বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন
বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

লালচুড়ি

"ফ্যান্টাসি" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিয়াদুল ইসলাম রূপচাঁন (০ পয়েন্ট)

X পহেলা বৈশাখ স্পেশাল আম্মু টাকা দাও!!আর আলমারি থেকে আমার লাল পাঞ্জাবি, সাদা পাজামাটা বের করো। _হঠাৎ এই সাজ সকালে টাকা চাচ্ছিস,আবার লাল সাদা পাঞ্জাবি,পাজামা!! ব্যাপারটা কি বলত!! _কেন আম্মু তুমি কি জানো না আজ পহেলা বৈশাখ?তাই বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাব। _ও আচ্ছা তাই বল!!আমি তো ভাবলাম আমার ঘুম কাতুরে ছেলেটা এত সকাল সকাল আজ কোথায় বের হচ্ছে। _আম্মু আজ মেলায় যাব,তোমার কি কিছু লাগবে? _না বাবা আমার বয়স হয়ে গেছে, এখন আর কোন জিনিসের শখ নেই। এখন শুধু একটাই শখ,আর সেটা হলো কবে আমার ছেলের জন্য একটা লালটুকটুকে পুতুল বউ ঘরে নিয়ে আসব। _হইছে আম্মু আজকের দিনটায় না হয়,এই কথাগুলো বাদ দাও।আর আম্মু আমি যাই _আচ্ছা বাবা তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরিস। আমি ইফতি,বাবা মায়ের একমাত্র আদরের সন্তান। _যাই হোক,বাসা থেকে তাড়াহুড়ো করে বের হলাম কারন আমার বন্ধুগুলো সব আমার জন্য দাড়িয়ে আছে। _কিরে ইফতি,আজো লেইট!!কতক্ষণ ধরে আমরা বসে আছি। আচ্ছা এবার চল!! অবশেষে এদের সাথে মেলায় আসলাম। আজ খুব শখ জাগল আম্মুর জন্য কিছু কিনব। আর তাই আম্মুর জন্য চটপট টুকটাক কিছু কিনে নিলাম। আর একজনের জন্য ও যে কিছু হবে আমার ।আর তাই চলে গেলাম এক চুড়ির দোকানে কারন চুড়ি যে তার খুব পছন্দ। হঠাৎ কয়েকটা মেয়েকে দেখলাম চুড়ি কিনছে। এর মধ্যে একজনকে কেন যেন আমার খুব পরিচিত লাগল।তাকে দেখেই বুকের মধ্যে এক অদ্ভুত টান অনুভব করলাম আমি। ওকে দেখেই আমার মিথির কথা মনে পড়ে গেল।সেই ১০ বছর আগের ছোট্ট মিথি। মিথিরা আমাদের বাড়ির দোতলায় ভাড়া থাকত।ওর আম্মুর সাথে আমার আম্মুর খুব মিল ছিল,সেই সুবাদে আমাদের ভাব হতেও দেরি হয়নি। সেই ছোটবেলা থেকেই চুড়ি পাগলি ছিল ও।লাল চুড়ি নাকি ওর খুব ভালো লাগে।বিশেষ করে কাচের চুড়ি। তাই ছোট বেলায় যদি কখনো বাবার সাথে মেলায় যেতাম তখন ও আমার কানে কানে বলে দিত, ইফতি আমার জন্য কিন্তু তুমি লাল চুড়ি নিয়ে আসবা।আর আমি তো তখন খুব ছোট ছিলাম।টাকা কই পাব?তাই মেলায় গিয়ে কান্না জুড়ে দিতাম,বাবা আমি চুড়ি কিনব। বাবা তো তখন হেসেই অস্থির।বাবা বলত,তুমি তো ছেলে বাবাই। ছেলেরা চুড়ি পরে না।তারপরও কান্না করতাম বলতাম চুড়ি দিয়ে আমি খেলব।তারপর বাবা একপ্রকার না চাইতেই চুড়ি কিনে দিতেন। প্রথমে বাবা প্লাস্টিকের চুড়ি কিনে দিতে চাইত আমি তখন জোড় করে কাচের লাল চুড়ি কিনতাম। এই নিয়ে যে বাবা,মা কত হাসাহাসি করেছিল,যার কোন শেষ নেই। তারপর এই চুড়িগুলো এনে ওকে দিতাম। ও যে কি খুশী হত,বলে বুঝাতে পারব না।দিন যায় দিন আসে।তার কয়েক বছর পর ওর বাবার চাকরির সুবাদে ওরা চট্টগ্রাম চলে যায়। আর ওর সাথে দেখা হয়নি কোনদিন। _কিন্তু আজ বড় হয়ে বুঝতে পারলাম ওকে আমার খুব ভালো লাগত।ও যেহেতু নেই তারপরও আমি প্রতিটি উৎসবেই এক মুঠো করে লাল কাচের চুড়ি কিনি,ওর জন্য। আর সেগুলোর স্থান হয় আমার আলমারির গোপন ড্রয়ারে। আমার আলমারিতে যে কতগুলো লাল কাচের চুড়ি জমে আছে তা গুনে শেষ করতে পারব না। আমি আদৌ জানি না এই জমানো লাল চুড়িগুলো কখনো ওকে দিতে পারব কিনা।এই চুড়ি গুলোতে কত যে মায়া আর ভালবাসা জমে আছে ওর জন্য তা বলে বুঝাতে পারব না।বিন্দু বিন্দু করে জমিয়ে রাখা ভালোবাসা জানি না কোনদিন ওর কাছে কখনো প্রকাশ করতে পারব কিনা। কিন্তু সেই ছোট্ট মিথিকে আমি খুব মিস করি।প্রতিটাক্ষনে মিস করি।যখন কোন কাপল দেখি তখনই আমার মিথির চেহারাটা মুখের সামনে ভেসে ওঠে। আচ্ছা ও কি আমায় মনে রেখেছে আমার মত।নাকি জীবনে চলার পথে অন্ধকারে হারিয়ে ফেলেছে। _হঠাৎ অন্তুর ডাকে বাস্তবে ফিরলাম,আর সাথে সাথে খুজতে লাগলাম মেয়েটিকে।না আর খুজে পাইনি সেই মেয়েটিকে।হারিয়ে গেল মেয়েটা মেলায় হাজারো মানুষের ভীড়ে। তারপরও কেটে গেলো আরো অনেকগুলো বছর আর ওর সাথে দেখা হয়নি।অনেক খুজেছি ওকে আমি এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে কিন্তু পাই নি।কিন্তু আজো ওর প্রতি আমার ভালোবাসা বিন্দু মাত্র কমেনি। তারপর একদিন হঠাৎ করেই আমার বিয়ের আয়োজন করা হলো।অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমাকে বিয়ের পিড়িতে বসতে হলো। তারপর ভাগ্যকে মেনে নিলাম। ভাবলাম নিয়তি আমাদের এক হতে দিল না। এখানে ওর কোন দোষ নেই। যে মেয়েটার সাথে আমার বিয়ে হলো মানে মৃন্ময়ী, ও খুব ভালো একটা মেয়ে। বছর ঘুরে আজ আবার পহেলা বৈশাখ।সব শপিং শেষ,কিন্তু সকালে খেয়াল হলো ওর চুড়ি কেনা হয়নি।আর তার সে কি কান্না।তাই ওকে ওর চোখ ধরে নিয়ে গেলাম সেই আলমারির কাছে যেই ড্রয়ারটা আজ পর্যন্ত কেউ দেখেনি। মৃন্ময়ী সেখানে চুড়িগুলো দেখে অবাক,বিস্ময়ে পাচ মিনিট দাড়িয়ে রইল।কারন এত্তগুলো লাল চুড়ি চুড়ির দোকানেও সচরাচর দেখা যায় না। পরে ওকে ব্যাপারটা খুলে বললাম। আমার মনের সব কথাগুলো।ও শুনে কান্না করতে লাগল। __আর বল্ল ইফতি তুমি আমাকে কম ভালোবাসো।ঐ মিথিকে বেশী ভালোবাসো। _আমি হেসে বল্লাম,আরে পাগলি আমি তোমাকেই বেশী ভালবাসি।আর ও তো ছিল আমার ছোট বেলার সঙ্গী। আর তুমি হচ্ছো আমার সারাজীবনের সঙ্গী। _এগুলো শুনে ও হেসে দিল। আচ্ছা মৃন্ময়ী চলো আজ আমরা সারাদিন ঘুরব। তারপর জীবনে চলার পথে, অনেকগুলো বছর কেটে গেল।হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও ওকে হঠাৎ হঠাৎ মনে পড়ত। মাঝরাতে ওকে মাঝেমাঝে স্বপ্ন দেখতাম।তখন বুকের মধ্যে একপ্রকার চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করতাম। কারন আমি জানি না মিথি আজো বেচে আছে নাকি মরে গেছে।কিন্তু আমি ওকে আজো পুরোপুরিভাবে ভুলতে পারিনি........


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২০৯৬৯ জন


এ জাতীয় গল্প

→ লালচুড়ি
→ লালচুড়ি

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now