বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন
বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

কলেজের প্রথম দিকের ছাত্র

"উপন্যাস" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান নাসরুল্লাহ (০ পয়েন্ট)

X জমিদার রাজনারায়ণ দত্ত ও জাহ্নবী দেবীর একমাত্র সন্তান মধুসূদন দত্তের জীবনের ঘটনাবলী অসীম দরদ দিয়ে এঁকে পাঠকের সামনে লেখক প্রাণবন্ত করে তুলেছেন। গঙ্গানারায়ণের বন্ধু মধু হিন্দু কলেজে পড়ার সময় থেকে অবাক করা সব কাণ্ড ঘটিয়েছে। গৌরদাস বসাক, রাজনারায়ণ বসু, বেণী, মধু ও গঙ্গা হিন্দু কলেজের প্রথম দিকের ছাত্র এবং এরা সবাই মহান ইংরেজ ও ভারত-দরদী হেয়ার সাহেবের শিষ্য। ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি প্রবল অনুরাগী মধুসূদন বিলেত-ফরাসী দেশে পাড়ি দেয়া এবং মিল্টন-শেক্সপিয়ারদের সমান কবি হওয়ার বাসনায় মা-বাবার প্রচণ্ড আপত্তি সত্ত্বেও বাংলা ও হিন্দু ধর্মকে পদদলিত করে খ্রিষ্ট ধর্মে দীক্ষিত হয়। দীক্ষা নেয়ার পেছনে খ্রিষ্ট ধর্মের প্রতি কোনো আকর্ষণ ছিল না, ছিল বিলেত যাওয়ার ও ইংরেজ কবিদের সমকক্ষ হওয়ার প্রবল ইচ্ছা। বাংলা ভাষাকে চাঁড়াল-চণ্ডালের ভাষা হিসেবে অভিহিত করে সাহিত্যের জন্য একে অযোগ্য বিবেচনা করতেন। দীর্ঘ আটবছর পর ব্যর্থ মনোরথ নিয়ে মাদ্রাজ থেকে কলকাতায় কপর্দকশূন্য অবস্থায় ফিরে এসে দেখেন মা-বাবা কেউ আর জীবিত নেই। চরম অর্থকষ্টের মুহূর্তে বন্ধু গৌরদাস বসাকের অনুরোধে ৫০০ টাকা দক্ষিণার বিনিময়ে ‘কুলীনকুলসর্বস্ব’ নাটকের রচয়িতা রামনারায়ণ তর্করত্নের ‘রত্নাবলী’ নাটকের ইংরেজি অনুবাদ করতে গিয়ে মাইকেল রামনারায়ণের বাংলা লেখায় খুবই হতাশ হন। পাইকপাড়ার রাজাদের জন্য বেলগাছিয়া বাগানবাড়িতে নাটকটি মঞ্চস্থ হওয়ার সময় তিনি ভ্রুকুঞ্চিত করে বলেন যে এর চেয়ে হাজারগুণ ভালো নাটক তিনি লিখতে পারেন। অনেকটা চ্যালেঞ্জের মতো করে তিনি লিখে ফেলেন প্রথম সার্থক বাংলা নাটক ‘শর্মিষ্ঠা’, তারপর ‘পদ্মাবতী’। নাটকগুলো মঞ্চস্থ হওয়ার পর চারদিকে সকলে ধন্য ধন্য করতে লাগলো। নাটকের সাথে সাথে প্রহসন লেখার অনুরোধ আসাতে লিখলেন – ‘একেই কি বলে সভ্যতা ?’,‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’। প্রহসনগুলোও সুধীসমাজে যথেষ্ট সাধুবাদ পেলো। এরপর মধুসূদন হাত দিলেন কাব্যে, লিখলেন রামায়ণের কাহিনি অবলম্বনে ‘মেঘনাদবধ কাব্য’, তারপর ‘তিলোত্তমাসম্ভব’। অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত এই কাব্যগ্রন্থগুলো সারা দেশে সাড়া পেলে দিল। আবির্ভাব ঘটলো বাংলা সাহিত্যের আধুনিক কবিতার এই মধুকবির হাত ধরে। নবীনকুমারের ‘বিদ্যোৎসাহিনী সভা’ থেকে তাকে সংবর্ধনার আমন্ত্রণ জানালে তিনি প্রথমে প্রত্যাখান করলেও, পরে বন্ধুদের অনুরোধে অংশগ্রহণ করলেও বাংলায় বক্তৃতা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। যদিও পরে মঞ্চে উঠে বাংলায় কয়েক লাইন বলে নেমে যান এবং তাতেই শ্রোতারা মুগ্ধ হন। গঙ্গানারায়ণ নীলকরদের বিরুদ্ধে লড়াই করে জেল থেকে আসার পর বন্ধুদের সাথে বসে মধু যখন গল্প করছেন, তখনই এক আগন্তুকের আগমনে তাদের আড্ডার ছন্দপতন হয়। আগন্তুকের নাম দীনবন্ধু মিত্র, পেশায় ডাকবিভাগের সরকারি চাকুরে, কর্মস্তল পূর্ববঙ্গের ঢাকা। বাংলা নাটকের সার্থক নাট্যকার মধুসূদনের কাছে তাঁর আর্জি ছিল – নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে একটা নাটক বা প্রহসন লেখা। মধুসূদনের যেহেতু প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নেই, তাই তিনি এ-বিষয়ে দীনবন্ধুকেই লিখতে বললেন এবং বইটির ইংরেজি অনুবাদ করে দেয়ার প্রতিশ্র“তি দেন। দীনবন্ধু ‘নীলদর্পণ’ নাম দিয়ে লেখকের নামবিহীন বইটি প্রকাশ করলে তত সাড়া না পড়লেও মাইকেলের ইংরেজি অনুবাদের কপি পাদ্রী লঙ সাহেব কর্তৃক প্রচারিত হলে ইংরেজ মহলে বইটি ব্যাপক আলোড়ন তুলে। ইংরেজ সরকার বইটির রচয়িতা, অনুবাদক ও প্রকাশকের বিরুদ্ধে মামলা করে। মহান মানুষ ও আইরিশ পাদ্রী লঙ সাহেব এর সমস্ত দায় নিজের কাঁধে নেন। পরে আদালতে তার একমাসের জেল ও সহস্র মুদ্রা জরিমানা করলে নবীনকুমার সিংহ তৎক্ষণাৎ একহাজার টাকা আদালতে রেখে পলায়ন করেন। এজন্য সারা কলকাতায় নবীনকুমারের নামে প্রশংসার বন্যা বয়ে যায়। বাংলায় একটানা চার বছর লেখালেখি করার পর যখন খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে যান এবং উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সমস্ত সম্পত্তি পেয়ে রীতিমত ধনী হয়ে যান, তখন মধুর ভেতরে পুরানো বাসনা জেগে ওঠে। তিনি বিলেতে গিয়ে ব্যারিস্টারি পড়বেন ও ইংরেজি সাহিত্যে কাব্য রচনা করবেন। বিলেতে ও ফ্রান্সে থাকাকালীন সময়ে চরম আর্থিক অনটনে পড়লে একমাত্র ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছাড়া আর কেউ তার দিকে সাহায্যের হাত প্রসারিত করেননি. বরং যাদের বিশ্বাস করেছিলেন তারাই তাকে বেশি ঠকিয়েছে। ফলে তাঁকে আবার কলকাতায় ফিরে আসতে হয় এবং পড়তে হয় আবার চরম অর্থকষ্টে। এবার বিদ্যাসাগর আর সহযোগিতা করতে পারেন নি, কারণ বিলেতে তার জন্য যে টাকা পাঠাতেন তা-ও ধার করা। কিন্তু মধু তা পরিশোধ করেন নি।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২০৯৫২ জন


এ জাতীয় গল্প

→ কলেজের প্রথম দিকের ছাত্র

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now