বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
মিজান সাহেবের নিয়তি
সালেহ তিয়াস
মিজান সাহেবের মনটা আজকে খুব খারাপ। খুবই
খারাপ। কারণ আজ তার একমাত্র শ্যালিকার জন্মদিন,
অথচ তিনি সেই অনুষ্ঠানে থাকতে পারছেন না।
মেয়েটা এত করে বলেছিল যেতে! প্রথমে
তিনি অনেক গাইগুই করেছিলেন, কিন্তু তার বউ,
ছেলে আর শ্যালিকা মিলে এত করে অনুরোধ
করেছে যে তিনি কিছুতেই তাদের কথা
ফেলতে পারেন নি। কথা দিয়ে এসেছেন যে
যেভাবেই হোক জন্মদিনের অনুষ্ঠানে
যাবেনই। কিন্তু তিনি ডাক্তার, প্রাইভেট প্র্যাকটিস
করেন, রোগী আসলে তাকে তো আর
ফিরিয়ে দিতে পারেন না।
আজকে চেম্বারে আসার আগে তিনি একবার
ভেবেছিলেন একটা নোটিশ টানিয়ে দেবেন।
নোটিশে লেখা থাকবে, “আজ রাতে রোগী
দেখা হবে না”; কিন্তু দুপুরে চেম্বারে এসে
রোগীর সিরিয়াল দেখে তার মত পরিবর্তন
করতেই হল। আজ অনেক রোগী দেখতে
হবে তাকে। অনেক রোগী। কাউকে তো
আর ফিরিয়ে দেয়া যাবে না। জন্মদিনের
অনুষ্ঠানের চেয়েও এই মানুষগুলোর বিশ্বাসের
মূল্য তার কাছে অনেক বেশি। একটু আগে মিজান
সাহেব তার স্ত্রীর কাছ থেকে একটা মেসেজ
পেয়েছেন। মেসেজটা ছোট, কিন্তু
মেসেজের আড়ালে যে মেসেজ
সেটার অর্থ ভয়াবহ। সে লিখেছে, “amake na,
tomar biye kora ucit chilo tomar
chamber ke.” কি ভয়ঙ্কর মেসেজ!
লাবণ্যের মত একটা সাধাসিধা মেয়ে এমন ভয়ঙ্কর
মেসেজ কি করে পাঠাতে পারল? মিজান সাহেব
কিছুতেই ভেবে কূল কিনারা পাচ্ছেন না। আজ
সবকিছু এরকম নাগালের
বাইরে চলে যাচ্ছে কেন? দুনিয়ার সব পুরুষেরই
কি এরকম হয়? সবাই কি তার মত প্রায়ই কাজের জন্য
ফ্যামিলিকে স্যাক্রিফাইস করার ভয়াবহ যন্ত্রণা লাভ
করে? নাকি এই শাস্তি খোদা শুধু ডাক্তারদের
ঘাড়েই চাপান?
মিজান সাহেব একটা সিগারেট ধরালেন। ধোঁয়ার ফাঁক
দিয়ে তার চেম্বারের দেয়ালে বড় করে লেখা
কথাটা চোখে পড়ল, “NO SMOKING”। মিজান
সাহেব হাসলেন। বড় করুণ সে হাসি। জীবনে কত
লোককে তিনি ক্যান্সারের ভয় দেখিয়ে সিগারেট
ছাড়িয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। অথচ আজ? এখন
ধূমপান করলে তাকে দেখার
কেউ নেই। এখন বাজে রাত দশটা সাতান্ন। শেষ
রোগীটি একটু আগে চলে গেছে। তার
সহকারী রউফও চলে গেছে মায়ের অসুস্থতার
কথা বলে। তার মানে মিজান সাহেব এখন তার
চেম্বারে সম্পূর্ণ একা। মিজান সাহেব কি করবেন
বুঝতে পারছেন না। এখন বাসায় গেলে কাউকে
পাবেন না। বাসায় খালি একটা কাজের মেয়ে
আছে। অন্যরা সবাই জন্মদিনের অনুষ্ঠানে
গেছে। তার একমাত্র শ্যালিকা প্রিয়তি হয়তো এখন
কেক কাটছে। অথবা হয়তো তার কেক কাটা
শেষ, এখন চলছে তাদের খাওয়া দাওয়া পর্ব। অথবা
হয়তো এখন তারা সবাই গল্পে মশগুল, মিজান
সাহেবের কথা হয়তো এখন কারো মনে
পড়ছে না। অথবা হয়তো পড়ছে, এগার বছরে
দুমাস
হল পা দেয়া একমাত্র ছেলে সৌম্য হয়তো এখন
বাবাকে খুব মিস করছে। অথবা হয়তো প্রিয়তি এখন
তার কোন
বান্ধবীর কাছে একমাত্র দুলাভাই, মানে তাকে
নিয়ে হাসাহাসি করছে। অথবা হয়তো লাবণ্য গোপন
অভিমানে বারবার মোবাইলের দিকে তাকাচ্ছে,
ওখানে একটা অতিপরিচিত নাম্বার থেকে নতুন
কোন মেসেজ এসেছে কি না এটা জানার
হয়তো অসীম আগ্রহ তার।
মিজান সাহেব সিগারেট টানতে টানতে তার
প্রেসক্রিপশন প্যাডটা কাছে টেনে নিলেন।
অনেক দিন পর আজ তার প্লেন উড়াবার শখ
হয়েছে। কাগজের প্লেন। মিজান সাহেব প্রথম
পাতাটা ছিঁড়লেন। প্লেন বানাবার উদ্দেশ্যে ভাঁজ
করতে যাবেন, এমন সময় জিনিসটা তার চোখে
পড়ল। প্রেসক্রিপশন প্যাডে বর্তমানে যে পাতাটা
সবার উপরে আছে, সেটায় ছোট ছোট করে
কি যেন লেখা। মিজান সাহেব চোখে চশমা
লাগিয়ে জিনিসটা পড়লেন। পড়েই তার ভ্রূ কুঁচকে
গেল।
এটা কি?
ওখানে লেখা ছিল, “তোমার গোপন কথা আমি
জানি”।
এটা কি? কে লিখেছে এটা?
মিজান সাহেব কিছুতেই ভেবে পেলেন না।
হাতের লেখাটা কেমন বাচ্চা বাচ্চা মনে হচ্ছে।
আবার যেভাবে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা
হয়েছে তাতে মেয়েলি ভাবটাও লক্ষণীয়।
কিন্তু... নাহ, তিনি কিছুতেই শিওর হতে পারছেন
না। আর যেই লিখুক, তার কোন গোপন কথা সে
জানে? এটা কি কোন হুমকি? ব্ল্যাকমেইলিং?
প্রত্যেকের
জীবনেই তো একাধিক গোপন কথা থাকে।
তারও আছে।
তাহলে নির্দিষ্টভাবে কোনটার কথা বলছে অদৃশ্য
হুমকিদাতা?
নাকি নির্দিষ্ট করে নয়, সব গোপন কথার দিকেই
নির্দেশ করছে সে?
সেটাই বা কিভাবে সম্ভব?
নাকি তিনি যা ভাবছেন তাই...না না সেটা তো হবার কথা
নয়...
মিজান সাহেব উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। রহস্যময়
ঘটনাটি তার মনকে ভালোভাবেই নাড়া দিল।
হঠাৎ করেই যেন তার ভিতরে একজন গোয়েন্দা
মিজানের জন্ম হল।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now