বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
আসসালামুয়ালাইকুম, আজকে আমি আপনাদের সাথে একটি মজার গল্প শেয়ার করছি।।
রহিম মিঞা বুড়া মানূষ। বেশিক্ষণ মন্টুর পিছে তাড়া করতে পারল না। সে হাটতে হাটতে এগিয়ে চলল। এই ফাকে মন্টু দৌড়ে তাদের ব্যবধান আরও বাড়িয়ে নিল। এক পর্যায়ে দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত মন্টু একটা খরের গাদা দেখতে পেয়ে সেখানে আরাম করে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। মন্টু এস,এস,সি পরীক্ষা দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু কোনদিন বই খুলে দেখছে কিনা সন্দেহ আছে। তাই সে খরগোশ আর কচ্ছপের গল্পটাও হয়ত জানে না। রহিম মিঞা হাটতে হাটতে খরের গাদার সামনে এসে হাজির হল। দেখল মন্টু আরাম করে ঘুমাচ্ছে। দেখে তার মেজাজ আরো খারাপ হল। মনে মনে ভাবল, “আমি সারাদিন হেটে বেড়াচ্ছি। আর নবাবজাদা আরাম করে ঘুমাচ্ছে।“ দেরী না করে হাতের লাঠি দিয়ে খোচা দিলেন তিনি। খোচা খেয়ে মন্টুর ঘুম একটু পাতলা হল। ঘুম জড়ানো কন্ঠেই সে বলল, “কোন শালারে?” এইবার রহিম মিঞা দু ঘা লাগিয়ে দিয়ে বললেন, “শালা না, আমি তোর বাপ।“ দু ঘা খেয়ে মন্টুর ঘুম বাপ বাপ করে পালাল। সেই সাথে সেও বাপ বাপ করে বলল, “আব্বাগো, এই বারের মত মাফ কইরা দাও। আমি আর জীবনেও ফেল করমু না।“ রহিম মিঞা আরোও দু ঘা লাগিয়ে বললেন, “গতবারও এই কতাই কইছিলি।“ মন্টু এই বার কাদতে কাদতে বলল, “আর কোন দিন কমু না। আবার যদি ফেল কার তবে তুমি কওনের সুযোগ দিও না। কওনের আগেই. . . . .“ রহিম মিঞা উত্তেজিত হয়ে বলল, “কি? কি কইতে চাস? কওনের আগেই তোরে জানে মাইরা ফালামু?” মন্টু ভয়ে ভয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল, “না। আমি কইতে চাইছিলাম, কওনের আগেই মাফ কইরা দিও।“ রহিম মিঞার লাঠির আরো দু ঘা পড়ল মন্টুর পিঠে। মন্টু এইবার বাবার পা ধরে বলল, “এইবরের মত মাফ কর বাজান। দোষী তো খালি আমি একা না।“ রহিম মিঞা অবাক হলেন। বললেন, “দোষী তুই একা না, মানে?” মন্টু এবার কপট রাগ দেখিয়ে বলে, “সব দোষ বুঝি আমার? স্যারগরে দোষ নাই। স্যাররা যদি আমারে পড়াইতো, আমি কি ফেল করতাম?” রহিম মিঞা ভেবে দেখল, “তাইত! স্যারেরা যদি ঠিকমত পড়াইতো, তবে কি আর তার ছেলে ফেল করত? এইবার স্যারগরে ধরতে হইব।“ ছেলের হাত ধরে সে চলল হাইস্কুলের দিকে। এদিকে স্কুলের অংক স্যার কুদরত আলী প্রাইভেট পড়ানোর জন্য হাতে ছাতা ঝুলিয়ে সেই পথ দিয়েই যাচ্ছিল। স্যারকে দেখে রহিম মিঞা হাতের লাঠি উঠিয়ে ডাক দিল, “মাস্টার সাব, ও মাস্টার সাব।“ কুদরত স্যার ইতিমধ্যেই হাবলু আর হালিমের কাছে রহিম মিঞার ক্ষেপে ওঠার ঘটনা জেনে গেছে। লাঠি হাতে রহিম মিঞাকে ছুটে আসতে দেখে তার মনের মধ্যে কু ডাক ডেকে উঠল। তিনি আর দেরী করলেন না। উল্টা দিকে ঘুরে ঝেড়ে দৌড় লাগালেন। কিন্তু তার ভাগ্য হাবলু আর হালিমের মত ভাল হল না। অনভ্যস্ত শরীরে দৌড়াতে গিয়ে খেলেন আছাড়। আছাড় খেয়ে পায়ের জুতো কোথায় গেল কে জনে? ছাতাটাও গেল বাকা হয়ে। কোন মতে হাচরে পাচরে উঠে দাড়ালেন। ততক্ষণে রহিম মিঞা মন্টুকে নিয়ে পৌছে গেছেন। কুদরত স্যার পালানোর আর পথ পেলেন না। ছাতা সারা আর জুতো খোজায় মন দিলেন। রহিম মিঞা কাছে এসে জানতে চাইলেন, “ওকি মাস্টার সাব। ওভাবে দৌড় দিলেন কেন?” কুদরত স্যার নিজেকে সামলে নিয়ে বলরেন, “ও কিছু না। আমাদের গেম স্যার আমাকে সকালে আধাঘন্টা আর বিকালে আধাঘন্টা করে এক ঘন্টা দৌড়াতে বলেছেন। তাইলে নাকি আমার শরীর ভাল থাকবে।“ ত্যাদর মন্টু হেসে বলল, “কিন্তু স্যার, এখনওতো বিকাল হয় নাই। এখন দুপুর বলা চলে।“ “চুপ কর বেয়াদব।“ কুদরত স্যার ধমকে উঠলেন। “তুই জানিস না, আমি অংকের স্যার। আমি অংক কষে বের করলাম, গড়ে সকালে ২০ মিনিট, দুপুরে ২০ মিনিট আর বিকালে ২০ মিনিট দৌড়ালে আমার একঘন্টা দৌড়ানো হবে। তাই সেভাবে দৌড়াই।“ এরপর রহিম মিঞার হাতের লাঠি দেখিয়ে কুদরত স্যার জানতে চাইলেন, “ওটার কাজ কি? লাঠি নিয়ে ঘুড়ছেন কেন? রহিম মিঞা দাত কিরমির করে বললেন, “গাধা পিটামু।“ এইবার কুদরত স্যার রেগে গেলেন। বললেন, “দেখেন, বিনা কারনে লাঠি নিয়ে তাড়া করলেন। আবার গাধা বলে গালি দিচ্ছেন। ভাল হচ্ছে না কিন্তু।“ রহিম মিঞা অবাক হয়ে বললেন, “আমি আবার আপনারে তাড়া করলাম কখন? আর গাধাই বা বললাম কখন? আমিতো গাধা কইছি আমার পোলা মন্টুরে।“ কুদরত স্যার হাফ ছেড়ে বাচলেন। বললেন, “কেন, কেন? মন্টুকে গাধা বলছেন কেন? কি করেছে আমাদের মন্টু?” রহিম মিঞা বললেন, “কি করেছে মানে? কি করে নাই সেইটা কন?” কুদরত স্যার তারাতারি শুধরে নিয়ে বললেন, “কি করে নাই মন্টু?” রহিম মিঞা দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “পাশ। পাশ করে নাই মন্টু।“ কুদরত স্যার হতাশ গলায় বলেন, “আবারও ফেল।“ মন্টু দাত বের করে হাসতে হাসতে স্যারের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে বলল, “জ্বী স্যার, আপনাদের বদ দোয়া।“ কুদরত স্যার লাফিয়ে তিন হাত পিছনে সরে গিয়ে বললেন, “বদ দোয়া মানে?” মন্টু দাত বের করেই উত্তর দিল, “স্যার, পাশকরা ছাত্ররা আপনাদের পায়ে হাতদিয়ে সালাম করে বলে ‘আপনাদের দোয়ায় পাশ করছি’। তাই আমি কইলাম, আপনাদের বদ দোয়ায় ফেল করছি।“ কুদরত স্যার ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলেন। আর রহিম মিঞা দ্বিতীয় বারের মত মন্টুকে বললেন, “গাধার বাচ্চা।“
লেখক: আবিদ
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now