বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন
বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

এনিম্যান -(০৬)

"সাইন্স ফিকশন" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিয়াদুল ইসলাম রূপচাঁন (০ পয়েন্ট)

X তিষার আম্মু কেবিন থেকে বের হয়ে ক্লান্ত পায়ে হাসপাতালের করিডোরধরে হেটে হেটে ওয়াটিং রুমের দিকে যেতে থাকেন । একটু পর বাইরেআলো হয়ে সূর্য উঠবে, কিন্তু তার ভেতরটুকু আর কখনোই আলোতে ঝলমলকরে উঠবে না। প্রতি রাত তিনি তিষার পাশে বসে তার মুখের দিকেতাকিয়ে থাকেন । গভীর কোমায় ঘুমন্ত তিষা কখন চোখ খুলে তার দিকেতাকাবে তিনি সেই আশায় গত তিন মাস বসে আছেন কিন্তু তিষা চোখ খুলেতাকায়নি | সম্ভবত কখনোই চোখ খুলে তাকাবে না, এইভাবে একটাবিছানায় শুয়ে শুয়ে নিঃশব্দে একদিন নিঃশেষ হয়ে যাবে । ওয়েটিং রুমের দরজা খুলে তিষার আম্মু ভেতরে ঢুকলেন । বড় একটাসোফায় একজন মহিলা কাত হয়ে বসে আছে । তার ছেলেটি গতকাল গাড়ীএকসিডেন্টে আহত হয়ে এখানে এসেছে । একটা ছোট শিশুকে বুকে জড়িয়েধরে আরেকজন কমবয়সী মা পিঠ সোজা করে বসে আছে । তার স্বামীসম্ভবত আজ মারা যাবে । আম্মু ঘরের এক কোনায় সোফায় বসলেন । দুই হাতের উপর মাথাটারেখে চোখ বন্ধ করলেন । কতো অল্প ঘুম, কতো অল্প খাওয়া দিয়ে একজনধীরে আবিষ্কার করেছেন ।আই সি ইউয়ের এগারো নম্বর কেবিনে খুব ধীরে ধীরে তিষা চোখ খুলেতাকাল, “আমি এখন কোথায়?” এই ধরনের একটা ভাবনা তার মাথায় একবার উকি দিয়ে যায় । “আমার ঘরে আমার পায়ের দিকে বইয়ের শেলফ,এখানে শেলফ নেই, তাহলে কী আমি অন্য কোথাও?” তিষা আবার চোখবন্ধ করল, “রাত্রি বেলা আমি লাইট নিভিয়ে ঘুমাই । এখানে আলো জ্বলছে।মাথার কাছে একটা টেলিভিশন! আমার ঘরে টেলিভিশন কেন? আমি এখনকোথায়?” তিষা আবার চোখ খুলে তাকাল, সে একটু নড়ার চেষ্টা করতেইশরীরে এক ধরনের আড়ষ্ট অনুভূতি কাজ করে, কোথায় জানি টান পড়ে আরসাথে সাথে দূরে কোথায় জানি এক ধরণের এলার্ম বেজে ওঠে | তিষা একটুঅবাক হল, “এলার্ম কেন বাজে?” প্রায় সাথে সাথে একজন মহিলা ঘরে এসে ঢুকল, মহিলাটির মাথায়নার্সদের মত ক্যাপ, তিষার মুখের ওপর ঝুঁকে পড়ে মহিলটি বলল, “হানি,তুমি কী জেগেছ?” তিষা মহিলাটির মুখের দিকে তাকায়, তাদের স্কুলের নার্স মিসেসস্মিথের মতো চেহারা কিন্তু সে মিসেস স্মিথ নয় । তিষা জিজ্ঞেস করল, “আমি কোথায়?” “তুমি খুব ভালো জায়গায় আছ, হানি।” “আমার কী কিছু হয়েছে?” “তোমার অনেক কিছু হয়েছিল।” “এখন?” “হানি, এখন তুমি আমাদের সবার সব দুশ্চিন্তা দূর করে দিয়েছ ।” তিষা অবাক হয়ে লক্ষ্য করে একটি দুটি কথা বলতেই তার উপরবিচিত্র এক ধরনের ক্লান্তি এসে ভর করছে। সে এতো দুর্বল কেন? সে ফিসফিস করে বলল, "আমার আব্বু আম্মু কই?" “তুমি এক সেকেন্ড অপেক্ষা কর আমি তোমার আম্মুকে ডেকে আনি । তুমি আবার ঘুমিয়ে যেয়ো না যেন !” তিষা বলল, “না । আমি ঘুমাব না ।” ওয়েটিং রুমের দরজা খুলে নার্স ভিতরে উকি দেয় । কোনার একটাসোফায় দুই হাতের ওপর মাথা রেখে তিষার আম্মু চোখ বন্ধ করে বসেআছেন । ঘুমিয়ে আছেন না জেগে আছেন বোঝা যায় না । নার্স কাছে গিয়েনিচু গলায় ডাকল, “মিসেস আহমেদ ।” সাথে সাথে আম্মু চোখ খুলে তাকালেন । নার্স তার ঘাড়ে হাত রেখেনরম গলায় বলল, “তোমার মেয়ে জেগে উঠে তোমার জন্যে অপেক্ষাকরছে ।” আম্মুর মুখ দেখে মনে হল আম্মু বুঝি কথাটা বুঝতে পারেন নি, কিন্তদাড়ালেন, হঠাৎ করে তাকে দেখে মনে হল তার শরীরে বুঝি কোনো শক্তিনেই । নার্সের হাত ধরে আম্মু যখন ওয়েটিং রুম থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন তখন শিশুকে বুকে জড়িয়ে বসে থাকা মহিলাটি বলল, “এই যে, তুমিশুনো।” আম্মু ঘুরে তার দিকে তাকালেন, মহিলাটি তার ঘুমস্ত বাচ্চাটিকেসোফায় শুইয়ে দিয়ে বলল, “তুমি এভাবে তোমার মেয়ের কাছে যেতেপারবে না। তিন মাস কোমায় থেকে জেগে উঠে তোমাকে এভাবে দেখলে তোমার মেয়ে আবার কোমায় চলে যাবে ।॥” “তোমাকে দেখে বোঝা যায় তুমি তিন মাস আয়নার সামনে যাও নাই । তুমিএকজন সুন্দরী মহিলা, তোমার চেহারার কী অবস্থা করেছ তুমি জান না ! দীড়াও, তুমি চুল আচড়াও, ঠোটে লিপস্টিক দাও | তোমার দরকার ডার্কশ্যাডো-_ আমারটা দিয়ে কাজ চলে যাবে ! নাও লিপস্টিক দাও, তোমারভয় নাই, আমার কোনো সংক্রামক রোগ নাই ।” পাউডার দিল তারপর বুকে জাপটে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল । তিষা তার আম্মুকে দেখে বলল, “আম্মু তোমার কী হয়েছে? তুমি এতশুকিয়ে গেছ কেন?” আম্মু বললেন, “আমার কিছু হয়নি মা । আমি খুব ভালো আছি । সারাপৃথিবীতে আমার থেকে ভালো কেউ নেই ।” “আমার কী হয়েছে আম্মু? আমি হাসপাতালে কেন?” “সেটা অনেক বড় একটা কাহিনী মা । তোকে বলব।” “আজকে কী বার আম্মুঃ বৃহস্পতিবার আমার মায়া সভ্যতার উপরএকটা রিপোর্ট জমা দেবার কথা ছিল।” আম্মু হেসে ফেললেন, বললেন “তুই রিপোর্ট লেখার অনেক সময়পাবি মা । আজকে কী বার সেটা তো আমিও জানি না!” সন্ধ্যেবেলা তিষা কার ঘরে টেলিভিশনে স্থানীয় খবরে নিজেকে দেখতে পেল । স্থানীয় সংবাদদাতা বলল, “গত ২৪ জানুয়ারী সাসকুয়ান হ্রদেবরফের আস্তরণ ভেঙ্গে টিশা আমেদ (আমেরিকান সংবাদদাতা তিষাআহমেদ নামটা এর চাইতে ভালো করে উচ্চারণ করতে পারে না !) নামেকাউন্টি জুনিয়র স্কুলের ছাত্রী হিম শীতল পানিতে ভুবে যায় । বরফের নিচথেকে তার পোষা কুকুর টুইটি টিশা আমেদের দেহ উদ্ধার করে আনে । ততক্ষণে তার দেহ হাইপোথারমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গেছে। মস্তিষ্কেপ্রয়োজনীয় রক্ত সঞ্চালিত না হওয়ায় সে কোমাতে চলে যায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের সমস্ত আশংকাকে অমূলক প্রমাণ করে আজ সে জেগেউঠেছে । চিকিৎসকেরা অনুমান করছেন তার শরীর হাইপোথারমিয়াতেআক্রান্ত হওয়ার কারণেই মস্তিষ্কে প্রয়োজনীয় রক্ত সঞ্চালিত না হওয়ারপরও তার মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। টিষা আমেদের জ্ঞান ফিরে আসার খবরে তার স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মাঝে বিপুল আনন্দোচ্ছাস দেখা যায় ।” তিষা তখন তার স্কুলের ছেলে মেয়েদের দেখল । সবাই দুই হাত তুলেআনন্দে চিৎকার করছে । তিশা জনকেও দেখতে পেল । সাইন ল্যাংগুয়েজদিয়ে বলল “আমরা তোমাকে ভালোবাসি তিশা ।” খবর শেষ হবার পর তিশা আম্মুর হাত ধরে বলল, “টুইটি কেমনআছে আম্মু?” আম্মু কোন উত্তর দিলেন না। তখন তিষার গলার স্বর কেঁপে গেল, “কেমন আছে টুইটি?” আম্মা তিষার মাথায় হাত রেখে ফিসফিস করে বললেন, “নিশ্চয়ই খুবভালো আছে মা । যেখানে গেলে সবাই খুব ভালো থাকে তোকে বাচিয়ে দিয়েটুইটি সেখানে চলে গেছে ।” তিষা দুই হাতে মুখ ঢেকে নিঃশব্দে বসে রইল । একজন মানুষ পুরো তিন মাস এক ভাবে বিছানায় শুয়ে থাকলে তার শরীরেরঅনেক কিছুই সাময়িকভাবে অচল হয়ে যায়, হঠাৎ করে সেটাকে সচল করা যায় না। তাই তিষাকে চট করে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হল না।হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে একটু আধটু বই পড়তে দিলেও বেশীরভাগ সময় তাকে টেলিভিশন দেখে সময় কাটাতে হল । টেলিভিশনে সেপৃথিবীর অনেক খবর জানতে পারলেও যে খবরটি তাকে সবচেয়ে চমৎকৃতকরল সেটি হচ্ছে পোষা প্রাণী হিসেবে জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করে তৈরিকরা নূতন একটা প্রাণী যার নাম এনিম্যান। সে যখন আচেতন হয়েছিলতখন এই ছোট প্রাণীটির আবিষ্কার নিয়ে প্রথম একটা সাংবাদিক সম্মেলনহয় । সারা পৃথিবীতেই এটা নিয়ে খুব হইচই শুরু হয়েছিল, মানুষের বাচ্চাকেকুকুর বেড়ালের মতো পোষা প্রাণী হিসেবে বিক্রি করা যাবে না এই রকমএকটা দাবী নিয়ে পত্র পত্রিকায় লেখালেখি হল, টেলিভিশনে আলোচনা হল,ইন্টারনেটে তুমুল বাকবিতপ্তা হল | যে কোম্পানী এটা তৈরি করেছে তারা দাবী করল এটা যোটেও মানুষের বাচ্চা নয়, এটা জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংকরে তৈরী করা একটা কৃত্রিম প্রাণী । এটি কেনো মায়ের গর্ভে জন্ম নেয়নি,এটি তৈরী হয়েছে ল্যাবরেটরির বায়োসেলে । বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে তাতেসায় দিলেন । মনোবিজ্ঞানীরা প্রাণীটাকে নিয়ে গবেষণা করে বললেন এরবুদ্ধিমত্তা কুকুর বিড়াল জাতীয় স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সমান । তাই কেউ যদি কুকুর বিড়াল পোষা প্রাণী হিসেবে বেচাকেনা করতে পারে তাহলে এটাবেচাকেনা করতে দোষ কী? শেষ পর্যস্ত কংগ্রেসে আলোচনা হল এবং দীর্ঘ শুনানীর পর এনিম্যাননামের প্রাণীটাকে বিক্রি করার অনুমতি দেয়া হল । এটি রাতারাতি অসম্ভবজনপ্রিয় একটা পোষা প্রাণী হয়ে গেল । আমেরিকার প্রত্যেকটা পরিবারএখন একটা এনিম্যান চায় । তিষা অবশ্যি কারণটা বুঝতে পারে । এতো মিষ্টি চেহারার একটাপ্রাণী, অনেকটা মানবশিশুর মতো আবার মানব শিশু নয়, বড় বড় মায়া কাড়া চোখ, শরীরে কোমল পশম, মুখের মাঝে একটা ছেলেমানুষী প্রায় দুষ্টমীরহাসি- এই প্রাণীটাকে একজন ভালো না বেসে পারে কীভাবে? যারা যারা এনিম্যানকে কিনে এনেছে তারা সবাই এর প্রশংসায়পঞ্চমুখ | এটি খুবই মিষ্টি স্বভাবের । এটি শান্ত এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ৷ এরপ্রয়োজন খুবই কম, বাথরুম নিয়ে কোনো সমস্যা নেই । প্রাণীটি খুবই হাসিখুশী, যার বাসায় একটি এনিম্যান আছে সেই বাসাটিতেই হতাশা বাদুঃখ রাতারাতি কমে গেছে । সেই রাতে যখন তিষার আবু তিষাকে দেখতে এলেন তিষা বলল,“আব্বু আমাকে একটা এনিম্যান কিনে দেবে?” আববু তিষাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “শুধু এনিম্যান কেন, তুই চাইলেতোকে আমি রয়াল বেঙ্গল টাইগার কিনে দেব ।” তিষা হি হি করে হেসে বলল, “না আবু, আমার রয়েল বেঙ্গলটাইগার দরকার নেই । একটা এনিম্যান হলেই হবে ।” আবরু বললেন, “এনিম্যানের তো এখন খুব ডিমান্ড তাই চাইলেইপাওয়া যায় না, বুকিং দিতে হয় । বুকিং দেওয়ার পর কম পক্ষে ছয় সপ্তাহঅপেক্ষা করতে হয় । আমি আজকেই বুকিং দিয়ে দেব, ছয় সপ্তাহের মাঝেচলে আসবে ।” আম্মু বললেন, “তুই যখন প্রথম কুকুর পুষতে চেয়েছিলি তখন আমিকতো আপত্তি করেছিলাম মনে আছে?” তিষা মাথা নাড়ল, “মনে আছে।” তিষা নিচু গলায় বলল, “আমি টুইটির কথা ভুলতে পারি না আম্মু !” আম্মু বললেন, “আমরাও পারি না ।” আব্বু বললেন, “যখন এনিম্যান চলে আসবে তখন হয়তো একটু ভুলেথাকতে পারবি |” তিষা বলল, “কিন্তু সে জন্য তো ছয় সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে ।” আম্মু বললেন, “দেখতে দেখতে ছয় সপ্তাহ কেটে যাবে।” তিষার অবশ্য ছয় সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হল না তার আগেই একটাএনিম্যান পেয়ে গেল । জ্ঞান ফিরে পাবার তিন সপ্তাহ পর তিষাকে তার বাসায় যাবার অনুমতিদেয়া হল । যদিও সে আবার নিজের পায়ে দাড়াতে পারছে কারো সাহায্য নানিয়েই হাটতে পারছে তারপরও তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হল একটা হুইল চেয়ারে বসিয়ে । ঠিক যখন তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হচ্ছে তখনতার স্কুলের বেশ কয়জন ছেলে মেয়ে এসে হাজির । বাসায় যাবার আগেতাকে তাদের স্কুল হয়ে যেতে হবে, সেখানে সবাই মিলে তাকে অভ্যর্থনাজানানোর জন্যে বিশাল একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে রেখেছে । স্কুলের কাছাকাছি পৌঁছে তিষার আব্বু আম্মু দেখলেন সত্যিই বিশালআয়োজন । স্কুলের ঢোকার রাস্তায় বেলুন দিয়ে একটা গেট তৈরী করাহয়েছে । গেটের ওপর বিশাল ব্যানার সেখানে হাস্যোজ্জল তিষার ছবি, বড়বড় করে লেখা, “তিষার জন্য ভালোবাসা ।' ছাত্রছাত্রীদের মাঝে একটা ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে যায় । শেষ পর্যস্ত যাকে সেসুযোগটা দেয়া হল তার নাম জন । ছেলেটি কানে শুনতে পায় না এবং সাইনল্যাংগুয়েজে কথা বলে, আব্বু আর আম্মু আগেই তিষার মুখে বেশ কয়েকবার জনের কথা শুনেছিল, তিষার ভাষায় জন হচ্ছে কম্পিউটারেরজিনিয়াস । তিষাকে স্কুলের করিডোরে আনা মাত্রই ড্রামের শব্দ হতে থাকে। ড্রামের সাথে সাথে ছেলে মেয়েদের চিৎকার শোনা যায়। তিষাকে হুইলচেয়ারে করে স্কুলের অডিটরিয়ামে নেয়া হয় । স্টেজে কয়েকটা চেয়ার রাখাহয়েছে সেখানে এখনো কেউ বসে নেই । অডিটরিয়ামে সব ছেলে মেয়েরাবসে চেঁচামেচি করছে । হুইল চেয়ার ঠেলে যখন তিষাকে স্টেজে তোলা হলতখন ছেলে মেয়েদের চেচামেচিতে অডিটরিয়ামের ছাদ ধবসে পড়ার মতোঅবস্থা হল। বাচ্চারা চিৎকার করতেই থাকল, মিসেস সাস্টিক তখন মাইক্রোফোন হাতেনিয়ে বললেন, “বাচ্চারা তোমরা শান্ত হও ! টিশা এই মাত্র হাসপাতালথেকে ছাড়া পেয়েছে, তোমরা চিৎকার করে তাকে আবার অসুস্থ করে দিওনা!” বাচ্চারা তখন একটু শান্ত হল, মিসেস সাস্টিক তখন বললেন,গিয়েছিল । লেকের উপর সেই ফাটল কেন তৈরী হয়েছিল সেটি এখনো একটি রহস্য । জিওলজিস্টরা বের করার চেষ্টা করছেন, অনুমান করা হয়একটা ভূকম্পনের কারণে এটা ঘটেছিল । যাই হোক সেই হিমশীতলপানিতে টিশা ডুবে গিয়েছিল, মানুষ নিঃশ্বাস না নিয়ে এক দুই মিনিটের বেশীতার বেচে থাকার কোনো কথা ছিল না কিন্তু তোমরা সবাই দেখছ টিশা শুধুযে বেচে আছে তা নয় সে আমাদের সামনে বসে আছে।” বাচ্চারা আনন্দে চিৎকার করে উঠল । মিসেস সাস্টিক বললেন, “এইদীর্ঘ সময় মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ না হলে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিন্তুমস্তিষ্ক পুরোপুরি ঠিক আছে ।” বাচ্চারা আবার আনন্দে চিৎকার করে উঠল ।মোটাসোটা একটা ছেলে চিৎকার করে বলল, “আমরা টিশার ব্রেন ফাংশান টেস্ট করতে চাই । টিশাবল পাঁচ আর পাঁচে কত হয়?” তিষা হাসল, বলল, "দুইশ বারো!" সবাই আনন্দে চিৎকার করে ওঠে ! মিসেস সাস্টিকও হাসলেন, হেসেদেখেছ সেটা শুধু যে ঠিক আছে তা নয় এটা এখন ওভার ড্রাইভ মোডে কাজকরছে । যাই হোক, আমরা আজকে টিশাকে কিছুক্ষণের জন্যে আমাদেরস্কুলে এনেছি কারণ আমরা সবাই তাকে বলতে চাই, আমরা তোমাকেভালোবাসি টিশা !” সবাই চিৎকার করে বলল, “আমরা তোমাকে ভালোবাসি, টিশা ।” দর্শকের সারিতে বসে থাকা তিষার আম্মু শাড়ীর আঁচল দিয়ে তার চোখ মুছলেন । এবারে তিষার ক্লাশ টিচার মিসেস রামজী হাতে মাইক্রোফোন নিলেন,এখানে এনেছি, তার দুটো কারণ আছে । প্রথম কারণটা সবাই জান । সেহচ্ছে সারা পৃথিবীর সবচেয়ে সৌভাগ্যবতী মেয়ে । এরকম নিশ্চিত মৃত্যুরহাত থেকে বেঁচে আসা মানুষ সারা পৃথিবীতে বলতে গেলে নেই । তাইআমরা টিশাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের স্কুল থেকে একবার ঘুরিয়ে নিতে চাই, যেন আমাদের স্কুলে টিশার সৌভাগ্যের ছিটেফোটা ছড়িয়ে পড়েএবং তোমাদেরও সেই সৌভাগ্য স্পর্শ করে আর তোমারাও লেখাপড়া নাকরেই ভালো গ্রেড পাও !” সবাই মিসেস রামজির কথা শুনে হাসিতে ফেটে পড়ে । মিসেস রামজিহাসির শব্দ থেমে যাওয়া পর্যস্ত অপেক্ষা করলেন তারপর গলার স্বর পরিবর্তনকরে বললেন, “তোমরা নিশ্চয়ই জান টিশার একটা পোষা কুকুর ছিল, সেইভালো পোষা কুকুরটাকে অনেক ভালোবাসা দিয়ে স্মরণ করব । আমরা জানিটিশা নিশ্চয়ই সেই কুকুরটাকে অনেক ভালোবাসত এবং তার অভাবটা নিশ্চয়ই আর কখনো পূরণ হবে না ।” প্রসঙ্গটি আসতেই সবার মন ভারী হয়ে যায় । তারা নিঃশব্দে মিসেস রামজিরকথা শোনে | মিসেস রাজী নরম গলায় বললেন, “আমরা কখনো টিশারপ্রিয় কুকুরটার অভাব পূরণ করতে পারব না । তারপরও সে যেন একটুহলেও তার দুঃখটা ভুলে থাকতে পারে সে জন্যে তাকে একটা পোষা প্রাণীউপহার দিতে চাই | এখানে টিশার বাবা মা আছেন, তারা যদি অনুমতি দেনতাহলে আমরা টিশাকে একটা এনিম্যান দিতে চাই !” সবাই এবার শুধু আনন্দে চিৎকার করে উঠল না, উত্তেজনায় নিজেদেরজায়গায় দাড়িয়ে গেল ! তিষার আব্বু আম্মু মাথা নেড়ে অনুমতি দিলেনতখন স্টেজের পাশ থেকে একটা বড় বাক্স আনা হল । সেটি সুন্দর রিবনদিয়ে বাধা । তিষা হুইল চেয়ার থেকে উঠে দীড়িয়ে রিবনের এক মাথা ধরেটান দিতেই বাক্সটা খুলে যায় এবং সবাই অবাক হয়ে দেখে বাক্সেরমাঝামাঝি ছোট একটা এনিম্যান গুটি শুটি মেরে বসে আছে । সেটি সাবধানেতার দুই পা আর দুই হাতে ভর দিয়ে দীড়াল, তারপর তার বড় বড় চোখেচারদিকে তাকাল । তিষা হাত বাড়িয়ে দিতেই এনিম্যানটি তার নিজের দুইকোলে তুলে নিয়ে তার মাথায় হাত বুলাতেই সেটি তার ফোকলা দাত বেরকরে ফিক করে হেসে দিল ! তিষা এনিম্যানটি কোলে নিয়ে আবার তার হুইল চেয়ারে বসে পড়ে। মিসেস রামজি তিষাকে বললেন, “টিশা তুমি কী কিছু বলতে চাও?” তিষা মাথা নেড়ে বলল, “আমি কিছু বলার চেষ্টা করলেই কেঁদেফেলব ।” “একটু না হয় কেঁদেই ফেল ।” তিষা মাইক্রোফোনটা হাতে নিয়ে সত্যি সত্যি কেদে ফেলল । তারকাদার কারণটা তবু বোঝা যায় কিন্তু ছটফট দুরন্ত বাচ্চাদের অনেকেই কেনতার সাথে সাথে কেঁদে ফেলল তার কারণটা ঠিক বোঝা গেল না !


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২০৯৫৭ জন


এ জাতীয় গল্প

→ এনিম্যান -(০৬)

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now