বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
গ্লাস ভাঙ্গার শব্দ....
-তুমি অামার সাথে এমন করো কেন?
অনেকটা ভয় অার কান্না মিশ্রিত
কন্ঠে কথাটা বলে প্রিয়ন্তী।
-কেন করি তুই বুঝিস না। ( প্রতীক )
প্রতীক অার প্রিয়ন্তীর বিয়ে
হয়েছে ছয় মাস হলো।কিন্তু দুইজনই
যেন দুইদিকের বাসিন্দা। প্রতীক ওর
মতো খায়-দায় ঘুমায় অার প্রিয়ন্তী
অালাদা।তাদেরকে দেখলে মনে
হবে এক ঘরের দুই বাসিন্দা। অবশ্য
প্রিয়ন্তী প্রতীক কে খুব
ভালোবাসে কিন্তু প্রিয়ন্তীর এই
ভালোবাসা প্রতীক কখনোই বুঝতে
পারে নি।
ফ্ল্যাশব্যাক....
ছয় মাস অাগের কথা,
প্রতীক সামিয়ার জন্য পার্কে
অপেক্ষা করছে।কিছুক্ষণ পর
সামিয়ার অাগমন।
-ওই,এতো দেরি করলা কেন?অাগে
জানতাম মেয়েরা অাগে
অাসে,এখন দেখি উল্টো।(প্রতীক)
-সরি,বাবু।বাসায় একটা জরুরী কাজ
ছিলো।(সামিয়া)
-ওকে শাস্তিস্বরুপ এখন একটা
পাপ্পি দাও।
-শয়তান,পারব না অামি।
-না পারলে অামি গেলাম।
-ওকে ওকে।উম...ম.....ম.....
না পাপ্পিটা শেষ পর্যন্ত দেওয়া হয়
না।অাচমকাই প্রতীক এর ফোনটা
বেজে ওঠে।মেজাজটাই খারাপ
হয়ে যায় প্রতীকের।
বাসা থেকে ফোন করেছে তার
মা।
- হ্যালো মা ,বলো কি বলবে।
-কোথায় তুই?তাড়াতাড়ি বাসায়
অায়।
-এখন না গেলে হয় না মা?
-না,এখনি অায়।ইমারজেন্সি।
-অাচ্ছা অাসতেছি।
তড়িঘড়ি করে সামিয়ার কাছ
থেকে বিদায় নিয়ে বাসার
উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় প্রতীক।
প্রতীকের অাপন বলতে ছিলো শুধু
তার সৎ মা অার সৎ ভাই।যদিও সে
কখনো তাদেরকে সৎ ভাবেনি।
সবসময় অাপন ভেবেছে।কিন্তু, ওরা
যে প্রতীককে কখনো অাপন
ভাবেনি সেটা প্রতীক বুঝতো।
কিন্তু, কখনোই কিছু বলতো না।সে
তার দায়িত্ব পালন করে গেছে
ঠিকমতো।সংসার চালানো থেকে
শুরু করে সবকিছু।প্রতীক শেয়ার
বাজার এর ব্যাবসা করতো।এভাবে
তার দিগুলো ভালোই যাচ্ছিলো।
বাড়িতে পৌছার পর,
-কি হয়েছে মা?
- পাঞ্জাবীটা পড়ে নে।দাওয়াত
খেতে যাবো।
-দাওয়াতের বাড়িতে যেতে
একদমই ভালো লাগে না প্রতীকের।
মনে মনে একটু বিরক্ত
হলেও,পাঞ্জাবীটা পড়ে রেডি
হয়।
অতঃপর তারা দাওয়াত বাড়ির
উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়।
চারদিকে কিছুটা শোরগোল অার
বিয়ে বিয়ে অামেজ।
প্রতীকের মা অার ভাই প্রতীককে
একটা ঘরে নিয়ে যায়।ততক্ষণ পর্যন্ত
প্রতীক জানে না তার সাথে কি
হতে চলেছে।
- প্রতীক তুই এখানে একটু বস,অামরা
অাসতেছি।
-অাচ্ছা।
একঘন্টা হয়ে গেলো,মা এখনো
অাসছে না।কতক্ষণ এভাবে বসে
থাকা যায়।অনেকটা বিরক্ত হয়েই
বিড়বিড় করতে থাকে প্রতীক।
হঠাৎ,দুইজন মোটা-সোটা লোক
প্রতীক এর দুইপাশে এসে বসে।প্তীক
কিছুটা ইতস্ততবোধ করে।কিন্তু
তখনো সে কিছুই বোঝে নি।
দুই মটুর মধ্যে এক মটু জোরে হাঁক দেয়,
-ঐ,মাইয়া অার কাজী ব্যাটারে
লইঢা অায়।দেখি অাইজ বিয়া না
কইরা কই যায়।
পাশের রুম থেকে একজন একটা
পাগড়ী নিয়ে অাসে,তারপর
প্রতীককে পরতে বলে।এবার অার
প্রতীকের বুঝতে বাকি থাকে না
যে,তার সাথে কি ঘটতে যাচ্ছে।
প্রতীক অনেক বাধা দেওয়ার
চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়।
সে জানে এসব তার মায়ের
কারসাজি।এর অাগেও এরকম
হয়েছিলো কিন্তু,সেবার এক বন্ধুর
কারণে বেঁচে যায়।তার মা ছিলো
অর্থলোভী।যেখানে মোটা
অংকের যৌতুক সেখানেই তার মা।
শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হয় এবং বউ
সমেত বাসায় ফেরত অাসে।
প্রিয়ন্তীই ছিলো প্রতীকের বিয়ে
করা সেই বউ।প্রিয়ন্তীও
পরিস্থিতির শিকার।পরিবারের
সিদ্ধান্তের বাইরে সে কিই বা
করতে পারতো।
বাসর রাতে প্রিয়ন্তীর সাথে কথা
না বলেই বালিশ কম্বল নিয়ে
ফ্লোরিং করে প্রতীক।প্রিয়ন্তীও
অার কিছু বলে না।তবে অনেক
কান্না করে।একসময় ঘুমিয়ে পড়ে।
এদিকে প্রতীক সামিয়কে সবকিছু
খুলে বলে এবং একবছর পর
প্রিয়ন্তীকে ডিভোর্স দিবে এই
কথা বলে সামিয়ার সাথে
সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখে সে।
সামিয়ার সাথে প্রতিদিন শপিং
করা,চাইনিজ,ফাস্টফুড,লং ড্রাইভ
সবকিছু ভালই চলতে থাকে।
অার এদিকে বেচারি প্রিয়ন্তী
প্রতীকের জন্য রাতজেগে খাবার
নিয়ে বসে থাকে।সারারাত
কান্না করে ভোর করে দেয়।
এভাবেই দিনগুলো যাচ্ছিলো....
৬ই জুন ২০১৫,
গ্লাস ভাঙ্গার শব্দ......
অাচমকা শেয়ার বাজারে লচ
খাওয়ার জন্য,বলা যায় একেবারে
পথে বসে যায় প্রতীক।এজন্য
প্রিয়ন্তীর উপর অারো বেশি রাগ
দেখায়।
বাসা থেকে বের হয়ে প্রতীক
সামিয়াকে ফোন দেয়।কিন্তু, ফোন
বন্ধ।
মাকে ফোন দেয়,মা বলে অার
কখনো ফোন না দিতে।
একে একে সবাই তাকে পর করে
দেয়।তবুও সামিয়ার উপর প্রতীকের
বিশ্বাস ছিলো।
এর কিছুদিন পর,
রাস্তা দিয়ে হাটছিলো প্রতীক।
হঠাৎ দেখতে পায় সামিয়া একটা
ছেলের হাত ধরে একটা বাসা
থেকে বের হলো।তারপর ঐ ছেলের
সাথে ঢলো ঢলো করতে করতে, ঐ
ছেলের বাইকের পিছনে বসে চলে
গেলো।
এটা দেখে প্রতীকের মন অারো
ভেঙ্গে গেলো।সে বুঝলো,অাসলে
সবাই তার টাকাকেই
ভালোবেসেছে,তাকে নয়।
৫টা বেজে ৩৫ মিনিট,,
ভাঙ্গা মন নিয়ে সে একটা নদীর
ধারে দাড়িয়ে সূর্যের দিকে
তাকিয়ে অাছে।
হঠাৎ,একটা মেয়ে তার পাশে এসে
দাড়ালো।সম্বিত ফিরে পেয়ে
প্রতীক পাশে ফিরে তাকালো।
মেয়েটা অার কেউ নয়,প্রিয়ন্তী।
তার বিয়ে করা বউ।
খোপায় বকুল ফুলের মালা অার নীল
শাড়ি তে তাকে অাজ অপরুপ
লাগছে।মনে হচ্ছে যেন অাসমানের
কোনো এক পরী দলছুট হয়ে জমিনে
নেমে এসেছে।
অাজই প্রথম প্রতীক মেয়েটাকে
এতো ভালোভাবে খেয়াল করলো।
প্রথমে প্রতীকই মুখ খুললো,
-কি চাই?
-তোমাকে।
-মানে?
-মানে,অাই লাভ ইউ।
- কিন্তু অামি তো কখনো
তোমাকে ভালোবাসি নাই।
কখনো স্ত্রীর মর্যাদা দেই নাই।
সবাই তো অামাকে ছেড়ে চলে
গেছে,তুমি থাকবা কেনো।তুমিও
যাও।কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলে
প্রতীক।
-যাকে ভালোবাসা যায় তাকে
ছেড়ে চলে যাওয়া যায় না।
ভালোবাসা মিশ্রিত অাবেগের
স্বরে বলে প্রিয়ন্তী।
- প্রতীকের চোখটা ভিজে যায়।
মনে হয় এখনি চোখের বন্যায় দু-কূল
ছেয়ে যাবে।
হঠাৎ প্রিয়ন্তীর হাতটা ধরে
ফেলে প্রতীক।প্রিয়ন্তী কেঁপে
ওঠে।তারপর বাচ্চা ছেলের মতো
কেঁদে কেঁদে বলতে থাকে প্রতীক,
-অামাকে ছেড়ে কখনো যাবে
নাতো?
-না,কখনোই যাবো না।
তারপর দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে
কাঁদতে থাকে।ওদেরকে কাঁদতে
দিন।ওরা কাঁদতে থাকুক।ওদের
ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে থাকুক
সন্ধ্যার সূর্যাস্ত।
অাসুন প্রকৃত ভালোবাসার মূল্যায়ন
করতে শিখি।
সবার ভালোবাসা গুলো অনেক
ভালো থাকুক।এই কামনা করি।
ধন্যবাদ।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now