বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
তখনও আলী আল-হামাদী বিস্ময়ভরা চোখ নিয়ে
তাকিয়ে আছে আহমদ মুসার দিকে। আহমদ মুসার
কথা শেষ হতেই সে বলল, ‘স্যার, তাহলে সৌদি
বিজ্ঞানীকেই শুধু উদ্ধার নয়, সকলকে সন্ধান
করা, উদ্ধার করাই আপনার মিশন?’
গম্ভীর হলো আহমদ মুসা। বলল, ‘হ্যাঁ, মি. আলী
আল-হামাদী আমার ইচ্ছা এটাই, যদি আল্লাহ মঞ্জুর
করেন।’
‘আরেকটা কথা স্যার, আমি আপনাকে সৌদি কোন
শীর্ষ গোয়েন্দা বা কর্তৃপক্ষ মনে করেছিলাম।
কিন্তু দেখছি, আপনার কাজ, কথাবার্তা, আচরণ সব
কিছুই আমাদের ন্যায় পেশাদার গোয়েন্দার মত
নয়। আপনার কাজ, তৎপরতা, আচরণ, কথাবার্তায়
অফুরান প্রাণ আছে, সীমাহীন আবেগ আছে,
গভীর স্থিরতা আছে। এমনটা আমি কারো মধ্যে
কোথাও দেখিনি। আমি বড় বড় মার্কিন ও বৃটিশ
গোয়েন্দাদের সাথে কাজ করেছি।’ বলল
আলী আল-হামাদী গম্ভীর কন্ঠে।
আহমদ মুসার মুখে শান্ত একটা হাসি ফুটে উঠল। হাত
রাখল আলী আল-হামাদীর কাঁধে। বলল, ‘আপনি
আমাকে ভাইয়ের চেয়েও বেশি ভালবেসে
ফেলেছেন। ধন্যবাদ আল-হামাদী।’
একটু থামল আহমদ মুসা। সংগে সংগেই আবার বলে
উঠল, ‘একটা জরুরি বিষয় আছে মি. আল-হামাদী।
বাহরাইনে ভাল ভূগোলবিদ নিশ্চয় আছেন। আমি
সে রকম একজনের সাথে দেখা করতে চাই।’
‘নিশ্চয় আছে। প্রয়োজনটা কি ধরনের, জানতে
পারি স্যার?’ বলল আলী আল-হামাদী।
‘অবশ্যই। আমি দুনিয়ার ‘অ্যাটল দ্বীপগুলো
সম্পর্কে জানতে চাই। আমার সামনে এখন দু’টি ক্লু
বা টার্গেটস্থল। এক, তাহিতি দ্বীপ, দুই, অ্যাটল
দ্বীপ। আমার এখন জানা দরকার, দু’টি কি এক
জায়গায়, এক লোকেশনে হতে পারে? না দুই
জায়গায়। তাহিতি দ্বীপ আমি জানি। এখন ‘অ্যাটল’
দ্বীপগুলোর অবস্থান, অবস্থা সম্পর্কে আমার
জানা দরকার।’ আহমদ মুসা বলল।
‘ঠিক আছে স্যার, আমি সকালেই এর ব্যবস্থা করব।’
বলল আলী আল-হামাদী।
‘ধন্যবাদ মি. আল-হামাদী।’
উঠে দাঁড়াল আহমদ মুসা। বলল, ‘চলুন, এবার
শয়নঘরগুলোর দিকে। শোবার মত অবস্থা আছে
কিনা দেখি।’
আলী আল-হামাদীও উঠে দাঁড়িয়েছে। বলল,
‘চলুন স্যার।’ শোবার ঘরের দিকে চলে গেল
দু’জনে।
সকাল সাড়ে ৮টা।
নাস্তার টেবিলে আগেই এসে বসেছিল আহমদ
মুসা।
সকালের খবরের কাগজগুলো এসে গেছে।
তার উপর নজর বুলাচ্ছিল আহমদ মুসা।
আলী আল-হামাদী এল।
আহমদ মুসার মুখোমুখি নাস্তার চেয়ারে বসে
বলল, ‘স্যার, একটু দেরী হয়ে গেল।
ভূগোলবিদের বিষয়টাও ঠিক করে এলাম স্যার।
স্যার, আরেকটা কথা, আমাদের মহামান্য সুলতানের
নিরাপত্তা উপদেষ্টা প্রিন্স খালিদ ইবনে সালমান-আল-
খালিফা আপনার সাথে দেখা করতে চান।’
‘উনি আমার ব্যাপারটা জানলেন কি করে?’ আহমদ
মুসার জিজ্ঞাসা।
‘স্যার, সৌদি নিরাপত্তা প্রধান আল-সউদ তো তাকেই
টেলিফোন করে আপনার কথা বলেছেন। উনি
খুব গুণী মানুষ স্যার। উনি বৃটেনের স্যান্ডহার্টস
ছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে উচ্চতর সামরিক ও
নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। কিন্তু এই
সাথে অত্যান্ত বিদ্যানুরাগী। বাহরাইনে আজ যে
বিশাল সমৃদ্ধ লাইব্রেরী নেটওয়ার্ক গড়ে
উঠেছে, সেটা তারই অবদান। বাহরাইন
বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরী দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ
লাইব্রেরীর মধ্যে একটি। দেশের বড় বড়
শিল্পপতির সাথেও তার গভীর সম্পর্ক। আমাদের
নিরাপত্তা প্রধান একজন ভাল ভূগোলবিদের
ব্যাপারে তাঁকেই অনুরোধ করেছিলেন। সংগে
সংগেই তিনি যোগাযোগ করে একটা
এ্যাপয়েন্টমেন্ট ঠিক করে ফেলেছেন। স্যার,
আজ দশটায় আপনি তার সাথে চা খাবেন এবং সাড়ে
১১ টায় বাহরাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের
সমুদ্র ও দ্বীপ বিশেষজ্ঞ ড. সালেহ
আবদুল্লাহর সাথে আপনার সাক্ষাত। স্যরি, আপনার
অনুমতি না নিয়েই কিন্তু আমি সব ঠিক করে
ফেলেছি।’
‘অনুমতির কেন প্রয়োজন। আমি তো আপনাকে
দায়িত্ব দিয়েছি। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। অসম্ভব
দ্রুত আপনি সব ঠিক করে ফেলেছেন। আমি
প্রিন্স খালিদের সাক্ষাত পেলে খুবই খুশি হবো।’
বলল আহমদ মুসা।
‘ধন্যবাদ স্যার। আসুন স্যার, আমরা নাস্তা খেয়ে
নেই।’ বলল আল-মাহাদী।
নাস্তা সারল দু’জনে।
হোটেলের রুম-সার্ভিস বিভাগ থেকেই এ নাস্তা
এসেছে। এপার্টমেন্টে যারা নিজেরা রান্না-বান্নার
ঝামেলায় যায় না, তাদের খাবার হোটেলের রুম
সার্ভিস থেকেই সরবারাহ করা হয়।
সকাল দশটার মধ্যে আহমদ মুসারা প্রিন্স খালিদ ইবনে
সালমান আল-খালিফার অফিসে পৌছলেন।
প্রিন্সের প্রাইভেট সেক্রেটারি গাড়ি বারান্দায়
দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল আহমদ মুসার।
আহমদ মুসাদের গাড়ি সেখানে পৌঁছতেই পিএস
নিজে এসে গাড়ির দরজা খুলে স্বাগত জানাল আহমদ
মুসাকে। বলল, ‘এক্সিলেন্সি আপনার জন্যে
অপেক্ষা করছেন।’
আহমদ মুসা গাড়ি থেকে নামল।
আলী আল-হামাদী আগেই নেমেছিল। বলল
সে আহমদ মুসাকে, ‘স্যার, আমি অপেক্ষা করছি।
আপনি আসুন।’
‘ধন্যবাদ মি. আল-হামাদী।’
বলে আহমদ মুসা চলতে শুরু করল।
পথ দেখিয়ে নিয়ে চলল প্রিন্স খালেদ ইবনে
সালমান আল-খালিফার পি.এস।
সুলতানের সেক্রেটারিয়েটের চার তলার একটা
স্যুটে বসেন সুলতানের নিরাপত্তা উপদেষ্টা প্রিন্স
খালেদ আল-খালিফা।
সুলতানের নিরাপত্তা উপদেষ্টা প্রিন্স খালেদ আল-
খালিফা সুলতানের পক্ষে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়,
প্রতিরক্ষা বাহিনী, পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের
তদারকি করেন।
চার তলায় পৌঁছে প্রিন্স খালেদ আল-খালিফার পি.এস
আহমদ মুসাকে ভিআইপি গেষ্টরুমে বসিয়ে
ইন্টারকমে বসকে খবর দিল।
খবর জানাবার পরপরই দরজা ঠেলে গেষ্টরুমে
প্রবেশ করল সুলতানের নিরাপত্তা উপদেষ্টা প্রিন্স
খালেদ আল-খালিফা।
সালাম দিয়ে আহমদ মুসাকে জড়িয়ে ধরল সে।
সাথে নিয়ে ঢুকে গেল অফিস কক্ষে।
অফিস কক্ষের সাথেই তার পার্সোনাল গেষ্টরুম।
সেখানেই সে বসল গিয়ে আহমদ মুসাকে নিয়ে।
আহমদ মুসাকে বসিয়ে নিজে বসেই প্রিন্স
খালেদ আল-খালিফা বলল, ‘মহান ভাই সৌদি আরবের
নিরাপত্তা প্রধান আল-সউদ আপনার এত প্রশংসা
করেছেন যে, আমি আপনার সাথে সাক্ষাত না
করে থাকতে পারলাম না। কিন্তু আপনার নামই আমার
জানা হয়নি। আমার মহান ভাই আল-সউদও বলেননি। তিনি
বলেছেন, তাঁর নাম তাঁকেই জিজ্ঞাসা করবেন।
বিষয়টা আমার কিউরিসিটি বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন এই
‘নাম’ দিয়েই আমরা আমাদের কথা শুরু করতে পারি।
আর একটা কথা বলি, ড. সালেহ আবদুল্লাহ যার সাথে
আপনার সাড়ে ১১ টায় দেখা করার কথা, তিনি একটা
জরুরি প্রয়োজনে আমার সেক্রেটারিয়েটে
এসেছেন। আপনি চাইলে তাঁকে এখানে ডাকা
যেতে পারে।’
‘আল-হামদুলিল্লাহ! এতে আমারই বেশি সুবিধা হবে।
তার ওখানে যাওয়া থেকে বেঁচে যা। তাছাড়া যে
আলোচনা তার সাথে করতে চাই, সেটা আপনার
উপস্থিতিতে আরো ভালো হবে এক্সিলেন্সি।’
বলল আহমদ মুসা।
‘ধন্যবাদ’ বলে প্রিন্স খালেদ আল-খালিফা
ইন্টারকমে পি.এস.-কে নির্দেশ দিল, ‘তুমি গিয়ে
ড. সালেহ আবদুল্লাহকে নিয়ে এস।’ ইন্টারকম
থেকে ফিরে প্রিন্স খালেদ আহমদ মুসার দিকে
তাকাতেই আহমদ মুসা বলল, ‘এক্সিলেন্সি নানা
কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমার নামটা গোপন
রাখা হয়। সেটা আপনার ক্ষেত্রে নয়।
এক্সিলেন্সি! আল-সউদ আমার নাম নিয়ে একটা
রহস্য সৃষ্টি করে রেখেছেন মাত্র! আহমদ মুসা।
খুবই ছোট নাম।’
নাম শুনেই ভ্রু কুঞ্চিত হলো বাহরাইনের নিরাপত্তা
উপদেষ্টা প্রিন্স আল-খালিফার। তার বিস্ময় ও কৌতুহল
মিশ্রিত স্থির দৃষ্টি আহমদ মুসার উপর নিবদ্ধ।
‘আপনি কি সেই লিজেন্ড আহমদ মুসা, যিনি
তরুণদের স্বপ্ন নায়ক আর প্রবীণদের গর্ব?’
আহমদ মুসার মুখের উপর চোঁখ ঐভাবে স্থির
রেখেই প্রশ্ন করল প্রিন্স খালেদ আল-খালিফা।
আহমদ মুসার মুখ নত মত হলো। বলল,
‘এক্সিলেন্সি আমি সাধারণ মানুষ। আমি মানুষের
কাজে লাগার চেষ্টা করি মাত্র।’ পরম ও বিনীত
কন্ঠস্বর আহমদ মুসার।
আসন থেকে উঠে প্রিন্স খালেদ আল-খালিফা।
এগোলো আহমদ মুসার দিকে।
উঠে দাঁড়াল আহমদ মুসাও।
প্রিন্স খালেদ আল-খালিফা জড়িয়ে ধরল আহমদ
মুসাকে। বলল, ‘কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বের’
হবার প্রবাদ, কিন্তু সোনার এক টুকরা খুঁজতে গিয়ে
অমূল্য হীরকখন্ড পাবার কোন প্রবাদ নেই।
কিন্তু আমি কল্পনাতীতভাবে এক অমূল্য হিরকখন্ড
পেয়ে গেলাম। আমার গর্ব, আমাদের গর্ব
আপনি। আপনাকে স্বাগত: খোশ আমদেদ
আপনাকে।’ আবেগে কন্ঠ ভিজে উঠেছিল
প্রিন্স খালেদ আল-খালিফার। নিজের আসনে ফিরে
গেল প্রিন্স খালেদ আল-খালিফা।
পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখ ভালো
করে মুছে নিয়ে বলল, ‘সত্যি হঠাৎ অমূল্য
হিরকখন্ড পেলে কপর্দকহীনের যে দশা হয়,
সে রকমটাই আমার অবস্থা। গতবার হজ্জে গিয়ে
গিয়ে মদিনায় ঘুরে বেড়াবার সময় পুলিশ পাহারায় থাকা
একটা বাড়ি দেখিয়ে ভাই আল-সউদ আমাকে
বলেছিলেন সেখানে আপনি থাকেন। কিন্তু তখন
আপনি টার্কিতে ছিলেন। কিন্তু তখন আপনি টার্কিতে
ছিলেন। দেখা করার সৌভাগ্য হয়নি। তারপর কয়েকবার
চেষ্ঠা করেছি। কিন্তু আপনাকে বাড়িতে পাওয়া
যায়নি। আমাদের মহামান্য সুলতানও আপনার সম্পর্কে
জানেন। তিনি একবার আমাকে বাহরাইনে আপনাকে
আমন্ত্রণের কথা বলেছিলেন। কিন্তু প্রথমত
আপনাকে না পাওয়া, দ্বিতীয়ত আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ
করে আনার মধ্যে উভয় পক্ষের নানা সুবিধা-
অসুবিধার বিবেচনা করে এই ক্ষেত্রে অগ্রসর
হওয়া যায়নি। সেই আপনাকে আজ হঠাৎ এভাবে
চোখের সামনে হাজির দেখছি। এটা একজনের
আবেগকে বাঁধভাঙা করে দেবার মতই। আল-
হামদুলিল্লাহ।’
‘ধন্যবাদ এক্সিলেন্সি। আমি দুর্লভ মানুষ নই। ডাক
পেলে আমি সেখানে যাই। তবে শুধু শুধু
বেড়াবার সময় আমার কম হয়। এই দেখুন, আমাকে
খুঁজে পাননি। কিন্তু আজ বিনা ডাকে আপনার
দোরগোড়ায় হাজির।’ আহমদ মুসা বলল।
‘যখন আপনাকে পেয়েছি। তখন আমার অনুরোধ
মহামান্য সুলতানের সাথে আপনার দেখা করতে
হবে’ বলল প্রিন্স খালেদ আল-খালিফা।
‘এক্সিলেন্সি সময় হলে দেখা করতে পারলে
আমিও খুব খুশি হবো।’ আহমদ মুসা বলল।
‘ধন্যবাদ।’ বলে একটু থামল, একটু ভাবল প্রিন্স
খালেদ আল-খালিফা। সোফায় একটু হেলান দিল
সে। বলল, ‘অনেক প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করছে
মি. আহমদ মুসা আপনাকে। আপনার সব কাজই
জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে। বিষয়টি বিরাট
উদ্বেগ-উত্তেজনার। অব্যবহত ভাবে এই
উদ্বেগ-উত্তেজনা নিয়ে চলার অফুরন্ত শক্তি
আপনি কোথা থেকে পান? ক্লান্তি, অবসন্নতার
অনেক কিছুই তো সামনে আসার কথা।’
‘পৃথিবীটাই তো নানা রকম লড়াইয়ের ক্ষেত্র।
প্রত্যেক মানুষই তার জীবন পরিচালনায় নানা রকম
লড়াইয়ে ব্যস্ত। এই লড়াইয়ের মাধ্যমে মানুষের
জীবনে শান্তি ও সাফল্য আসে। আমার লড়াইটাও
মানুষের শান্তি ও সুবিচারের পক্ষে। আমার বিশ্বাস
আমার শক্তির উৎস।’ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন
বলেছেন, ‘তিনি জীবন ও মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন
এটা দেখার জন্যে যে মানুষ ভাল কাজ করছে।’
এই নি নির্দেশই আমার দায়িত্ব পালনের শক্তি। ভাল
কাজ করার আরেকটা দিক হলো, মন্দ পরিত্যাগ করা
এবং মন্দ কাজের প্রতিকার করে ভালোর প্রতিষ্ঠা
করা। মজলুম কারো ডাক পেলে এই কাজে সাহায্য
করি।’ বলল আ্হমদ মুসা।
‘এই কাজ অত্যান্ত কঠিন। এই প্রসংগে একটা প্রশ্ন,
ভালোর প্রতিষ্ঠা মন্দ পথে হয় কি না? আমি বলতে
চাচ্ছি, মন্দ পথে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আরেক
সন্ত্রাস সৃষ্টি করা, মন্দের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ
হিসাবে অপরাধী নিপরাধ নির্বশেষে হত্যা-হামলায়
শিকার বানানো চলে কিনা?’ প্রিন্স খালেদ আল-
খালিফা বলল।
‘না, তা করা যায় না। মন্দ দুর করে ভালো’র প্রতিষ্ঠা
করার মডেল হলেন আল্লাহর রসুল স.।আল্লাহর
রসুল স.-এর গোটা জীবনে ভালো’র সাথে
মন্দ পথ অনুসরণের এবং নির্দোষ-নিরপরাধিদের
উপর হামলা ও হত্যা-নির্যাতনের কোন দৃষ্টান্ত
নেই। এমনকি শত্রুর বিরুদ্ধে ঘোষিত যুদ্ধের
ক্ষেত্রেও শত্রুপক্ষ বা শত্রু দেশের নারী,
শিশু, বৃদ্ধ এবং যারা অস্ত্র হাতে তুলে নেয়নি
তাদের নিরাপত্তা দেবার ঘোষনা করা হয়েছে।
শত্রুপক্ষের লোকদের ক্ষেত্রেই যখন এই
ব্যবস্থা, তখন যারা শত্রু নয় বা বিঘোষিত শত্রু নয়,
তাদের নির্দোষ-নিরপরাধদের উপর হামলা-হত্যা-নির
্যাতনের তো কোন প্রশ্নই ওঠে না!’ আহমদ
মুসা বলল।
‘ধন্যবাদ মি. আহমদ মুসা অন্য এক প্রসংগ। বিষয়টা
অনেকটা ব্যাক্তিগত ধরনের। আপনার জীবনে
অসংখ্য ঘঠনা আছে। অসংখ্য মানুষের সংস্পর্শে
আপনি এসেছেন। এসবের মধ্যে কোন ঘটনা,
কোন ব্যক্তি আপনার জীবনে দাগ কেটেছে
সবচেয়ে বেশি?’ বলল প্রিন্স খালেদ।
আহমদ মুসা হাসল। বলল, ‘এক্সিলেন্সি, আমি আপনার
এই দুই প্রশ্নের জবাব দিতে পারবো না। আমি
অতীতের দিকে ফিরে তাকাই না। কারো সাথে
কারো, কোন ঘটনার সাথে কোন ঘটনার তুলনাও
আমি করি না। আমার দৃষ্টি শুধুই সামনে, সামনে
ওগোতে চাই আমি।’
‘ধন্যবাদ মি. আহমদ মুসা, আপনার এমন জবাবই
স্বাভাবিক। আচ্ছা মি. আহমদ….।’
প্রিন্স খালেদ আল-খালিফার কথার মাঝখানেই তার
ইন্টারকম বেজে উঠল।
কথা বন্ধ করে প্রিন্স খালেদ আল-খালিফা
ইন্টারকমের স্পীকার অন করে নিল।
সালাম দিয়ে ওপার থেকে তার পি.এস. বলল,
‘এক্সিলেন্সি, ড. সালেহ আবদুল্লাহ এসেছেন।’
‘নিয়ে এস তাঁকে।’ বলে ইন্টারকম রেখে দিল
প্রিন্স খালেদ আল-খালিফা। কয়েক মূহুর্ত।
প্রিন্স খালেদ আল-খালিফার পি.এস. ড. সালেহ
আবদুল্লাহকে নিয়ে প্রবেশ করল।
প্রিন্স আবদুল্লাহ আল-খালিফা আহমদ ও আহমদ মুসা
দু’জনেই উঠে এগিয়ে গিয়ে তাকে স্বাগত জানাল।
‘প্রিন্স খালেদ আল-খালিফা আহমদ মুসার সাথে ড.
সালেহ আবদুল্লাহকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলল,
‘ইনি আমাদের সম্মানিত অতিথি। সৌদি আরব থেকে
এসেছেন। একটা বিষয়ে তিনি আপনার সাথে
আলোচনা করতে চান, যে বিষয়ে আপনি
বিশেষজ্ঞ।’ সরাই বসল।
‘আমি শুনেছি, দ্বীপ সংক্রান্ত কিছু বিষয় নিয়ে
আলোচনা করতে চান। কিন্তু এ বিষয়ে সৌদি
আরবের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তো বড়
বিশষজ্ঞ আছেন!’ বলল ড. সালেহ আবদুল্লাহ।
‘স্যার, আমার জরুরি প্রয়োজন।’ সৌদি আরবে গিয়ে
তাঁদের কাছে জানার মত সময় আমার হাতে নেই।
এজন্যেই স্যার আপনাকে কষ্ট দেয়া।’ আহমদ মুসা
বলল বিনীত কন্ঠে।
‘বুঝেছি ইয়ংম্যান! নো ম্যাটার। আমার কথায় আপনার
যদি কোন সাহায্য হয়, তাহলে আমিই বেশি খুশি
হবো।’ বলল ড. সালেহ আবদুল্লাহ।
এই সময় প্রিন্স খালেদ আল-খালিফার পি.এস এসে
তাঁকে জানাল, ‘এক্সিলেন্সি, টেবিলে নাস্তা দেয়া
হয়েছে।’
সংগে সংগেই প্রিন্স খালেদ আল-খালিফা উঠে
দাঁড়াল। বলল, ‘চলুন, চা খেয়ে আসি। তারপর আমরা
কথা বলব। সেটাই ভালো হবে। এই সাথে আমি
আপনাদের জানাচ্ছি, লাঞ্চ না খেয়ে আপনাদের
যেতে দেব না।’
সবাই উঠে দাঁড়াল।বলল ড. সালেহ আবদু্ল্লাহ, ‘আমরা
আর কি করব, হোস্ট যদি আটকান, তাহলে গেস্টরা
যাবেন কি করে? গেস্টের জন্যে যদি ক্ষতিকর
না হয়, তাহলে হোস্টের কথা রাখাই নিয়ম।’
‘ধন্যবাদ, ড. সালেহ আবদুল্লাহ।’
বলে পাশের কক্ষের দিকে হাঁটতে শুরু করল
প্রিন্স খালেদ আল-খালিফা।
সবাই তার সাথে চলল পাশের ঘরে নাস্তার
টেবিলে।
নাস্তা শেষে সবাই ফিরে এল বসার ঘরে।
ড. সালেহ আবদুল্লাহ তার আসনে বসেই বলল,
‘হ্যাঁ মি. ইয়াংম্যান, আপনার নাম কিন্তু জানা হয়নি।’
আহমদ মুসা একবার চোখ তুলে প্রিন্স খালেদ
আল-খালিফার দিকে চাইল। তারপর বলল, ‘স্যার,
আপনার নামের কাছাকাছি। আলী আবদুল্লাহ।’
নিজের নামটি তাকে বলতে পারল না আহমদ মুসা।
কারণ যে বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছে সে বিষয়ের
সাথে আহমদ মুসার নাম যুক্ত হলে এবং কোনভাবে
তা শত্রুপক্ষের কানে গেলে শত্রুরা অনেক
বিষয়ই আঁচ করতে পারবে। আর বাহরাইন বিশ্বের
গুরুত্বপূর্ণ সব গোয়েন্দা সংস্থার জন্য একটা
লোভনীয় স্থান। সুতরাং সতর্কতার প্রয়োজন
মনে করেছে আহমদ মুসা।
‘হ্যাঁ, মি. আলী আবদুল্লাহ। বলুন, আপনি কোন
বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চান।’ বলল ড.
সালেহ আবদুল্লাহ।
‘স্যার, আমি দুনিয়ার ‘অ্যাটল দ্বীপ’ সম্পর্কে
জানতে চাই। দ্বীপগুলোর অবস্থান,
দ্বীপগুলোর প্রকৃতি, এ সবের ব্যবহার কি রকম
ইত্যাদি।’ আহমদ মুসা বলল।
‘হ্যাঁ, ইয়াংম্যান। বিষয়টা আমার সাবজেক্টের মধ্যে।
কিন্তু মুখস্থ কতটুকু বলতে পারবো, সেটা আপনার
কাজে আসবে কি না বলতে পারি না।’
একটু থামল ড. সালেহ আবদুল্লাহ।
শুরু করল পর মুহুর্তেই, ‘অ্যাটল দ্বীপ’ আল্লাহর
এক বিস্ময়কর সৃষ্টি সাগর বক্ষে! সাগরের
গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে সাধারণত কোরাল
রীফ থেকে অ্যাটল দ্বীপের সৃষ্টি হয়।
সমুদ্রে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত ফলে গলিত লাভা
থেকেও অ্যাটল দ্বীপ তৈরী হতে পারে।
অ্যাটল সাগর বক্ষের এমন দ্বীপ যার চারদিক সাগর
সারফেসের উপর জেগে ওঠা মাটির সীমান্ত
দিয়ে ঘেরা। এই ঘেরের মধ্যে থাকে পানি। এই
পানির গভীরতা কম। বিভিন্ন অ্যাটলে গভীরতা
বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। আবার অ্যাটলের
চারদিকের সার্কলিং বা ঘেরটা আংশিকও হতে পারে।
এক বা একাধিক জায়গায় ঘেরে ছেদ থাকায়
অ্যাটলের ভেতরটা সাগরের সাথে উন্মুক্ত
থাকতে পারে।
এই অ্যাটল ধরনের দ্বীপগুলো দেখা যায়
পৃথিবীর গ্রীষ্মমন্ডলীয় ও আধ-গ্রীষ্মমন্ডল
ীয় অঞ্চলে। অক্ষরেখার ২৮ ডিগ্রি ২৪ ইঞ্চি
উত্তরে ও ২৯ ডিগ্রি ৫৮ ইঞ্চি দক্ষিণে কোন
অ্যাটল দ্বীপ নেই। আটলান্টিক মহাসাগরে কোন
অ্যাটল দ্বীপ নেই, ছোট্ট একটা ব্যাতিক্রম ছাড়া।
নিকারাগুয়ার সামনের সাগরে মাত্র আটটি অ্যাটল
দ্বীপ রয়েছে। সব অ্যাটল দ্বীপ ভারত ও
প্রশান্ত মহাসাগরে। ভারত মহাসাগরের অ্যাটল
দ্বীপগুলো মালদ্বীপ, লাক্ষাদ্বীপ ও সাগোজ
দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এর মধ্যে
মালদ্বীপের অ্যাটল দ্বীপগুলোই
উল্লেখযোগ্য। দুনিয়ার সবচেয়ে
উল্লেখযোগ্য ২৬টি অ্যাটল দ্বীপের মধ্যে
৫টি মালদ্বীপে। মালদ্বীপের একটি অ্যাটল
দ্বীপের মধ্যে ২৫৫টি ক্ষুদ্র দ্বীপ আছে।
এই বৈশিষ্টে এটাই পৃথিবীর বৃহত্তম দ্বীপ। ২৬টি
অ্যাটল দ্বীপ রয়েছে ভারত মহাসাগরে। প্রশান্ত
মহাসাগর হলো অ্যাটল দ্বীপের সাম্রাজ্য। প্রশান্ত
মহাসাগরের তোয়ামতু দ্বীপপুঞ্জ, ক্যারেলিন
দ্বীপপুঞ্জ, মাশাল দ্বীপপুঞ্জ, কোরাল সী
দ্বীপপুঞ্জে অ্যাটল দ্বীপের অবস্থান
সবচেয়ে বেশি। প্রশান্ত মহাসাগরে
অ্যাটলগুলোর সংখ্যা, বৈচিত্র্য ও সাইজ সব দিক
দিয়েই শীর্ষে।’ থামল ড. সালেহ আবদুল্লাহ।
‘ধন্যবাদ স্যার। অ্যাটল দ্বীপসমূহের সুন্দর একটা
ধারণা তুলে ধরেছেন আপনি। স্যার, তাহিতি
দ্বীপের আশেপাশে অ্যাটল দ্বীপ আছে কিনা
সে সম্পর্কে কিছু বলুন।’
‘দু’টি দ্বীপ নিয়ে তাহিতি। গোটা তাহিতিই ভলকানিক
দ্বীপ। এর পাশে কোন অ্যাটল দ্বীপ নেই।
কিন্তু তাহিতি থেকে নীল সমুদ্র ধরে কিছু দুর
এগোলেই পলিনেশীয় দ্বীপ সাম্রাজ্যের
পূর্ব বাহুতে পৌঁছে যাওয়া যাবে। এটাই তোয়ামতু
দ্বীপপুঞ্জ। এই তোয়ামতু দ্বীপপুঞ্জের
অধিকাংশ বা গোটা দক্ষিণাংশ অনেক অ্যাটল দ্বীপ
নিয়ে গঠিত। মোট ৭টি দ্বীপ, এর মধ্যে ৭৩টিই
অ্যাটল দ্বীপ। তিনটি দ্বীপ কোরাল। শুধু
দ্বীপপুঞ্জের পশ্চিমাংশে তাহিতির দিকে একটা
মাত্র দ্বীপ প্রকৃত অ্যাটল দ্বীপ।’ বলল ড.
সালেহ আবদুল্লাহ।
‘স্যার, এই অ্যাটল দ্বীপগুলোর কোনটিতে বড়
স্থাপনা গড়ে তোলা সম্ভব কিন, যেখানে বহু
মানুষের থাকার ও কাজ করার জন্য উপযুক্ত?’
জিজ্ঞাসা আহমদ মুসার।
‘স্থাপনার জন্যে ল্যান্ড দরকার হয়, কিন্তু অ্যাটল
দ্বীপগুলোতে ল্যান্ডের অভাবই সবচেয়ে
বেশি। ২০০০ মাইল বিস্তৃত গোটা তুয়ামতু
দ্বীপপুঞ্জে ল্যান্ডের পরিমাণ ৮৮৫ বর্গ
কিলোমিটার মাত্র। আর এই দ্বীপপুঞ্জের
দক্ষিণাংশের ৭৮টি দ্বীপের মধ্যে ৭৩টিই অ্যাটল।
এই ৭৮ টি দ্বীপের মোট লোক সংখ্যাই হলো
মাত্র এক হাজার ছ’শো’র মত। মাত্র কয়েকটি
দ্বীপে জনবসতি আছে। অন্য গুলো খালি।
অন্তত এই দ্বীপপুঞ্জের এই সব অ্যাটলে বড়
কোন স্থাপনা নির্মাণ সম্ভব নয়।’ বলল ড. সালেহ
আবদুল্লাহ।
‘অ্যাটল দ্বীপে ল্যান্ড ছাড়া অন্য কোনভাবে বড়
স্থাপনা নির্মাণ সম্ভব কিনা?’ আহমদ মুসা বলল।
সংগে সংগেই উত্তর দিল না ড. সালেহ আবদুল্লাহ।
সোফায় হেলান দিয়ে বসল। ভাবল একটু। তারপর
বলল, ‘তার মানে গোপন স্থাপনার কথা বলছেন।
অ্যাটলের লেগুন-ফ্লোরের নিচে অথবা
অ্যাটলের কোরাল দেয়ালের ভেতরে কোন
বড় রকমের স্থাপনা নির্মাণ সম্ভব কিনা এই তো?’
আমি এর কোন সম্ভবনা দেখি না। আমি মেরিন
সাইনটিস্ট কিংবা মেরিন ইঞ্জিনিয়ার নই, একজন
ভূগোলবিদ মাত্র। মেরিন সাইনটিস্টরাই এ ব্যাপারে
সঠিক কথা বলতে পারে।
‘ধন্যবাদ স্যার। আরেকটি জিজ্ঞাসা, তোয়ামতুর
অ্যাটল দ্বীপগুলোর মধ্যে নির্জনতা ও
গোপনীয়তার দিক থেকে অগ্রগণ্য কোনটা
হতে পারে?’ বলল আহমদ মুসা।
ড.সালেহ আবদুল্লাহ তাকাল আহমদ মুসার দিকে।
থামল একটু।বলল, ‘আপনি বলতে চাচ্ছেন, কোন
অ্যাটল দ্বীপে বড় কোন গোপন কাজ কেউ
গোপনে করে যেতে পারে কিনা, এইতো?’
আহমদ মুসাও হাসল। বলল, ‘বিষয়টা ও রকমই স্যার।’
‘তোয়ামতু দ্বীপপুঞ্জের অ্যাটল দ্বীপগুলো
সম্পর্কে বলছি। আগেই বলেছি, এখানকার মাত্র
কয়েকটা অ্যাটলে খুব সামান্য লোক বসতি আছে।
অন্য সবই জনবসতিহীন নিরব, নিঝুম দ্বীপ।
দিনের বেলা অল্প কিছু মাছ ধরার কাজ চলে। আর
দ্বীপপুঞ্জের মধ্যাঞ্চলের ফাকারাঙা, তাহানিয়া,
মতুতুংনী, উত্তারাঞ্চলের রাবেহিয়া, নপুকা,
টপোটো, ফাতুহিভা, হিভাওয়া, নকুহিভা এবং ওয়াপু,
বাংগিরোয়া ও মাফতিয়ার মত কিছু দ্বীপ ও অ্যাটলে
পর্যটকদের আবির্ভাব ঘটে দিনের বেল। মধ্য ও
দক্ষিনাঞ্চলের অন্য সব অ্যটল দ্বীপ দিনের
বেলাতেও নিরব-নিঝুম থাকে। আর রাতের বেলা
দ্বীপপুঞ্জের কয়েকটা দ্বীপ ও অ্যাটলে বাতি
জ্বললেও গোটা দ্বীপপুঞ্জের এ অ্যাটলসমূহ
থাকে জমাট অন্ধকারে ঢাকা, নিরব-নি:শব্দ এক
মৃত্যুপুরী যেন! এমন পরিবেশ তো গোপন
কাজেই জন্যেই উপযুক্ত! কিন্তু আমার কথা
মানুষকে কাজ করার জন্যে পায়ের তলায় মাটি চাই,
এস মাটি তো অ্যাটলগুলোতে নেই।’
আহমদ মুসার মুখ উজ্জল হয়ে উঠেছিল। কিছু
প্রশ্নের স্পেসেফিক জবাব না পেলেও
তোয়ামুত দ্বীপপুঞ্জের অ্যাটল রাজ্য
সম্পর্কে একটা সম্পূর্ণ ধারণা সে পেয়ে
গেছে। মূল যে কথাটা সে জানতে চায়, তাহিতি
দ্বীপে বা এই অঞ্চলের অ্যাটল দ্বীপে তা
আছে কিনা, সেটা জানা তার হয়ে গেছে। এখন
তান নিশ্চিত মনে হচ্ছে, তাহিতি বা অ্যাটল
দ্বীপগুলোর কোথাও শয়তানরা আড্ডা
গেড়েছে।
আহমদ মুসা বলল, ‘ধন্যবাদ স্যার। আমি যা জানতে
চেয়েছি, আল-হামদুলিল্লাহ তার চেয়ে বেশি
জানতে পেরেছি। অনেক ধন্যবাদ স্যার,
আপনাকে।’
‘ধন্যবাদ ইয়াংম্যান। কিন্তু এ সব তো কেউ জানতে
চায় না। আপনি কি করবেন এসব দিয়ে? কোন
পেশায় আপনি জড়িত আছেন মি. আবদুল্লাহ?’ বলল
ড. সালেহ আবদুল্লাহ।
হাসল আহমদ মুসা। বলল, ‘স্যার, হাতেম তায়ীর মত
রহস্যের সন্ধান আমার নেশা-পেশা দু’টোই।
যেমন অ্যাটল রাজ্যে যাবার সুযোগ নিতে পারি।’
‘চমৎকার! জীবনকে উপভোগ করার এক উৎকৃষ্ট
পথ। আল্লাহর বিচিত্র সৃষ্টি মানুষ দেখুক, চিন্তা করুক
এবং আল্লাহর সোলতানিয়াত মানুষ উপলদ্ধি করুক, এটা
আল্লাহ চান। আর একটা জিজ্ঞাসা স্যার, আ্যটলের
কোরাল দেয়ালে বা উপরে লেগুনের
ফ্লোরের নিচে কোন স্থাপনা তৈরি করা যায় কিনা,
এ বিষয়ে আমার মতটা বলেছি। কিন্তু কোরাল
রীপগুলো আল্লাহর অপূর্ব সৃষ্টি! অ্যাটলের
দেয়াল কোথাও পিলার আকারেও উঠতে পারে।
আবার কোথাও অ্যাটলের চারদিকের দেয়ালের
ভেতরটা ফাঁকাও থাকতে পারে। কোথাও কোথাও
আবার অ্যাটলের লেভেলের যে ফ্লোর
তাতেও ফাটল থাকতে পারে, হোল থাকতে
পারে, কোন কোন ক্ষেত্রে তা আংশিক হতে
পারে। এ সব বৈচিত্রাকে মেরিন সাইন্স এন্ড
ইঞ্জিনিয়ারিং নানাভাবে ব্যবহার করতেও পারে।’
‘ধন্যবাদ স্যার। অ্যাটল সম্পর্কে এগুলো খুবই
মূল্যবান তথ্য।আমার জিজ্ঞাসার উত্তর এর মধ্যে
আছে। ধন্যবাদ স্যার, আপনাকে।’ আহমদ মুসা বলল।
আহমদ মুসার কথা শেষ হতেই প্রিন্স খালেদ আল-
খালিফা বলল, ‘ধন্যবাদ মি. আবদুল্লাহ, ধন্যবাদ ডক্টর।
আপনাদের প্রশ্নোত্তরে মনে হচ্ছে আমিই
উপকৃত হয়েছি সবচেয় বেশি। অ্যাটল দ্বীপের
নাম জানতাম। কিন্তু অ্যাটল দ্বীপ যে সঠিক অর্থে
দ্বীপ নয় আজই প্রথম জানলাম। অ্যাটল
দ্বীপগুলোর লোকেশন সম্পর্কেও কিছু জানা
ছিল না আমার। তাও জানলাম আজ। এখন দেখতে
ইচ্ছে করছে অ্যাটল এলাকা। কিন্তু একটা বিষয় ….।’
প্রিন্স খালদ আল-খালিফার কথার মাঝখানেই মোবাইল
বেজে উঠল আহমদ মুসার।
থেমে গেল প্রিন্স খালেদ আল-খালিফা।
‘মাফ করবেন!’ বলে মোবাইল তুলে নিল আহমদ
মুসা। স্ক্রিনে দেখল সৌদি নিরাপত্তা প্রধান আল-
সউদের নাম।
সালাম দিয়ে আহমদ মুসা বলল, ‘এক্সিলেন্সি, কেমন
আছেন?’
ওপার থেকে আল-সউদ সালাম নিয়ে বলল, ‘আমরা
সবাই ভাল। আপনি যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন সে
সম্পর্কে জানাবার জন্যে এই টেলিফোন করছি
এবং একটি খারাপ খবরও আপনাকে জানাতে চাই।’
‘বলুন, এক্সিলেন্সি।’ আহমদ মুসা বলল।
‘আপনার কাছ থেকে জানার পরই আমি আমাদের
নৌবাহিনীর হুরমুজ প্রণালী ইউনিটকে জানিয়েছিলাম।
তারা সংগে সংগেই হুরমুজ প্রণালীরর মুখে ছুটে
গিয়েছিল। তারা সেখানে অপেক্ষা করার সঙ্গে
সঙ্গে হুরমুজ প্রণালী কোস্টাল ষ্টেটস
জয়েন্ট অথরিটিং মনিটরিং সার্চ করে। এতে জানতে
পারে তারা হুরমুজ প্রণালীতে পৌঁছার আধা ঘন্টা
আগে আন্ডারওয়াটার জলযান জাতীয় কিছু যান
প্রণালী অতিক্রম করে। অতএব সে মিশনটি ফেল
করেছে। এটাও খারাপ খবর। কিন্তু আরেকটা হুমকি
আমরা পেয়েছি। সেটাকেই আমি খবর বলছিলম।’
‘সে হুমকিটা কি? ওরা হুমকি দিয়েছে?’ জিজ্ঞাসা
আহমদ মুসার।
‘হ্যাঁ, আহমদ মুসা! ওরাই। তারা স্যাটেলাইট ই-
মেইলে জানিয়েছে, তারা কোন প্রতিপক্ষের
অস্তিত্ব বরদাশত করে না। বিজ্ঞানী আবদুল্লাহ
আল মক্কীকে উদ্ধারের চেষ্টা করে
প্রতিপক্ষ হিসাবে দাঁড় করানো হয়েছে। এই
অপরাধে বিজ্ঞানীর সমস্ত রক্ত শুষে নিয়ে
আজ থেকে তৃতীয় মাসের শেষ দিনে তাকে
হত্যা করা হবে। আর তাকে উদ্ধারের আরও যদি
চেষ্টা করা হয়, তাহলে সৌদি আরবের রকেট-
বিজ্ঞানের জনক বিজ্ঞানী ড. আবদুল আজিজ
আল-নজদীকে কিডন্যাপ করা হবে।’বলল আল-
সউদ।
‘এই হুমকিকে আপনারা কিভাবে নিয়েছেন?’ আহমদ
মুসা বলল।
‘একটা ক্রিমিনাল গ্রুপের আত্মরক্ষার একটা কৌশল
হিসাবে।’ বলল আল-সউদ।
‘আপনারা এরপর কি ভাবছেন?’ জিজ্ঞাসা করল আহমদ
মুসা।
‘আমাদের ভাবনা আগের মতই। আমরা চাই আমাদের
বিজ্ঞানী উদ্ধার হোক! ক্রিমিনালরা ধরা পড়ুক এবং
এই ব্যাপারে আমরা আপনার সাহায্য চাই। আমরা আপনার
সাহায্য চাই শুধু আমাদের স্বার্থে নয়, বহু
বিজ্ঞানী-বিশেষজ্ঞকে তারা কিডন্যাপ করেছে,
সবার স্বার্থে। ক্রিমিনালদের এভাবে চলতে দিলে
আরও প্রতিভার তারা সর্বনাশ করবে! এই কঠিন
মিশনের দায়িত্ব আপনি গ্রহণ করুন। আমাদের সবার
ইচ্ছা এটাই।’ বলল আল-সউদ।
‘ধন্যবাদ এক্সিলেন্সি। আমি কতটা পারব সেটা
আল্লাহর সাহায্যার উপর নির্ভর করছে। তবে একটা
কথা বলতে পারি, সামনে আমার এগিয়ে যাবার পথ
বোধ হয় উন্মু্ক্ত হয়ে গেছে!’ আহমদ মুসা
বলল।
‘আল-হামদুলিল্লাহ! আল্লাহর বিশেষ সাহায্য আপনার
সাথে আছে, মি. আহমদ মুসা। আপনার প্রয়োজন
আমাদের জানাবেন। দেশের ভেতর ও বাইরে
সকল জায়গায় আমাদের সহযোগিতা আপনার জন্যে
প্রস্তুত থাকবে।’ বলল আল-সউদ।
‘ধন্যবাদ এক্সিলেন্সি! আসি জনাব।’ আহমদ মুসা
বলল।
‘আপনি সৌদি আরবে ফিরছেন?’ জিজ্ঞাসা আল-
সউদের।
‘এখনও সব কিছু ফাইনাল করিনি। আমি আজই স্ত্রীর
সাথে কথা বলব। তবে সম্ভবত এখন ফেরা হচ্ছে
না।’ আহমদ মুসা বলল।
‘আপনার সব সিদ্ধান্তের সাথে আমরা আছি, আহমদ
মুসা।’ বলল সৌদি নিরাপত্তা প্রধান আল-সউদ।
একটু থেমেই আবার বলে উঠল আল-সউদ,
‘ওকে, মি. আহমদ মুসা আর কিছু?’
‘ধন্যবাদ।’ বলল আহমদ মুসা।
‘আল-হামদুলিল্লাহ! আসসালামু আলায়কুম ওয়া
রহমাতুল্লাহ।’ ওপার থেকে বলল সৌদি নিরাপত্তা প্রধান
আল-সউদ।
ওপার থেকে কল অফ হয়ে গেল।
আহমদ মুসাও সালাম নিয়ে কল অফ করে দিয়েছে।
আহমদ মুসা মোবাইল রেখে দিয়ে ‘স্যরি’ বলে
সকলের দিকে তাকাল।
‘আহমদ মুসা আপনি কি আমাদের মহান বড় ভাই আল-
সউদের সাথে কথা বললেন?’ জিজ্ঞাসা প্রিন্স
খালেদ আল-খালিফার।
‘জি।’ বলল আহমদ মুসা।
‘আপনাদের কথার মধ্যে আমার মনে কিছু কৌতুহল
সৃষ্টি হয়েছে। আমি কি দু’একটা বিষয় জিজ্ঞাসা
করতে পারি?’ ড. সালেহ আবদুল্লাহ বলল।
এক খন্ড হাসি ফুটে উঠল আহমদ মুসার ঠোঁটে।
বলল, ‘অবশ্যই স্যার, বলুন।’
‘কি এক হুমকির কথা শুনলাম। আবার তা আপনার সামনে
উন্মুক্ত হওয়ার কথা শুনলাম। অন্যদিকে আপনার
অ্যাটল দ্বীপ নিয়ে বিশেষ করে একটা
অঞ্চলের অ্যাটল দ্বীপ নিয়ে আপনার আগ্রহ।
ইত্যাদি সব বিষয় মেলালে মনে হচ্ছে, বড় কিছু
একটা ঘটেছে, আপনারা কিছু একটার সন্ধান
করছেন।’
আহমদ মুসা মুহুর্তের জন্যে চোখ তুলে তাকাল
প্রিন্স খালেদ আল-খালিফার দিকে। বলল, ‘আপনি
ঠিকই ধরেছেন স্যার। একটা সন্ত্রাসী গ্রুপকে
খোঁজা হচ্ছে। তাদের কোথায় পাওয়া যেতে
পারে, এব্যাপারে নানা বিকল্প আমাদের সামনে
আসছে। সেগুলো আসছে। সেগুলো ভাবা
হচ্ছে। এটাই ঘটনা স্যার।’
আহমদ মুসা বিজ্ঞানী কিডন্যাপড্ হওয়ার ঘটনা
চেপে গেল।
‘আল্লাহ আপনাদের সফল করুন। সকলেই আমরা
সন্ত্রাসের উচ্ছেদ চাই।’
কথাটা শেষ করেই হাত ঘড়ির দিকে তাকাল প্রিন্স
খালেদ আল-খালিফা। বলল আবার, ‘আমরা এখন
উঠতে পারি। লাঞ্চ রেডি।এখানে সুন্দর একটা
ক্যান্টিন আছে সেখানেই আমরা যাব।’
উঠে দাঁড়াল প্রিন্স খালেদ আল-খালিফা।
‘ধন্যবাদ এক্সিলেন্সি। আজকের লাঞ্চটা একটু
আগাম আমার প্রয়োজন ছিল। আমার আরেকটা
প্রোগ্রাম আছে।’ বলল আহমদ মুসা।
হাসল প্রিন্স খালেদ আল-খালিফা। বলল, ‘কিন্তু তার
আগে আপনার আরও প্রোগ্রাম আছে। আমাদের
মহামান্য সুলতানের সাথে দেখা করা। সে
প্রোগ্রামও হযে গেছে। আমরা লাঞ্চের পরই
সেখানে যাব।’
‘ধন্যবাদ এক্সিলেন্সি, আমি খুশি হব তার সাথে দেখা
করতে পারলে।এটাই আমার কাছে এখন সবচেয়ে
প্রায়োরিটি প্রোগ্রাম।’ বলল আহমদ মুসা।
‘ধন্যবাদ মি. আবদুল্লাহ এই শুভেচ্ছার জন্যে।’
আহমদ মুসাকে লক্ষ্য করে বলল প্রিন্স খালেদ
আল-খালিফা।
সবাই উঠে দাঁড়িয়েছে।
‘থামুন, পাশেই আমার পার্সোনাল লিফট আছে।’
বলে হাঁটতে শুরু করল প্রিন্স খালেদ আল-খালিফা।
তাকে অনুসরণ করল আহমদ মুসারা।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now