বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন
বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

জুয়াড়ি

"ফ্যান্টাসি" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান Sayemus Suhan (০ পয়েন্ট)

X লাল পাগড়ি সোজা করতে করতে মুসাফির বলল, কথা সত্য কাশেম। হিরাত নগরী বড় ঠাণ্ডা। বরফ পড়ে টুপটাপ শীতের সময়। তবে মোটা জামা পরনে থাকলে আরামই লাগে। মাথা চুল্কে কাশেম বলল, ও আচ্ছা। আপনের মুর্গাও কি মুটা জামা গায়ে দিত হিরাতে? ঠা ঠা করে হেসে বৃদ্ধ মুসাফির বলল, আরে ধুর না। আমার মোরগ দুইটা বদমাইশ, জামাকাপড় গায়ে রাখবে না। একবার চটের ছালা পরিয়ে দিয়েছিলাম, একটা আরেকটারে খামচায় ছালা তুলে দিয়েছে। বিকেল। আমগাছের তলায় বসে মুড়ি আর বাতাসা খেতে খেতে আলাপ করছিল নবাবী হেঁশেলের পাচক কাশেম আলী এবং মুসাফির আলাউদ্দিন। মুসাফির নতুন মানুষ, দূর্গের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে ক্লান্ত হয়ে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিল। এমন সময় কাশেম আলী হাজির। প্রতিদিন দুপুরের খানা পাক করে সবাই খেতে বসলে পরে কাশেম আলী এসে এই গাছের নিচে একটা ঘুম দেয়। আজ এসে দেখে মুসাফির এক বসে আছে, পাশে খাঁচার মত কী একটা। তার ভেতর দুইটা মোরগ। মুর্গা নিয়া ঘুরেন ক্যান মুসাফির? রাইন্ধা খাইবেন পথে? শিউরে উঠে মুসাফির বলল, আরে না না। মাবুদে ইলাহি! আমার মোরগ খাবার জন্য না হে, এ বড় দামী মোরগ। খেল খেলে। খেল খেলে? খেল খেলে। চোখ চকচক করে উঠল কাশেম আলীর। বুঝতে পারল নিজের রক্তের ভেতর সাপের মত ঘুমিয়ে থাকা জুয়াড়ি জেগে উঠছে। ধীরে ধীরে। জুয়া খেলে খেলে কয়েকবার প্রায় নিঃস্ব ফকির হতে বসা কাশেম কতবার নিজেকে নিজে নিয়ন্ত্রন করতে চেয়েছে। জুয়া খেলা চলবে না। তার এখন একটা বউ আছে। ভালো নোকরি করে। তিনটা ছেলে বড় হচ্ছে। তার কি জুয়া খেলার নবাবী মানায়? সবই সে বোঝে, কিন্তু রক্ত টানে জুয়ার কথা শুনলে। মনে হয় একটা দান খেলি। কি আর হবে। একটাই তো দান। না। কথা দিয়েছে সে সলিমাকে। খেলবে না সে কখনো আর। নিজেকে দমিয়ে ক্লান্ত কণ্ঠে কাশেম বলল, খেল ভালো জিনিস। দেখছ নাকি আগে খেল দেখানো মোরগ? এদের জাতই আলাদা।দেখো। সাদা মোরগটার পা কত লম্বা? পাও লাম্বা হইলে সুবিধা আছে বটে। পয়লা ঝাঁপ দিতে সুবিধা। পয়লা ঝাঁপ দিলে অন্য মুর্গা ডরায়। তারিফের স্বরে মুসাফির বলল, একথা সত্য। কাশেম মিয়া তো মোরগের খেল নিয়া বিরাট ওয়াকিফহাল দেখি। হ। আমি খেলতাম আগে। আমার মুর্গা জানবাজ আপনের মুর্গারে ছেঁইচা আধখান কইরা দিতে পারে খেলতে নামলে। কিন্তু আমি আর খেলিনা। ভুরূ কুঁচকে মুসাফির বলল, আচ্ছা। তাই পারে বুঝি? বেশ বেশ। কত দেশে কত নবাবী বাদশাহি মোরগ শোয়ায় দিল আমার মোরগ, আর সে কিনা ছেঁচা খাবে এক বাবুর্চির মোরগের কাছে। আজাইরা চাপা মারার আর জায়গা পেলে না কাশেম মিয়া। চাপা না চাপা না, উত্তেজিত স্বরে কাশেম বলল, আমার মুর্গা সবখানে জিতে। গেরামের যে কাউরে জিগান গিয়া। কাউকে জিজ্ঞেস করার আমার ঠেকা পড়ে নাই। নিয়া আসো তোমার জানবাজ। খেল খেলাই। দেখি কে জিতে। না। হা হা হা। ঠিক আছে কাশেম মিয়া। খেলবাও না আবার বড় বড় কথাও শুনাবা তোমার মোরগ জিতে সবসময় হ্যান ত্যান। শালা জোচ্চর। খামাখা আমারে জোচ্চর কইবেন না! কি জোচ্চুরি করছি? জোচ্চুরি না তো কি? জুয়াচুরি পুরা। আমার মোরগ দেশবিদেশ মাতায় বেড়ায় আর এই ব্যাটা আসছে তার জানবাজ নিয়ে। মিথ্যুকের মিথ্যুক। সত্য হইলে নিয়া আসো তোমার মোরগ। বাজির খেলা হউক। বাজির খেলা! না আমি বাজির খেলা খেলি না। আর বাজি ধরার মত কিছু নাইও আমার। শান্ত হয়ে চুপ করে গেল মুসাফির আলাউদ্দিন কাশেম আলীর কথা শুনে। তারপর ধীরে ধীরে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, বাবুর্চি। তোমার সাথে কথা বলাই আমার ভুল হইছে। একে তো গরীব, তার উপর মিছা কথায় উস্তাদ লোক। খামাখা তর্কে জড়াইলাম। কাশেম উত্তেজিত হয়ে দাঁড়িয়ে উঠে বলল, এই! এই মুসাফির! গরীব কন কুন সাহসে? আপনে কুথাকার জাহানদার বাদশা আইছেন আমার? আপনের কি আছে বাজি ধরার? হাতের আংটির দিকে তর্জনি নির্দেশ করে মুসাফির বলল, এই আংটি আছে। হুসেন শা আবদালীর আংটি। পান্না পাথর। দশটা নবাবী কিনা যাবে এই এক পাথর দিয়া। এই পাথর যার হাতে থাকে আল্লা তারে নিরাশ করেন না। বড় পয়া পাথর। এই আংটি বাম হাতে পরে আমি যতবার মোরগ খেলেছি ততবারই জিতেছি। আংটি না পরে খেললে প্রতিবার হার। ঢোঁক গিলল কাশেম আলী। বলল, তইলে এই আংটি আমার হাতে দেন। আমি এই আংটি হাতে নিয়া খেলামু। জিতলে আংটি আমার। ক্রুর হেসে মুসাফির বলল, আর হারলে? আংটি থাকলে হারুম না তো! কাশেম। বাজি খেলার একটা নিয়ম আছে। বাজি খেলা পোলাপানের তামাশা না। জিতলে আংটি তুমি পাবে। হারলে আমি কি পাব সেইটা ঠিক কর। তারপর বাজির খেলা হউক। আমার ঘরের পিছে খাস জমির আদ্ধেক দিমু। নবাবী খাস জমি। ভালো তামাক হয়। হা হা হা হা। বুরবক। জমি ভর্তি তামাক নিয়া আমি কি করব! যা ভাগ গরীবের বাচ্চা। কিছুক্ষণ নীরবতা। কেউ কোন কথা বলল না। কাশেম গাছে ঝোলা একটা কাঁচা আম দেখতে দেখতে বলল, জানবাজ আসলেই জিতত। আমার পয়সা নাই দেইখা খেল হইল না। কিন্তু সে আপনের মুর্গারে ছেঁচত ঠিকই। পয়সা নাই দেইখা আপনে আমারে মিথ্যুক কইলেন আর গরীবের বাচ্চা কইলেন। আল্লায় মানব না মুসাফির সা’ব। আল্লা আছে উপরে। মুসাফির বলল, গরীবের বাচ্চা কিনা জানিনা তবে তুমি গরীব বটে। বাজি ধরার মত কিছু নাই গরীব না তো কি। গরীবের বাচ্চা বলা ঠিক হয়নাই অবশ্য। গরীবের বাচ্চা হইল তোমার পোলাপান। অই! অই! আমার পুলাগো গাইল দিবেন না কইলাম। পুলাগো? কয়টা পোলা তোমার? তিন পুলা। আচ্ছা। আচ্ছা। আবার কিছুক্ষণ দুইজন চুপচাপ। তারপর অদ্ভুত স্বরে মুসাফির বলল, কাশেম। আমার একটা ছোকরা চাকরের দরকার ফাইফরমাশ খাটার জন্য। আসো বাজির খেলা খেলি। বাজি হারলে তুমি তোমার একটা পোলা আমাকে দিয়া দেবে। জিতলে আংটি তোমার। কাশেমের মুখ দিয়ে প্রথমে কোন কথা বের হল না। সে বলল, আঁ? হ। ভেবে দেখো কাশেম। সাত রাজার ধন আংটি তোমার হবে জিতলে। আর পাকশাক করতে হবে না। নিজের দালান দিবা। আরামে থাকবা আর জানবাজের দেখাশুনা করবা। খেলবা নাকি? হারলে এক পোলা আমার। আমি তারে দেখে রাখব। দুইবেলা ভাত/পুলাউ খাবে। মোরগের খেলা শিখাব। পাথর চিনাব। ফার্সি শিখাব। বড় মানুষ হবে একদিন।বিদ্বান মানুষ। দুইদিকেই তুমি জিতলা মিয়া। জিতলে দালান। হারলে ছেলের দালান। থতমত খেয়ে গেল কাশেম। মুসাফির বলে কী। এ কি হতে পারে? দুইদিকেই জিতব? জিতলে দালান আর হারলে ছেলের দালান? এ তো বেশ ভালো বাজি। তাড়া দিয়ে মুসাফির বলল, কি ভাবো মিয়া! খেলবা কিনা কও। ভালো দান। তোমার জানবাজ আর এক পোলারে নিয়ে আসো। খেলি। পাটি আছে বিছাইতেছি। যাও তুমি নিয়া আসো পোলা আর মোরগ। কাশেম কি একটা বলতে গিয়ে থেমে গেল। ভাবছে সে। … … … কিছুক্ষণ পর। একই আমগাছের নিচে একত্র আবার মুসাফির আর নবাবের বাবুর্চি কাশেম। মুসাফির বলল, পোলারে আমার কাছে দেও। আর এই নেও আংটি। নাম কি পোলার? কালাম। ঠিক আছে। কালাম এইদিক বস। নড়া চড়া করবি না। এই বলতে বলতে মুসাফির কালামকে দ্রুত বেঁধে ফেলল পাশের গাছের সাথে। কাশেম হাঁ হাঁ করে বলল, আরে আরে করেন কি? বান্ধেন কি বুইঝা আমার পোলাডারে? কোমর থেকে ঝটাৎ করে ছুরি বের করে কালামের গলায় ধরল মুসাফির। ফিসফিস করে বলল, পিছে যা কাশেম। চুপচাপ খেলা শুরু কর। বাজির খেলা পোলাপানের তামাশা না। জিতলে এই ছেলে আমার, তারে আমি বাইন্ধা না রাখলে এ দিব দৌড়। পাটির ঐপার যা। খেল শুরু হবে। ছেলের ধারেকাছে আসলে তার ভুঁড়ি ফাসায় দিব। ভয় পেয়ে কালাম কাঁদতে শুরু করল। বিরাশি সিক্কার থাপ্পড় কষিয়ে মুসাফির বলল, চু-উ-প হারামজাদা। কান্না বন্ধ! একদম বন্ধ। ভয় পেয়ে কালাম সত্যই চুপ করল। কাশেম খেয়াল করল তার হাত কাঁপছে। এ কি বদ্ধ পাগলের পাল্লায় পড়ল সে। মোরগ জানবাজকে পাটিতে নামাতে নামাতে সে বলল, মাইরেন না পুলাটারে। মাইরেন না গো। খেলতেছি। হু-শ হুশশ! এগিয়ে গেল মোরগ জানবাজ। প্রতিপক্ষ মুসাফির আলাউদ্দিনের সাদা মোরগ। ঝাঁপ দিয়ে জানবাজ সাদা মোরগকে আক্রমণ করতেই মোরগটা পিছিয়ে গেল একটু। তারপর দ্বিগুণ জোরে ঝাঁপ খেয়ে পড়ল জানবাজের গলার দিকে নখর তাক করে। তীক্ষ্ণ চোখে লক্ষ্য করে কাশেম আলী বুঝল সাদা মোরগটার পায়ে চিকচিক করছে ছোট্ট একটুকরা ইস্পাতের ফলা। কী সর্বনাশ! মোরগের পায়ে তো ছুরি! চিৎকার করে কাশেম বলল, হায়হায় পায়ে ছুরি তো! চুপ শুয়োরের বাচ্চা। তোর মোরগ না আমার মোরগরে হারাবে? দেখ হারামজাদা দেখ। কাশেম আতঙ্কিত হয়ে দেখল ছুরির ঘায়ে তার মোরগ জানবাজের গলা কেটে একাকার। ধীরে ধীরে নেতিয়ে পড়ল জানবাজ। সাদা মোরগটা ঘাড় ফুলিয়ে হুঙ্কার দিল কোঁ-ও-ও-কোঁ-কোঁ! কোঁ-ও-ও! কাঁপতে কাঁপতে কাশেম হাতজোড় করে বলল, আমার ভুল হই গেছে। আমার ছেলেটারে ছাড়ি দেন। ভুল হই গেছে। আমার ঘর নেন জমি নেন সব নেন। ছেলেটারে ছাড়ি দেন। ও ভাই! এই লন আপনের আংটি। লাগবোনা গো আংটি লাগবো না। আমার পুলাটারে ছাড়ি দেন গো... একহাতে কালামকে শক্ত করে ধরে রেখে মুসাফির বলল, বাজির খেলা তামাশা না কাশেম। তোর ছেলেরে আমি জিতছি খেলায়। তোর মোরগ মরে কাৎ। হা হা হা হা। দরদর করে চোখ দিয়ে পানি ঝরতে লাগল কাশেমের। সে বারবার বলতে লাগল, মাপ কইরে দেন মাপ কইরে দেন ছাড়ি দেন মাপ কইরে দেন গো… পা বিছিয়ে জুইৎ করে বসে মুসাফির বলল, আচ্ছা কান্দিস না। শুন। আরেকটা বাজির খেল খেলি আয়। জিতলে পোলা তোর। কত্তা! বলেন কি খেল। বলেন কত্তা। মাপ কইরে দেন কত্তা। দুত্তোর মাপ। খেল খেলি আয়। আমার মোরগ কিরম তোর মোরগ কতল করল দেখলি? কতলের খেলা খেলি আয়। কতলের খেলা? কতলের খেলা। তুই একজনরে কতল করবি নাইলে আমি তোর ছেলেরে কতল করব। আঁ? কি বলেন কত্তা?! না না কতল করব কারে আমি? আমি কি জানি কারে কতল করবি। কতল করা দিয়া কথা। না করলে আমি করব তোর পোলারে কতল। না না না না! আমার পোলাটারে ছাড়ি দেনগো কত্তা। দেখেননা কেমন কানতেছে পুলা আমার। মাপ কইরা দেন আমি আর করুম না। কি করবি না? কি আবোলতাবোল বলতেছিস। কতল কর গিয়া যা। আচ্ছা যা কতল লাগবে না, জানে মারলেই হইল। জানে মারব হুজুর? ও আল্লা জানে মারব? জানে মারবি। আয় খেলাটা জমাই একটু। তুই না নবাবের বাবুর্চি? নবাবরে জানে মার যা। তোর জন্য খেলটা সহজ একবারে। আজকে রাতের খাবারে বিষ মিশায় দে। নবাব খতম কর দেখি। বাজি ধরলাম যে নবাবরে মারতে পারবি না। নবাব কাল সকালের মধ্যে না মরলে তোর পোলা মরবে। কাঁদতে কাঁদতে নুয়ে পড়ে কাশেম বলল না হুজুর না হুজুর না হুজুর… … … … রাত। গিয়াসগড়ের নবাব মুসলেম খানা খেতে বসেছেন তার ভাইয়ের সাথে। ভাই মুরাদ বললেন, কাল সকাল সকাল ফিরিঙ্গি আসবে বলেছে। তাদের কাছে ভালো কামান আছে। পিছন থেকে চারটে চাকর এসে দস্তরখানে খাবার দিয়ে যেতে থাকল। জালা থেকে পাত্রে একটু আরক ঢেলে নবাব মুসলেম বললেন, হাঁ। কামান দরকার আর জাহাজ দরকার। আর হাতির বর্ম আর… হাত তুলে ভাইকে থামিয়ে মীর্জা মুরাদ বললেন, ভাইসাব। আমাদের আগেরবারের সমস্ত কথা ফাঁস হয়ে গিয়েছিল স্মরণ আছে? আমাদের ঘরে চর আছে। গোপন কথা আলাপ করার আগে এইসব চাকরনফর সরিয়ে দেই ভাইসাব। এদের মধ্যেই কেউ শুনে খবর পাঠিয়ে দিতে পারে। হাত নেড়ে উড়িয়ে দেবার ভঙ্গী করে নবাব বললেন, আরে চাকরেরা সব চলে যাবে এখনই। সমস্যা নাই। কেবল ইয়াকুত মিয়া রয়ে যাবে। সে অতি বিশ্বস্ত, তাকে ভয় নেই। ভাইসাব। ভয় নয়। ভয় নয়। সতর্কতা। ইয়াকুত আপনার সাথে যুদ্ধে তলোয়ার বহন করে আর খানা আগে খেয়ে দেখে বলে তাকে চরম বিশ্বাস করার কিছু নেই। সকলকেই সন্দেহ করতে হবে। রুকাইয়ার ভাই যে কাকে আমাদের পিছনে লাগিয়ে দেয় কোন ঠিক নেই। শ্বাস ফেলে নবাব বললেন, তা বটে। ইয়াকুত, যা বাইরের ঘরে চলে যা। মাথা ঝুঁকিয়ে হাবশি ইয়াকুত খাঁ বাইরে চলে গেল। খাবার মুখে দিয়ে নবাব বললেন, ফিরিঙ্গি ফিরিঙ্গি মারামারি লেগেছে শুনলাম। জ্বী ভাইসাব। এক জাতের ফিরিঙ্গী নয় অবশ্য। একজাত আরেকজাতের পিছনে লেগেছে। তিনটা জাহাজ দখল করেছে বড়, আমাদের কাছে বিক্রি করবে ভালো দাম পেলে। আর তামাকচাষের জমি চায় কিছু। মাথা নেড়ে নবাব বললেন, জমি টমি হবে না। কেবল পয়সা দিয়ে মাল পত্তর কিনব ব্যস।শুয়োরের বাচ্চারা একবার জমি নিয়ে ঢুকে পড়লে থানা গেড়ে বসবে। ...খাও মুরাদ। না খেয়ে তাকিয়ে আছো কেন। জ্বী খাচ্ছি। আপনি খান। মাথা নেড়ে কি একটা বলতে গিয়ে আচমকা নবাবের মনে হল ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে। মাথা চক্কর দিয়ে উঠল হঠাৎ আর তিনি বলেলেন, মুরাদ...মুরাদ...আঁ আঁ আঁ...মুরাদ...মরে যাচ্ছি মুরাদ… পটাং করে লাফ দিয়ে উঠে ভাই মুরাদ চিৎকার করে উঠলেন, এই অম্বর, ইয়াকুত, আলম,...ওরে কে আছিস...নবাবকে কে বিষ খাইয়ে দিলরে...ভাইসাব...ভাইসাআআআআআআআআআব… … … … পরদিন সকাল। গিয়াসগড়ের সমস্ত লোক এসে জড়ো হয়েছে কিল্লাসংলগ্ন মাঠে। বড় একটা খাম্বা মাঠে পোঁতা হয়েছে, আর তাতে হাত পা বেঁধে ঝোলানো হয়েছে বাবুর্চি কাশেম আলীকে।গ্রামবাসী অবাক হয়ে শুনতে পেল কোন এক অজানা কারণে কাশেম আলী কালাম কালাম বলে গলা ছেড়ে চিৎকার করছে। কাশেমের পায়ের নিচে রাখা কাঠে আগুন লাগিয়ে দুই পা পিছিয়ে গেল এক চাকর। আগুণ ধীরে ধীরে গ্রাস করছে নিচ থেকে উপরে। পায়ে প্রচণ্ড তাপ সইতে না পেরে চিৎকার করে কাশেম ও আল্লাহ বলতে বলেই আগুণ ঝুপ করে পুরো খাম্বা গ্রাস করে নিল। দাউ দাউ আগুণে পুড়ে মারা যাবার একদণ্ড আগে কাশেম দেখতে পেল লেলিহান শিখার মাঝখান দিয়ে সবার সামনে দাঁড়িয়ে তার দিকেই সটান চেয়ে আছে নবাবের ভাই মুরাদ আর পাগড়ি পরিহিত মুসাফির আলাউদ্দিন।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২০৯৪৯ জন


এ জাতীয় গল্প

→ জুয়াড়ি

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now