বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন
বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

খারুর কবলে নিশি মিয়া -১

"ভৌতিক গল্প " বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিয়েন সরকার (০ পয়েন্ট)

X _____________ _____________ শনিবার রাত একটাঃ একটা কুটুরির ভেতর আবিষ্কার করল নিশি নিজেকে। হাত পা মুখ বাঁধা ওর। ঠাহর করতে পারছেনা সে কেন এখানে এভাবে এসেছে? চারপাশে অন্ধকার। বদ্ধ গুমোট একটা আবহাওয়া নিশির চারপাশে। কেমন যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে ওর। কিছুক্ষন আগে জ্ঞান ফিরে পেয়েছে সে। ফিরে পেয়েই হাচড়ে পাচড়ে বের হবার চেষ্টা করেছে সে। কিন্তু সামান্য নড়াচড়া ও করতে পারছেনা সে। নিশির ঘুম ভেঙ্গে ছিল এর মাঝে বেশ কয়েকবার। যতবার ঘুম ভেঙ্গেছে সে কিছ একটার শব্দ পেয়েছে। কেমন যেন খড়খড়ে শব্দ। শব্দটা কানের ভেতর থেকে বের হয়ে আবার কানের ভেতর ঢুকছে বলে মনে হয়েছিল নিশির।শুনে শুনে অস্থির হয়ে বার বার জ্ঞান হারিয়েছিল সে। কিন্তু এখন আর জ্ঞান হারাচ্ছেনা। বেশ ভালভাবেই জ্ঞান ফিরে এসেছে ওর। নিজের দিকে তাকাতে চেষ্টা করল নিশি। অন্ধকারের নিজের একটা আলো আছে। অনেকক্ষন ঘুমিয়ে ছিল নিশি। তাই প্রথমে জেগেই অন্ধকারের কালো রঙ যেন ধাক্কা মেরেছিল নিশির চোখে। প্রথমে তো মনেই করতে পারেনি সে কে। সে কেন এখনে এসেছে তা ও মনে করতে পারেনি। কিন্তু কিছুক্ষন আগে হটাত করে মনে হয়েছে তার নাম শিশির আহমেদ । তার কয়েক সেকেন্ড পরে তার মনে পড়েছে তার নাম – “নিশি মিয়া”। শিশির আহমেদ ছিল তার প্রথম জীবনের নাম। প্রথম জীবনে সে কি ছিল সেটা বেশ কিছুক্ষন মনে করার চেষ্টা করল। কিন্তু সেটাও কেমন যেন ঘোলাটে ছবির পর্দার মত তার চোখের সামনে আসছিল আর যাচ্ছিল। কিন্তু কিছুক্ষন পর তার মনে পড়ল- সে প্রথম জীবনে ছিল একজন ডাক্তার। একজন বেশ ভাল গ্রাম ডাক্তার। গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে ডাক্তারি করত। কিন্তু কোন একটা কারনে সে কোন একজন এর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে। এবং তার নাম হয় নিশি মিয়া। কিন্তু কি কারন সেটা অনেক চেষ্টা করেও মনে করতে পারলনা নিশি। শেষে না পেরে নিজের হাতের বাঁধনের দিকে মন দিল সে। হাত দুটো পিছমোড়া করে বেঁধে রাখা হয়েছে তার। পেছন দিকে বলে নিজের হাতের কবজি দুটো নিজের আয়ত্বে আনতে পারছেনা নিশি। বেশ কিছুক্ষন চেষ্টা করল হাতের বাঁধন এর ভেতর থেকে হাত গলিয়ে বের করে ফেলার জন্য। কিন্তু পারছেনা না সে। খুব চিকন দড়ি দিয়ে বাঁধা তার শরীর। খুব শক্ত এবং চিকন দড়ি। এই দড়ি সে কোন ভাবেই ছিড়তে পারছেনা। উলটো তার হাতের কব্জি কেটে গিয়ে রক্ত বেরোতে লাগল। রক্তে হাত ভিজে গেল নিশির। কেমন যেন ভেজা ভেজা সেই রক্তের ছোঁয়া পেয়ে তার নিজের পিপাসা পেল খুব। তখন ই মনে পড়ল নিশির- পিপাসা পেলে নিশি রক্ত খেত পেট পুরে। যে কোন প্রাণীর রক্ত। এই রক্ত খেয়েই নিশির শরীরের ভেতর এসে যেত কেমন যেন এক জান্তব তেজ। ভাবতে ভাবতে হাতের রশি খোলার চেষ্টা করল নিশি। হাতের বাঁধন বেশ শক্ত হলেও রক্তে পিচ্ছিল হয়ে গেলে বেশ সহজে ভেতর থেকে একটা হাত বের করে আনে নিশি। আরেকটা হাত খুব সহজেই খুলে বের করে আনে সে। তারপর মুখের বাঁধন খুলে নিজেকে অনেকটা মুক্ত করে নেয় নিশি। এরপর মন দেয় পায়ের দিকে। কিন্তু বাঁধন টা দেখে মন খারাপ হয়ে যায় নিশির। পায়ে দড়ির বদলে লোহার শিকল পড়ানো আছে। সেই শিকল পড়া পা দুইটা হাত দিয়ে ছুঁয়ে অনুভব করার চেষ্টা করল নিশি। শিকলটা বেশ লম্বা। এই লম্বা শিকলের প্রান্ত খুঁজতে শুরু করল নিশি। হাতড়াতে হাতড়াতে আন্দাজে নিজের চারপাশের প্রকোষ্টে নিজের পা বাঁধা শেকলের শেষ প্রান্তে চলে এল নিশি। অবশেষে শেকলের শেষ খুঁজে পেল সে। কিন্তু সেটা প্রকোষ্টের দেয়ালের সাথে ভালভাবে আটকানো। নিরাশ হলনা নিশি। চারপাশে খুঁজতে শুরু করে দিন সাহায্যের আশায়। কিন্তু কিছুই খুঁজে পাচ্ছেনা নিশি। শেষে হাত দিয়ে বোঝার চেষ্টা করল সে কোথায় আছে। ওর চারপাশে কেমন যেন একটা গন্ধ বয়ে বেড়াচ্ছে। কেমন যেন পঁচা পঁচা। মানুষ মরে গেলে এই গন্ধ নাকে লাগে। মিষ্টি মিষ্টি একটা আবহ তৈরি করে এটা। আবার পঁচা মাংসের মত নাকের চারপাশে ঘুরতে থাকে। নিশির কাছে এই গন্ধটা অনেক প্রাচীন। নিশি এই গন্ধের সাথেই থেকেছে বহু কাল। কিন্তু আজকে কোথা থেকে আসছে বুঝতেই পারছেনা নিশি। নিজের হাত দুই দিকে প্রসারিত করতে পারছেনা নিশি। অনেক বার চেষ্টা করেও পারছেনা সে। পারলে সে একটা মন্ত্র পড়তে পারত। এই মন্ত্রের নাম বিশির মন্ত্র। দুইহাত দুইপাশে ছড়িয়ে বলতে হয়। বললে একটা বিশেষ ক্ষমতা চলে আসে শরীরে। নিজের ভেতর থেকে কে যেন কথা গুলো। কিন্তু “বিশির” নামটা কেমন যেন পরিচিত ঠেকছে নিশির। মনে হচ্ছে আগে কোথাও এই মন্ত্র পড়েছে কিংবা শুনেছে সে। কিন্তু মনে করতে পারছেনা সে। নিজের পরনে কি আছে সেটা হাত দিয়ে অনুভব করতে গিয়েই খেয়াল করল তার পরনে কোন ল্যাঙ্গুট নেই। এবং সেখানে একধরনের প্যান্ট পড়া।প্যান্ট টা ধরেই হটাত করে মনে পড়ে গেল সব কিছু। মনে পড়ে গেল সেই সেল এর কথা- মনে পড়ে গেল সেই ফাঁসি দৃশ্যের কথা। মনে পড়ে গেল সেই বিশাল বজ্রপাতের স্থান থেকে উঠে আসা বিশাল দর্শন খারুর কথা। খারুর কথা মনে পড়তেই ভয়ে বুক কেঁপে উঠল তার। মনে পড়ল হটাত বাজ পড়ার সাথে সাথে মাটিতে সৃষ্টি হয়েছিল বিশাল এক গর্ত। সেই গর্তের ভেতর থেকে বের হয়েছিল স্বয়ং খারু। সেই শয়তান খারু-যে তাকে প্রিজন সেলের ভেতর নেতার আরাধনা করতে দেয়নি। তাকে মায়াজালে বন্দী করে রেখেছিল। এবং ফাঁসির কাঠ থেকে ছিনিয়ে নিজের বুকের ভেতর টেনে নিয়ে ডুব দিয়েছিল মাটির ভেতর। মাটিতে ডুব দেবার সাথে সাথে নিশির শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল। মনে হচ্ছিল এক একটা মুহূর্ত যেন এক একটা বছর। খারু তার দুই মাংসল হাত দিয়ে নিশিকে জড়িয়ে ধরেছিল। সেই বাঁধন এ হাঁসফাঁস করতে করতে নিশি জ্ঞান হারিয়েছিল।এবং কিছুক্ষন আগে জ্ঞান ফিরে পেয়েছে নিশি এবং নিজেকে আবিষ্কার করেছে এই প্রকোষ্টের ভেতর। নিশি ভাল মত বোঝার চেষ্টা করল সে কোথায় আছে। যেখানে নিশি দাড়ীয়ে আছে সেইখানে প্রকোষ্টটা অনুভব করার চেষ্টা করল সে। এবং বুঝতে পারল তার চারপাশে মাটির আস্তরণ। মাটির দেখা পেয়ে প্রথমে হেসে ফেললে ও পরক্ষনে পাংশু হয়ে গেল মুখ। খারু তাকে তার মাটির নিচের সম্রাজ্যে নিয়ে এসেছে।ভাবতেই নিশি পাগলের মত মাটির দেয়ালে আচড়াতে শুরু করল। নিশির মনে পড়ল নেতার কথা। নেতা দেবী তাকে বার বার নিষেদ করেছিল খারুর বাহনে না জড়াতে। খারূ যাকে একবার জড়িয়ে ধরে তার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু নিশি মিয়া কিভাবে বেঁচে আছে সেটাই আন্দাজ করতে পারলনা সে। তার মাথায় শুধু ঘুরতে লাগল কেন খারু তাকে নিজের হাতের মুটোয় নিয়েও মেরে ফেলল না। মাটির দেয়াল টা বেশ কিছুক্ষন আঁচড়ে কিছুটা মাটির ছাল তুলে ফেলল নিশি। তারপর সেই ছাল উঠে যেতেই দ্বিগুণ উৎসাহে সে মাটি সরাতে লাগল তার সামনে থেকে। পরক্ষনেই নিজের ভুল বুঝতে পারল নিশি। প্রকোষ্টের ভেতর নিশি নিজের পায়ের দাঁড়িয়ে আছে ভাবতেই নিজেকে নিজেই একটা গালি দিল নিশি। তারপর সোজা উপরের মাটির ছাদে খুঁড়তে শুরু করল নিশি। কিন্তু কোন কূলকিনারা না পেয়ে ধুপ করে বসে পড়ল মাটির উপর। মাথার উপরের দেয়ালটা থেকে বেশ কিছু মাটির টুকড়া ঝুরঝুর করে সড়িয়ে দিয়ে সে উপরের দিকে একটা ধাক্কা মারল ডান হাত দিয়ে। এবং হাতের কবজি ব্যাথা করে উঠলেই সে কাজ থামিয়ে দিল বেশ কিছু সময়ের জন্য। কব্জির উপর হাত দিয়েই মনে পড়ল নিশির। ফাঁসি হবার আগে নিশিকে স্যালাইন দেয়া হয়েছিল। সেই স্যালাইন দেবার কারন ছিল নিশি নিজের কব্জি কেটে নেতা দেবীর আরাধনা করতে গিয়েছিল। সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তার হাত কেটেছিল নিশি। কিছু মাটি সড়াতে গিয়ে আবার খানিকটা ক্লান্ত হয়ে পড়ল নিশি। খারুর দুই শক্তিশালী হাতের বন্ধনে থেকে অনেক শক্তি হারিয়েছে নিশি। নাহলে এই মাটি ফুটো করে বের হওয়া নিশির জন্য কোন ঘটনাই ছিলনা। একটা সুমারি মন্ত্র পড়লেই যেকোন ফুটো ফেড়ে বের হতে পারে নিশি। কিন্তু নিশির সমস্থ ক্ষমতা শুষে নিয়েছে খারু। এই কারনে এখন আর কোন ভাবেই মাটি গুলো হাত দিয়ে না সরিয়ে বের হতে পারছেনা সে।সব গুলো মন্ত্র যেগুলো ত্রিশ বছর নেতার সাধনা করে এঁকে এঁকে নেতার কাছ থেকে পেয়েছে সব ভুলে গেছে সে। ধীরে ধীরে বাতাস ফুড়িয়ে আসছে ভেতরের। যেকোন সময় ভেতরের বাতাস ফুরিয়ে গিয়ে অক্সিজেনের অভাবে মারা পড়বে নিশি। বুকের ভেতরটা বাতাসের অভাবে ঘনঘন উঠানামা করছে। কেমন যেন খালি হতে শুরু করেছে শরীরের প্রতিটি কোষ। চোখে এতক্ষন অন্ধকার সহ্য করে দেখতে পেলে ও এখন বেশ ঘোলা হয়ে এসেছে চারপাশ। এই অবস্থায় বেশিক্ষন টিকতে পারবেনা সে। ভাবতে ভাবতে সে আবার উঠে দাঁড়াল সমস্থ শক্তি যোগাড় করে। দুই হাতের নখ দিয়ে আচড়াতে থাকল মাথার উপরের মাটি। মাটি ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। চোখে মুখে ঝুড় ঝুড় করে পড়ছে মাটি। কিন্তু কোন দিকে ভ্রূক্ষেপ নাই তার। খুব দ্রুত মাটি সরাতে হবে তাকে। বুকের ভেতর ফাঁপা হতে শুরু করেছে। মনে হচ্ছে ফুসফুস টা ফেটে যাবে। সামান্য একটু বাতাস ছেড়ে দিয়ে আবার খোড়া শুরু করল নিশি। খোঁচাতে গিয়ে দুইহাতের নখ উলটে গেল নিশির। দরদর করে রক্ত পড়ছে। সেই রক্তের সাথে মাটি মিশে গিয়ে একটা সোঁদা গন্ধ আগের বিকট গন্ধটার সাথে যোগ হয়েছে। সামান্য যা বাতাস ঢুকছে নাক দিয়ে সেই বাতাসের গন্ধে আরো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে বেঁচে থাকা। ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে নিশির। কিন্তু মস্তিষ্কের কাজ মস্তিষ্ক করে চলেছে। দুই হাত দিয়ে মাটি খুঁচিয়েই চলেছে সে। কেমন যেন যন্ত্রের মত কাজ করে চলেছে সে। সামান্য একটু বাতাস পাবার জন্য মরিয়া হয়ে গেছে নিশি। এইভাবে কতক্ষন হাত দিয়ে মাটি সরিয়েছে মনে করতে পারলনা নিশি।হটাত করে মুখের সামনে সরু আলোর একটা রেখা ভেসে উঠল নিশির। এবং এক ঝলক গরম বাতাস এসে মুখে ধাক্কা মারল ওর। সেই বাতাসকে যেন পুরোপুরি শুষে নিল নিশি। আস্তে আস্তে শরীরে শক্তি ফিরে পেল সে। ধীরে ধীরে মাটি সরিয়ে মুখের উপর মানুষ সমান একটা গর্ত খুড়ল সে। অনেক উপরে দেখল আকাশ দেখা যাচ্ছে, কিন্তু কালো। আকাশ দেখে ই বুঝতে পারল যে এখন রাত। কিন্তু তাকে কে এভাবে শেকল দিয়ে বেঁধে একেবারে জীবন্ত কবর দেবার চেষ্টা করেছে বুঝতে পারল না নিশি। তারপর আস্তে আস্তে গর্তের বাইরে হাত রেখে কোনরকমে বের করে আনল শীর্ণকায় শরীরটাকে। ....চলবে (সংগৃহীত)


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২০৯৫৮ জন


এ জাতীয় গল্প

→ খারুর কবলে নিশি মিয়া -১

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now