বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
৫
চাঁদ ডুবে গেল পশ্চিমে। সূর্যও উঠল পূবে। রাতটা
বৃথাই গেল আহমদ মুসাদের।
‘মি. আবু আহমদ, নিশ্চয় ওরা কোনোভাবে টের
পেয়ে গেছে যে আমরা ওদের প্ল্যান
জেনে ফেলেছি।’ বলল মেন্দারিস মালিক।
‘এটাও সম্ভব নয়। রাত ১২ টার আগ পর্যন্ত আপনার ও
আমাদের লোকরা পাহাড়ের পথ থেকে বেশ
দূরে দূরে এককভাবে দাঁড়িয়ে পাহারা দিয়েছে।
তাদের দেখে বড় রকমে সন্দেহ করা অসম্ভব।
অতএব সন্দেহ বশে ফিরে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে
না। আর রাত ১২ টার পর আমাদের লোকরা পাহাড়ে
ওঠার কয়েকটি রাস্তার পাশে ক্লোজ হয়েছে,
সেটাও দলবেঁধে নয়, এককভাবে অন্ধকারে
ক্রলিং করে। এতে তাদের দেখতে পাওয়া এবং
ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। এককভবে কাউকে
পেলে, সন্দেহ হলে তাকে পাকড়াও বা শেষ
করার কথা। কিন্তু এমন ঘটনা একটিও ঘটেনি। অতএবত
তারা ফিরে গেছে এ বিষয়টাকে আমরা হিসেবের
বাইরে রাখতে পারি।’
‘তাহলে তারা না কেন?’ বলল ড. বারজেনজো।
এই ড. বারজেনজোরই বাগদত্তা ড. আজদা। ড.
বারজেনজোকে তাদের পারিবারিক প্রয়োজনে
দেশের বাইরে যেতে হয়েছিল। কয়েকদিন
হলো ফিরে এসেছে। আহমদ মুসা তাকে
ডেকে নিয়েছে। আহমদ মুসা তার বাড়িতে
গিয়েছিল। পরিচিত হয়ে এসেছে সবার সাথা।
ড. বারজেনজোর কথা শেষ হতেই সেখানে
এলো অরিয়াস এলাকার ভারপাপ্ত পুলিশ অফিসার রশিদ
দারাগ এবং আরারাত অঞ্চলের ডাইরেক্টর অব পুলিশ
খাল্লিকান খাচিপ। খাল্লিকান খাচিপ বলল, ‘স্যার ঐ
প্রশ্নটা আমারও, ওরা এল না কেন?’
‘এ প্রশ্ন আমারও। প্রশ্নটারই উত্তর সন্ধান করছি।
মনে হয় উত্তরটা আমি পেয়েও গেছি।’ বলল
আহমদ মুসা।
‘পেয়ে গেছেন? কী সেটা?’ উদগ্রীব
কণ্ঠে বলল ড. বারজেনজো।
হাসল আহমদ মুসা। বলল, ‘আমার মনে হয় শব্দের
অর্থ গ্রহণের ব্যাপারে আমাদের ভুল হয়েছে।’
একটু থামল আহমদ মুসা।
তাকাল ডিপি, খাল্লিকান খাচিপের দিকে।
বলল, ‘ফুলমুন কী?’
‘কেন, ফুলমুন তো পূর্ণিমা।’ বলল খাল্লিকান খাচিপ।
‘অমাবস্যা ফুলমুন নয় কেন?’ জিজ্ঞাসা আহমদ মুসার।
‘অমাবস্যায় চাঁদ তো দেখা যায় না।’ বলল খাল্লিকান
খাচিপ।
‘দেখা যায় না, কিন্তু অমাবস্যায় মুন তো ফুলই হয়ে
থকে। বলা যেতে পারে, এটা ডার্ক ফুলমুন, আর
পূর্ণিমারটা লাইটেড ফুলমুন। অন্যভাবেও বলা যায়,
একটা কৃষ্ঞপক্ষের ফুলমুন, আরেকটা
শুক্লপক্ষের ফুলমুন।’ আহমদ মুসা বলল।
‘চমৎকার! নতুন তত্ব। কিন্তু বাস্তবতা আমি মনে করি
এটাই। নতুন তত্বটি আমরা মেনে নিলাম স্যার। কিন্তু
স্যার, এই নতুন অর্থ গ্রহণ করে এর দ্বারা আপনি
কী বুঝাতে চাচ্ছেন?’ বলল ড. বারজেনজো।
হাসল আহমদ মুসা। বলল, ‘অপরাধীদের জন্যে
শুক্লপক্ষ ভালো, না কৃষ্ঞপক্ষ ভালো?’
‘কৃষ্ঞপক্ষ।’ বলল খাল্লিকান খাচিপ।
‘এ কারণেই কি তারা কৃষ্ঞপক্ষের ফুলমুনে
অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ আহমদ মুসা
বলল।
কোন কথা এল না ডিপি খাল্লিকান খাচিপ, ইন্সপেক্টর
রশিদ দারাগ এবং ড. বারজেনজোর দিক থেকে।
নির্বাক তারা। বিস্ময় তাদের চোখে-মুখে।
ইন্সপেক্টর রশিদের মুখ তো বিস্ময়ে ‘হা’ হয়ে
গেছে।
‘এই সহজ কথাটা আমাদের মাথায় আসেনি কেন?
পূর্ণিমায় তো ওরা কিছুতেই আসতে পারে না।
পূর্ণিমায় মাউন্ট আরারাতের বরফাবৃত অংশে তো
আলোর মহামেলা বসে। বরফের উপর চাঁদের
আলো পড়ে দিনের বেলার চেয়ে অনেক
বেশি চোখ ধাঁধাঁনো উজ্জ্বল হাসি হাসে মাউন্ট
আরারাত। এই আলোর মেলায় তো অন্ধকারের
জীব অপরাথীরা অন্ধকারের কাজ নিয়ে আসতে
পারে না। তাদের জন্যে কৃষ্ঞপক্ষের অমাবস্যা বা
ডার্ক ফুলমুনই উপযুক্ত সময়। ধন্যবাদ মি. আবু
আহমদ। অদ্ভুত আপনার বিশ্লেষণ। সত্যিই আপনি
আল্লাহর সবিশেষ নেয়ামতে ধন্য।’ খল্লিকান খাচিপ
বলল।
‘আলহামদুলিল্লাহ। এক বিরাট সমস্যার সমাধান হয়ে
গেল। এখন তাহলে আমাদের কী করণীয়?’
বলল ড. বারজেনজো।
‘কিছু নয়, আসুন আমরা কৃষ্ঞপক্ষের ডার্ক
ফুলমুনের অপেক্ষা করি।’
একটু থেমেই আহমদ মুসা বলল, ‘আজকের মত
কাজ আমাদের সাঙ্গ হলো। চলুন ফিরে যাই আমরা।’
কৃষ্ঞপক্ষের শেষ প্রান্ত। পূর্ণ অবয়ব নিয়ে চাঁদ
বর্তমান। কিন্তু তা পৃথিবীর আড়ালে। এখন পৃথিবীও
নিকশ অন্ধকারে ঢাকা, চাঁদও।
মাউন্ট আরারাতের সাড়ে ১৪ হাজার ফিট উপরে
স্নো-লাইনের প্রায় প্রান্ত ঘেঁষে স্থাপিত ৫ম
ট্যুরিস্ট বেজ ক্যাম্পের একটা তাঁবুতে বসা আহমদ
মুসা তার হাতের ঘড়ির দিকে তাকাল। রাত ৯টা বাজে।
তাঁবুতে আরও ৭ জন। সবাই ক্যাম্প-চেয়ারে বসে।
সবারই পরনে ট্যুরিস্ট পোষাক।
আহমদ মুসারা ১ দিন আগে এই ৫ নং বেজ ক্যাম্পে
এসেছে। তিন দিন আগে তারা যাত্রা করেছিল
পর্বতের গোড়ায় স্থাপিত এক নম্বর বেজ ক্যাম্প
থেকে।
ঘড়ির দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিতেই মোবাইল
বেজে উঠল আহমদ মুসার।
আহমদ মুসা তাকাল মেন্দারিস মালিকের দিকে। বলল,
‘আপনি আর ড. বারজেনজো তাঁবুর বাইরেটা
দেখে আসুন অবাঞ্ছিত কিছুর উপস্থিতি আছে কি
না।’
মোবাইল বেজে চলেছে। বেজে থেমে
গেল। ধরল না আহমদ মুসা। বাইরের রিপোর্ট
পায়নি।
মিনিট দেড়েক পরে ড. বারজেনজো এসে
বলল, ‘বাইরেটা ঠিক আছে।’
আহমদ মুসা মিসকলটায় কল করল।
ওপার থেকে কথা বলল ডাইরেক্টর অব পুলিশ
খাল্লিকান খাচিপ। বলল, ‘স্যার, ওদিকের খবর কী?’
‘কোন খবর নেই মি. খাচিপ। কোন দিক থেকেই
কোন নড়াচড়া নেই।’ বলল আহমদ মুসা।
‘ওদের নড়া-চড়া আজকেও দেখা যাবে না বলেই
মনে হচ্ছে। খবর পেলাম, সেনাদের একটা দল
পাহাড়ের উপরে গেছে। ওরাও মনে হয় খবর
পেয়েছে। এ জন্যেই তারা গেছে যাতে
মাউন্ট আরারাতের কোন ক্ষতি না হয়, ক্রিমিনালরা
যাতে উপরে গিয়ে কোন ঘটনা ঘটাতে না পারে।
আমাদের বোধ হয় আজকেও খালি হাতে ফেরত
যেতে হবে, স্যার।’
‘একটা বিষয়, মি. খাল্লিকান খাচিপ। মাউন্ট আরারাতে
কোন অপরাধ ঘটতে যাচ্ছে বা অপরাধীরা
এখানে একত্রিত হচ্ছে, এটা সেনাবাহিনী জানতে
পারলে সে খবর পুলিশকে জানানোর কথা। তারা
নিজেরাও যদি অভিযান পরিচালনা করতে চায়, তাহলেও
পুলিশকে তারা জানাবে এবং পুলিশকেও তারা সাথে
নেবে। তাই কি না, মি. খাল্লিকান খাচিপ?’ আহমদ মুসা
বলল।
‘এটই নিয়ম। কিন্তু ওরা তো কিছু জানায়নি। হতে
পারে জানাবার সময় হয়নি। বিষয়টি ইমারজেন্সি বলেই
তারা নিজেরাই এগিয়ে এসেছে।’ বলল খাল্লিকান
খাচিপ।
‘এটাও হতে পারে। কিন্তু অয়্যারলেস,
মোবাইলের যুগে এটা বিশ্বাস করা কঠিন। ঠিক
আছে। তবে ঐ সেনাদের আসা দেখে
আমাদের পরিকল্পনার কোন হেরফের হবে না।
প্লিজ, দেখবেন কোথাও যেন কোন শিথিলতা না
আসে।’ আহমদ মুসা বলল।
‘এটাই উচিত। ঠিক আছে স্যার। দায়িত্বের
ক্ষেত্রে কোন অন্যথা হবে না।’ বলল খাল্লিকান
খাচিপ।
‘ধন্যবাদ। আস্-সালামু ‘আলাইকুম।’
কল ক্লোজ করে মোবাইল রেখে দিল আহমদ
মুসা।
হন্ত-দন্ত হয়ে তাঁবুতে প্রবেশ করল মেন্দারিস
মালিক। বলল, ‘একদল সৈন্য এদিকে আসছে।’
তার কথা শেষ হতে না হতেই হুড়মুড় করে
তাঁবুতে প্রবেশ করল একদল সৈন্য। তাঁবুতে
প্রবেশ করেই একজন সৈন্য তার স্টেনগানের
ব্যারেল সবার উপর দিয়ে একবার ঘুরিয়ে নিয়ে
বলল চিৎকার করবে না, তোমরা সকলে হাত তুলে
দাঁড়াও। কেউ চালাকির চেষ্টা করলে তাকে
কুকুরের মত গুলি করে মারবো।’ উপস্থিত
সৈনিকদের দিকে একবার তাকিয়ে আহমদ মুসা হাত
তুলল।
সবাই আগেই হাত উপরে তুলেছিল।
আহমদ মুসা সৈনিকদের দেখছিল গভীরভাবে।
সৈনিকদের পোষাকে কোন খুঁত নেই। পায়ের
বুটও এই সৈনিকদের। সবার মাথার চুলই আর্মি কাট। মি.
খাল্লিকান খাচিপ তাহলে এই সৈনিকদের কথাই
বলেছিল। কিন্তু তারা এভাবে আমাদের উপর চড়াও
হলো কেন!
এসব ভাবনা থেকে আহমদ মুসা বলল, ‘আপনারা
এভাবে আমাদের উপর চড়াও হয়েছেন কেন?
আমরা তো কিছুই বুঝতে পারছি না।’
সৈনিকরা তখন তাঁবুর লোকজনদের বাঁধার কাজ শুরু
করে দিয়েছিল। কিছু সৈন্য তাদের স্টেনগান
বাগিয়ে পাহারা দিচ্ছিল। অন্যরা বাঁধার কাজ করছিল।
আহমদ মুসার কথার উত্তরে একজন সেনা অফিসার
বলল, ‘আমরা খবর পেয়ে ছি আজ মাউন্ট আরারাতে
বড় একটি ক্রিমিনাল ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। এ ঘটনা কারা
ঘটাবে আমরা জানি না। সুতরাং ট্যুরিস্ট-ননট্যুরিস্ট
যাদেরকেই আমরা মাউন্ট আরারাতে পাব,
তাদেরকে এই রাতের জন্যে গ্রেফতার করে
রাখব। সকালেই সকলে ছাড়া পেয়ে যাবেন।’ কিছুটা
দ্বিধাগ্রস্ত ও কর্কশ কণ্ঠ সেনা অফিসারের।
কিছু বলার জন্যে হা করেছিল ড. বারজেনজো।
আহমদ মুসা আশংকা করল সে আমাদের পরিচয় দিয়ে
দিতে পারে।
সংগে সংগেই আহমদ মুসা ডাকল ড.
বারজেনজোকে তার মনোযোগ অন্যদিকে
সরিয়ে নেবার জন্যে। বলল, ‘এঁরা ঠিকই
বলেছেন। এঁদের আমাদের সহযোগিতা করা
উচিত।’ বলে আহমদ মুসা তার তর্জনিটা ঠোঁটে
ঠেকাল। বুঝতে পেরেছে সে। তার ঠোঁটে
অস্ফুট একটু হাসি।
‘আমাদের সহযোগিতা করার কোন দরকার নেই।
আমাদের কাজের জন্যে আমরাই যথেষ্ট। আমরা
বেঁধে রেখে যাচ্ছি।’ আবার কর্কশ কণ্ঠ সেনা
অফিসারের। সবার মত আহমদ মুসাকেও ওরা
পিছমোড়া করে বাঁধল। অন্যদের মত পা’ও বাঁধা
হলো তার।
তারপর সৈনিকরা সবাই বেরিয়ে গেল।
সৈনিকদের বেরিয়ে যাওয়ার ধরন দেখে চমকে
উঠল আহমদ মুসা। আহমদ মুসার মনে সন্দেহের
যে ধোঁয়াটে অবয়ব ছিল তা যেন আলোর রূপ
নিয়ে সামনে এল। ট্রেইন্ড সৈন্যদের পদক্ষেপ
ও হাঁটা ওদের মত অমন হতেই পারে না। বিশেষ
করে ডিউটিকালীন সময়ে।
সব সৈন্য বেরিয়ে গেলে সেনা অফিইসারটি ঘুরে
দাঁড়াল। পকেট থেকে টেনিস বলের মত একটা
গোলাকার বস্তু বের করল ছুঁড়ে মারার জন্যে।
আহমদ মুসা দেখেই বুঝল ওটা ক্লোরোফর্ম
বোম।
অফিসার বস্তুট বের করেই ছুঁড়ে মারল তাঁবুর
মাঝখানে।
পলকের মধ্যেই ঘটে গেল ঘটনা।
মাত্র কয়েক মুহূর্ত, সবাই ঢলে পড়ল তাঁবুর
মেঝেতে। আহমদ মুসাও।
পল পল করে সময় বয়ে গেল।
এক সময় আহমদ মুসা মাথা তুলে চারদিকটা দেখে
উঠে দাঁড়াল। ছুটে এল তাঁবুর বাইরে। কাউকে
দেখল না। কান পেতে শোনার চেষ্টা করল।
হ্যাঁ, দু’একটা শব্দ তার কানে এল। বোঝার চেষ্টা
করল কোন দিক থেকে আসছে।
পেছনে পায়ের শব্দ শুনে বোঁ করে ঘুরে
দাঁড়াল আহমদ মুসা। যাকে দেখতে পেল সে
হলো মেন্দারিস মালিক।
খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরল মেন্দারিস মালিককে আহমদ
মুসা। বলল, ‘ধন্যবাদ, আপনি ওদের ক্লোরোফর্ম
বোমাকে ফাঁকি দিতে পেরেছেন?’
‘হ্যাঁ, এই বিষয়কে আজ প্রথম প্রাকটিস করলাম।’
বলল মেন্দারিস মালিক।
‘আপনার কথার মধ্যে বড় একটা সত্য আছে। এ
ধরণের ক্লোরোফর্ম বোমার কার্যকারিতা এক
দেড় মিনিটের বেশি থাকে না। বিশেষ করে
বিস্ফোরণের কিছুক্ষণের মধ্যেই
ক্লোরোফর্ম গ্যাসের মাথার স্নায়ু অবশকারী
অণুগুলো দ্রুত উপরে উঠে যায়। সুতরাং শুয়ে বা
বসে থাকা কেউ মিনিট খানেক নিশ্বাস বন্ধ করে
রাখতে পারলে সে আর আক্রান্ত হয় না।’ আহমদ
মুসা বলল।
‘ধন্যবাদ। এত বিস্তারিত আমি জানতাম না। ভবিষ্যতে
কাজে দেবে।’
একটু থেমে বলল, ‘স্যার, সৈনিকরা আমাদেরকে
এভাবে বাঁধল, সংজ্ঞাতীন পর্যন্ত করে দিল
সবাইকে, এর অর্থ আমি বুঝতে পারছি না। আমাদের
সন্দেহ করলে আমাদের ধরে নিয়ে যেতে
পারতো, কিন্তু তা না করে এক রাতের জন্যে
সংজ্ঞাহীন করে গেল। ভোর হলেই সবাই ছাড়া
পেয়ে যাবে! এতেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে
যাবে? রাত কি আর আসবে না? দুর্বোধ্য লাগছে
তাদের আচরণ।’
আহমদ মুসা হাসল। বলল, ‘আর যদি ওরা সৈনিকই না হয়,
তাহলে কি অর্থ পরিষ্কার হয় না?’
‘তার মানে, ওরা…।’ কথা শেষ না করেই থেমে
গেল মেন্দারিস মালিক। তার চোখে এক রাশ
বিস্ময়।
‘হ্যাঁ, ওরা সৈনিক নয়। ওরা সৈনিকের পোষাক পরে
এসেছে। আমি মনে করি ওরাই তারা, যারা আজ
রাতে মাউন্ট আরারাতের স্বর্ণভাণ্ডার লুট করার
জন্যে আসার কথা।’ বলল আহমদ মুসা।
‘ও গড! সৈনিকদের ইউনিফর্ম পুরানো মনে
হয়েছে। ওদের কোড নাম্বার, বুকের
নেমপ্লেট কোনটাই নতুন তৈরি বলে মনে হয়
নি। অথচ ভূয়া সৈনিকদের পোষাক-পরিচ্ছদ সবই
সাধারণত নতুন ভাবে তৈরি হওয়াই স্বাভাবিক।’ বলল
মেন্দারিস মালিক।
‘আপনার পয়েন্টটা গুরুত্বপূর্ণ মেন্দারিস মালিক। এর
একটাই জবাব, এই ইউনিফর্ম তারা সৈনিকদের কাছ
থেকেই পেয়েছে। এর সুযোগ ওদের
রয়েছে। সে আর এক কাহিনী।’ আহমদ মুসা
বলল।
‘এখন আমরা কী করব স্যার। আমার মনে হয়
এদের বাঁধন খুলে দিয়ে ওদের জ্ঞান ফেরাবার
চেষ্টা করা দরকার।’ বলল মেন্দারিস মালিক।
ওদের সবার বাঁধন কেটে দিয়ে আহমদ মুসা ও
মেন্দারিস মালিক কয়েকটি স্টেনগান কাঁধে ঝুলিয়ে
নিয়ে পাহাড়ের উপরে উঠতে লাগল। আহমদ মুসার
পিঠে একটা ব্যাগও ঝুলছে। পোষাকও তাদের
পাল্টে গেছে। বরফের উপর দিয়ে চলার মত
তাদের ক্লাইম্বারের পোষাক।
আহমদ মুসার চোখে নাইটভিশন গগলস্। সে
আগে হাঁটছে তার পেছনে মেন্দারিস মালিক।
অন্ধকার হলেও এ পথ আহমদ মুসার চেনা।
এর আগে দু’বার এপথ দিয়ে ১৬ ফিট পর্য উপরে
উঠেছে আহমদ মুসা। কিন্তু আজ কোন পর্যন্ত
উঠতে হবে সে জানে না। প্রচারিত তথ্য
অনুসারে সাড়ে ১৫,০০০ ফিট লেভেলের দুই
শৃঙ্গের মাঝখানের এক উপত্যকায় প্লাবন শেষে
নুহ আ.- এর নৌকা ল্যান্ড করেছিল। আজকের
আরোহনের সীমা এই লেভেল পর্যন্ত হতে
পারে।
বিশ মিনিট আরোহনের পর একটা চাপা কাশির অস্ফুট
আওয়াজ কানে প্রবেশ করতেই আহমদ মুসা
চমকে উঠে ঘুরে দাঁড়ালো। কিন্তু কিছুই
দেখতে পেল না। যে ঢাল দিয়ে তারা এগিয়ে
এসেছে, তার গোটাটাই এখান থেকে দেখা
যাচ্ছে নাইটভিশন গগলসের মধ্য দিয়ে। কিছুই
চোখে পড়ল না। কিন্তু তার শোনাটা সত্য।
আহমদ মুসা আরও কিছুটা সময় দেখার সিদ্ধান্ত নিল।
বলল মেন্দারিস মালিককে, ‘চলুন, এই গলিটা দিয়ে
বরফের চাং-টার পেছনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ
অপেক্ষা করি।’
‘কোন বিশ্রাম নেবেন না, কিছু ঘটেছ?’ বলল
মেন্দারিস মালিক। তার কণ্ঠে বিস্ময়।
‘পেছন থেকে একটা শব্দ পেয়েছি। সেটার
উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া দরকার। নিশ্চিত হওয়ার
জন্যেই পেছনটা একটু দেখা প্রয়োজন।’
আহমদ মুসা বলল।
‘অবশ্যই স্যার। চলুন।’ বলল মেন্দারিস মালিক।
দু’জনে গিয়ে বরফের চাংটার পেছনে আশ্রয়
নিল।
সময় বয়ে চলল পল পল করে। গত হলো মিনিট
দু’য়েকের মত সময়।
বরফের একটা টিলার বাঁক ঘুরে বেরিয়ে এল
একদল মানুষ। দশ বারোজনের মত হবে। হবে
ওদের চেহারা স্পষ্ট নয়।
ঢালটার মাঝামাঝি আসতেই স্পষ্ট হয়ে গেল ওরা
সশস্ত্র একদল মানুষ।
ওরা আরও কাছে এসে পড়ল। এখন তিন চার
গজের মধ্যে ওরা। মুখ কারও দেখা যাচ্ছে না।
পশমের টুপি ওদের কপাল পর্যন্ত নেমে
এসেছে। জ্যাকেটের পশমের কলার নিচ
থেকে পকেটের অর্ধেকেটা ঢেকে
দিয়েছে।
ওদের গলায় দুলছিল লকেট।
ওরা বরফের চাংটার ওপাশ দিয়ে যাবার সময়
লকেটের অবয়বটাও ভালোভাবে নজরে এল
আহমদ মুসার। মাউন্ট আরারাতের খোদাই করা ছবির
মাথায় ক্রস যেন পুঁতে দেয়া। ক্রস থেকে
বিচ্ছুরিত তীক্ষ্ণ একটা আলোর প্লাবন সিক্ত
করছে মাউন্ট আরারাতকে।
এরা কারা? উল্কিওয়ালাদেরই এটা দ্বিতীয় দল নিশ্চয়!
ওদের গলায় লকেট নেই, এদের আছে।
গায়ের উল্কি দেখা যায় না বলেই হয়তো
প্রদর্শনীর এই বিকল্প ব্যবস্থা।
আহমদ মুসাদের সামনে দিয়ে চলে গেল ওরা
সবাই।
ওদের পায়ের শব্দ মিলিয়ে গেলে আহমদ মুসারা
বেরিয়ে এল বরফের চাংটার আড়াল থেকে।
‘এরা ওদেরই লোক। ভাগ্য ভালো, আমরা ওদের
চোখে পড়িনি।’ বলল মেন্দারিস মালিক।
‘উল্কিওয়ারা গলায় মাউন্ট আরারাতের প্রতিকৃতিও কি
ধারণ করে থাকে?’ জিজ্ঞাসা আহমদ মুসার।
‘এটা আমি জানি না স্যার। তবে উল্কিওয়ালা যাদের আমি
দেখেছি, তাদের কারও গলায় মাউন্ট আরারাতের
প্রতিকৃতি দেখিনি।’ বলল মেন্দারিস মালিক।
‘কিন্তু এদের প্রত্যেকের গলায় যে ক্রসের
সাথে মাউন্ট আরারাতের প্রতিকৃতিও দেখলাম!’
আহমদ মুসা বলল।
‘এ রকম কখনও আমি দেখিনি। হতে পারে মাউন্ট
আরারাতের অভিযানের সময় ওরা মাউন্ট আরারাতের
বাড়তি প্রতিকৃতি পরেছে।’ বলল মেন্দারিস মালিক।
‘হতে পারে, তবে সন্ত্রাসী বা গোপন
দলগুলো প্রতীক বাছাই ও ব্যবহারের নীতির
ক্ষেত্রে খুবই কনজারভেটিভ। এক্ষেত্রে তারা
তাদের নীতির অন্যথা করে না।’ আহমদ মুসা বলল।
‘আমিও তাই মনে করি স্যার। কিন্তু এক্ষেত্রে বাহুর
উল্কি প্রতীকের রূপ একেবারে গলায় উঠে
এল কেন, তার অর্থ বুঝতে পারছি না।’ বলল
মেন্দারিস মালিক।
‘থাক। এই বিষয়ে আর নয়। চলুন আমরা সামনে
এগোই। এসব ভেবে লাভ নেই। চোর-
বাপাড়েও মৈত্রী হয়। উল্কিওয়ালারা তো দুই দল
এক সাথে কাজ করছে। আরও ভিন্ন কেউ তাদের
সাথে যোগ দিতে পারে।’ আহমদ মুসা বলল।
‘ঠিক বলেছেন স্যার। চলুন।’ বলল মেন্দারিস
মালিক।
এগুতে লাগল তারা আবার। প্রায় এক ঘন্টার মধ্যে
তারা পর্বতের প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার ফিট
লেভেলে পৌঁছে গেল। পর্বতের যে অংশটা
তারা অতিক্রম করে এল, সেটা খুব দুর্গম নয়। সিঁড়ির
মতই ঢালু অনেকটা। মাউন্ট আরারাতের দু’টি মূল শৃংগ
বিস্তারিত এলাকা জুড়ে উঠে এসেছে উপরে।
তবে পর্বতের অনেক এলাকা খুবই সুগম। চৌদ্দ
হাজার ফুট থেকে সাড়ে পনের হাজের ফুটের
মধ্যবর্তী এই রুট তেমনি একটা এলাকা।
সামানেই দু’টি ছোট বরফাচ্ছাদিত শৃংগের দেয়াল।
দুই শৃংগের সংযোগকারী যে স্হান তাও বেশ উঁচু
ও খাড়া। এর মধ্যে আবার এ পাশটা আরোহনের
যোগ্য, কিন্তু ও পাশটা একেবারেই অগম্য। এ
কারণেই এই শৃংগ ঘুরে ওপাশে পৌঁছাতে হয়।
আহমদ মুসা শৃংগের দেয়ালের গোড়ায় বসে
পড়ল। বলল, ‘এ দেয়ালের ওপরেই সেই বহুল
আলোকিত, বহুল কথিত স্থান, যেখানে হযরত নুহ
আ.-এঁর কিস্তি প্লাবনের পানি সরে গেলে ল্যান্ড
করেছিল। ওরা যে স্বর্ণভাণ্ডার খুঁজতে এসেছে
তা ওপাশের উপত্যকার কোন একটা পাহাড়ের গুহায়
রয়েছে। সুতরাং ওদের গন্তব্য এবং কর্মস্হল এই
উপত্যকা। উপত্যকার সামনের ছোট দুই শৃংগের
ওপাশে হলেও অনেক ঘুরে যেতে হয় ঐ
উপত্যকার সামনের ছোট দুই শৃংগের ওপাশে
হলেও অনেক ঘুরে যেতে হয় ঐ উপত্যকায়।
একনিতে দশ মিনিটের পথ নয়। কিন্তু এই দুই শৃংগের
পাদদেশটাই ঘুরে ওপাশের উপত্যকায় গিয়ে
পৌঁছতে সময় লাগে প্রায় ঘন্টা খানেকের মত।
এসময় খরচ করে ঐ উপত্যকায় গিয়ে এই মুহুর্তে
তাদের কোন কাজ নেই। তার চেয়ে দুই শৃংগের
মাঝখানে দেয়ালের মত জায়গায় গিয়ে উপত্যকার
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করাই এই মুহুর্তে তাদের
বড় কাজ। উপত্যকায় তাদের কর্মস্থল থেকে
কিঞ্চিৎ ব্যবধানে এই আড়ালে থাকবে আমাদের
এই এখনকার সদর দফতর।’
‘কিন্তু এ সদর দফতর থেকে আমরা আর কী
করব?’ বলল মেন্দারিস মালিক।
‘দুই শৃংগের মাঝখানের দেয়ালটার আড়ালে আমরা
গিয়ে বসব। সেখান থেকে ওপাশের উপত্যকায়
চোখ রাখব। দেয়ালের ওপাশটা খাড়া বলে গোটা
উপত্যকাটাই আমাদের চোখের নিচে থাকবে এবং
আমাদের আওতার মধ্যেও থাকবে।’ আহমদ মুসা
বলল।
‘আমাদের লক্ষ্য কী? কী কেতে চাচ্ছি
আমরা?’ জিজ্ঞাসা মেন্দারিস মালিকের।
‘আমরা ওদের গোটা গ্যাংকে ধরতে চাই। এর
মাধ্যমে আমরা ওদের সামনের পরিকল্পনা বানচাল
করে দিতে চাই।’ আহমদ মুসা বলল।
‘কিন্তু আমরা তো মাত্র দু’জন!’ বলল মেন্দারিস
মালিক।
‘আমাদের আর লোকরা তো সংজ্ঞা হারি য়ে
পড়ে থাকল। আমাদের পরিকল্পনা মার খেয়েছে
এর ফলে। ভালো কথা মনে করেছেন, এই
বিষয়টা নিয়ে ডিপি খাল্লিকান খাচিপের সাথে
আলোচনা করা দরকার। আগে কথা ছিল ওর বাহিনী
বেজ ক্যাম্প ওয়ানেই থাকবে। কিন্তু এখন ওদের
সাহয্য দরকার আমাদের।’ বলল আহমদ মুসা।
বলেই আহমদ মুসা পকেট থেকে মোবাইলটা
হাতে নিল। কল করল আরিয়াস-আরারাত অঞ্চলের
পুলিশের ডাইরেক্টর খাল্লিকান খাচিপকে।
ওপারে খাল্লিকান খাচিপের কণ্ঠ পেতেই আহমদ
মুসা সালাম দিয়ে বলল, ‘মি. খাল্লিকান খাচিপ, আপনার
বাহিনী কোথায়?’
‘আছে এই এলাকাতেই। তবে আমি মনে করছি
স্যার, এ সবের আর প্রয়োজন নেই। মাউন্ট
আরারাত তো আইনিভাবে সেনা-ব্যবস্থাপনার
অধীন। ওরাই তো দেখছি মাউন্ট আরারাতের এই
পর্যটন রুটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিচ্ছে। আমাদের
প্রয়োজন তেমন একটা আছে বলে মনে
হচ্ছে না।’ বলল খাল্লিকান খাচিপ।
‘ওরাই এই পর্যটন ইউনিটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে
নিচ্ছে’- এ কথাটার অর্থ বুঝলাম না মি. খাল্লিকান
খাচিপ?’ প্রশ্ন আহমদ মুসার। তার কপাল কুঞ্চিত।
‘হ্যাঁ স্যার, আগে একটা সেনাদল গেছে এখন
আর একটা সেনাদল উপরে উঠে গেল। এই
কিছুক্ষণ আগে। ওদের অফিসারকে জিজ্ঞেস
করে জানলাম ওরা গোটা এই পর্যটন রুটে সারারাত
ধরে টহল দেবে। তারা নাকি জানতে পেরেছে
পর্বতের এই ঢালে কোথাও নাকি কিছু ঘটতে
চলেছে। আর তারা আমাকে বলেছে, আপাতত
আপনাদের কোন কাজ নেই। মাউন্ট আরারাত পুলিশ
অফিসে আপনারা ফিরে যান। প্রয়োজন হলে
আমরা ডাকবো।’ বলল খাল্লিকান খাচিপ।
আহমদ মুসার কপালের কুঞ্চন আরও বেড়ে
গেছে। তার মনে চিন্তার ঝড়। এই সেনাদল আবার
কারা? এবার কি সত্যিই সেনাদল পাঠানো হয়েছে?
না এরাও নকল। মাউন্ট আরারাত সেনা-ব্যবস্থাপনার
অধীনে রয়েছে। সেনাবাহিনী পর্বত
অঞ্চলের পর্যটন এলাকাসহ সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ
করে থাকে। এজন্যে মাউন্ট আরারাতে
সেনাবাহিনীর একটা ঘাঁটি রয়েছে। সেখান
থেকে পর্বতের বিভিন্ন অংশে সনাটহল পাঠানো
তাদের রুটিন কাজ। মি. খাল্লিকান কথিত সেনাদল সেই
রুটিন কাজের অংশও হতে পারে। আবার তা নাও
হতে পারে। কিন্তু এসব যাচাইয়ের সুযোগ এই
মুহূর্তে নেই।
এসব চিন্তা করে আহমদ মুসা বলল, করে আহমদ
মুসা বলল, ‘মি. খাল্লিকান খাচিপ, আপনারা বেজ ক্যাম্প
থেকে নড়বেন না। আর দশ পনের জনের
একটা পুলিশের দল আপনি উপরে পাঠিয়ে দিন।’
‘কিন্তু ওরা তো বলেছে আমাদের চলে
যেতে।’ খাল্লিকান খাচিপ বলল।
‘বলুক। ওটা কোন অফিসিয়াল অর্ডার নয়। বাইদি বাই
বলেছে। যাদের উপরে পাঠাবেন তাদের বলে
দেবেন, কেউ জিজ্ঞেস করলে তারা যেন
বলে, ‘৫ম বেজ ক্যাম্পে চৌদ্দ-পনেরজন
ট্যুরিস্ট হঠাৎ সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেছে। তাই
উপরের নির্দেশে ওদের রেসক্যু করার জন্যে
আমরা যাচ্ছি।’ বলল আহমদ মুসা।
‘সংজ্ঞা হারানোর ঘটনা সম্পর্কে যদি তারা কিছু না
দেখে?’ জিজ্ঞাসা খাল্লিকান খাচিপের।
‘ঘটনা সত্য। এখানে একটা ঘটনা ঘটেছে। শয়তানরা
আমাদের চৌদ্দ জন লোককে সংজ্ঞাহীন করে
ফেলেছে।’ আহমদ মুসা বলল।
‘মারাত্মক ঘটনা। হ্যাঁ, এটা একটা বিষয়, পুলিশ সেখানে
যেতে পারে।’ বলল খাল্লিকান খাচিপ।
‘হ্যাঁ, মারাত্মক ঘটনাই। কিন্তু ওটা নিয়ে এখন পুলিশের
করণীয় কিছু নেই। সকালে এমনিতেই ওরা সংজ্ঞা
ফিরে পাবে। আপনার লোকরা যেন ওখানে না
দাঁড়ায়, সোজা যেন চলে আসে সাড়ে পনের
হাজার ফিট উপরের লেভেলে। আর যাদের
পাঠাচ্ছেন, তাদের দায়িত্বে যে পুলিশ অফিসার
থাকবেন তার মোবাইল নাম্বারটা আমাকে জানিয়ে
দেবেন।’ আহমদ মুসা বলল।
কথা শেষ করেই আহমদ মুসা সালাম দিয়ে কল অফ
করে দিল।
‘চলুন, ঐ দুই শৃংগের সংযোগকারী দেয়ালে
আমরা উঠি। ওখান থেকে আমরা ঐতিহাসিক উপত্যকায়
ওরা কী করছে, তা দেখতে পাব এবং আমাদের
কিভাবে এগোতে হবে তাও ঠিক করতে
পারবো।’ বলল আহমদ মুসা।
‘চলুন। কিন্তু ডিপি মি. খাল্লিকান খাচিপ কী বললেন?
মনে হলো ডিপি লোক পাঠাচ্ছেন। কান্তু এত
দেরিতে কেন?’ মেন্দারিস মালিক বলল।
‘আরো একটা সেনাদল উপরে উঠেছে এবং তারাই
এই রুটের দেখভাল করার কথা বলেছে। তারা
পুলিশকে চলে যেতেও বলেছে। তাই ডিপি মি.
খাল্লিকান খাচিপ চলে যাবার চিন্তা-ভাবনা করছিলেন।
এখন উনি একদল পুলিশ পাঠাচ্ছেন।’ বলল আহমদ মুসা।
‘এ সেনাদল আবার কারা? পুলিশকে তারা ডিউটি
ছেড়ে চলে যেতে বলেছে। লক্ষণটা
ভালো মনে হচ্ছে না স্যার।’ মেন্দারিস মালিক
বলল।
‘আমিও সেটাই ভাবছি মি. মেন্দারিস মালিক। তবে না
দেখে তাদের ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলা
যাচ্ছে না। কারণ মাউন্ট আরারাত তো সেনা
নিয়ন্ত্রণে। এখানে ওদের স্থায়ী ঘাঁটিও
রয়েছে। এটা একটা দিক। অন্য দিকটা হলো, ঘাঁটির
সেনাদলের একটা অংশ ষড়যন্ত্রে যোগ দিতে
পারে। এর নিশ্চিত সম্ভাবনাও আছে, একথা আমি
আগেই বলেছি।’ বলল আহমদ মুসা।
‘দুই সম্ভাবনাই যদি থাকে, তাহলে খারাপ সম্ভাবনাকেই
আমাদের সামনে রাখতে হবে স্যার।’ মেন্দারিস
মালিক বলল।
‘ঠিক বলেছেন মি. মেন্দারিস মালিক।’ বলল আহমদ
মুসা।
কথা বলার সাথে সাথেই আহমদ মুসা ও মেন্দারিস
মালিক উঠছিল সেই পাহাড়ের দেয়ালে।
পাহাড়ে আরোহনটা এখানে বেশ মজার। পাহাড়ের
দেয়ালটা পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রি কোণ করে উপরে
উঠেছে।
ওঠার গোটা পথটাই ছোট ছোট খুঁটির মত ডজন-
ডজন টিলায় ভরা। যেন কোন ধ্বংসাবশেষ ছাড়া।
উঠে গেছে তারা দেয়ালের মাথা অনেকটা
চিরুনীর মত অনেক টিলার সমষ্টি।
খুশি হলো আহমদ মুসা। তাদের নিরাপদ আড়াল
নেয়ার একটা প্রাকৃতিক ব্যবস্থা আল্লাহ্ যেন করে
রেখেছেন।
পাশাপাশি দুই টিলার আড়ালে গিয়ে বসল তারা। ওপাশের
উপত্যকাটাই হলো ‘আর্ক অব নুহা’ উপত্যকা। তাকাল
তারা উপত্যকার দিকে। গোটা উপত্যকা তাদের
নজরের আওতায়।
উপত্যকার দিকে চোখ ফেলতেই নজরে পড়ল,
তারা যেখানে বসে আছে সেখান থেকে নিচে
বিশ ডিগ্রি কৌণিক অবস্থানে পাহাড়ের গায়ে ঠিক
‘ওয়েল ড্রিলিং’- এর মত আট ইঞ্চি ব্যাসের মেগা
সাইজের পাইপ বসানো হয়েছে বরফের বুক
চিরে। একটা বড় ইঞ্জিন এই পাইপ বসাতে সাহায্য
করছে। ইঞ্জিনটা তখনও চলছে। শব্দ খুবই
অস্পষ্ট। বোঝাই যাচ্ছে সাইলেন্সার লাগানো
হয়েছে ইঞ্জিনে।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now