বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন
বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

ক্রসফায়ার

"রোম্যান্টিক" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিয়েন সরকার (০ পয়েন্ট)

X ক্রসফায়ার ----------------------- *** এফ এ তারেক *** বাস জার্নি আমার মোটেই সহ্য হয় না । তাই দূর যাত্রায় ট্রেনই একমাত্র ভরসা । 'মহানগর গোধূলি' ছাড়ার কথা ঠিক তিনটায় । কী যেন এক কারণে সেই ট্রেন ছাড়ল বিকেল সাড়ে চারটায় । মন-মেজাজ এমনিতেই খারাপ, তার উপর সহযাত্রীর আচার-আচরণে বিরক্তি চরম মাত্রায় পৌঁছাল । ট্রেনে ওঠার পর থেকেই দেখছি, কার সাথে যেন ফোনে কুটুর-কুটুর করে কথা বলেই যাচ্ছেন । দু'একবার চোখ রাঙানি দিয়েছি, কাজ হয়েছে উল্টো । ভদ্রলোকের বকবকানি আরেকটু বেড়েছে । সাথে বোনাস হিসেবে যোগ হয়েছে অট্টহাসি! . . 'হ্যালো ব্রাদার! আপনি কি অসুস্থ?' 'কেন বলেনতো!' 'আপনি ভুলেই গেছেন, এটা পাবলিক প্লেস । আপনি ছাড়া আশেপাশে আরও অনেক মানুষ আছে এখানে ।' কিছুটা দেরিতে হলেও ভদ্রলোক ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন । সরি-টরিও বললেন । বুঝাই যাচ্ছে প্রিয় কোনো মানুষের সাথে কথা বলছিলেন । আমার প্রশ্নটা ছিল বেশ আক্রমণাত্মক । কিন্তু তারপরও উনি বেশ হাসিমুখেই কথা বলছেন আমার সাথে । তাই ধরে নেয়া যায়, যে কারণেই হোক তার মনটা আজ বেশ ভালো । 'আর বলবেন না ভাই । আপনার ভাবী; মেয়েটা যে কী ছেলেমানুষ! নিজেতো পাগল, আমাকেও পাগল করে ছাড়বে, হা হা হা . . ! বলে কিনা . . . ।' ভদ্রলোক নিজের বউ রেখে এবার আমার দিকে বন্দুক তাক করলেন । মুসিবত আর কাকে বলে! লোকটাকে খোঁচানোই দেখছি ভুল হয়েছে । আচ্ছা, সম্পূর্ণ অপরিচিত একজনের সাথে এভাবে নিজের ব্যক্তিগত বিষয়ে আলাপ করতে কি লোকটার এতটুকুও বাধছে না? কথাবার্তায় তো মোটেই অশিক্ষিত মনে হচ্ছে না । শুদ্ধ বাংলায় বেশ গুছিয়ে কথা বলছেন । কিছু মানুষ হয়ত এমনই, যেখানে-সেখানে নিজের ঘর-সংসারের খবর বিলিয়ে বেড়ান । ভদ্রলোক যথারীতি হাসিমুখে গল্প বলে চলেছেন । সব বিরক্তি, অস্বস্তি চেপে রেখে আমিও ঠোঁটের কোণ দুটো খানিকটা উপরের দিকে টেনে দিলাম । এবং বেশ একটা আগ্রহী ভাব নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকার চেষ্টা করলাম । . . শুরুতে গল্পটা যতখানি পানসে হবে ভেবেছিলাম, ঠিক ততটা নয় । বেশ একটা সিনেমাটিক ভাব আছে গল্পে । ভদ্রলোকের নাম শাহারিয়ার । বয়স ত্রিশের আশেপাশে । চট্টগ্রামে কী যেন একটা হাউজিং কোম্পানীতে জব করেন । মাস দেড়েক আগে বিয়ে করেছেন । বউয়ের নাম যুথি । তিনি আবার আদর করে ডাকেন 'যু' বলে । রূপবতী, আর তুলনায় কম বয়সী বউ । এক কথায় সুখী মানুষ । ভদ্রলোককে দেখেই বুঝা যায় । সমস্যা হলো, উনারা বিয়ে করেছেন পালিয়ে । আর যুথির ফ্যামিলি এই বিষয়টা মেনে নেয়নি । নেয়ার কথাও না । আর্থিক এবং সামাজিকভাবে শাহারিয়ার সাহেবদের অবস্থান যুথিদের ধারেকাছেও নেই । তবে আশার কথা হলো, সপ্তাহখানেক আগে যুথির বাবা এসে কিছুদিনের জন্য যুথিকে নিয়ে গেছেন । অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, ওপক্ষ কিছুটা নমনীয় হতে শুরু করেছে । ঐদিকে যুথির নাকি বাবার বাড়িতে একদমই মন টিকছে না, এদিকে শাহারিয়ার সাহেবেরও একই অবস্থা । আর তাই বউকে ফিরিয়ে আনতে এই গোধূলি যাত্রা । মোটামোটি এই হলো ভদ্রলোকের গল্পের সার-সংক্ষেপ । ও আচ্ছা! আরেকটা বিষয় । উনাদের পরিচয়টাও বেশ ইন্টারেস্টিং । শাহারিয়ার সাহেব নাকি কী সব লেখালেখি করতেন ফেসবুকে । সেখান থেকেই যুথির সাথে পরিচয় । পরিচয় থেকে পরিণয় । তারপর পালিয়ে বিয়ে । সত্যিই, ভদ্রলোকের প্রশংসা না করে পারা যায় না । দীর্ঘ আঠারো বত্‍সরের সুদৃঢ় পারিবারিক বন্ধনে বড় হওয়া একটা মেয়েকে মাত্র চার মাসের পরিচয়ে এভাবে ঘর থেকে বাগিয়ে নিয়ে যাওয়া চাট্টিখানি কথা না । . . মানুষ যে কেন পালিয়ে বিয়ে করে, আমি ঠিক বুঝি না । ব্যক্তিগতভাবে এই বিষয়টা আমি মোটেই পছন্দ করি না, একদমই না । কারোরই অধিকার নেই এভাবে পরিবারের মান-সম্মান ধূলোয় মিশিয়ে দেয়ার । 'আচ্ছা শাহরিয়ার সাহেব . . . আপনার স্ত্রী কি আপনার সাথে মানিয়ে নিতে পারবে?' 'আমার হয়তো টাকা-পয়সা নেই । কিন্তু এতটুকু বলতে পারি, আমি ওকে কখনো কষ্ট দেবো না ।' 'হুম, সেটা না হয় বুঝা গেল । কিন্তু মেয়েটা যে এভাবে আপনার সাথে চলে এলো, মা-বাবার কথা একবারও ভাবলো না, পরিবারের সম্মানের কথাটাও ভাবলো না, এটা কি ঠিক হলো?' ভদ্রলোক সম্ভবত আমার কাছ থেকে এ জাতীয় প্রশ্ন আশা করেননি মোটেই, জবাব দিতে কিছুটা সময় নিচ্ছেন । 'ওরা আমাকে মেনে নিলেই তো হতো, তাহলে আর পালিয়ে বিয়ে করা লাগে না ।' 'তাই বলে আপনি মেয়েটাকে এভাবে নিয়ে যাবেন? ওর পরিবারের কথা একবারও ভাববেন না?' প্রশ্নটা মুখ ফসকে বেরিয়ে যেতেই বুঝলাম, কাজটা ঠিক হয়নি । ভদ্রলোক ফ্যাকাসে চেহারায় তাকিয়ে আছেন আমার দিকে । মনে হচ্ছে, কিছুটা মনোক্ষুণ্ণ হয়েছেন । খুবই স্বাভাবিক । সরি বলব কিনা ভাবছি . . । কিন্তু ফোনটা বেজে উঠতেই তার চেহারাটা আবার হাসি-হাসি হয়ে গেল । মনে হয় যুথির ফোন এসেছে । আমি আবারও অট্টহাসির যন্ত্রণায় ফিরে যাবার প্রস্তুতি নিতে থাকলাম । . . জানালায় মুখ দিয়ে আড়চোখে লোকটার দিকে তাকিয়ে আছি । উনি যে শুধু মুখ দিয়ে হাসছেন তা নয় । চোখ, মুখ, নাক তথা সমস্ত শরীর যেন একসাথে হাসছে । দেখে মনে হচ্ছে, এই মুহূর্তে উনিই বোধহয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ । হঠাত্‍ করেই এই সুখী মানুষটার জন্য আমার কিছুটা খারাপ লাগছে । এ রকম প্রাণোচ্ছল একজন মানুষকে আর মাত্র কয়েক ঘন্টা পরই পৃথিবীটা ছাড়তে হচ্ছে । তার চেয়ে বেশী খারাপ লাগছে উনার বউটার জন্য । মেহেদির রঙ শুকানোর আগেই মেয়েটাকে বিধবা হতে হবে । কী করবো? এছাড়া আমার হাতে কোন অপশন নেই আর । আমাদের এতদিনের পারিবারিক ঐতিহ্য, মান-মর্যাদা কোথাকার কোন এক শাহারিয়ার এসে ধূলোয় মিশিয়ে দেবে, আর আমি পরিবারের বড় ছেলে হয়ে বসে বসে আঙুল চুষবো! এটা তো হবে না। . . আসলে যুথি কিংবা শাহারিয়ার সাহেব, এদের কারো জন্যই আমার খারাপ লাগছে না, এতটুকুও না । হয়তো কিছুটা করুণা হচ্ছে, তবে সেটাও প্রচণ্ড ঘৃণা মিশ্রিত । যে মেয়ে পরিবারের মুখে, মা-বাবার মুখে এতটা নির্দয়ভাবে, এতটা নির্মমভাবে জুতাপেটা করতে পারে, তার জন্য মন খারাপ করার কোনো কারণ দেখি না । সত্যি বলতে কী . . . এই মেয়েকে এখন নিজের বোন ভাবতে মোটেই ভাল লাগছে না আমার । সে কেবলই এই লোকটার স্ত্রী । অন্যের স্ত্রীর প্রতি দেখানোর মতো অতিরিক্ত দয়া-মায়া এই মুহূর্তে আমার কাছে মোটেই অবশিষ্ট নেই । আমার ভিতরে এখন শুধু একটা জিনিসই কাজ করছে , 'লাশ চাই, শাহারিয়ারের লাশ ।' . . ভদ্রলোককে অনেক বুঝানো হয়েছিল । পারিবারিকভাবে যুথির অন্যত্র বিয়ে ঠিক হয়ে আছে; এ কথাও তাকে বারবার বলা হয়েছিল । একপর্যায়ে আব্বাকে কথাও দিয়েছিলেন, যুথির পথ থেকে সরে যাবেন । কিন্তু উনি কথা রাখেননি । প্ল্যানটা আমরা মাসখানেক আগেই করে রেখেছিলাম । আমরা মানে, আমি আর মোসাদ্দেক । মোসাদ্দেক শুধু যে আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু তা নয়, 'ও' আমার আপন ভাইয়ের মতো । মোসাদ্দেক যেমন লম্বা-চওড়া মানুষ, তেমনি ওর হাতও বেশ লম্বা । এই মুহূর্তে একজন এসপি'র হাতে যে পরিমাণ পাওয়ার, তা বোধহয় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর হাতেও নেই! আমাদের প্ল্যানটা খুবই সিম্পল । শাহারিয়ার সাহেবকে ক্রসফায়ারে ফেলে দেয়া হবে । পত্রিকায় নিউজ হবে, 'ক্রসফায়ারে ইয়াবা ব্যাবসায়ী নিহত, দুই রাউন্ড গুলিসহ একটি বিদেশী পিস্তল উদ্ধার ।' . . ইদানিং পত্র-পত্রিকাগুলো নাকি সব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অদৃশ্য ইশারায় চলছে । বিশেষ করে, অপরাধ সংক্রান্ত যাবতীয় খবরা-খবর সরবরাহের দায়িত্ব নাকি সাংবাদিকরা স্বেচ্ছায় র্যাব-পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন! মাঝে মাঝেই মোসাদ্দেকের সাথে এই বিষয়গুলো নিয়ে আমার হালকা তর্ক-বিতর্ক চলতো । 'কী-রে ভাই! স্বাধীন, গণতান্ত্রিক একটা দেশে এসব কী?' আমার কথায় মোসাদ্দেক মুচকি হাসতো । হঠাত্‍ হঠাত্‍ দু'একটা যুক্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা করতো ঠিকই, কিন্তু আমার চতুর্মুখী আক্রমণে কোণঠাসা মোসাদ্দেক দ্রুতই আবার মুচকি হাসিতে আশ্রয় নিতো । কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, বিষয়টা আসলে খুব একটা খারাপ না । অদ্ভুতভাবে মোসাদ্দেকের খোঁড়া যুক্তিগুলোকেও এখন বেশ জোরালো আর যুক্তিসঙ্গত মনে হচ্ছে! . . ট্রেন ইতোমধ্যে ফেনী পেরিয়ে কুমিল্লার পথে । ভদ্রলোক আবার তার বউয়ের গল্প জুড়ে দিলেন । বউকে নিয়ে কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবেন, বউয়ের কী পছন্দ-অপছন্দ, ভবিষ্যতে কী কী প্ল্যান ইত্যাদি ইত্যাদি . . । আমি জানতাম, শাহারিয়ার সাহেব গোধূলিতেই ঢাকা যাবেন । এবং এই 'ন' বগিতেই বসবেন । যে মানুষটাকে আমার ইশারায় খুন করা হবে, কেন যেন তাকে একটিবার কাছ থেকে দেখার ইচ্ছে হলো খুব । কিন্তু এভাবে মুখোমুখি পেয়ে যাব, এতটা ভাবিনি । উনি মানুষ ভালো, সহজ-সরল । অথচ এই ভালো মানুষটাই কী এক ভয়ংকর কাজ করে বসে আছেন । উনি জানেন না, কত বড় ক্ষতি করেছেন আমাদের । এই লোকটার কারণে আমার মা স্টোক করে এখন শয্যাশায়ী । এই লোকটার কারণে আমার আব্বা খাওয়া-দাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন, বাসা থেকেই বের হন না । সমাজে মুখ দেখানোই দায় হয়ে পড়েছে । লোকজন এখন আমাদের দিকে আঙুল তুলে কথা বলে । . . একটার পর একটা ষ্টেশন পেছনে ফেলে ট্রেন এগিয়ে চলেছে গন্তব্যের দিকে, চূড়ান্ত গন্তব্যের দিকে । একটু আগে মোসাদ্দেক কল দিয়েছিল । সবকিছু প্ল্যান অনুযায়ী সেট করা আছে । এখন শুধু ঢাকায় পৌঁছানোর অপেক্ষা । আমি অবশ্য প্রথমদিকে বেশ সংশয়ে ছিলাম । ঠিক-ঠাক সামাল দেয়া যাবেতো! পরে মোসাদ্দেকের আশ্বাসে নিশ্চিন্ত হলাম । খুব একটা ঝামেলা হবে বলে মনে হয় না । শাহারিয়ার সাহেব ইতোমধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছেন । কী নিষ্পাপ! কী মায়ামাখা একটা চেহারা! মেহেদিরাঙা লম্বা চুলগুলো বাতাসে লাফালাফি করছে । আমি সেদিকে তাকিয়ে আছি । আর ভাবছি, পুরো একটা পরিবারকে ক্রসফায়ারে ফেলে দিয়ে কী শান্তিতেই না ঘুমাচ্ছে লোকটা । একটু পরপর চোখের পাতাজোড়া নড়াচড়া করছে, সাথে মুখটাও হেসে হেসে উঠছে । হয়তো বউকে নিয়ে সুন্দর কোন স্বপ্ন দেখছেন । কিন্তু আফসোস . . . একজীবনে মানুষের সব স্বপ্ন সত্যি হয় না ।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২০৯৪৭ জন


এ জাতীয় গল্প

→ ক্রসফায়ার

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now