বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন
বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

বিপদে আনাতোলিয়া চ্যাপ্টার- ৬ ১ম অংশ

"সাইমুম সিরিজ" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিয়েন সরকার (০ পয়েন্ট)

X ৬ আহমদ মুসা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে তার গাড়িতে উঠল। বাম হাত স্টিয়ারিং-এ রেখে ডান হাতে চাবি ঘুরিয়ে স্টার্ট করল গাড়ি। ঘড়ির দিকে তাকাল। আর আধাঘন্টা বাকি মেজর নাঈমের সাথে দেখা করার। মেজর নাঈম তাকে জানাবে দু’দিন আগে মাউন্ট আরারাতের ‘আর্ক অব নূহা’ উপত্যকায় ‘সোহা’ ও ‘হোলি আর্ক’ গ্রুপের লোকের লোকেরা যে সেনাদের পোষাক পরে গিয়েছিল, তারা সেনাবাহিনীর কিনা এবং নাম-পরিচয় কী? আহমদ মুসা বিষয়টি জানতে টেলিফোন করেছিল আংকারায় জেনারেল মেডিন মেসুদের কাছে। জেনারেল মেসুদ তখনই নাম দিয়েছিল মেজর নাঈমের। বলেছিল, এই মেজর দেশ প্রেমিক এবং সোহাদের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। জেনারেল মেসুদ আরও বলেছিল সে এ ব্যপারে মেজর নাঈমকে একটা ব্রীফ দেবে। পরে মেজর নাঈমই আহমদ মুসার সাথে যোগাযোগ করে দেখা করার সময় ঠিক করেছিল। আহমদ মুসার গাড়ি মুভ করতে যাবে এই সময় একজন সামনে থেকে ছুটে আহমদ মুসার গাড়ি পর্যন্ত এসেই চোখের পলকে পকেট থেকে রিভলভার বের করে আহমদ মুসাকে গুলি করার জন্য। লোকটি ছুটে গাড়ির সামনে আসতেই আহমদ মুসা টের পেয়েছে কী ঘটতে যাচ্ছে। তখন তার রিভলভার বের করার সময় ছিল না। সুতরাং আত্মরক্ষার জন্য চেষ্টার কোন বিকল্প ছিল না। আত্মরক্ষার জন্যে বাম দিকে সীটের উপর শুয়ে পড়ে আক্রমণে যাবার ক্ষেত্রে অসুবিধা হবে। অন্যদিকে সামনে থেকে গুলি আসবে বিধায় সামনের স্টিয়ারিং-এর উপর ঝুঁকে পড়া বিপজ্জনক হবে। সবশেষে আহমদ মুসা ডান হাত ডান লকের উপর রেখে দেহটাকে ডান দরজার সাথে সেঁটে গিল। একটা গুলি কানের পাশ দিয়ে বাম কাঁধের উপর দিয়ে চলে গেল। আহমদ মুসা ডান হাত ইতিমধ্যে দরজার লক খুলে ফেলেছিল এবং দরজা ঠেলে গড়িয়ে পড়ল রাস্তার উপর। রিভলভারও পকেট থেকে বের করে নিয়েছিল আহমদ মুসা। গাড়ির উইন্ড স্ক্রিন সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছিল। নিয়ন্ত্রণহীন গাড়িটা তার সামনে দিয়ে রাস্তার ডান পাশের দিকে গড়িয়ে চলল। আহমদ মুসা রিভলভার বাগিয়ে দ্রুত গড়িয়ে চলল গাড়ির সাথে যাতে তার অবস্থান সম্পর্কে শত্রু পক্ষের বিভ্রান্তির সুযোগ সে নিতে পারে। তাই হলো। আহমদ মুসা লোকটির পেছনে এসে পড়ল। ওদিকে লোকটি সত্যিই বিভ্রান্ত হয়েছিল। সে সামনে তাকিয়ে আহমদ মুসাকে না দেখে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল গাড়ির দিকে ছুটে আসার জন্যে। তার হাতে উদ্যত রিভলভার। ঘুরে দাঁড়িয়েই সে দেখতে পেল আহমদ মুসাকে। কিন্তু সে তার রিভলভার আহমদ মুসার দিকে ঘুরিয়ে নেবার আগেই আহমদ মুসার রিভলভারের গুলি তার ডান হাতে বিদ্ধ হলো। রিভলভার ছিটকে পড়ল তার হাত থেকে। হাত চেপে ধরে দৌড় দিল লোকটি পালাবার জন্যে। এবার আহমদ মুসা তার পায়ে গুলি করল। তাকে জীবন্ত হাতে পেতে চায় আহমদ মুসা। এ পর্যন্ত ‘সোহা’ কিংবা ‘হোলি আর্ক গ্রুপ’- এর কাউকেই জীবন্ত ধরা যায়নি। পায়ে গুলি খেয়ে পড়ে গেল লোকট। আহমদ মুসা ছুটল তার দিকে। লোকটি পেছন ফিরে আহমদ মুসাকে একবার দেখল। তারপর গলায় ঝুলানো সোনার চেইনের লকেট মুখে পুরে শুয়ে পড়ল। আরো জোরে দৌড়াল আহমদ মুসা। কিন্তু কোন ফল হলো না। আহমদ মুসা পৌঁছার আগেই পটাসিয়াম সায়ানাইড বিষ লোকটির জীবন কেড়ে নিয়েছে। আহমদ মুসা লোকটার কাছে পৌঁছার সাথে সাথে ডিপি খাল্লিকান খাচিপ এবং পুলিশরাও পৌঁছে গেল। ‘স্যার, আপনি ঠিক আছেন তো? এরা পাগল হয়ে উঠেছে। আপনাকে সাবধান হতে হবে স্যার।’ আহমদ মুসাকে লক্ষ্য করে বলল ডিপি খাল্লিকান খাচিপ। খাল্লিকান খাচিপের কোন কথার জবাব না দিয়ে আহমদ মুসা বলল, ‘মি. খাল্লিকান খাচিপ, একেও জীবন্ত ধরা গেল না। এর হাতে পায়ে গুলি করে ভেবেছিলাম জীবন্ত ধরতে পারব, তা হলো না। বুঝা যাচ্ছে, ‘সোহা’দের হার্ডকোর লোক যারা, তারা প্রত্যেকেই কাছে পটাসিয়াম সায়ানাইড রাখে।’ ‘সাংঘাতিক ফেরোশাস আর দারুণ কমিটেড এরা দেখছি। এরকম ‘ডু-অর-ডাই’ যাদের নীতি, তাদের সাথে পারা কঠিন। স্যার, এখান থেকে বেরুলে দয়া করে আপনি পুলিশ নিয়ে বেরুবেন। আপনার নিরাপত্তার ব্যাপারে আমরা এত উদাসিন জানতে পারলে উপরওয়ালারা আমার চাকুরীই রাখবে না স্যার।’ বলল ডিপি খাল্লিকান খাচিপ। ‘উপরওয়ালাদের আমি দেখব মি. খাল্লিকান খাচিপ। আপনি এ লাশসহ আগের দু’টি লাশকে দেখুন, এদের কোন ঠিকানা-পরিচয় বের করা যায় কিনা। আমার জরুরি কাজ আছে এক জায়গায়। আমি সেখানে যাচ্ছি।’ বলে আহমদ মুসা যাবার জন্যে উঠে দাঁড়াল। মি. খাল্লিকান খাচিপ আহমদ মুসার মুখের দিকে তাকিয়ে তাকে বাধা দেবার সাহস পেল না। তবু বলল, ‘স্যার, আপনার উইন্ড শিল্ড একেবারে ছাতু হয়ে গেছে। আপনি আমার গাড়ি নিয়ে যান।’ ‘পুলিশের গাড়ি নিয়ে গেলে অসুবিধা আছে।’ আহমদ মুসা বলল। ‘আমি এখনি একটা প্রাইভেট কার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি স্যার। উইন্ড শিল্ডের ভাঙা কাঁচে আপনার গাড়ির ভেতরটা বসার অযোগ্য হয়ে গেছে।’ বলল ডিপি খাল্লিকান খাচিপ। হাসল আহমদ মুসা। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘সে সময় নেই মি. খাল্লিকান খাচিপ। ইতিমধ্যেই আমার দেরি হয়ে গেছে। ভাববেন না, যুদ্ধ ক্ষেত্রে এর চেয়ে অনেক ভাঙা গাড়ি নিয়ে চলতে হয়। আমরা এখন যুদ্ধক্ষেত্রে ধরে নিন।’ বলেই আহমদ মুসা উঠে দাঁড়াল। চলল গাড়ির দিকে। ‘মি নাজিম, একে দেখুন। এর নাম ছাড়া তার কিছুই আমরা জানি না। আমাদের দেশে তার কোন স্বার্থও নেই। কিন্তু দেখুন বার বার মৃত্যুর মুখে পড়লেও আমাদের লড়াই তিনি লড়ে যাচ্ছেন। নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মডেল মানুষ আর দ্বিতীয় আছে বলে মনে হয় না। আল্লাহ্ তার ভালো করুন।’ আহমদ মুসাকে দেখিয়ে পাশে দাঁড়ানো পুলিশ অফিসার নাজিমকে কথাগুলো বলল ডিটি খাল্লিকান খাচিপ। ‘স্যার, এ ধরনের ভালো লোক আছে বলেই পৃথিবীটা এখনও কল্যাণ নিয়ে টিকে আছে। পর্বত প্রমাণ উঁচু স্যার এদের কর্তব্য, কিন্তু এরা নিজেদেরকে সবার চেয়ে ছোট করে দেখে। সেদিন স্যার খানার টেবিলে একটা প্লেট কম পড়েছিল। আমি শেষ প্রান্তে ছিলাম। প্লেট আমি সে কারণেই পাইনি। উনি উঠে এসে তার খানার প্লেটটি আমাকে দিয়ে আমার পরে বসলেন। আমি প্রতিবাদ করার আগেই বললেন, ‘খেয়েই আপনাকে ডিউটিতে দৌড়াতে হবে। আমার সে রকম ডিউটির কোন তাড়া নেই। সুতরাং আমার একটু পরে খেলে ক্ষতি নেই।’ আমার মত একজন পেটি পুলিশ অফিসার আর কোথায় তিনি, যাকে স্বয়ং প্রেসিডেন্টও সমীহ করেন, শ্রদ্ধা করেন। তাঁর এই কাজ আমাকে বড় করেনি বরং আরও বড় করেছে তাঁকেই।’ ‘ধন্যবাদ ইন্সপেক্টর মি. নাজিম। আপনি ঠিক চিন্তা করেছেন। আসলেই তিনি ভিন্ন মাপের, ভিন্ন প্রকৃতির মানুষ। এমন মানুষ আমি দেখিনি।’ কথাগুলো বলছিল ডিপি খাল্লিকান খাচিপ আহমদ মুসার চলন্ত গাড়ির দিকে তাকিয়ে। তার দু’চোখের শূন্য দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল সেদিকে গাড়িটি দৃষ্টির বাইরে চলে যাবার পরও। দৃষ্টি তার বাইরে থাকলেও তার অন্তরে চলছে তখন একটা হিসাব-নিকাশ। আবু আহমদ নামের লোকটি তো আমার মত খাল্লিকান খাচিপকেও পাল্টে দিয়েছে। আমি টাকার বিনিময়ে আসামীকে বাদী বানাতাম, আর বাদীকে বানাতাম আসামী। বিচার বিক্রি করতাম টাকার বিনিময়ে। অবশেষে টাকার বিনিময়ে দেশের শত্রুদেরও সাহায্য করতে শুরু করেছিলাম। এই আবু আহমদের নিঃস্বার্থ কাজের বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত আমার বিবেককেও জাগিয়ে তুলেছে। সে বিবেকের পাহারায় আমার মত লোকও সেই পাপগুলো করার আর সুযোগ পাচ্ছে না। পুলিশ অফিসার মি. নাজিম ডিপি খাল্লিকান খাচিপকে আপনার মধ্যে বিভোর হয়ে যেতে দেখে বলল, ‘স্যার, লাশগুলো নিয়ে যেতে হবে।’ চমকে উঠে ফিরে তাকিয়ে বলল, ‘চলুন অফিসার।’ ‘চলুন।’ বলল পুলিশ অফিসার। ওদিকে আহমদ মুসার গাড়ি পৌঁছে গেল মাউন্ট আরারাত সেনা ক্যাম্পের বাইরে হাইওয়ের পাশের মাউন্ট মালিক রেস্টুরেন্টে। রেস্টুরেন্টটির ঠিক বিপরীতে রাস্তার ওপাশের উপত্যকায় রয়েছে বিরাট এক আঙুর বাগান। বাগানের মালিকানা একজন ইহুদি ব্যবসায়ীর। তার নাম মালিক মেরারী মালুস। তার নামের প্রথম শব্দ দিয়ে নামকরণ করা হয়েছে রেস্টুরেন্টটির। মজার ব্যপার হলো তার এই ইহুদি পরিচয় কেউ জানে না। সবাই তাকে মালিক সাহেব বলে জানে। রেস্টুরেন্টের মালিক হবার সুবাদে সেনা অফিসারদের সাথে তার ব্যপক পরিচয়। আহমদ মুসা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি পার্ক করে রেস্টুরেন্টের ভেতরে প্রবেশ করল। রেস্টুরেন্টের সবচেয়ে দূরবর্তী কোণের নির্ধারিত টেবিল তখনও খালি। আহমদ মুসা বসল গিয়ে টেবিলটিতে। দু’মিনিটের মধ্যেই প্যান্ট ও টি-সার্ট পরা একজন তরুণ এসে টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে টেবিলে বসার জন্য অনুমতি চাইল। আহমদ মুসা তরুণটির মুখের দিকে চেয়ে দেখল তার নাকের ডান পাশে সুন্দর কালো একটা আচিল। এই চিহ্নটার কথাই জেনারেল মেডিন মেসুদ আহমদ মুসাকে জানিয়েছিল। ‘বসুন।’ বলল আহমদ মুসা। তরুণটি বসে বলল, ‘স্যার, আমি মেজর নাঈম মেহরান। জেনারেল মেডিন মেসুদের নির্দেশে আমি এখানে এসেছি।’ ‘জানি। নাস্তার অর্ডার দিয়েছি। নাস্তা খেতে খেতেই কথা হবে।’ আহমদ মুসা বলল। আহমদ মুসা কথা শেষ হবার সাথেই নাস্তা এসে গেল। নাস্তায় কাঁটাচামচ লাগাবার আগেই মেজর নাঈম মেহরান পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে আহমদ মুসার হাতে দিয়ে বলল, ‘স্যার, এটি পকেটে রাখুন।’ আহমদ মুসা দ্রুত কাগজটি নিয়ে পকেটে পুরে বলল, ‘সবার পরিচয় এসেছে?’ ‘সবার সম্ভব হয়নি, তবে অফিসারদের সবার পরিচয় পাওয়া গেছে।’ নাস্তার দিকে মুখ রেখে আস্তে করে বলল মেজর নাঈম মেহরান। ‘কর্নেলের নাম?’ জিজ্ঞাসা আহমদ মুসার। ‘নূহা উপত্যকায় তথাকথিত সেনা অভিযানের নেতৃত্বে যে একজন কর্নেল ছিলেন তার নাম মোস্তফা মিকাহ।’ বলল মেজর নাঈম মেহরান। নামের শেষ শব্দটা বিস্মিত করল আহমদ মুসাকে। ‘মিকাহ্’ হিব্রু শব্দ। অর্থ ঈশ্বরের মত। এমন একটা হিব্রু নাম কোন মুসলমানের হতে পারে না। আর এই অর্থের নাম তো কোন মুসলমান রাখতেই পারে না। আহমদ মুসা বলল, ‘কর্নেল মোস্তফা মিকাহ্ মুসলমান তো?’ ‘অবশ্যই। কেন বলছেন এ কথা?’ বলল মেজর নাঈম মেহরান। ‘তার মা নিশ্চয় ইহুদি কিংবা ইহুদি বংশোদ্ভুত ছিল। তা না হলে কর্নেলের নামে হিব্রু শব্দ এল কী করে?’ আহমদ মুসা বলল। ‘ইহুদি মা হওয়া অসম্ভব নয়। কিন্তু সন্তান তো মুসলমান। তার নামে হিব্রু শব্দ রাখবে কেন? নিশ্চয় ভুল হয়েছে।’ বলল মেজর নাঈম মেহরান। হাসল আহমদ মুসা। বলল, ‘ভুল নয় মেজর। ইহুদি বংশনীতির বিধান হলো, তাদের মেয়েরা যাদের বা যে ধর্মের লোকের ঘরেই থাক, তাদের গর্ভের ছেলেরা হবে ইহুদি। এমন ছেলেদের তারা ইহুদি হিসাবেই গণনা করে।’ বিস্ময় ফুটে উঠল মেজর নাঈম মেহরানের চোখে মুখে। বলল, ‘তাহলে কর্নেল মোস্তফা মিকাহ্ ইহুদি?’ দু’জনেই মুখ নিচু করে খেতে খেতে কথা বলছিল। আহমদ মুসা মেজর নাঈমের কথার কোন উত্তর না দিয়ে মুখ তুলল। মুখ তুলে মাথাটা সোজা করতেই তার চোখ সোজাসুজি গিয়ে পড়ল কাউন্টারের এক পাশে বিশাল চেয়ারে বসে থাকা একজন সুদর্শন সুবেশধারী ভদ্রলোকের উপর। লোকটি তার দিকেই তাকিয়েছিল। আহমদ মুসার সাথে চোখাচোখি হতেই লোকটি চমকে উঠে তার চোখ সরিয়ে নিল। লোকটির হাতে মোবাইল এবং তার সামনে একটা কম্পিউটার। আহমদ মুসা কিন্তু চোখ সরিয়ে নেয়নি। তার চোখে বিস্ময়, মনে প্রশ্ন। লোকটি তার দিকে তাকিয়ে ছিল কেন? অবশ্য তার উপর হঠাৎ চোখ পড়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সে চমকে উঠল কেন? এই চমকে ওঠার অর্থ হলো, ধরা পড়ার ভয়। কিন্তু সে কী করছিল যে ধরা পড়ার ভয় করবে? তাহলে কি সে আহমদ মুসার সবকিছু ফলো করছিল? কিভাবে? কোন প্রশ্নেরই আহমদ মুসার কাছে জবাব নেই। আহমদ মুসা দেখল লোকটি মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু এর পরও তার চোখের একটা কোণ যেন আহমদ মুসার পাহারায় নিয়োজিত রয়েছে। আহমদ মুসা মুখ নিচু করল। বলল খেতে খেতে, ‘আমাদের এই রেস্টুরেন্টের মালিককে কতটুকু চেনেন?’ ‘কেন, তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী, সফল ফার্মমালিক।’ বলল মেজর নাঈম মেহরান। ‘আমি তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছি মেজর।’ আহমদ মুসা বলল। ‘উনি একদমই রাজনীতি বিমুখ। রেস্টুরেন্টে কোন রাজনৈতিক আলোচনাও তিনি এলাও করেন না।’ ‘চলুন, তাহলে এবার উঠি।’ বলেই আহমদ মুসা নাস্তার বিল টেবিলে রেখে উঠে দাঁড়াল। উঠে দাঁড়াল না মেজর নাঈম মেহরান। সে বসে বসে ঠাণ্ডা পানিতে একটু করে চুমুক দিচ্ছিল। বলল সে, ‘স্যার, আপনি যান। আমি পরে যাব।’ ‘ও ঠিক আছে। সেটাই ভালো।’ বলে আহমদ মুসা রেস্টুরেন্টের দরজার দিকে পা বাড়াল। রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে কয়েক ধাপ এগিয়েছে আহমদ মুসা এমন সময় তার পাশে এসে একটি গাড়ি হার্ড ব্রেক করল। গাড়ি থেকে হন্তদন্ত হয়ে নামল একজন সেনা অফিসার। তার ইউনিফর্মের শোল্ডাল ব্রান্ডে একজন কর্নেলের ইনসিগনিয়া। সে গাড়ি থেকে নেমেই মুখোমুখি হলো আহমদ মুসার। কর্নেল দ্রুত তার পকেট থেকে রাভলভার বের করে তার নল আহমদ মুসার কপালে ঠেকিয়ে বলল, ‘ইউ আর আন্ডার এ্যারেস্ট।’ আহমদ মুসা হাসল। বলল, ‘কর্নেল মোস্তফা মিকাহ্ আমার অপরাধ কী?’ ‘জানতে পারবেন।’ বলল কর্নেল মোস্তফা মিকাহ্। ‘আমি জানি আমার অপরাধ। আমি আপনাকে এবং মালিক মেরারী মালুসকে জেনে ফেলেছি।’ আহমদ মুসা বলল। কথাটা শুনে চমকে উঠেছিল কর্নেল মোস্তফা মিকাহ্। তার হাতটাও কেঁপে গিয়েছিল। আহমদ মুসা তার এই মেকি অবস্থার সুযোগ গ্রহণ করল। বিদ্যুৎ বেগে তার বাম হাতটা উঠে গিয়ে কর্নেল মোস্তফা মিকাহ্’র রিভলভার ধরা হাত এক ধাক্কায় উপরে ঠেলে দিল। একটা গুলিও রিভলভার থেকে বেরুল, কিন্তু তা মাথার উপর দিয়ে চলে গেল। কিন্তু তার পরেই দৃশ্যপট পাল্টে গেল। আহমদ মুসার ডান হাত বাম হাতের সাথেই উপরে উঠে গিয়েছিল। রিভলভার থেকে গুলি বেরুবার সাথে সাথেই আহমদ মুসার ডান হাত কর্নেলের হাত থেকে রিভলভার কেড়ে নিল। আহমদ মুসা রিভলভার কেড়ে নিয়েই পচণ্ড একটা আঘাত করল কর্নেলের মাথায় রিভলভারের বাঁট দিয়ে। মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিল কর্নেল। আহমদ মুসা তাকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে কর্নেলের গাড়িতে ঢুকিয়ে দিয়ে ড্রাইভিং সীটে গিয়ে বসল। গাড়ি স্টার্ট নিয়ে দ্রুত চলতে শুরু করল। আহমদ মুসা যখন কর্নেলকে রিভলভারের বাঁট দিয়ে মেরে তার সংজ্ঞাহীন দেহ গাড়িতে তুলছিল, তখন রেস্টুরেন্টের মালিক মি. মালিক মেরারী মালুস রেস্টুরেন্টের দরজায় এসে দাঁড়িয়েছিল। ভয়ংকর বিস্ময় আর উদ্বেগে তার মুখ চুপসে গেছে। সব ঘটনা মেজর নাঈম মেহরানও দেখতে পেয়েছিল। সেও উদ্বেগ নিয়ে ছুটে এসেছিল। কিন্তু আহমদ মুসার গাড়ি ততক্ষণে রেস্টুরেন্ট এলাকার বাইরে চলে গেছে। দাঁড়িয়ে পড়েছিল মেজর নাঈম মেহরান। এ ঘটনায় সে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল। তবে সে ভাবল, জনাব আবু আহমদ উপরের লোক। তিনি যাই করুন ভেবে চিন্তেই করবেন। সব চিন্তা মাথা থেকে সরিয়ে দিয়ে মেজর নাঈম ধীরে ধীরে গিয়ে তার গাড়িতে উঠল। ওদিকে আহমদ মুসা সংজ্ঞাহীন একজন আস্ত কর্নেলকে পাঁজাকোলা করে তার কক্ষে আহমদ মুসাকে ঢুকতে দেখে আঁতকে উঠল সে। বলল, ‘এই তো গেলেন, কোথায় পেলেন একে?’ ‘এ সেই কর্নেল যার ইউনিফর্ম পরে সেদিন ‘আর্ক অব নূহা’ উপত্যকায় শহীদ হয়েছিল একজন ভূয়া কর্নেল।’ আহমদ মুসা বলল। বুঝল ডিপি খাল্লিকান খাচিপ। বলল, ‘ধন্যবাদ স্যার, আপনি অনেকটা অগ্রসর হয়েছেন।’ ‘আসল কাজটাই হয়নি। আপনি আমাকে সাহায্য করুন। এর কাছ থেকে অনেক কথা বের করতে হবে।’ আহমদ মুসা বলল। ‘অবশ্যই স্যার।’ বলল খাল্লিকান খাচিপ। ঘরের মেঝেয় শুইয়ে দিয়েছিল কর্নেল মোস্তফা মিকাহকে। ‘সংজ্ঞা ফিরতে কত সময় লাগে কে জানে?’ স্বগত উক্তি করল খাল্লিকান খাচিপ। ‘সংজ্ঞা ফিরেছে মি. খাল্লিকান খাচিপ। ও এখন সংজ্ঞাহীনতার ভান করছে।’ বলেই আহমদ মুসা পকেট থেকে কলম নিয়ে এর নিবের তীক্ষ্ণ মাথা দিয়ে জোরে খোঁচা দিল কর্নেলের পায়ে। কর্নেলের গোট দেহ স্প্রি-এর মত নেচে উঠল। ‘আর নাটক না করে উঠে বসুন কর্নেল।’ আহমদ মুসা বলল। এই সাথে একটা চেয়ারও এগিয়ে দিল আহমদ মুসা কর্নেলের দিকে। কর্নেল মোস্তফা মিকাহ্ উঠে চেয়ারে বসতে বসতে বলল, ‘আপনার এই সাংঘাতিক আচরণের মাশূল আপনাকে দিতে হবে। আমি একজন সেনা অফিসার, মনে রাখবেন।’ হাসল আহমদ মুসা। বলল, ‘কর্নেল মোস্তফা মিকাহ্ তো সেদিন ‘আর্ক অব নূহা’ উত্যকায় নিহত হয়েছেন। লাশের ছবিও আমরা দেখাতে পারি। মি. খাল্লিকান খাচিপ ছবিটা তাকে দেখান তো প্লিজ।’ খাল্লিকান খাচিপ ড্রয়ার থেকে একটা ছবি বের করে কর্নেল মোস্তফা মিকাহ্’র চোখের সামনে তুলে ধরে বলল, ‘দেখুন কর্নেল মোস্তফার নাম, নাম্বার সবই এখানে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।’ মুখ চুপসে গেল কর্নেল মোস্তফা মিকাহ্’র। আহমদ মুসার মুখ গম্ভীর হয়ে উঠেছিল। বলল, ‘আপনি ‘সোহা’ ও ‘হোলি আর্ক গ্রুপ’-এর সাথে কতদিন থেকে আছেন?’ ‘কী বলছেন আপনি? ঐ ধরনের কোন দলকে আমি চিনি না।’ বলল কর্নেল মোস্তফা। আহমদ মুসা পকেট থেকে রিভলভার হাতে নিয়ে বলল, ‘দেখুন কর্নেল, আমরা গল্প-গুজব করতে বসিনি। এক কথা আমি দু’বার বলব না।’ থামল আহমদ মুসা। পকেট থেকে এক খণ্ড কাগজ বের করল। ভাঁজ করা কাগজটি খুলল সে। কাগজটি মেলে ধরল সে কর্নেলের সামনে। বলল, ‘এই কাগজটি আমি হোলি আর্ক গ্রুপের একজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতার পকেট থেকে পেয়েছি। কাগজটি সাদা কাগজের একট শীট। কাগজে মার্ক ডিটেকটর ক্যামিকেল ছিটাবার পর এটা একটা নকশায় পরিণত হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে পূর্ব আনাতোলিয়ার আর্মেনিয়া সংলগ্ন তিনটি প্রদেশ এবং ছোট-বড় সবগুলো শহরের লোকেশন আছে। সেই সাথে রেড ডট। ২টি থেকে ৫টি পর্যন্ত ডট রয়েছে বিভিন্ন শহরে। আমি জানতে চাই কর্নেল, এই রেড ডটগুলোর অর্থ কী?’ ‘বিশ্বাস করুন স্যার, এ ধরনের কাগজ আমি এই প্রথম দেখলাম। আমি জানি না এর অর্থ কী?’ বলল কর্নেল মোস্তফা মিকাহ্।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২০৯৮০ জন


এ জাতীয় গল্প

→ বিপদে আনাতোলিয়া চ্যাপ্টার- ৬ ৩য় অংশ
→ বিপদে আনাতোলিয়া চ্যাপ্টার- ৬ ২য় অংশ
→ বিপদে আনাতোলিয়া চ্যাপ্টার- ৬ ১ম অংশ
→ বিপদে আনাতোলিয়া চ্যাপ্টার- ৫ বাকি অংশ
→ বিপদে আনাতোলিয়া চ্যাপ্টার- ৪ বাকি অংশ
→ বিপদে আনাতোলিয়া চ্যাপ্টার- ৩ বাকি অংশ
→ বিপদে আনাতোলিয়া চ্যাপ্টার- ২ ৩য় অংশ
→ বিপদে আনাতোলিয়া চ্যাপ্টার- ২ এর বাকি অংশ
→ বিপদে আনাতোলিয়া চ্যাপ্টার- ১ বাকি অংশ

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now