বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন
বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

বিপদে আনাতোলিয়া চ্যাপ্টার- ৬ ২য় অংশ

"সাইমুম সিরিজ" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিয়েন সরকার (০ পয়েন্ট)

X আহমদ মুসা তার রিভলভার তুলে একটা গুলি করল কর্নেল মোস্তফা মিকাহ-কে লক্ষ্য করে। গুলিটা তার কানের উপরের অংশের কিছুটা ছিঁড়ে নিয়ে মাথা ও কানের মাঝ দিয়ে বেরিয়ে গেল। ভীষণ আঁৎকে উঠে হাত দিয়ে কান চেপে ধরল কর্নেল মোস্তফা মাকাহ্। ভয়ে পাণ্ডুর হয়ে গেছে তার মুখ। ‘এগুলিটা আমি আপনাকে সাবধান করে দেবার জন্যে করেছি, দ্বিতীয় গুলিটা কিন্তু আপনার মাথা গুঁড়ো করে দেবে।’ আহমদ মুসা বলল। ভীত কর্নেল তার বিহবল চোখ তুলে তাকাল আহমদ মুসার দিকে। বলল, ‘বলছি স্যার। একটা বড় কিছুর পরিকল্পনা হয়েছে স্যার, কিন্তু আমাদের এখনও জানানো হয়নি। বলা হয়েছে, আজ জানানো হবে।’ থামল কর্নেল মোস্তফা। ‘কে জানাবে, কোথায় জানাবে?’ আহমদ মুসার জিজ্ঞাসা। ‘ইজদিরের হোলি আরারাত হোটেলে আজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় একজনের সাথে দেখা হওয়ার কথা। সেখানেই কর্মসূচী আমাদের জানানো হবে বলা হয়েছে। এর বাইরে আমি কিছুই জানি না।’ বলল কর্নেল মোস্তফা মিকাহ্। ‘সেই একজন কে?’ জিজ্ঞাসা আহমদ মুসার। ‘সেটা আমাদের বলা হয়নি স্যার। শুধু আমাদের জানানো হয়েছে হোটেলটির তিন তলায় প্যারাডাইজ অডিটোরিয়ামে গিয়ে বসতে হবে। এটুকুই নির্দেশ ছিল আমার উপর।’ বলল কর্নেল মোস্তফা। ‘আর কারও কি ওখানে যাবার কথা ছিল?’ আহমদ মুসা বলল। ‘এবার কী ব্যবস্থা হয়েছে জানি না স্যার। তবে এর আগে সব কথা, সব ব্রিফিং একাধিক লোককে নিয়ে হয়নি।’ বলল কর্নেল মোস্তফা। ‘আচ্ছা কর্নেল, রেস্টুরেন্টে আমাকে আক্রমণের জন্যে কে আপনাকে বলেছিল?’ আহমদ মুসা বলল। কর্নেল মোস্তফা একটু দ্বিধা করল। তারপর বলল, ‘মাউন্ট মালিক রেস্টুরেন্টের মালিক মেরারী মালুস।’ ‘কী বলেছিলেন তিনি?’ জিজ্ঞাসা আহমদ মুসার। ‘স্যার, আমার রেস্টুরেন্টের একটা টেবিলে আপনাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। মেজর নাঈম একটা তালিকা দিয়েছেন একজনকে। তার মধ্যে আপনার নাম আছে। আমার মত হচ্ছে আর্ক অব নূহা উপত্যকায় যাদের ইউনিফর্ম পাওয়া গেছে, তাদের তালিকা। মেজর নাঈমকে পরে দেখবেন। কিন্তু তার সাথের লোকটাকে যেতে দিলে আপনার বিপদ হবে স্যার। তার মূল কথা এটাই ছিল।’ বলল কর্নেল মোস্তফা। ‘রেস্টুরেন্ট মালিক এসব কথা জানলেন কী করে?’ আহমদ মুসার জিজ্ঞাসা। ‘আমি এটা জানি না স্যার। তিনি তো আমাকে আপনার ফটোও দেখিয়েছেন কম্পিউটারের মাধ্যমে। তা না হলে তো আমি আপনাকে চিনতেই পারতাম না।’ বলল কর্নেল মোস্তফা। ভ্রূকুঞ্চিত হলো আহমদ মুসার। তার মানে রেস্টুরেন্টের প্রত্যেক টেবিলের উপর ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার নজর রয়েছে প্রতি টেবিলে ট্রান্সমিটার যার মাধ্যমে শব্দ মনিটর করা হয়। একজন রেস্টুরেন্ট মালিক এই ব্যবস্থা করেছেন কেন। কিন্তু এ-নিয়ে চিন্তা করতে চাইল না আহমদ মুসা। কর্নেল মোস্তফাকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘দেশের প্রতি ভালোবাসা কি আপনার মধ্যে অবশিষ্ট আছে কর্নেল মোস্তফা?’ মুখ নিচু করল কর্নেল মোস্তফা। দু’হাতে মুখ ঢেকে কেঁদে ফেলল সে। বলল, ‘দেশকে আমি ভালোবাসি স্যার। কিন্তু আমি বিপদে পড়েছি। আমার উপর আমার মা’র নির্দেশ হলো, আমি যেন সোহা’র মেহরান মুসেগ মাসিস যা বলবেন তাকে মায়ের নির্দেশ বলে মনে করি। আমি যা কিছু করেছি তা এই দায় থেকেই করেছি। আমি দেশকে ভালোবাসি স্যার।’ ‘আমার একটা কথা কি আজ শুনবেন?’ বলল আহমদ মুসা। মুখ তুলে তাকাল কর্নেল মোস্তফা আহমদ মুসার দিকে। বলল, ‘অবশ্যই স্যার। আপনি নির্দেশ করুন। আপনি কে আমি জানি না। কিন্তু আপনি যে শাস্তি আমাকে দিয়েছেন, তা আমার প্রাপ্য ছিল।’ ‘আজ সন্ধ্যায় আপনি ইজদিরের হোলি মাউন্ট আরারাত হোটেলে যাবেন। কি কর্মসূচি দেয় সেটা নেবেন। সে কর্মসূচিটি জানা দেশের জন্যে খুব বেশি প্রয়োজন। আমিও সেখানে আপনার আশে-পাশেই থাকব। আপনি হোটেল থেকে বেরিয়ে বিপরীত দিকের সিনাগগের পাশেই থাকব। আপনি হোটেল থেকে বেরিয়ে বিপরীত দিকের সিনাগগের পাশে রাস্তার কিনারে আপনার গাড়ি দাঁড় করিয়ে ইঞ্জিন পরীক্ষা করতে শুরু করবেন। এসময় পেছন দিক থেকে একটা লাল গাড়ি আসবে। আপনি সেই গাড়িটাকে ফলো করবেন।’ থামল আহমদ মুসা। একটু থেমেই আবার বলল, ‘আমি আপনাকে ধরে নিয়ে এসেছিলাম, এই ব্যপারে কেউ জানতে চাইলে আপনি এ কথা বলবেন: আপনি আমাকে গুলি করতে গিয়েছিলেন, এই জন্যেই আমি আপনাকে ধরে এনেছিলাম। পরে প্রশাসনের মধ্যস্থতায় সবকিছুর সুরাহা হয়েছে। আর আপনি যেহেতু একজন সেনা অফিসার তাই আপনাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।’ ‘ঠিক আছে স্যার, আমি এটাই বলব।’ বলল কর্নেল মোস্তফা। আহমদ মুসা উঠে দাঁড়াল। বলল, ‘ধন্যবাদ কর্নেল, হয়তো সন্ধ্যার পরে কোথাও আমাদের দেখা হতে পারে। আমি চলি।’ ‘অবশ্যই স্যার। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।’ বলল কর্নেল মোস্তফা মিকাহ্। সবাইকে সালাম দিয়ে বেরিয়ে এল আহমদ মুসা। ‘কর্নেল মি. মোস্তফা আপনি একটু বসুন, আমি ওকে বিদায় দিয়ে আসছি। আমিই আপনাকে পৌঁছে দেব।’ বলে ডিপি খাল্লিকান খাচিপ আহমদ মুসার সাথে বেরিয়ে এল। বলল আহমদ মুসাকে, ‘মি. আবু আহমদ, আপনি কি নিশ্চিত, কর্নেল মোস্তফা আপনার কথা শুনবে? যদি বিষয়টা ফাঁস করে দেয় সে ও-পক্ষকে?’ আহমদ মুসা হাসল। বলল, ‘মানুষ চিনতে আমার ভুল না হলে আমি মনে করি তাকে বিশ্বাস করা যায়। সত্যিই সে ইহুদি মায়ের সন্তান। মা তাকে ঐ কাজে বাধ্য করতে পারে।’ ‘ধন্যবাদ আবু আহমদ। আপনার কথা সত্যি হোক। তাহলে স্যার আবার দেখা হবে। আস্-সালামু ‘আলাইকুম।’ আহমদ মুসা ‘ওয়া ‘আলাইকুম আস্-সালাম’ বলে পুলিশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে এল। আহমদ মুসা একজন তুর্কি ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে ইজদিরের সেই হোলি আরারাত হোটেলের এক পাশের একটা টেবিলে বসে মাঝে মাঝে কফির কাটে চুমুক দিচ্ছে, আর সামনে ছড়ানো কাগজে চোখ রেখে হিসাব-নিকাশে ব্যস্ত। যেন মনোযোগ সহকারে সে তার ব্যবসায়ের কোন একটা জটিল হিসাব মেলাচ্ছে। চোখ দু’টি কাগজের উপর ব্যস্ত দেখা গেলেও রেস্টুরেন্টের দুই গেটের উপর নজরদারী ঠিক রেখেছে। হাতঘড়ির দিকে তাকাল আহমদ মুসা। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা বাজতে আর ৫ মিনিট বাকি। এখনও দেখা নেই কর্নেল মোস্তফা মিকাহ্’র। সে আসার আগেই হোটেলে ঢুকে গেছে তা পারে না। আহমদ মুসা পাশের এক মসজিদে মিগরিবের পড়েই এসে হোটেলে ঢুকেছে। তুরস্কে মাগরিবের নামাযের পরের সময়কেই সন্ধ্যা বলে। সন্ধ্যাতেই কর্নেল মোস্তফা মিকাহ্’র হোটেলে আসার কথা। সুতরাং সে সন্ধ্যার আগে হোটেলে আসেনি এটা নিশ্চিত। সে হোটেলে ঢোকার আগেই হোটেলের চারদিকটা দেখে নিয়েছে, হোটেলে ঢোকার ও বেরুবার তৃতীয় কোন গেট নেই। তার সামনের দুই গেট দিয়ে ঢুকে কাউন্টারের ভেতরের প্রান্তের পাশ দিয়ে একটা সিঁড়ি উপরে উঠে গেছে। কর্নেল মোস্তফা মিকাহ্’কে নিশ্চয় তিন তলায় উঠতে হলে এই সিঁড়ি দিয়েই উঠতে হবে। সাড়ে সাতটা বাজল। তার আরও কয়েক মিনিট পরে আহমদ মুসা দেখতে পেল, কর্নেল মোস্তফা মিকাহ্ হোটেলে প্রবেশ করল। তার পরনে কালো ট্রাউজারের উপর কালো জ্যাকেট, মাথায় একট ইংলিশ কালো হ্যাট। আহমদ মুসা দেখল, কর্নেল মোস্তফা কাউন্টারে কিছু বলল, তারপর সেই সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেল। আহমদ মুসা ভাবল, উপরে কর্নেলের কতটা সময় লাগতে পারে। নিশ্চয় আধাঘন্টার বেশি নয়। কিন্তু বিশ মিনিট পরেই কর্নেল উপর থেকে নেমে এল। তার মুখটা বিষণ্ন। আহমদ মুসা ইতমধ্যেই হিসাবের কাগজপত্র গুটিয়ে নিয়ে নাস্তা করছিল। কর্নেল মোস্তফা বেরিয়ে গেল হোটেল থেকে। আরও মিনিট দুয়েক পরে আহমদ মুসার নাস্তা শেষ হলো। সব বিল চুকিয়ে আহমদ মুসাও বেরিয়ে এল হোটেল থেকে। আহমদ মুসা তার লাল গাড়ি নিয়ে এগোচ্ছিল। সিনাগগের কাছাকাছি পৌঁছে দেখল রাস্তার কেনারে একটা গাড়ি দাঁড় করানো রয়েছে। গাড়িটার ফ্রন্ট টপ তুলে একজন গাড়ির ইঞ্জিন পরীক্ষা করছে। আহমদ মুসা নিশ্চিত হলো রোকটি কর্নেল মোস্তফাই। আহমদ মুসা একবার হর্ন বাজিয়ে কর্নেল মোস্তফার গাড়ির পাশ দিয়ে সামনে এগোলো। সিনাগগের এলাকা পার হবার আগেই দেখল কর্নেল মোস্তফার গাড়ি তার পেছনে চলতে শুরু করেছে। ইজদির শহর পেরিয়ে আরও মাইল দশেক চলার পর একটা সরাইখানায় গাড়ি দাঁড় করাল আহমদ মুসা। কর্নেল মোস্তফার গাড়িও দাঁড়াল। আহমদ মুসা পেছনে তাকিয়ে আর কোন গাড়ি দেখল না। কেউ তাদের ফলো করেনি, নিশ্চিত হলো আহমদ মুসা। আহমদ মুসা সরাইখানার দিকে এগোলো। কর্নেল মোস্তফাও। আহমদ মুসা সরাইখানার রেস্টুরেন্টে না ঢুকে অন্য দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল বিশ্রাম কক্ষে যাবার জন্যে। তুরস্কে সরাইখানার বিশ্রাম কক্ষ দুই ধরনের। এক ধরনের আছে ফ্রী। এখানে যে কেউ বিনা পয়সায় তিন দিন পর্যন্ত অবস্থান করতে পারে। আরেক ধরনের আছে যার জন্যে ডোনেশন পে করতে হয়। যে রুম সে চায় তার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ একটা ডোনেশন পে করলেই চাবি বেরিয়ে আসে। সে চাবি দিয়ে ঘর খুলে তিন দিন সে কক্ষে থাকা যায়। আহমদ মুসা ডোনেশন পে করে একটা কক্ষে প্রবেশ করল। পেছন পেছন আসা কর্নেলকে ডেকে নিল। কর্নেল ভেতরে প্রবেশ করেই বলল, ‘স্যার, খবর ভালো নয়।’ ‘ভলো নয়, তা আপনার মুখ দেখেই বুঝতে পেরেছি। বলুন খারাপ খবরটা কী?’ আহমদ মুসার জিজ্ঞাসা। স্যার, কেউ আসেনি। কারও সাথেই দেখা হয়নি। কিছুক্ষণ বসার পর একটা টেলিফোন পাই। টেলিফোনটি আমার চেয়ারের পাশেই টিপয়ে রাখা ছিল। টেলিফোনে একজন বলে: ‘আপনার সামনে মঞ্চের টেবিলে একটা মেসেজ আছে নিয়ে যান।’ আমি গিয়ে মেসেজটা নেই।’ বলে কর্নেল মোস্তফা মিকাহ্ এক টুকরো কাগজ তুলে দিল আহমদ মুসার হাতে। আহমদ মুসা চোখ বুলাল কাগজের টুকরোটির উপর। তাতে লিখা: ‘কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।’ ভ্রূ-কুঞ্চিত হলো আহমদ মুসার। বলল, ‘কর্নেল, আমার ওখান থেকে মানে পুলিশ স্টেশন থেকে আসার পর আপনার কার কার সাথে দেখা বা কথা হয়েছে, আপনার বাড়ির লোকরা ছাড়া?’ কর্নেল একটু ভাবল। বলল, ‘আমি বাসা থেকে বের হইনি। অফিস থেকে ১২ ঘন্টার ছুটিতে আছি। বাইরের কারও সাথে দেখা বা কথা হয়নি। শুধু একবার টেলিফোন করেছিলেন মাউন্ট মালিক রেস্টুরেন্টে’র ওমার।’ আনন্দ প্রকাশ পেল আহমদ মুসার চোখে মুখে। বলল দ্রুতকণ্ঠে, ‘কী বলেছিলেন তিনি?’ ‘তিনি বলেছিলেন, আপনার কোন যে বিপদ হয়নি, এজন্যে আল্লাহ্’র হাজার শোকর। আমি উদ্বিগ্ন ছিলাম, খবরা-খবর‌ও নিয়েছি। ঐ লোকরা মনে হচ্ছে বিপজ্জনক। ছেড়ে দেয়ার মধ্যে কোন কৌশল থাকতে পারে। আমি মনে করি, আপনি কয়েকদিনের ছুটিতে যান। আমি তাকে বলেছিলাম, ঠিক আছে দেখছি আমি।’ কর্নেল মোস্তফা মিকাহ্ বলল। ‘উনি আপনাকে এধরনের পরামর্শ দিলেন কেন? তাঁর সাথে আপনার আর কোন সম্পর্ক আছে?’ জিজ্ঞাসা আহমদ মুসার। ‘না, নেই। এমনিতেই উনি সাংঘাতিক অভিভাবকের ভূমিকা পালন করেন। মাঝে মাঝে মনে হয় আমাদের ব্যাপারে তিনি অনেক খবর রাখেন। সরকারের নানা রকম এজেন্সি আছে, কোন এজেন্সির সাথে তিনি আছেন কিনা জানি না।’ বলল কর্নেল মোস্তফা। ‘আপনি যদি শোনেন, তার রেস্টুরেন্টের প্রতিটি টেবিলেই শর্ট সার্কিট ক্যামেরার নজরদারী আছে এবং প্রতি টেবিলের কথা শোনার জন্যে ট্রান্সমিটার বসানো আছে, তাহলে কি বিশ্বাস করবেন?’ জিজ্ঞেস করল আহমদ মুসা। বিস্ময় ফুটে উঠল কর্নেল মোস্তফার চোখে মুখে। বলল, ‘বিশ্বাস করব স্যার। কারণ আমার ব্যাপারে আপনাদের আলোচনা কিভাবে সে শুনল এবং আপনার ফটো কিভাবে সে আমার ই-মেইলে পাঠাল, এই প্রশ্নগুলোর সমাধান হয় আপনার কথা বিশ্বাস করলেই।’ ‘রেস্টুরেন্টটির মালিক মানে মি. মালিক মেরারী মালুস কোথায় থাকেন?’ জিজ্ঞাসা আহমদ মুসার। ‘আমি সেটা জানি না, স্যার।’ মাঝে মাঝে উনি রেস্টুরেন্টের উপর তলায় থাকেন দেখেছি।’ বলল কর্নেল মোস্তফা। ‘এখন তাকে কোথায় পাওয়া যাবে?’ জিজ্ঞেস করল আহমদ মুসা। একটু ভাবল কর্নেল মোস্তফা। বলল, ‘রাত ১১টায় রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়, তার আগে একবার তিনি রেস্টুরেন্টে আসেন। আমার মনে হয় এখন রেস্টুরেন্টেই পাওয়া যাবে তাকে।’ ‘আপনি আমার সাথে থাকবেন?’ বলল আহমদ মুসা। ‘কোথায় কিভাবে?’ জিজ্ঞাসা কর্নেল মোস্তফার। ‘আমি মি. মালিক মেরারী মালুসকে কিডন্যাপ করতে চাই। আপনি আমার সাথে থাকবেন।’ আহমদ মুসা বলল। আহমদ মুসা কর্নেল মোস্তফাকে সাথে রাখতে চায়, কারণ তার মিশন ফেল হওয়ার কোন অবকাশই সে রাখতে চায় না। কর্নেল মোস্তফা মিকাহ্-কে আহমদ মুসা বিশ্বাস করে, কিন্তু তবু সামান্য ঝুঁকিও সে নিতে চায় না। এজন্যেই সে কর্নেল মোস্তফাকে সাথে রাখতে চায় যাতে রেস্টুরেন্টের কর্তা মি. মালিক বিষয়টি জানার কোন সুযোগই যেন না পায়। আহমদ মুসার কথা শেষ হতেই কর্নেল মোস্তফা বলল, ‘আপনি সাথে রাখলে আমি গৌরব বোধ করব স্যার।’ আহমদ মুসা তার দিকে চোখ তুলে তাকাল। বলল, ‘ধন্যবাদ।’ দু’জনেই সরাইখানা থেকে বেরিয়ে এল। কর্নেল মোস্তফা মিকাহ্ তার গাড়িতে উঠতে যাচ্ছিল। আহমদ মুসা তাকে বলল, ‘ও গাড়িতে নয়। আমার গাড়িতে আসুন। ও গাড়ি ওখানেই থাকবে।’ বলে আহমদ মুসা তার গাড়ির ড্রাইভিং সীটে উঠে বসল। পাশে উঠে বসল কর্নেল মোস্তফা। ঝড়ের বেগে এগিয়ে চলল গাড়ি। রাত দশটায় মাউন্ট মালিক রেস্টুরেন্টের সামনে এসে পৌঁছল গাড়ি। আহমদ মুসা গাড়ি দাঁড় করিয়ে গাড়ি থেকে নামার আগে কর্নেল মোস্তফার দিকে চেয়ে বলল, ‘কর্নেল, আপনাকে বিষণ্ন দেখাচ্ছে টেলিফোনটি পাওয়ার পর থেকেই। টেলিফোন কার ছিল?’ কর্নেল মোস্তফা আহমদ মুসার দিকে তাকাল। বলল, ‘স্যার, আমার মায়ের টেলিফোন।’ ‘ও, আচ্ছা।’ বলে আর একবার ভালো করে তাকাল কর্নেল মোস্তফার দিকে। আহমদ মুসা গাড়ি থেকে নামল। নামল কর্নেল মোস্তফাও। আহমদ মুসা জ্যাকেটের পকেটে দু’হাত ঢুকিয়ে এগোলো রেস্টুরেন্টের দিকে। রেস্টুরেন্টের গেটে ছিল একজন নিরাপত্তা প্রহরী। ‘মালিক সাহেব কি রেস্টুরেন্টে আছেন?’ জিজ্ঞাসা আহমদ মুসার। ‘আছেন স্যার।’ উত্তর দিল নিরাপত্তার জন্যে দরজায় দাঁড়ানো লোকটি। আহমদ মুসা পেছন ফিরে তাকিয়ে কর্নেল মোস্তফাকে বলল, ‘আপনি দরজায় দাঁড়ান।’ বলেই আহমদ মুসা রেস্টুরেন্টে ঢুকে গেল। রেস্টুরেন্টে খদ্দের তেমন নেই। আর্মি ক্যাম্পের খদ্দের এ সময় থাকে না। ক্যাশ কাউন্টারে কম্পিউটারের সামনে বসে আছেন মি. মালিক মেরারী মালুস। তার গায়ে আগের মতই লাল জ্যাকেট এবং লাল ফেজ ধরনের টুপি। টুপিটা একটু বিশেষ ধরনের। টুপির বেজটা ইলাস্টিক। এই ইলাস্টিক মাথাকে কামড়ে ধরে রাখে। আর পরনে তার ধবধবে সাদা ট্রাউজার। আহমদ মুসা কাউন্টারের মাঝ পথে যেতেই মালিক মেরারী মালুস তাকে দেখতে পেয়েছে। সংগে সংগেই সে উঠে দাঁড়িয়েছে। তার হাতে রিভলভার। উঠে দাঁড়িয়েই সে গুলি করেছে আহমদ মুসাকে। আহমদ মুসা প্রস্তুত হয়েই প্রবেশ করেছিল। মালিক মেরারী মালুস রিভলভার নিয়ে উঠে দাঁড়াবার সাথে-সাথেই আহমদ মুসার হাত বেরিয়ে এসেছিল পকেট থেকে রিভলভার সমেত। মালিক মেরারী মালুসের হাত টার্গেটে উঠে আসার আগেই উঠে গিয়েছিল আহমদ মুসার হাত। কিন্তু আহমদ মুসা মারতে চায়নি মালিক মেরারী মালুসকে। তাই আহমদ মুসা মুহূর্তকাল অপেক্ষা করেছিল মালিক মেরারী মালুসের হাত উপরে উঠে আসার জন্যে। মালিক মেরারী মালুসের হাত টার্গেটে উঠে এসে স্থির হবার সংগে সংগেই আহমদ মুসা ট্রিগার টিপেছিল। আহমদ মুসার রিভলভারের গুলি যখন মালিক মেরারী মালুসের হাতে আঘাত করল। তখন তার তর্জনিও চেপে বসেছিল রিভলভারের ট্রিগারে। হাতটা তার কেঁপে গিয়েছিল। তার রিভলভার থেকে গুলি ঠিকই বেরুল, কিন্তু তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গিয়ে আঘাত করল রেস্টুরেন্টের গেটে দাঁড়ানো একজন নিরাপত্তা কর্মীকে। অদ্ভুত নার্ভের অধিকারী মালিক মেরারী মালুস রিভলভার ছেড়ে দেয়নি হাত আহত হলেও। তার বাম হাত দ্রুত এসে আহত ডান হাত থেকে রিভলভার নিয়ে দ্বিতীয় গুলি করতে যাচ্ছিল আহমদ মুসাকে। আহমদ মুসা মালিক মেরারী মালুসের বাম হাতের জন্যে অপেক্ষা করছিল। কারণ মালিক মেরারী মালুসদের জীবন্ত ধরতে হলে তাদের দুই হাত অকেজো করে তাদের পটাসিয়াম সায়ানাইড খাওয়ার পথ বন্ধ করতে হবে, এটা আহমদ মুসা ঠেকে ঠেকে বুঝেছে। আহমদ মুসার দ্বিতীয় গুলিটা মালিক মেরারী মালুসের হাতের আঙুলগুলো গুঁড়ো করে দিয়ে হাতে ঢুকে গেল। এবার রিভলভার পড়ে গেল তার হাত থকে। এই সময়ই একটা গুলি এসে লাগল আহমদ মুসার হাতে। গুলিটা আহমদ মুসার কনুইয়ের নিচ থেকে চামড়া চিরে কব্জির কিছু অংশ ছিঁড়ে নিয়ে গেল। তবুও আহমদ মুসার হাত থেকে রিভলভারে পড়ল না। তবে হাতটা নেমে গেল নিচে। আহমদ মুসার মনোযোগ তখন এদিকে নয়, তার মনোযোগের লক্ষ্য নিবদ্ধ পেছন থেকে আসা গুলির শব্দের উৎসের প্রতি। বিদ্যুত বেগে আহমদ মুসার বাম হাত রিভলভার সমেত পকেট থেকে উঠে এসে ডান কাঁধের উপর দিয়ে শব্দের উৎস লক্ষ্যে আঘাত করল। পেছন থেকে আসা গুলির শব্দের রেশ বাতাসে মেলাবার আগেই আহমদ মুসার গুলি নিক্ষিপ্ত হলো। গুলি করেই ফিরে তাকাল আহমদ মুসা। দেখল, মাটিতে পড়ে বুক চেপে ধরে কাতরাচ্ছে কর্নেল মোস্তফা মিকাহ্। বিস্মিত আহমদ মুসা কর্নেলের দিকে যাবার জন্যে পা বাড়াবার আগেই গেছনে ফিরে কাউন্টারের দিকে তাকাল। দেখল, মালিক মেরারী মালুস আহত। ঝুলন্ত দুই হাত নিয়ে দৌড়ে উপরে উঠে যাচ্ছে। ‘উপর দিয়ে পালাবার কোন পথ তাদের আছে?’ প্রশ্নটা মাথায় আসতেই আহমদ মুসা তার পালানো বন্ধ করার জন্যে তার দুই পায়ে দু’টি গুলি করল। মালিক মেরারী সিঁড়ি থেকে গড়িয়ে নিচে পড়ে গেল। আহমদ মুসা চারিদিকে চাইল। দেখল, কাউন্টারের ক্যাশিয়ার, রেস্টুরেন্টের বয়-বেয়ারা এবং কয়েকজন খদ্দের পাথরের মত বসে আছে। ভীত সন্ত্রস্ত তাদের চেহারা। ‘যে যেখানে আছেন আপনারা সেখানেই বসে থাকবেন, কেউ অন্যথা করলে তার অবস্থা মালিক মেরারীর মত হবে।’ বলে আহমদ মুসা ছুটে গিয়ে মালিক মেরারী মালুসের কম্পিউটার থেকে হার্ড ডিস্কটা বের করে নিয়ে পকেটে পুরে মালিক মেরারী মালুসকে পাঁজকোলা করে নিয়ে রেস্টুরেন্টের গেটে এসে তাকে রেখে গিয়ে বসল কর্নেল মোস্তফা মিকাহ্’র কাছে। কর্নেল মোস্তফা কাতরাচ্ছে তখনও। তবে জীবনী শক্তি প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। আহমদ মুসা তার পাশে বসে তার মাথা তুলে নিয়ে বলল, ‘আপনি এটা করলেন কেন? আমি সত্যিই আপনাকে বিশ্বাস করেছিলাম।’ ‘ওদের সহযোগিতার জন্য আমার মায়ের নির্দেশ আমি পালন করেছি স্যার। জানি না, মা বড় না দেশ বড়। হয়তো দেশই বড়, কিন্তু মা আমাকে জন্ম দিয়েছেন, পালন করেছেন। তাঁর নির্দেশ আমি ফেলতে পারিনি স্যার।’ বলে একটা ঢোক গিলেই আবার ক্ষীণ স্বরে বলল, ‘স্যার, আমি দেশকেও ভালোবাসি। সেকারণেই আমি আপনাকে মারতে চাইনি। হাতে গুলি করেছিলাম। আমি চেয়েছিলাম মি. মালিক পালাতে পারুক।’ এরই মধ্যে পুলিশের গাড়ি এসে গেল। সামনের গাড়ি থেকে ডিপি খাল্লিকান খাচিপ নামল। খাল্লিকান আহমদ মুসার দিকে ছুটে আসতে আসতে বলল, ‘আপনি ঠিক আছেন স্যার?’ ‘ভালো, মি. খাল্লিকান, আপনি এখুনি কর্নেলকে হাসপাতালে নেবার ব্যবস্থা করুন। আর মি. মালিক মেরারী মালুসকে পুলিশ অফিসে নিয়ে চলুন, আর সেখানে একজন ডাক্তারকে ডাকুন।’ বলল আহমদ মুসা। ‘স্যার, আমি মরতে চাই। বিশ্বাসঘাতক দেশদ্রোহী হয়ে বাঁচতে চাই না। আমাকে দয়া করে হাসপাতালে নেবেন না।’ ক্ষীণ স্বরে আকুতিমাখা কণ্ঠে বলল কর্নেল মোস্তফা। ‘আপনার বিচার আপনি করবেন না কর্নেল। আপনার অসহায় অবস্থার কথা আমি জানি। ঐ রকম মা হলে যে কোন কারো বিপদ আছে।’ আহমদ মুসা বলল। দু’জন পুলিশ এসে ধরাধরি করে কর্নেল মোস্তফাকে গাড়িতে তুলল। মালিক মেরারী মালুসকে আহমদ মুসা নিজের গাড়িতে নিল। দু’টি গাড়ি হাসপাতালের দিকে আর অবশিষ্ট গাড়ি চলল পুলিশ অফিসের দিকে। কিছু পুলিশ থাকল রেস্টুরেন্টের পাহারায়। পুলিশ অফিসে পৌঁছে আহমদ মুসা ডাক্তারকে বলল, ‘মি. মালিক আপনার হেফাজতে থাকবেন এক ঘন্টা। এ সময় আমি আপনার ওখানে উপস্থিত থাকবো।’ ‘তার দরকার নেই স্যার, দু’জন পুলিশ দেব, তারা পাহারা দেবে।’ বলল খাল্লিকান খাচিপ। ‘না মি. অফিসার। মি. মালিকের মত সম্মানী ব্যক্তির চিকিৎসায় আমি হাজির থাকতে চাই।’ আহমদ মুসা বলল। হাসল ডিপি খাল্লিকান খাচিপ। বলল, ‘আপনার কথাই ঠিক স্যার। পুলিশের সিপাইরা তাঁর সম্মানের জন্যে যথেষ্ট নয়। আমি থাকছি আপনার সাথে।’ ঠিক এক ঘন্টা পরেই ডাক্তার তার কাজ শেষে বেরিয়ে গেল। মালিক মেরারী মালুসকে ভিন্ন একটা বেডে সরিয়ে দিয়ে অপারেশন টেবিলটি নার্সরা সরিয়ে নিয়ে গেল। আহমদ মুসা মুখোমুখি হলো মালিক মেরারী মালুসের। ডিপি খাল্লিকান খাচিপ পাশে এসে বসল। ‘মি. মালিক, পুলিশ কিন্তু আপনাকে গ্রেফতার করেনি। সুতরাং আপনি মিসিং একজন মানুষ। এটা করা হয়েছে দুনিয়া থেকে আপনাকে মিসিং করার জন্যে, যদি সত্য কথা না বলেন তবেই।’ আহমদ মুসা বলল। মালিক মেরারী মালুস ঠাণ্ডা দৃষ্টিতে আহমদ মুসার দিকে তাকিয়ে থাকল। কোন কথা বলল না। আহমদ মুসা পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে মালিকের সামনে তুলে ধরে বলল, ‘পূর্ব আনাতোলিয়ার বাভিন্ন শহরে এই লাল ডটগুলোর অর্থ কী, মি. মালিক?’ মালিক মেরারী মালুস কাগজটা দেখে একটু যেন চমকে উঠেছিল। কিন্তু মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিল। কিছুই বলল না।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২০৯৭২ জন


এ জাতীয় গল্প

→ বিপদে আনাতোলিয়া চ্যাপ্টার- ৬ ৩য় অংশ
→ বিপদে আনাতোলিয়া চ্যাপ্টার- ৬ ২য় অংশ
→ বিপদে আনাতোলিয়া চ্যাপ্টার- ৬ ১ম অংশ
→ বিপদে আনাতোলিয়া চ্যাপ্টার- ৫ বাকি অংশ
→ বিপদে আনাতোলিয়া চ্যাপ্টার- ৪ বাকি অংশ
→ বিপদে আনাতোলিয়া চ্যাপ্টার- ৩ বাকি অংশ
→ বিপদে আনাতোলিয়া চ্যাপ্টার- ২ ৩য় অংশ
→ বিপদে আনাতোলিয়া চ্যাপ্টার- ২ এর বাকি অংশ
→ বিপদে আনাতোলিয়া চ্যাপ্টার- ১ বাকি অংশ

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now