বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
মহাত্মা বিদ্যাসাগর উপন্যাসটির বিশাল অংশ জুড়ে আছেন। ফোর্ট উইলিয়ামের বাংলা শিক্ষক, সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ বিদ্যাসাগরের জীবনী ও আদর্শ তুলে ধরাও যেন সুনীলের একটি বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল। মহাত্মা রাজা রামমোহন রায় কর্তৃক সতীদাহপ্রথা রহিত হওয়ার পর হিন্দু ব্রাহ্মণদের একাধিক বিবাহের কুফলস্বরূপ সমাজে বহু বিধবা সৃষ্ট হওয়ায় তা বিদ্যাসাগরকে মারাত্মকভাবে আহত করে। তাই শাস্ত্র ঘেঁটে ঘেঁটে ‘বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব’ নামক একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন যা তৎকালীন হিন্দুসমাজের মর্মমূলে আঘাত করে। কট্টরপন্থী হিন্দুরা বিদ্যাসাগরকে হেনস্থা করার জন্য বিভিন্নভাবে উঠে-পড়ে লাগে। তবু বিদ্যাসাগর ক্ষান্ত হননি, নিজ উদ্যোগে ও নিজ অর্থব্যয়ে তিনি বেশ কিছু বিধবার বিবাহ দিয়েছিলেন। তার এই উদ্যোগে আকৃষ্ট হয়ে তরুণ নবীনকুমার প্রত্যেক বিবাহে এক হাজার টাকা দেয়ার প্রতিজ্ঞা করেন। অনেকের সাথে মিশলেও বিদ্যাসাগরকেই নবীনকুমারের আদর্শস্থানীয় মনে হওয়ায় গুরুর আসনে বসান। বিদ্যাসাগর নবীনকুমারকে মাঝে মাঝে কৃতকর্মের জন্য ভর্ৎসনা করলেও তাকে খুবই স্নেহ করতেন। বিশ্বাস করতেন বলেই নবীনকুমারের কাঁধে মহাভারতের বঙ্গানুবাদের সমস্ত দায়িত্ব তুলে দেন এবং সে-ও এই গুরুদায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করেন। নবীন বিধবা বিবাহ করার জন্য কুসুমকুমারীকে বিয়ে করতে চাইলে বিদ্যাসাগর একাধিক বিয়েকে গর্হিত বলায় নবীন সে পথ থেকে সরে আসেন এবং বহুবিবাহ রোধ করার জন্য পদক্ষেপ নেন । তাছাড়া নবীনের প্রত্যেকটি সৃজনশীল ও গঠনমূলক কাজে বিদ্যাসাগর কেবল উৎসাহই যোগাননি, তা তত্ত্বাবধানও করেছিলেন। এমনকি নবীনের মুমূর্ষু অবস্থায়ও তাঁকে দেখার জন্য নিজে অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও ছুটে আসেন। আর এভাবেই বিদ্যাসাগর ও নবীনকুমার পুরো উপন্যাস জুড়ে গুরু-শিষ্য রূপে বিরাজমান থাকেন।রাইমোহন ঘোষাল চরিত্রটি উপন্যাসটির আরেকটি উল্লেখযোগ্য চরিত্র। এই চরিত্রটি সুনীল অত্যন্ত দরদ দিয়ে এঁকেছেন। সেই সময়ের ভদ্র সমাজের ভদ্রলোকদের চরিত্রের নগ্নরূপটি আঁকতে গিয়ে তিনি এ-চরিত্রটিকে ব্যবহার করেছেন। রাইমোহন যেন এ-সমাজের নষ্ট চরিত্রকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। মধুর গন্ধ পেলে মাছি যেমন খবর পেয়ে যায়, রাইমোহনও টাকার আভাস পেলে সেখানে মুহূর্তে উপস্থিত। স্বর্ণকার গোপী স্যাকরার কাছ থেকে নিজের পাওনা আদায়ের জন্য আমরা তাকে যেমন বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতে দেখি, আবার রামকমল সিংহ, হীরে বুলবুল, কমলা সুন্দরী, হরিশ মুকুজ্যে, এমনকি নবীনকুমারের বিদ্যোৎসাহিনী সভায়ও তাকে আনাগোনা করতে দেখি। অন্যদিকে মানবতাবোধ, সংগীতপ্রিয়তাও তার মধ্যে পরিদৃষ্ট হয়। হীরে বুলবুলের পিতৃপরিচয়হীন শিশু চন্দ্রনাথকে নিজ সন্তান পরিচয় দিয়ে শিক্ষা-দীক্ষার মাধ্যমে ভদ্রসমাজে প্রতিষ্ঠিত করতেও তাকে আপ্রাণ চেষ্টা করতে দেখা যায়। তবে একটা রাগ সে মনে মনে দীর্ঘদিন পুষে রেখেছিল এবং তা রামকমল সিংহের উপপতœী কমলা সুন্দরীর প্রতি, কারণ সে কখনও রাইমোহনকে আসকারা দেয়নি। তাই হরিশ মুখুজ্যের সাথে নবীনকুমার যখন মুলুকচাঁদের আখড়ায় সুরাপান ও বাঈজীদের নাচ দেখতে যেত, সেখান থেকে ফুঁসলিয়ে তার বাবার রক্ষিতা কমলাসুন্দরীর বাড়িতে নিয়ে আসে এবং এ-খবরটি বিধুশেখরের কানে পর্যন্ত পৌঁছায়।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now