বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
জ্বলে উঠল আহমদ মুসার চোখ। কিন্তু পরক্ষণেই ঠাণ্ডা হয়ে গেল তার চেহারা।
আহমদ মুসা তাকাল খাল্লিকান খাচিপের দিকে। বলল, ‘প্লিজ আপনি একটা কম্পিউটার আনতে বলুন এখানে। দেখি মি. মালিক কথা না বললেও তার কম্পিটার কথা বলে কিনা।’
ডিপি খাল্লিকান খাচিপ ইন্টারকমে নির্দেশ দিল কম্পিউটার সেকশন থেকে সেকশনের রিসার্চ ইঞ্জিনিয়ারকে একটা কম্পিউটার নিয়ে এখানে আসতে।
পাঁচ মিনিটের মধ্যেই একজন তরুণ কম্পিউটার এনে সেট করল।
খাল্লিকান খাচিপ তরুণকে দেখিয়ে বলল, ‘সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এই ছেলেটি আমাদের কম্পিউটার উইং দেখাশুনা করে। সে আপনাকে সাহায্য করতে পারবে।’
‘ধন্যবাদ’ বলে আহমদ মুসা পকেট থেকে কম্পিউটারের একটা হার্ড ডিস্ক বের করে ছেলেটির হাতে দিয়ে বলল, ‘এই হার্ড ডিস্কটি সেট করে ফাইলগুলো ওপেন করো।’
‘সিওর স্যার!’ বলে তরুণটি কাজে লেগে গেল।
আহমদ মুসা, খল্লিকান খাচিপ, এমনকি মালিক মেরারী মালুসও তাকিয়ে আছে কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে। কিছুক্ষণ কাজ করার পর ইঞ্জিনিয়ার ছেলেটি আহমদ মুসার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘স্যার, মাত্র তিনটা উইনডো এবং তিনটা ফাইল দেখা যাচ্ছে। একটি ফাইল রেস্টুরেন্টের হিসাব-নিকাশ এবং দৈনন্দিন জমা-খরচ। দ্বিতীয় ফাইল একটি আঙুর বাগানের বিনিয়োগ, উৎপাদন ও বিক্রয় বিষয়ক। আর তৃতীয় ফাইলটা বিভিন্ন ব্যাংকের একটা পার্সোনাল একাউন্টের বিবরণী। এছাড়া আর কিছু নেই, সবটাই ফাঁকা।’
‘‘সবটাই ফাঁকা’ না ‘অন্ধকার’?’ জিজ্ঞাসা আহমদ মুসার।
‘স্যরি স্যার, অন্ধকার বলাই এ্যাপ্রোপ্রিয়েট। কারণ অবশিষ্টাংশের কোন দৃশ্যপট আমাদের সামনে নেই।’
‘আচ্ছা বলত, এমন কি হতে পারে যে, এই হার্ড ডিস্কে আরও উইন্ডো আছে, ফাইল আছে, কিন্তু তুমি দেখতে পাচ্ছ না?’ বলল আহমদ মুসা।
‘এমনটা স্বাভাবিক নয় স্যার। গোপন ফাইল থাকলেও তার কোন না কোন একটা নাম পাওয়া যাবে। সে ফাইল খোলা যাবে না, কিন্তু সে ফাইলের নাম বা কোন সংকেত হার্ড ডিস্কে পাওয়া যাবে অবশ্যই।’ ইঞ্জিনিয়ার ছেলেটি বলল।
‘আচ্ছা হার্ড ডিস্কের কোন অংশ ডিজাবল করা যায় কিনা সাময়িক ভাবে?’ জিজ্ঞাসা আহমদ মুসার।
‘সেটা করা যেতে পারে। কিন্তু সেক্ষেত্রে তার জন্যে একটা প্রোগ্রাম বা ফাইল থাকবে। সে রকম কিছু দেখা যাচ্ছে না।’ বলল ইঞ্জিনিয়ার ছেলেটি।
আহমদ মুসা কোন কথা বলল না। ভাবনার একটা ছাপ ফুটে উঠল তার চোখে-মুখে।
চেয়ারে সোজা হয়ে বসল আহমদ মুসা।
বলল, ‘ইঞ্জিনিয়ার, তুমি কম্পিউটার থেকে ডিস্ক খুলে নাও।’
ইঞ্জিনিয়ার ছেলেটা কম্পিউটার থেকে ডিস্ক খুলে নিল।
‘ইঞ্জিনিয়ার, তুমি দেখ ডিস্কের কোন অংশে কোথাও টাচ বাটন আছে কিনা যা অন/অফ- এর কাজে ব্যবহার হতে পারে।’ বলল আহমদ মুসা তরুণ ইঞ্জিনিয়ারকে লক্ষ্য করে।
অনেকটা সময় ধরে পরীক্ষা করল ডিস্কটিকে তরুণ ইঞ্জিনিয়ার। এক সময় তার চোখ দু’টি উজ্জ্বল হয়ে উঠল আনন্দে। বলল সে আনন্দের সাথে, ‘ক্যামোফ্লেজড একটা টাচ বাটন পাওয়া গেছে। মনে হয় এটাই সেই বাটন যা আপনি খুঁজছেন।’
‘ধন্যবাদ ইঞ্জিনিয়ার। বাটনটির রং কী ইঞ্জিনিয়ার?’ জিজ্ঞাসা আহমদ মুসার।
‘ধুসর।’ বলল ইঞ্জিনিয়ার।
‘ধুসর মানে ডাস্টি, ক্লাউডি। এটা নেতিবাচক শব্দ। অর্থাৎ কোন কিছু বন্ধ বা অফ থাকার ইংগিতবাহী। এখন বাটনটাকে টাচ বা প্রেস করে দেখতো বাটনটা স্বচ্ছ হয়ে উঠে কিনা।’ আহমদ মুসা বলল।
ইঞ্জিনিয়ার ছেলেটি বাটনটি টাচ করেই আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল। বলল, ‘স্যার, বাটনটি স্বচ্ছ-ট্রান্সপারেন্ট হয়ে উঠেছে।’
‘আলহামদুলিল্লাহ্। এখন ইঞ্জিনিয়ার তুমি ডিস্কটি আবার কম্পিউটারে সেট করো।’ আহমদ মুসা বলল।
ইঞ্জিনিয়ার ছেলেটি হার্ড ডিস্কটি কম্পিউটারে সেট করেই সোৎসাহে বলে উঠল, ‘স্যার, নতুন উইন্ডো ওপেন হয়েছে। উইন্ডোটির নাম স্যার ‘আশার’ (Asher)।’
‘আশার (Asher)? ওটা হিব্রু শব্দ, অর্থ ‘ভাগ্যবান’ বা ‘আশীর্বাদপ্রাপ্ত’।’ আহমদ মুসা বলল।
কিন্তু উইন্ডো ওপেন করতে গিয়ে ইঞ্জিনিয়ার ছেলেটি মন খারাপ করে বলল, ‘উইন্ডো ওপেনের জন্যে কম্পিউটার ‘পাসওয়ার্ড’ চাচ্ছে।’
আহমদ মুসা তাকাল মালিক মেরারী মালুসের দিকে। বলল, ‘তোমার গোপন উইন্ডো আমরা আবিষ্কার করেছি। এখন এর ‘পাসওয়ার্ডটা’ বল।’
মালিক মেরারী আগের মতই নিরব রইল। কম্পিউটারের দিক থেকে চোখটা সে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিল।
আবারও আহমদ মুসার চোখটা জ্বলে উঠল। বলল, ‘তোমাকে কথা বলাতে জানি মি. মালিক। কিন্তু তুমি আহত। একজন আহতের উপর আঘাত করার মত নির্দয় আমরা নই। কিন্তু আহতের আচরণ যদি আগ্রাসী, বেয়াদব বা বিদ্রোহাত্মক হয়ে ওঠে, তাহলে কিন্তু সে আর আহতের মর্যাদা পাবে না।’
বলেই আহমদ মুসা তাকাল খাল্লিকান খাচিপের দিকে। বলল, ‘ভাবুন তো পাসওয়ার্ডটা ওরা কী রাখতে পারে।’
‘বড় কঠিন বিষয় মি. আবু আহমদ। দেখছি মানুষ হিসাবেও ওরা ভীষণ জটিল। আমরা ওকে মুসলমান বলেই জানতাম। তার রেস্টুরেন্ট, বগান সর্বত্রই আরবী ও কুরানিক কোটেশনের ছড়াছড়ি। এখন দেখছি বেটা পাঁড় ইহুদি।’ বলল ডিপি খাল্লিকান খাচিপ।
‘আপনারা খেয়াল করেননি অফিসার। ওর নামের ‘মালিক’ শব্দটাই শুধু আরবী। পরবর্তী ‘মেরারী’ ও ‘মালুস’ দুই শব্দই হিব্রু। যাক এবিষয়, এখন আমাদের দরকার আশার ইউন্ডোর ‘পাসওয়ার্ড’।’
বলে আহমদ মুসা চেয়ারে গা এলিয়ে দিল। চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ ভাবল। কয়েক মুহুর্ত পর চোখ খুলে মালিক মেরারীর দিকে চেয়ে বলল, ‘আপনি উইন্ডো বা ফাইলের নাম রেখেছেন ভাগ্যবান বা আশীর্বাদপ্রাপ্ত। তাহলে পাসওয়ার্ডটা হয় নিশ্চয় এর সাথে রিলেটেড এবং সেটা নাম বাচক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আচ্ছা, সে নাম বাচক শব্দ আপনাদের দলের নাম নয় তো!’
বলে তাকাল আহমদ মুসা ইঞ্জিনিয়ার ছেলেটার দিকে। বলল, ‘তুমি পাসওয়ার্ডের জায়গায় টাইপ কর ‘SOHA-HAG’। এটা ওদের দুই সংগঠনের যৌথ নাম। ক্লিক করে দেখ কী রেজাল্ট আসে।’
ছেলেটি ক্লিক্ করে হতাশ চোখে তাকাল আহমদ মুসার দিকে। বলল, ‘স্যার, কম্পিউটার রিজেক্ট করছে।’
‘কী আর করা যাবে। ও. কে.।’
বলে আহমদ মুসা তাকাল মালিকের দিকে। বলল, ‘তোমাদের কাছে আশীর্বাদপ্রাপ্ত কী, আর্মেনিয়া না ইয়েরেভেন? আপনারা বলে থাকেন, বন্যার পানি নেমে গেলে হযরত নূহ আ. ‘কিস্তি’ থেকে প্রথমে আর্মেনিয়ার রাজধানী ইয়েরেভেনকে দেখতে পান। তাই ইয়েরেভেন আপনাদের কাছে বিশেষ আশীর্বাদপুষ্ট বলেই বিশেষ আনন্দ ও বিজয়ের প্রতীক।’
মালিক মেরারী মেলুসের চোখে-মুখে কোন প্রতিক্রিয়া নেই, তাই দুই চোখও সে বন্ধ রেখেছে।
আহমদ মুসার মুখে হাসি ফুটে উঠল। করুণার হাসি। বলল ইঞ্জিনিয়ার ছেলেটাকে, ‘তুমি ইয়েরেভেন টাইপ কর। দেখ কম্পিউটার কী বলে।’
ইঞ্জিনিয়ার ছেলেটি ‘ইয়েরেভেন’ টাইপ করে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল। কম্পিউটার প্রত্যাখ্যান করেছে।
আহমদ মুসা ইঞ্জিনিয়ার ছেলেটার মুখ দেখেই বুঝল, তাদের এ চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। বলল, ‘অভিজ্ঞতা তোমার কম ইঞ্জিনিয়ার। তাই উদ্বিগ্ন হচ্ছো। উদ্বেগের কিছু নেই। রক্ত-মাংসের জীবন্ত কম্পিউটার তো আমাদের হাতেই রয়েছে। এ কম্পিউটার থেকে কথা বের করতে ‘পাসওয়ার্ড’ লাগবে না, লাগবে শয়তানদের ঠিক করার যন্ত্র।’
কথা শেষ করেই আবার ফিরল মালিক মেরারীর দিকে। বলল, ‘পূর্ব আনাতোলিয়ায় আপনাদের কাছে সবচেয়ে আশীর্বাদ প্রাপ্ত কী? প্লাবনের পর নূহ আ.- এর কিস্তি নোঙর করেছিল মাউন্ট আরারাতে। এই মাউন্ট আরারাতেই হযরত নূহ আ. পা রেখেছিলেন কিন্তি থেকে নামার পর। আর্মেনিয়া, ইয়েরেভেন নয়, মাউন্ট আরারাতই তাহলে আপনাদের কাছে সবচেয়ে বেশি আশীর্বাদপ্রাপ্ত, পবিত্র স্থান। ও এই কারণে আপনারা আপনাদের গায়ে মাউন্ট আরারাতের উল্কিও পরেন! কথাটা আমার আগে মনে হয়নি কেন!’
আহমদ মুসা একটু থেমে আবার বলে উঠল ‘ইঞ্জিনিয়ার, এবার ‘আরারাত’কে পাসওয়ার্ড বানাও।’
‘স্যার, এটাই কিন্তু লাস্ট অপশন। এবার ব্যর্থ হলে গোপন উইন্ডো দেখা আর হবে না।’ বলল ইঞ্জিনিয়ার ছেলেটি উদ্বিগ্ন কণ্ঠে।
‘চিন্তা নেই, তুরুপের তাস এবার হয়তো পেয়ে গেছি। ভয় করছ কেন, বলেছি তো জীবন্ত কম্পিউটার আমাদের হাতে আছে।’ আহমদ মুসা বলল।
ওদিকে শুয়ে পড়েছে মালিক মেরারী মালুস। প্রথম বারের মত তাকে উদ্বিগ্ন মনে হচ্ছে। তার চোখে-মুখে অস্থিরতা।
ইঞ্জিনিয়ার ছেলেটি ‘আরারাত’ টাইপ করার পর ক্লিক করেই আনন্দে চিৎকার করে উঠল, ‘আল্লাহু আকবার!’
খাল্লিকান খাচিপও আনন্দে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। বলল চিৎকার করে, ‘স্যার, আমার সাধ্যের মধ্যে থাকলে মিরাকল মেধার জন্যে আপনাকে আমি নোবেল পুরস্কার দিতাম।’
‘নোবেল নয় আমি বেহেশত পুরস্কার চাই মি. খাচিপ। যাক ইঞ্জিনিয়ার। তুমি শোন, এবার গোপন উইন্ডোর সবগুলো ফাইল ওপেন করো।’
বলে আহমদ মুসা চেয়ার টেনে নিয়ে ইঞ্জিনিয়ার ছেলেটির পাশে বসল।
প্রথম ফাইলটার নাম দেখে চমকে উঠল আহমদ মুসা। ফাইলটির নাম: ‘সোর্ড অব গড: ফাইনাল সলিউশন।’ ফাইলটার নামের মধ্যেই হিংস্রতার উৎকট গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এই হিংস্রতার টার্গেট কে কিংবা কী?
আহমদ মুসার এই ভাবনার মধ্যেই ফাইলটির প্রথম পাতা খুলে গেল।
প্রথম পাতায় একটা শিরোনাম, ‘OS: Sword.’
শিরোনামের নিচে পূর্ণ পৃষ্ঠা প্রো-ফর্মায় তৈরী ডিজিটাল স্টেটমেন্টের মত কিছু।
‘এখানেই রাখ, পাতাটা দেখে নেই, কী আছে এতে।’
বলে আহমদ মুসা মনোযোগ দিল প্রো-ফর্মার দিকে।
ভার্টিক্যাল দিক থেকে মাত্র তিনটি কলাম। প্রথম কলাম ‘নাম’, দ্বিতীয় কলাম ‘সোর্ডস’ এবং তৃতীয় কলাম ‘টার্গেট’। নামের ঘরে হোরাইজেন্টালি আঁকা ২৪টি লাইনে এক থেকে ২৪টি নাম্বার সিরিয়ালি বসানো। ‘সোর্ডস’- এর ঘরে নামের ঘরে বসানো প্রতি নাম্বারের বিপরীতে লিখা দুই অথবা তিনটি করে ইংরেজী বর্ণ ক্যাপিটাল লেটারে। আর ‘নাম’ ও ‘সোর্ডস’ বরাবর ‘টার্গেট’- এর ঘরে ডিজিটাল অংশ বসানো হয়েছে ভগ্নাংশের আকারে। যেমন প্রথম নাম নাম্বার ‘১’ এরপর ‘সোর্ডস’- এর ঘরে লিখা ‘২’। তারপরেই টার্গেট এর ঘরে লিখা ১০০০- এর উপরে পঁচিশ অর্থাৎ পঁচিশ বাই এক হাজার। টার্গেটের ২৪টি ঘরে কোথাও ১০ বাই ৫০০, কোথাও ১০০ বাই ৫০০০, ইত্যাদি লিখা।
আহমদ মুসা নিশ্চিত যে, এটা একটা পরিকল্পনা, ধাঁধাঁর আড়ালে রাখা হয়েছে।
‘পরবর্তী পেজে যাও ইঞ্জিনিয়ার।’ বলল আহমদ মুসা।
দ্বিতীয় পাতা ওপেন করল ইঞ্জিনিয়ার ছেলেটি।
দ্বিতীয় পাতাটির উপর চোখ পড়তেই আহমদ মুসার চোখ দু’টি উজ্জল হয়ে উঠল। দেখল, এটা সেই রহস্যপূর্ণ ছক যেটা তার কাছে আছে। পূর্ণ পৃষ্ঠার নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় কালো বৃত্ত। কালো বৃত্তের মধ্যে নাম্বার। আর কোন বৃত্তের এক পাশে একটি রেড ডট, কোথায় দু’পাশে দুইটি রেড ডট। এভাবে কোথাও তিন পাশে তিনটি, কোথাও চার পাশে চারটি রেড ডট।
‘ইঞ্জিনিয়ার, তুমি ছোট কালো বৃত্তগুলোর নাম্বার সিরিয়ালি গুণে দেখ, বৃত্তের সংখ্যা এবং তার নাম্বারের সংখ্যা এক সমান কিনা।’
দশ সেকেন্ডের মধ্যেই ইঞ্জিনিয়ার ছেলেটা আহমদ মুসাকে বলল, ‘স্যার, কালো বৃত্ত এবং নাম্বারের সংখ্যা সমান।’
‘তার মানে কালো বৃত্তগুলোর নাম হলো ঐ নাম্বারগুলো। বৃত্তগুলো তাহলে কী?’
বলে আহমদ মুসা তাকাল কালো বৃত্তগুলোর অবস্থানের দিকে।
গভীর ভাবনার চিহ্ন আহমদ মুসার চোখে মুখে। বলল সে ইঞ্জিনিয়ার ছেলেটাকে, ‘তুমি পূর্ব আনাতোলিয়ার একটা মানচিত্র সামনে আন।’
সংগে সংগেই পূর্ব আনাতোলিয়ার মানচিত্র কম্পিউটার স্ক্রিনে নিয়ে এল।
‘ইঞ্জিনিয়ার, মি. খাল্লিকান খাচিপ, দেখুন কালো বৃত্তগুলোকে পূর্ব আনাতোলিয়া বিশেষ করে পূর্ব প্রান্তের প্রদেশগুলোর উল্লেখযোগ্য স্থান বা শহরগুলোর অবস্থানের সাথে মেলানো যায় কিনা।’ বলল আহমদ মুসা।
কিছুটা সময় মিলিয়ে দেখার পর খাল্লিকান খাচিপ বলল, ‘স্যার, কারসের কয়েকটি, আগ্রির কয়েকটিসহ ইজদির প্রদেশের ২৪টি শহরের সাথে কালো বৃত্তের অবস্থান হুবহু মিলে গেছে।’
‘আল্-হামদুলিল্লাহ্। প্রথম কলামের রহস্য উদ্ধারে আমরা সফল। নাম অর্থাৎ জায়গার নাম আমরা পেয়ে গেছি। এখন দ্বিতীয় কলাম দেখুন। কলামের ‘সোর্ডস’ মানে ‘তরবারী’ বা ‘আর্মস’। এই ‘তরবারী’ বা ‘আর্মস’- এর কাছাকাছি আর কি হতে পারে? এর অর্থ বের হবার উপরই নির্ভর করছে ডাবল বা ট্রিপল ইংরেজি বর্ণগুলোর অর্থ কী!’ আহমদ মুসা থামল।
অন্য সবাই নিরব। ভাবছিল আহমদ মুসা। ভাবছিল সবাই।
আহমদ মুসা কথা বলল আবার। বলল, ‘সোর্ড বা অস্ত্র যারা চালায় তারাও এক অর্থে সোর্ড বা অস্ত্র। বরং তারাই প্রকৃত সোর্ড বা অস্ত্র। এই অর্থ গ্রহণ করার পর পরিষ্কার হয়ে যায় যে, ডাবল বা ট্রিপল বর্ণের যে গুচ্ছ রয়েছে তা এক একটি করে নাম। তবে বর্ণগুচ্ছের সংকেত থেকে নাম উদ্ধারের সাধ্য আমাদের নেই।’ বলে আহমদ মুসা থামল আবার একটু।
তার মুখ আনন্দে উজ্জ্বল। মনে মনে সে বলল, নামগুলো নিশ্চিতভাবে তাদের বাহিনীর অফিসারদের হবে। যেমন মাউন্ট আরারাত পয়েন্টে কর্নেল মোস্তফা ছিল। তার সাথে নিশ্চয় আরও একজন কেউ আছে। কারণ মাউন্ট আরারাতে পয়েন্টে বর্ণের দু’টি গুচ্ছ। একটিতে MM, অন্য গুচ্ছটিতে AB, প্রথমটির অর্থ হলো মোস্তফা মিকাহ্- এই দুই শব্দের আদ্যাক্ষর। AB হবে নিশ্চয় অন্য দুই শব্দের আদ্যাক্ষর। সুতরাং স্থানের নামের সাথে এই ‘বর্ণগুচ্ছ’ আর্মি হেডকোয়ার্টারে পাঠালে কয়েক মিনিটের মধ্যেই এদের নাম জানা যাবে। এ-নিয়ে তেমন চিন্তা নেই। এখন বের করতে হবে তৃতীয় কলাম ‘টার্গেট’- এর অর্থ।
আহমদ মুসা কথা বলার জন্যে মুখ খুলতে যাচ্ছিল, তার আগেই কথা বলে উঠল ডিপি খাল্লিকান খাচিপ। বলল, ‘স্যার, আপনি নিরব হওয়া ভয়ের কথা। আমরা কি সামনে এগুতে পারছি না?’
‘আল্লাহ্ কারো পথ বন্ধ করেন না, যদি সে চেষ্টা করে সামনে এগোবার। আমরা চেষ্টা বাদ দেইনি। এখন আসুন আমরা তৃতীয় কলাম দেখি। তৃতীয় কলাম- এর ‘টার্গেট’ এর অর্থ আমরা সকলেই জানি যে, লক্ষ্যবস্তু। কিসের লক্ষ্যবস্তু বলুন তো?’ একটু থামল আহমদ মুসা।
‘কলাম’- এর দিক থেকে বোঝা যাচ্ছে লক্ষ্যবস্তুটা হলো ‘সোর্ড’- এর।’ বলর খাল্লিকান খাচিপ।
‘ধন্যবাদ অফিসার। এর পরের প্রশ্ন হলো। ‘সোর্ড’ হলো ঘাতক অস্ত্র। এর লক্ষ্যবস্তুর উপযুক্ত নাম কি হতে পারে?’
একটু থামল আহমদ মুসা। সবাই নিরব।
আহমদ মুসাই কথা বলল আবার, ‘সোর্ড-এর লক্ষ্যবস্তুর উপযুক্ত নাম হতে পারে ‘ভিকটিম’। সুতরাং…।’
‘ঠিক বলেছেন স্যার। ধন্যবাদ আপনাকে। এ সহজ বিষয়টা আমার মাথায় আসেনি।’ বলর ডিপি খাল্লিকান খাচিপ।
‘থ্যাংকস আফিসার। ‘সোর্ডস’- এর লক্ষ্যবস্তু যদি ‘ভিকটিম’ হয়, তাহলে টার্গেট কলামে যে সংখ্যা পাওয়া যাচ্ছে, তা ভিকটিমদের সংখ্যা। এই অর্থটা খুবই পরিষ্কার। কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি করেছে ভগ্নাংশ সংখ্যা, অর্থাৎ ২৫ বাই ১০০০, ১০ বাই ৫০০ ইত্যাদির অর্থ কী?’ থামল আহমদ মুসা।
কারও মুখে কোন কথা নেই। ভাবছে আহমদ মুসা। ভাবছে সবাই।
ভাবনার মধ্যেই মুখ তুলল আহমদ মুসা।
তার চোখে আশের আলো জ্বলছে। বলল সে, ‘মি. মালিক মেরারী, ‘এই ভগ্নাংশের মধ্যে কি রহস্য লুকিয়ে রেখেছেন?’
কথা বলল না মালিক মেরারী মালুস। কিন্তু তাকাল সে আহমদ মুসার দিকে। তার চোখে হিংস্র দৃষ্টি।
হাসল আহমদ মুসা। বলল, ‘জানি, আপনার খুব ইচ্ছা করছে গুলি করে আমার খুলিটা উড়িয়ে দিতে।’
বলেই আহমদ মুসা তাকাল ইঞ্জিনিয়ার ছেলেটার দিকে। বলল, ‘বলত, টেন বাই হন্ড্রেড বা এ ধরনের অংকের কত রকম অর্থ হতে পারে?’
‘স্যার, এর সাধারণ অর্থ দশ এর একশ ভাগের একভাগ। অন্য অর্থেও এর ব্যবহার হয়। যেমন, ১০০ জনের মধ্যে ১০ জন, এই অর্থ মেলাতেও এমনটা লেখা হয়।’ ইঞ্জিনিয়ার ছেলেটা বলল।
‘আমরা টার্গেটের কী অর্থ করেছি?’ আহমদ মুসার জিজ্ঞাসা।
‘ভিকটিম।’ বলল ইঞ্জিনিয়ার ছেলেটি।
‘আচ্ছা, এখন দশ বাই হানড্রেড- এর যে অর্থ করলে তার আগে ‘ভিকটিম’ শব্দটা বসাও। দেখ বক্তব্যটা কী দাঁড়াচ্ছে।’ আহমদ মুসা বলল।
‘বক্তব্যও দাঁড়াচ্ছে, ভিকটিম ১০০ জনের মধ্যে দশজন।’ বলল ইঞ্জিনিয়ার ছেলেটি।
‘ধন্যবাদ, তাহলে কথা দাঁড়াচ্ছে, টার্গেট- এর ঘরে যে সংখ্যাগুলো রয়েছে, তার মধ্যে যে সংখ্যাগুলো উপরে রয়েছে, সেগুলো বিভিন্ন স্থানে ভিকটিম- এর সংখ্যা। কিন্তু নিচের অংকগুলোর অর্থ কী?’ থামল আহমদ মুসা।
‘জটিলতা একটার পর আরেকটা। ভিকটিম উপরেরটা হওয়ার পর নিচের অংকগুলো এই কলামের জন্যে অপ্রয়োজনীয় হয়ে যায়। এই অংকগুলো বোধ হয় ক্যামোফ্লেজের জন্যে।’ বলল ডিপি খাল্লিকান খাচিপ।
‘তা মনে হয় না অফিসার। আচ্ছা দেখুন, টার্গেট কলামের ‘ভিকটিম’ মানে ‘মানুষ ভিকটিম।’ এই মানুষ ভিকটিমরা নিচের সংখ্যাগুলোর অংষ, সেটা অর্থ থেকেই বুঝা যাচ্ছে। যদি তাই হয়, তাহলে নিচের অংকগুলোও এবং মানুষের সংখ্যাও একই। তাই হয় কিনা?’ আহমদ মুসা বলল।
‘ঠিক তাই। ধন্যবাদ আপনাকে।’ বলল ডিপি খাল্লিকান খাচিপ।
‘ধন্যবাদ, তাহলে অর্থ দাঁড়াচ্ছে, ১০০ জনের মধ্যে ভিকটিম ১০ জন। এখন গোটা পেজ নিয়ে যদি আমরা আলোচনা করি, তাহলে আমরা দেখব ধাঁধাঁর মধ্যে দিয়ে যে কথা বলা হয়েছে, তার অর্থ দাঁড়াচ্ছে অমুক স্থানে অমুকের দ্বারা এতজনের মধ্যে ভিকটিম হবে এতজন।’ বলল আহমদ মুসা।
‘ওয়ান্ডারফুল! ওয়ান্ডারফুল!’ বলে হাততালি দিয়ে উঠল ডিপি খাল্লিকান খাচিপ।
ঠিক এই সময়েই কঁকিয়ে উঠল মালিক মেরারী মালুস। যেন মাথায় তার তীব্র ব্যথা। অস্থির সে।
তার দিকে এগিয়ে গেল ডিপি খাল্লিকান খাচিপ।
‘আমার মাথার টুপি খুলে ফেলুন। মাথাটা ফেটে গেল।’ চিৎকার করে বলতে লাগল মালিক মেরারী মালুস।
‘তোমার আবার মাথায় কী ঘটল? দেখি।’ বলে ডিপি খাল্লিকান খাচিপ টুপি খুলতে গেল মালিক মেরারী মালুসের।
আহমদ মুসা শান্তভাবে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল মালিক মেরারী মালুসের দিকে। কিন্তু তার মনে হলো, তার বেদনাকাতর বিলাপের সাথে তার চোখের ভাব প্রকাশের কোন মিল নেই। তাহলে তার এটা অভিনয়? উদ্দেশ্য? টুপি খুলতে বলছে কেন? কোন ফাঁদ? কী হতে পারে? ঠিক বুঝতে পারলো না আহমদ মুসা। কিন্তু এটুকু বুঝতে পারল যে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে।
ডিপি খাল্লিকান খাচিপ টুপিতে হাত দিতে যাচ্ছিল।
‘টুপিতে হাত দেবেন না মি. অফিসার।’ দ্রুত আদেশের সুরে বলল আহমদ মুসা।
হাত থমকে গেল ডিপি খাল্লিকান খাটিপের। তাকাল আহমদ মুসার দিকে। বলল, ‘কিন্তু স্যার…?’
আরও ভাবছিল আহমদ মুসা। টুপির মধ্যে যদি বিপদ থাকে। তাহলে সেটা আসবে কিভাবে? সে টুপি খুলতে বলছে, তার মানে টুপি খোলার সময় টুপির বেজ অংশ বর্ধিত হওয়ার ফলেই নিশ্চয় বিপদটা আসবে। সুতরাং, টুপির বেজ অংশ বর্ধিত হবার সুযোগ না দিয়ে যদি টুপিটা খোলা যায়, তাহলে বিপদ আসবে না, অন্যদিকে জানা যাবে টুপির ভেতরের রহস্য।
আহমদ মুসা ইঞ্জিনিয়ার ছেলেটাকে খুবই ছোট একটা কাঁচি আনতে বলল।
ইঞ্জিনিয়ার ছেলেটা দৌড়ে গিয়ে একটা ক্ষুদ্র কাঁচি নিয়ে এল।
আহমদ মুসা কাঁচি নিয়ে এগুলো মালিক মেরারীর দিকে। বলল, ‘মি. মালাক, হাত দিয়ে টুপি খুলতে গেলে আপনার কষ্ট লাগবে। আস্তে করে বেজ- এর ইলাস্টিক কেটে দিয়ে টুপিটা আপনার মাথা থেকে তুলে নেয়া হলে আপনি জানতেও পারবেন না।’
মালিক মেরারীর চোখে আগুন। দু’পাশে রাখা আহত দু’হাত নাড়ার চেষ্টা করল, কিন্তু পারল না।
আহমদ মুসার কাঁচি যখন এগুলো, মানে আহমদ মুসা তার বেডের পাশে পৌঁছাল, সংগে সংগেই সে এক বিকট চিৎকার দিয়ে উঠে দুই আহত হাত উপরে তুলে মাথার টুপি খুলতে গেল।
আহমদ মুসার চোখ মালিক মেরারীর আগুন-ঝরা চোখের দিকে নিবদ্ধ ছিল। কী ঘটতে যাচ্ছে তা বুঝতে পারল আহমদ মুসা।
মালিক মেরারীর আহত হাত দু’টি টুপির কাছে পৌঁছার আগেই আহমদ মুসার বাম হাত পকেট থেকে রিভলভার নিয়ে গুলি করল মালিক মেরারীকে। গুলি গিয়ে লাগল মালিক মেরারীর বুকে। মালিকের দুই হাতকে যেহেতু এক সাথে গুলি করা যায় না, তাই তাকে নিবৃত্ত করার জন্যে বুকে গুলি না করে উপায় ছিল না।
মালিক মেরারীর উঠে আসা দুই হাত আছড়ে পড়ল দু’পাশে।
তার হাত দু’টি আছড়ে পড়ার মতই মালিক মেরারীও শেষ হয়ে গেল কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই।
মুহূর্তেই ঘটে গেল গোটা ঘটনা। বিমূঢ় হয়ে পড়েছিল উপস্থিত ডিপি খাল্লিকান খাচিপ এবং ইঞ্জিনিয়ার ছেলেটা।
বিস্ময় কাটিয়ে উঠে ডিপি খাল্লিকান খাচিপ বলল, ‘অকল্পনীয় ধরনের বেপরোয়া লোকটা, অদ্ভুত তার নার্ভ। কিন্তু তার টুপিতে কী আছে? কী করতে যাচ্ছিল সে?’
‘টুপিতে ভয়াবহ ঘাতক ধরনের কিছু আছে যা দিয়ে সে আমাদের মারতে চেয়েছিল, যাতে আমরা যে রহস্য ভেদ করেছি, তা আর কেউ জানতে না পারে।’ আহমদ মুসা বলল।
‘কী এমন ঘাতক থাকতে পারে সেখানে?’ বলল খাল্লিকান খাচিপ।
‘আচ্ছা দেখা যাক।’ বলে আহমদ মুসা মালিক মেরারী মালুসের মাথার দিকে এগুলো। টুপির বেজটা আস্তে করে কাঁচি দিয়ে কেটে দিল আহমদ মুসা। টুপির এক পাশ ঢিলা হয়ে গেল। বিপরীত পাশের ইলাস্টিক তখনও মাথার কাপড়ে আটকে আছে। ওপাশের টুপির ইলাস্টিক বেজটা কেটে দিল আহমদ মুসা। এরপর আলতোভাবে টুপিটা খুলে ফেলল। টুপির ভেতর থেকে বেরিয়ে এল একটা ভয়ংকর পয়জন বোমা। ক্ষুদ্র বোমার গায়ের সাংকেতিক মার্ক দেখেই বুঝতে পারল আহমদ মুসা। বোমা থেকে সুক্ষ একটি বৈদ্যুতিক তার চার ভাগ হয়ে টুপির চারদিকের বেজ ইলাস্টিকের সাথে গিয়ে মিশেছে। যেখানে মিশেছে, সেখানেই সুক্ষ্ম বৈদ্যুতিক তারের সাথে ডেটোনেটর ফিট করা আছে। ইলাস্টিকে টান পড়লেই ডেটোনেটরের দুই পিন একে অপরকে স্পর্শ করবে এবং বৈদ্যুতিক তারের নেগেটিভ-পজিটিভ এক সাথে ক্লিক করার সাথে সাথেই পয়জন বোমার বিস্ফোরণ ঘটবে। ভাবতেই শিউরে উঠল আহমদ মুসা।
বোমাটা সবাইকে দেখিয়ে পয়জন বোমার টেকনোলজিটা সবাইকে বুঝিয়ে বলল আহমদ মুসা, ‘টুপির বেজ ইলাস্টিকে সামান্য টান পড়লেই বোমার ডেটোনেটর ক্লিক করতো এবং তখন ভয়ংকর পয়জন বোমার বিস্ফোরণ ঘটে যেত।’
ডিপি খাল্লিকান খাচিপ এবং ইঞ্জিনিয়ার ছেলেটার মুখ আতংকে চুপসে গেল।
‘আমাদের মারলে সেও তো মরতো।’ ডিপি খাল্লিকান খাচিপ।
‘না, সে যদি মুখ, নাক ও চোখ বন্ধ করে দেড় মিনিট থাকতে পারতো, তাহলে সে বেঁচে যেত। বোমাটার ক্রিয়াকাল মাত্র দেড় মিনিট। এই দেড় মিনিটে এই বোমা দশ বর্গফুট এলাকার মানুষসহ সকল জীবের প্রাণ হরণ করতে পারে। এর কোন ধোঁয়া নেই। এর অদৃশ্য পয়জন-ওয়েভ চোখের পলকে ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।’ আহমদ মুসা বলল।
‘নিশ্বাস বন্ধ রাখার জন্যে মুখ, নাক বন্ধ রাখার প্রয়োজন আছে। কিন্তু চোখ বন্ধ রাখা কেন?’ বলল ডিপি খাল্লিকান খাচিপ।
‘বোমার পয়জন-ওয়েভ মানুষের দৃষ্টিও অন্ধ করে দিতে পারে।’ আহমদ মুসা বলল।
আঁৎকে উঠল ডিপি খাল্লিকান খাচিপ। বলল, ‘সাংঘাতিক অস্ত্র। মালিক লোকটা তাহলে আমাদেরকে মেরে ফেলে পালাবার একটা ব্যবস্থা রেখেই দিয়েছিল। ভয়ানক লোক। আড্ডা গেড়েছিল দেখছি ঠিক জায়গায়!’
‘ভয়ানক লোক তো বটেই। কথা বলানো গেল না শেষ পর্যন্ত। আমাদের সব প্রশ্নের সমাধান আমরা পেলাম না।’ আহমদ মুসা বলল।
‘সব রহস্যের জট তো আপনি খুলেই ফেলেছেন। বড় কী তেমন বাকি আছে?’ জিজ্ঞাসা খাল্লিকান খাচিপের।
‘রহস্যের শেষ তালাটা খোলা বাকি আছে। অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর রহস্যের শেষ তালাটা খোলা না গেলে জানা যাবে না। ভিকটিম যাদের মধ্যে থেকে হবে, সেই লোকরা কারা? কবে, কিভাবে ভিকটিম হওয়ার ঘটনা ঘটবে? এর উদ্দেশ্যই বা কী? সোর্ডস- মানে আক্রমণকারী, যারা কিছু লোককে ভিকটিম বানাবে, তারা কারা? কেন, কিভাবে তারা এটা করবে? ইত্যাদি অনেক প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানা নেই।’
বলে আহমদ মুসা চেয়ারে গা এলিয়ে দিল। চোখ দু’টোও বুজে গেল তার। তার চেহারায় নেমে এলো গভীর ছায়া।
কিছুক্ষণ পর চোখ খুলল আহমদ মুসা। বলল, ‘মি. খাল্লিকান খাচিপ, এ বিষয়টা তো পরিষ্কার হয়েছে, একদিকে তাদের উদ্দেশ্য যেমন মাউন্ট আরারাতের স্বর্ণভাণ্ডার উদ্ধার, অন্যদিকে তাদের ষড়যন্ত্রটা রাজনৈতিকও।
দেখা যাচ্ছে শহর ও আধাশহর এলাকাতেই তারা ঘটনা ঘটাবে। যাদের ভিকটিম বানাবে বা ঘটনার অস্ত্র হবে, তাদের সংখ্যা কোথাও দু’য়ের বেশি নয়। মাত্র একজন বা দু’জন, কোথাও দু’শ, কোথাও একশ, পাঁচশ জনকে ভিকটিম বানাবে কী করে? এ থেকে বুঝা যায় একজন বা দু’জন লোক যাদের ভিকটিম বানাবে, তারা একাই একশ বা এ হাজারের মত। এমন লোক কারা হতে পারে মি. খাল্লিকান খাচিপ?’
‘পুলিশ বা সেনারা হতে পারে।’ খাল্লিকান খাচিপ বলল।
‘ঠিক বলেছেন মি. খাল্লিকান খাচিপ। তাহলে এখন দেখতে হবে, যেস্থানে সোর্ডস হিসাবে দুই বা ততোধিক বর্ণমালার আড়ালে যাদের নাম আছে, সে স্থানে পুলিশ অফিসার ও সেনা অফিসারদের মধ্যে ঐ বর্ণমালার সাথে মিলে এমন কে কে আছেন। এদেরকে ডিটেক্ট করাটাই এখনকার প্রধান কাজ।’ বলল আহমদ মুসা।
‘ইউরেকা! ইউরেকা মি. আবু আহমদ, স্যার! আপনি ধাঁধাঁর জট ভেঙে ফেলেছেন। এখন যে কাজটার কথা বলেছেন, তা খুবই সহজ। পুলিশ অফিসারদের নাম আমি দু’এক ঘন্টার মধ্যেই দিতে পারব। সেনা অফিসারদের নামগুলোও যোগাড় করা যাবে।’ ডিপি খাল্লিকান খাচিপ বলল। আনন্দের উচ্ছ্বাস তার কণ্ঠে।
‘আপনি পুলিশ অফিসারদের নাম যোগাড় করুন। সেনা অফিসারদের নাম আমি যোগাড় করছি।’ আহমদ মুসা বলল।
বলেই আহমদ মুসা তার মোবাইলে কল করল জেনারেল মেডিন মেসুদকে।
আহমদ মুসার কণ্ঠ পেতেই জেনারেল মেডিন মেসুদ ওপার থেকে সালাম দিয়ে বলল, ‘কনগ্রাচুলেশন মি. আবু আহমদ। অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে আপনি সমস্যা সমাধানের প্রান্তে এসে পৌঁছেছেন। এখন আপনার চাই স্থানগুলোর বিপরীতে আদ্যাক্ষরের সংকেতে যাদের নাম আছে, তাদের নাম। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।’
‘আপনি জানলেন কি করে এ সব?’ বলল আহমদ মুসা।
‘গোপন ব্যপারটা সহজ! আপনাকে বললে ক্ষতি নেই।’
একটু থামল জেনারেল মেডিস মেসুদের কণ্ঠ। বলল আবার, ‘যে ছেলেটা কম্পিউটারে আপনাকে সহযোগিতা করছে, সে আমাদের গোয়েন্দা বিভাগের লোক। মি. মালিকের রেস্টুরেন্টেও আমাদের গোয়েন্দা অফিসার ছিল। ইজদিরের সে হোলি আরারাত হোটেলেও আমাদের লোক ছিল।’
‘ওরা কি কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের জন্য?’ বলল আহমদ মুসা। তার মুখে হাসি।
‘আস্তাগফিরুল্লাহ্! কী বলেন স্যার! ওরা আপনার নিরাপত্তার জন্যে।’ জেনারেল মেডিন মেসুদ বলল।
‘ধন্যবাদ জেনারেল। এবার কাজের কথা বলুন।’ বলল আহমদ মুসা।
‘স্থানগুলোতে সাংকেতিক বর্ণমালার আড়ালে যে অফিসারদের নাম পাওয়া যাবে, তার তালিক শীঘ্রই আপনাকে পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না, কী হতে যাচ্ছে স্থানগুলোতে? এটা জানা খুবই জরুরী।’ বলল আহমদ মুসা।
‘আসলেই খুবই জরুরী।’ জেনারেল মেডিন মেসুদ বলল।
‘আপনি তালিকাটা তাড়াতাড়ি পাঠান জেনারেল। আমার ধারণা সঠিক হলে ঐ চিহ্নিত অফিসাররা ইতমধ্যেই ব্রীফ পেয়ে গেছে। সুতরাং জানার একটা পথ বের হবেই।’ আহমদ মুসা বলল।
‘পেয়ে যাবেন স্যার। আজ রাত শেষ হবার আগেই পেয়ে যাবেন। আমরা খুব উদ্বিগ্ন স্যার। মার খেতে খেতে ওদের দেয়ালে পিঠ ঠেকেছে। বড় কোন অঘটন ওরা যে কোন সময় ঘটিয়ে বসতে পারে।’ বলল জেনারেল মেডিন মেসুদ।
‘আল্লাহ্ ভরসা। ওরা ধ্বংসের জন্যে, আর আমরা ভালোর জন্যে কাজ করছি। আল্লাহ্’র সাহায্য আমাদের সাথেই থাকবে।’
‘আলহামদুলিল্লাহ্। আল্লাহ্ তাই করুন।’ বলল জেনারেল মেসুদ।
‘আমীন। ওকে জেনারেল, রাখি। আস্-সালামু ‘আলাইকুম।’ বলে সালাম নিয়ে মোবাইলের কল অফ করে দিল আহমদ মুসা।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now