বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন
বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

একটি ব্যর্থতার গল্প

"ছোটদের গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান Sayemus Suhan (০ পয়েন্ট)

X যতদূর মনে পড়ে সুমিকে কিস করতে রাজি না হওয়ার পর থেকেই ও আমাকে “সাধু” বলে ডাকে। হয়তো ব্যাপারটা ভালো। কিন্তু প্রথমবার ও যখন আমাকে এই নামে ডাকা শুরু করলো আমি আৎকে উঠেছিলাম। কেন? সেই কথাই লিখতে বসেছি আজকে। কুট্টিকালের কথা- ৯৪/৯৫ সাল। আমাদের পাড়ার সেলিম ভাই ব্যাপক জনপ্রিয় আমাদের শিশু-কিশোরদের মাঝে। বড়রাও বিভিন্ন কাজে সেলিম ভাইকে ডাকেন। কিন্তু আড়ালে-আবডালে চ্যাংড়া পুলাপান আর যুবক বড় ভাইগণ সেলিম ভাইকে “সাধু ভাই” ডাকতো। যেহেতু সেই বয়সে আমাদের দলের সবার মাঝেই একটা ”বড় হয়ে গেছি না !” টাইপ ভাব থাকতো। তাই, সুযোগ পেলে আমরাও আড়ালে-মাড়ালে সেলিম ভাইকে “সাধু ভাই”-ই ডাকতাম। কেন? সেই কথাই লিখতে বসেছি আজকে। ঘটনা হয়তো ছোট্ট। কিন্তু ব্যাপ্তি ছিলো বিশাল। সবেধন নীলমনি সেলিম ভাই সর্বসাকুল্যে বিয়ে করেছেন তিনখানা। তার মধ্যে সর্বশেষ বউটা দেখার সৌভাগ্য হয়েছিলো আমাদের। আগেরগুলোর সময় আমরা এতোই কুট্টি ছিলাম যে, ইয়াদ নাই। তো সেলিম ভাইয়ের সেই সর্বশেষ বউ দেখে আমরা টাস্কিতো হতাম। এতো সুন্দর! পরীর মতো মেয়ে আমাদের বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তো দূরের কথা; শান্তিপাড়া, মোহনা বা পূর্বাশা আবাসিক এলাকাতেও ছিলো না। আমাদের তো ধারণা হয়তো দেশেই ছিলো না। সেই পরীর মতো বউ আবার আমাদের দেখলে কিট কিট করে হাসতো। উনার বাসার পাশ দিয়ে গেলে- হাত ইশারা করে ডাকতো। কাছে গেলেই খপ করে হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতো বাসার ভেতর। তারপর মিষ্টি বা সন্দেশ বা নিদেন পক্ষে একখানা চকোলেট মিলতো। ২. কিন্তু সেই পরীর মতো বউ যখন বাপের বাড়ি যাওয়ার পর আর ফিরে আসলো না তখন সম্ভবত সেলিম ভাইয়ের চেয়ে আমরা ছোট্টরাই বেশি দুঃখিত হয়েছিলাম। ছোট্টবেলার সেই ক্রাশের কথা মনে হলে এখনও বুক মুচড়ে ওঠে! আহা !! ৩. তো এই ছিলো ইতিহাস। যখন সেলিম ভাইয়ের তৃতীয় বউটাও আগের মতোই বাপের বাড়ি গিয়ে আর ফেরত আসলো না, তখন থেকেই সেলিম ভাইয়ের নাম হয়ে গেলো ”সাধু ভাই”। বেচারা। শারিরীক ব্যাপারই তাইলে সব? মেয়ে মানুষ কিছুই বুঝে না। কিন্তু বড় হয়ে জানতে পারলাম, সব না হলেও এটা একটা বড় ব্যাপার। হুমায়ুন আজাদের “ফালি ফালি করে কাটা চাঁদ” পড়ে ব্যাপারটা আরও ক্লিয়ার হয়েছিলো। অনন্তর আমি তা এখনও উপলব্ধি করি, বিশ্বাস করি, মানি। ৪. তো এই যখন অবস্থা। তখন সুমির সাধু ডাকা শুরু হওয়ার পর আমার তো টেনশান লাগার কথাই। কেননা, তখনও ব্যাপারটা প্রমাণ করার সুযোগ হয়নি। :v তাই আমি জানতে চাইলাম- তুই কী মনে করে সাধু ডাকা শুরু করলি? তোর সমস্যা কি? সুমি মুখ ভেংচে জানালো- সমস্যা আমার কোথায়? সমস্যা তো তোর! এবার আমি ভয় পেয়ে গেলাম সত্যি- বলছিস কি গাধা! আমার সমস্যা সেটা তুই টের পাইলি কেমতে? মুখ ঝামটা দিয়ে সুমি বললো- টের পাওয়ার কী আছে? সামান্য একটা কিস দিতেও তোর সমস্যা। তাও ফেস-টু-ফেস নয়, ফোনে একটা কিস দিতেও তোর সমস্যা? তো তরে ”সাধু বাবা” ডাকবো না তো কি ডাকবো? আমি মুখ ফ্যাকাশে করে বললাম- আগেরটাই তো ভালো ছিলো- সাধু। এখন যে আবার চেঞ্জ করে একেবারে বাবা ডাকা শুরু করলি? ৫. তারপর ১০ বছর পরের কথা- সুমির বিয়ে হয়ে গেছে তিন বছর হলো। স্বামী সংসার পোলাপান নিয়ে গুলশান থাকে। ঈদের মার্কেট করতে মালয়শিয়া যায়। হানিমুন করতে আগ্রা, পাতায়ার বিমানে চড়ে। আর আমি এখনও ছেড়া স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াই। পাবলিক বাসে চড়তে ইচ্ছে করে না বলে হেঁটে হেঁটে ঢাকার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে যাই। রিক্সা কিংবা সিনএনজিতে চড়ার পয়সা সাধারণত পকেটে থাকে না। কিংবা থাকলেও সারা মাস চলবো কীভাবে ভাবতে ভাবতে আর সেসবে চড়া হয় না। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হই। গরমে অতীষ্ঠ হই। ঘামে বিরক্ত হই। তারপর একেবারে সহ্য করতে না পারলে কোনো একটা ক্লিনিকে ঢুকে যাই। তারপর যে ডাক্তারের সিরিয়াল সবচেয়ে বড় উনার একটা সিরিয়াল নিয়ে আরামদায়ক একটা চেয়ারে পা ছড়িয়ে বসে পড়ি। এসিযুক্ত ডাক্তারের ওয়েটিং রুমে ঘণ্টা দুয়েকের জন্য বেশ ভালো একটা ঘুম হয়। ঘুম থেকে জাগার পর শরীরটা ঝরঝরে লাগে। পেটে তখন প্রচণ্ড ক্ষিদে থাকার কারণে মাথাটা হালকা অনুভব করি। ওয়েটিং রুম থেকে বের হয়ে সস্তা কোনো হোটেলে বসে গরম ভাত, আলু ভর্তা, পাতলা ডাল আর ডিম ভাজি দিয়ে ভাত খেতে খেতে ভাবি- লাইফ ইজ নট সু ব্যাড। ———————— বি:দ্র: যেসব বন্ধুরা আমার লেখাগুলোর পরের কাহিনী জানতে খুবই আগ্রহী বোধ করেন, এবারের লেখাটা তাদের জন্য উৎসর্গ করেই লেখা হলো পরের কাহিনীসহ। কিন্তু জানি আমি, আপনারা হতাশ হয়েছেন পরের কাহিনী জেনে। মানুষ হিসেবে আমাদের অনেক সফলতা থাকলেও বেশ কিছু ছোট ছোট প্রবলেম আছে। তার মধ্যে যেটা অগ্রগণ্য সেটা হচ্ছে- আমরা ব্যর্থতার গল্প পছন্দ করি না। সবসময় সফলতার গল্প চাই আমরা। কিন্তু বাস্তবতা কি সেটা? হৃদয়ের চাওয়া তো আকাশের চাঁদ, কিন্তু বাস্তবতা বলে- সেটা কখনোই সম্ভব নয়। সবাইকে ধন্যবাদ কষ্ট করে ব্যর্থতার গল্পটা পড়ার জন্য।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২০৯৬৮ জন


এ জাতীয় গল্প

→ একটি ব্যর্থতার গল্প
→ একটি ব্যর্থতার গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now