বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন
বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

হালুম হুলুম....১

"মজার গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রামীম (০ পয়েন্ট)

X সুনীল এক বাঘের দুই বাচ্চা। একজনের নাম হালুম আর একজনের নাম হুলুম। হালুম পাঁচ মিনিটের বড়, আর হুলুম ঠিক সাত মিনিটের ছোট। হিসেবে কোন ভুল নেই। সিঙ্গিমামা নিজেই ওদের জন্মের সময়টা হিসেব করে দিয়েছে। সিঙ্গিমামা একবার ঘ়ড়িপরা একটা আস্ত মানুষ খেয়ে ফেলেছিল কিনা, সেই থেকে সে ঠিক-ঠিক সময় বলে দিতে পারে। পাঁচ-সাত মিনিটের ছোট বড় হলে কী হবে, দুজনের মধ্যে ভারি ভাব কিন্তু! হালুমের হাঁচি পেলে হুলুমেরও তক্খুনি হাঁচি পায়। হুলুমের পেট কামড়ালে হালুমেরও অমনি পেট কামড়াতে থাকে। হালুম মনের আনন্দে গান গায় তো হুলুম ফুর্তির চোটে নাচ জুড়ে দেয়। আর খিদে পাবার বেলায়? তখন তো কোন কথাই নেই। দু’ভাই মিলে খাই-খাই করতেই আছে সব সময়। হালুম বলে, কী খাই-কী খাই? তো হুলুম বলে, হাতিঘোড়া যা পাই। ওদের খাওয়াতে-খাওয়াতে বাঘ শেষকালে ফতুর হয়ে গিয়ে ওদের মামার বাড়ি পাঠিয়ে দিলে। হালুম হুলুম মহা-আনন্দে মামার বাড়ি এসে হাজির। মামার বাড়ি ঢুকতে-না ঢুকতেই হালুম চেঁচাতে লাগল, ‘‘ও মামা গো, খুব খিদে পেয়েছে।’’ হুলুমও সমানে চেঁচাতে লাগল, ‘‘ও মামী গো, আগে খেতে দাও।’’ সিঙ্গিমামা-সিঙ্গিমামী তো ভাগনেদের দেখে খুব আদর-টাদর করল, পেট ভরে কত কী খেতে দিল। খাওয়া-দাওয়ার পর আরামে গল্পগুজব করতে লাগল। ওমা— গল্প করতে-করতে একটু বাদেই আবার খিদে পেয়ে গেল হালুমের। দেখতে-দেখতে হুলুমেরও। হালুম বলে, ‘‘আবার যে একটু-একটু খিদে পাচ্ছে মামা।’’ হুলুম বলে, ‘‘আবার যে জোর খিদে পাচ্ছে, মামী।’’ বাস, গল্প করা অমনি মাথায় উঠল, সিঙ্গিমামা বনে দৌড়ল শিকার ধরতে। বাড়িতে আর কিচ্ছুটি নেই। সিঙ্গিমামী একথা-সেকথা বলে ততক্ষণ ভুলিয়ে রাখতে চেষ্টা করল ওদের। কিন্তু অত সহজে ভোলার পাত্র নয় ওরা। মিনিটে-মিনিটে ওরা চেঁচাতে লাগল, ও মামী গো— মামা কোথায় গেল? ও মামী গো, খিদের চোটে যে মরে গেলাম। শুনতে-শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেল সিঙ্গিমামীর। ভাগনেদের খিদের বায়না মেটাতে-মেটাতে দু দিনেই মামা-মামীর অবস্থা কাহিল। সিঙ্গিমামী একদিন চুপিচুপি সিঙ্গিমামাকে বলল, ‘‘চলো, এ-বন ছেড়ে পালাই। নইলে আমাদেরও খেয়ে সাবাড় করবে।’’ সিঙ্গিমামা বলল, ‘‘ঘাবড়াও কেন? ওদের আমি ঠান্ডা করছি। ওরাও যেমন ভাগনে, আমিও তেমনি মামা।’’ তারপর সিঙ্গিমামা ভাগনেদের ডেকে বললে, ‘‘ওরে হালুম, ওরে হুলুম, তোদের নিন্দের চোটে বনে আর কান পাতা যায় না যে রে।’’ হালুম বলল, ‘‘কেন, মামা?’’ হুলুম বলল, ‘‘কী হয়েছে মামা?’’ সিঙ্গিমামা কেশে-টেশে গলা পরিষ্কার করে বলল, ‘‘বাঘের বাচ্চা তোরা, দেখতে-দেখতে এই অ্যাতো বড়টা হলি, অথচ আজ অব্দি একটা মানুষ মারতে পারলি না? লজ্জায় কাউকে যে আর মুখ দেখাতে পারছি না। মানুষ না মারলে যে তোদের অন্নপ্রাশনই হবে না।’’ ওহ্, এই কথা! হালুম হুলুম অমনি লাফিয়ে উঠল, ‘‘ঠিক আছে, মামা। বাঘের বাচ্চা কাকে বলে, আজ দেখিয়ে দেব সবাইকে, মানুষ মেরে আজ অন্নপ্রাশন করবই করব।’’ এই না বলে লেজ পাকিয়ে থাবা বাগিয়ে হালুম হুলুম মানুষ শিকার করতে বেরিয়ে পড়ল। কিন্তু মানুষ কাকে বলে? সে আবার কোন ধরনের জানোয়ার? জন্ম থেকে একটাও যে মানুষ দেখেনি তারা। হালুম জি়জ্ঞেস করল, ‘‘মানুষগুলো কী রকম দেখতে, মামা?’’ সিঙ্গিমামা মুখ বেঁকিয়ে বললে, ‘‘ভারি বিচ্ছিরি দেখতে মানুষগুলো। কেমন লম্বা লম্বা লিকলিকে চেহারা, গায়ে একটুও লোম নেই, পেছনের পা দুটো টেনে-টেনে হাঁটে, আর সামনের পা দুটো সঙের মত দুপাশে ঝুলিয়ে রাখে। দেখলে তোদের ভক্তি হবে না। কিন্তু খেতে যা চমৎকার— কী বলব! একবার কামড়ে ধরলে আর ছাড়তেই ইচ্ছে করে না। ওহ— সেই যে কবে একবার মানুষ খেয়েছিলাম—’’ বলতে বলতে সিঙ্গিমামা বারবার জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটতে লাগল। তাই দেখে লোভের চোটে হালুম হুলুমের জিভ দিয়েও জল গড়িয়ে পড়ে আর কী! হুলুম জিজ্ঞেস করল, ‘‘মানুষগুলো কোথায় পাওয়া যায় মামা?’’ সিঙ্গিমামা বললে, ‘‘এই বন পেরিয়ে সোজা চলে যা, যেদিকে দুচোখ যায়। ঝাঁকে-ঝাঁকে মানুষ দেখতে পাবি। কিন্তু খুব সাবধানে যাস বাপু। ভারি হিংসুটে হয় মানুষগুলো।’’ হালুম হুলুম লেজ ফুলিয়ে বলে উঠল, ‘‘বাঘের বাচ্চা আমরা। মানুষ তো আমাদের কাছে নস্যি।’’ এই না বলে আনন্দে লাফাতে-লাফাতে হালুম হুলুম চলল মানুষ শিকার করতে। কী ফুর্তি তখন দুজনের। ফুর্তির চোটে খিদে পাওয়ার কথা কারুর মনেই ছিল না। লাফাতে-লাফাতে একসময় তারা বনের একেবারে শেষ মাথায় এসে পৌঁছোল। হালুম বলল, ‘‘এবার আমি ডানদিকে যাই।’’ হুলুম বলল, ‘‘এবার আমি বাঁদিকে যাই।’’ তখন হালুম চলল ডানদিকে। হুলুম চলল বাঁদিকে। আলাদা-আলাদা শিকার ধরবে দুজনে। হালুম বেচারা তারপর ডানদিকে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। যাওয়ার আর শেষ নেই। যেতে যেতে অনেক মাঠঘাট পেরিয়ে বনবাদাড় পেরিয়ে সকাল দুপুর সন্ধে পেরিয়ে শেষকালে এক গ্রামে এসে পৌঁছল। তখন একেবারে মাঝরাত্তির। সবাই তখন দিব্বি নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছে যে যার বাড়িতে। হালুম আর মানুষ পাবে কোথায়। খিদের চোটে এদিকে বেচারার পেট চুঁই চুঁই করছে। চলবে....


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২০৯৭৯ জন


এ জাতীয় গল্প

→ হালুম হুলুম....১

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now