্তেজিত হবার কথা না”।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২০৯৫৭ জন


এ জাতীয় গল্প

→ মিজান সাহেবের নিয়তি-০২

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now