বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
¤¤¤ জ্বীনের প্রতিশোধ ¤¤¤
মৌলবি আবদুস সোবহান সাহেবের সাথে আমার
পরিচয় অনেক আগে থেকেই। ১৯৯১ সালে
গয়েশপুর হাইস্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদান
করার মাধ্যমে পরিচয়ের ঘনিষ্ঠতা আরো বৃদ্ধি পায়।
উনি বয়সে অনেক বড় ছিলেন। তিনি ছিলেন
একাধারে হাইস্কুলের শিক্ষক এবং গয়েশপুর জামে
মসজিদের ইমাম। কিন্তুু নির্বিরোধী এই ভালো
মানুষটার প্রতি করা হয়েছিল খুব বড় অন্যায়। হাস্যকর
একঅপরাধের ধুয়ো তুলে গ্রামের মানুষকেড়ে
নেয় তার ইমামত্ব। চাকুরির মেয়াদ শেষ হলে তিনি
চলে গেলেন
পুরোপুরি অবসরে। কিন্তু তার
সাথে যোগাযোগ ছিল। ধর্মীয় বিষয়
ছাড়াও নানাবিধ আলোচনা করতাম
আমরা। এই আলোচনার মাধ্যমেই একদিন জানতে
পারলাম তিনি পানি পড়া, তাবিজ দেওয়ার পাশাপাশি ঝাড়ফুকও
করেন। নতুন তথ্য
হলো, আগে এইসব কম করতেন কিন্তু
সংসারের অভাবের কারণে এখন একটু
বেশী করেন। যাইহোক, মূল
গল্পে আসি। কর্মব্যস্ততার কারণে একসময়
যোগাযোগ কমে আসে।
মাসখানেক পর উনার খোজ
নিয়ে জানতে পারি উনি খুবই অসুস্থ।
পরদিনেই দেখতে যাই। দেখি উনার
দেহ কাঠামো শুকিয়ে যেন অর্ধেক
হয়ে গেছে।
আমি এসেছি জানতে পেরে পাশ
ফিরে আমার দিকে শুলেন।তার
অবস্থার কারণ জানতে চাইলে বলেন
“ না বাবা, এই অসুখ আমার আর
সারবে না , এটা অসুখ না’!
'না না অত ভাববেন না , ভালো চিকিৎসা করালে
আপনার অসুখ সেরে যাবে’। কিন্তু
তিনি মাথা এপাশ ওপাশ করতে লাগলেন। সেদিন চলে
এলাম।
এরপর কেটে গেল আরো একটা মাস।
এক ভোর বেলায় হন্তদন্ত হয়ে বাসায়
এল মৌলবী সাহেবের মেজ ছেলে।
বলল “ ভাই, একনি হামার সাথে চলেন,
আব্বা আপনার সাথে দেকা করার জন্য
ছটপট করোচে ’। গেলাম তার সঙ্গে।
ঘরে ঢুকে দেখি অবস্থা আসলেই খুব খারাপ।
আমাকে দেখে সর্বশক্তি দিয়ে যেন
নিজের কষ্ট সামলে রাখলেন।
আমাকে ছাড়া ঘরের সকলকে বাইরে চলে
যেতে বললেন ।
বাইরে যাওয়া মাত্র আমার হাত দুটো জাপটে ধরে
ফিসফিসিয়ে বললে ‘বাবা ,
মনে আছে , তোমাকে বলেছিলাম
এটা কোনো অসুখ না?’
‘হ্যা মনে আছে ’। মিনিট খানেক অপলক
আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর
সত্যিই শোনালেন এক ভয়ানক গল্প।
তার জবানিতেই তুলে ধরছি :
‘মাসচারেক আগে ঘোলা পাড়া থেকে দুজন
লোক এসেছিল, বলল তদের পরিবারের এক
মেয়েকে জিনে ধরেছে।
তারা এসেছিল সকালে। বললাম ‘ আজ
আমার জরুরী কয়েকটা কাজ আছে।
এখনতো যেতে পারবো না মাগরিবের
পর যাবো ’। বাড়ির ঠিকানা বলে লোক দুটো
চলে গেল।
মাগরিবের পর হেটেই রওনা দিলাম।
সেদিন ছিল পূর্ণিমার রাত।
চারিদিকে জোছনায় ঝলমল করছে।
গয়েশপুর স্কুল ছাড়িয়ে উঠলাম ছোট
যমুনার উপরের সেতুতে। সেতুর পর ডান
হাতে বড় একটা বাঁশঝাড়। খুবই খারাপ
জায়গাটা। অনেক কিছু
দেখেছি ওখানে। ঝাড়টার
পাশাপাশি যেতেই মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো সুদর্শন
এক যুবক। সাধারণ কেই দেখলে তাকে আর
দশজন মানুষের মতই মনে করতো।কিন্তু
দু ’চোখের গনগনে দৃষ্টি মুহূর্তে আমাকে
বলে দিল , ওটা কি !
অনেক বছর ধরে ওরকম দৃষ্টির সঙ্গে আমি
পরিচিত। কিছু না বলে পাশ কাটাতে গেলাম।
‘মৌলবি সাহেব, আছর
ছাড়াতে যাচ্ছেন?’ হাসল ওটা। চুপচাপ
এগিয়ে গেলাম ওটাকে পেছনে ফেলে। ‘
যাবেন না মৌলবি সাহেব’ বলল ওটা। ‘কেন ?’ বললাম
আমি। ‘ গেলে আপনার
ক্ষতি হবে , কারণ আমি ধরেছি মেয়েটিকে’ ।
এবার রেগে গেলাম।
‘কী ক্ষতি করবিরে তুই ? তোর মত ওই রকম
অনেক জিনিস দেখা আছে আমার ,
হুমকিও শুনেছি , কেউ ক্ষতি করতে পারেনি আমার
’। ‘কিন্তু আমি পারবো ’ ভেসে এল ঠান্ডা স্বর।
‘যা ভাগ , ব্যাটা !’
রাগে গা জ্বলে গেল আমার। ‘খুব ভুল
করলেন মৌলবি সাহেব ’। আর
কথা না বলে পা চালালাম দ্রুত।
পেছনেও আর সাড়া শব্দ নেই।
ঘোলাপাড়া গিয়ে ভর - হওয়া মেয়েটির
সামনে দাড়ানো মাত্র দাঁত
খিচিয়ে বলল , ‘কী রে হারামজাদা,
এত মানা করনো তা -ও শুনলু না ?’ এরপর অকথ্য
ভাষায় গালাগালি শুরু করলো।
ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে মেয়েটির আছড়
ছাড়ালাম। শেষ মেষ ‘তাড়ালু , হামাক
তাড়ালু? কুত্তার বাচ্চা, বুঝবু , একন বুঝবু!’
এই বলে বিকট এক চিৎকার করে মেয়েটি জ্ঞান
হারালো। কিছু পরে বাড়িরদিকে রওনা হলাম।
মেয়েটির বাবা সাথে লোক
দিতে চেয়েছিল কিন্তু মানা করে দিলাম।
ফিরতি পথে বাঁশ ঝাড়টার
কাছাকাছি আসতেই দেখলাম, আবার
ওটা এসে দাড়িয়েছে।এবার আর সুন্দর
চেহারায় নয়, আসল রূপে ! চোখ
দু ’টো যেন জলন্ত কয়লার টুকরো,
শরীরের ওপরের অংশসহ বাম পায়ের
হাঁটু পর্যন্ত ভালুকের মতো বড় বড় লোম ,
ডান পায়ে দগদগে ঘা, দুই হাঁটুর উপর
বাড়তি দুটো চোখ , আর মনে হল রক্তের
মত লাল টকটকে বিরাট এক জিভ,
নেমে এসেছে বুক পর্যন্ত!
‘কী রে শুয়োরের বাচ্চা , মেয়েটির
আছড় ছাড়িয়ে দিয়ে এলি?
আমাকে থাকতে দিলি না ’! ভয়ংকর
গলায় বলতে লাগলো।
‘হারামজাদা এত নিষেধ করলাম তাও
শুনলি না কেন ?’ প্রত্যেকটা কথার
সাথে সাথে ছিটকে ছিটকে পড়ছে আগুনের
কণা। ‘ আমার কাজ আমি করেছি ’ বললাম যথাসম্ভব
স্বাভাবিক স্বরে।
‘কাজ করেছিস তাইনা ! বল
শক্তি দেখালি! এত বড় সাহস তোর !
এবার দেখ আমার শক্তি!’ দপ
করে জ্বলে উঠলো একটা আগুনের
গোলা, কিছু বুঝে উঠার আগেই
সোজা ছুটে এসে ঢুকে গেল আমার
ভেতর। পড়তে পড়তে সামলে নিলাম,
সারা শরীরে যেন আগুন ধরে গেছে !
কোনোমতে বাড়িতে এসে সেই
যে শুয়ে পড়লাম আর উঠতে পারলাম না।
‘জানতাম আর উঠতে পারবো না তাই তোমাকে
বলেছিলাম এটা অসুখ না। গত কয়েক মাস ধরে ওটা
কেবল আমার ভেতরে বসে খলখল করে
হেসেছে আর চুষে চুষে খেয়েছে
আমাকে ! চুপ করলেন মৌলবি সাহেব , চোখ
দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো।
খানিকক্ষণ পর বললাম ‘আর কিছু বলতে চান ? এপাশ
ওপাশ মাথা নাড়লেন , বলতে চান না। কিছুক্ষণ
থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম। বাড়ি ফিরে আসার
মিনিট বিশেক পরেই খবর পাই মৌলবি সাহেব মারা
গেছেন।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now