বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন
বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

বেলা ফুরাবার আগে

"ইসলামিক" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান সফর(guest) (০ পয়েন্ট)

X লেখকঃ আরিফ আজাদ বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম ১৫. মেঘের ওপার বাড়ি । [ক] নাগরিক জীবনের ব্যস্ততাকে ফাঁকি দিয়ে একান্ত এক টুকরাে অবসরে যাওয়া দেহ আর মনের জন্যে খুব দরকারি হয়ে উঠেছিল। কোলাহলময় ঢাকার দেয়াল ভেদ করে একটু নিঝঞাট পরিবেশ, নির্মল হাওয়া আর সবুজ প্রকৃতির কোলে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছিল খুব করে। কত দিন হয় অরণ্যে হারাই না। শিশিরে ভিজাই পা। ফড়িংয়ের পেছনে ছুটতে ছুটতে ঠিকানা হারাই না অনেক দিন। দূরন্ত কৈশােরের আবছা স্মৃতিগুলাে মনে পড়লেই কেমন যেন স্মৃতিকাতুরে হয়ে পড়ি। আমাদের ঘুড়ি উৎসব, লাটিম আর কানামাছি খেলার দিনগুলাে সময়ের সাথে সাথে কোথায় যেন হারিয়ে গেল! গাজীপুর সাফারী পার্কে যাওয়ার জন্য মনস্থির করা হলাে। সেখান থেকে হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতিবিজড়িত নুহাশপল্লী। আমরা চার বন্ধু মিলে রওনা করলাম। নাগরিক কোলাহলকে পেছনে রেখে এক টুকরাে অবসর পানে ছুটে চলল আমাদের দেহগুলাে। পেছনে রেখে যাচ্ছি একঝাঁপি ব্যস্ততা, ছুটোছুটি, নিরানন্দ, নিষ্প্রাণ সময়। আজ আমাদের ছুটি। দিনের বেশিরভাগ সময়ই কেটে গেল সাফারী পার্কের হাতি, ঘােড়া, বাঘ, সিংহ, ময়ূর, কুমির, মাছ, প্রজাপতি আর ধনেশ পাখির সাথে। আসরের আগে আগে পার্ক ছেড়ে বেরিয়ে আসি। সাতপাঁচ না ভেবে একটা সিএনজিতে চেপে সােজা চলে এলাম নুহাশপল্লীতে। নুহাশপল্লীর গেইটের কোণায় থাকা ছােট্ট মসজিদটায় ঢুকে আসরের জামাআতে দাঁড়িয়ে গেলাম। সালাত শেষ করে সবার আগে দেখতে গেলাম হুমায়ূন আহমেদের কবর। শ্বেত পাথরে আচ্ছাদিত কবরটাতে শুয়ে আছেন বাংলা সাহিত্যের একজন কিংবদন্তি। নুহাশপল্লীর লিচু তলাতেই তাকে কবর দেওয়া হয়েছে। তিনটে বিশাল আকৃতির লিচু গাছ তার কবরটাকে ঘিরে আছে। এই লিচুতলা ছিল হুমায়ূন আহমেদের প্রিয় জায়গাগুলাের একটি। তার কিছু কিছু রচনায় সেটার উল্লেখ পাওয়া যায়। কবরটার দিকে অপলক তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। একটা মানুষ। যশ-খ্যাতি ছিল, নাম-ডাক ছিল। বাংলা সাহিত্যে তার সমান জনপ্রিয়তা খুব কম লেখকই পেয়েছে। বইমেলায় তার বই কেনার জন্যে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ত। একজন মানুষের একজীবনে যা যা পাওয়ার থাকে, সম্ভবত তার সবটাই হুমায়ূন আহমেদ পেয়েছিলেন। অথচ জীবনের কী নির্মম বাস্তবতা! নিজ হাতে গড়া নুহাশপল্লী, আকাশসমান যশ-খ্যাতি-কীর্তি রেখে তাকে চলে যেতে হলাে। পাকা ইমারত, দৃষ্টিনন্দন সৃষ্টি—সবকিছু ছেড়েছুড়ে মাটির বিছানাকে সঙ্গী করতে হলাে। মিশে যেতে হলাে মাটির সাথে। মাটির সাথে মানুষের সে কী এক গভীর মিতালি! আজও নুহাশপল্লীতে জোছনা নামে। আজও নুহাশপল্লীর ঘাস শিশিরে ভিজে ওঠে। আজও ‘বৃষ্টিবিলাস’ থেকে শােনা যায় বৃষ্টির রিমঝিম রিমঝিম শব্দ। কিন্তু, এই জোছনা, এই শিশির, শান-বাঁধানাে পুকুর ঘাট, ঝুম বৃষ্টির আওয়াজ—সবকিছু থাকলেও হুমায়ূন নেই। হুমায়ূন এখন অন্য জগতের বাসিন্দা। জগতের সকল খ্যাত-অখ্যাতর জন্যে এটাই ধ্রুব সত্য যে, পৃথিবীতে আগমন আর বিদায়ের পদ্ধতি সবার জন্যে একই রকম। হুমায়ূন আহমেদের কবর দর্শন শেষে চলে এলাম তার বৃষ্টিবিলাসে। টিনের চালা দেওয়া এই বাড়িটিতে বসে তিনি বৃষ্টি উপভােগ করতেন। ইট-পাথরের আবরণ ভেদ করে বৃষ্টির শব্দ ভেতরে ঢুকতে পারে না। তাই এই ব্যবস্থা। জায়গায় জায়গায় চা-কফি পানের জন্যে তৈরি করা গােল টেবিল, দোল খাওয়ার দোলনা, বাহারি গাছ, গাছের মগডালে চৌচালা গাছঘর দেখে অনুমান করা যায় মানুষ হিশেবে কতটা শৌখিন ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। চারদিক ঘুরে যখন লীলাবতী দিঘির পাড়ে আসি, তখন সূর্যটা ডুবে গেছে। চারদিক থেকে জেঁকে আসতে শুরু করেছে অন্ধকার। শ্বেত পাথর দিয়ে বাঁধানাে এই দিঘির ঘাটের অযত্ন আর অবহেলার ছাপ থেকেই তুমায়ুন আহমেদের অনুপস্থিতি টের পাওয়া যায়। দিঘির মাঝখানে দ্বীপের মতাে একটা। জায়গা। পাড় থেকে সাঁকো পার হয়ে যেতে হয় ওখানে। আমরা সেখানে গেলাম। সেই কৃত্রিম ছােট্ট ঢিপিটার ঘাসে বসে পড়লাম আনমনে। সবাই চুপচাপ। চারদিকে এক গা ছমছমে নীরবতা। ভাব আর ভাবনার জন্যে এ রকম নীরবতা খুব উপকারী। দিঘির অপর প্রান্তে আরও দুটি দোলনা। সম্ভবত বাচ্চাদের জন্যেই বানানাে। ওদিকে যাওয়ার জন্যে উঠে পড়লাম। তার আগে একনজর ঢু মারলাম ‘ভূতের বাড়িতে। ঢু মারতেই ভূত দেখে আমরা সবাই খুব চমকে উঠলাম। উই, ওটা আসলে ভূত ছিল না। একজন কেয়ারটেকার। অন্ধকার ঘরে ঘাপটি মেরে ছিল। আমাদের দেখে সহাস্যেই বলল, “কী খুঁজছেন? কিছু না। আসলে, এটা নাকি ভূতের বাড়ি, তাই একটু কৌতূহল থেকে ঢু মারলাম। আচ্ছা, এখানে কি আসলেই ভূত আছে? নাহ। এটা আসলে আমাদের স্যারের লােকটা বেশ তুরিত উত্তর দিল। বলল,কল্পনা ছিল। ওহ, আচ্ছা। এই ভূতের বাড়িতে কাউকে থাকতে দেওয়া হয় কি না জানতে চাইলে তিনি বললেন, একবার নাকি পশ্চিমবঙ্গের কথাসাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নুহাশপল্লীতে বেড়াতে এসে এই ভূতের বাড়িতেই রাত্রিযাপন করেছিলেন। [খ] হুমায়ুন আহমেদের কবরের ওপরে শ্বেত পাথরে কিছু কথা লেখা ছিল। কথাগুলাে তার ‘কাঠপেন্সিল' বই থেকে নেওয়া। কল্পনায় দেখেছি নুহাশপল্লীর সবুজের মধ্যে ধবধবে শ্বেত পাথরের কবর। তার গায়ে লেখা—চরণ ধরিতে দিয়াে গাে আমারে, নিয়াে না নিয়াে না সরায়ে। সত্যি সত্যিই হুমায়ূন আহমেদ নুহাশপল্লীর সবুজ প্রকৃতির মাঝে, শ্বেত পাথরে আচ্ছাদিত কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত হতে পেরেছেন। দুনিয়ার অনেক সাধ-আহ্লাদের মধ্যে তার শেষ আহ্লাদটাও পূরণ হয়েছে। একটি আয়াতে পড়েছিলাম সম্ভবত, দুনিয়ার জীবনে কেউ যদি কোনাে জিনিস চায়, কখনাে কখনাে তাকে সেই জিনিস কানায় কানায় পূর্ণ করে দেওয়া হয়। হুমায়ূন আহমেদও সম্ভবত সেই পূর্ণতা পাওয়া লােকদের একজন। [গ] নুহাশপল্লীতে গিয়ে আমার দুটো উপলব্ধি হয়েছে। প্রথমত, হুমায়ুন আহমেদের কবরটা আমাকে খুব ভাবিয়েছে। একসময়ের তুমুল জনপ্রিয় একজন লেখক এখন মাটির সাথে মিশে আছেন—এই ধ্রুব সত্যটা বারবার আমাকে আমার শেষ পরিণতির কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল। নাম, যশ, খ্যাতি কোনাে কিছুই আমাদের মৃত্যু থেকে বাঁচাতে পারে । মৃত্যুই আমাদের জীবনের নির্মম নিয়তি। জন্মিলে মরিতে হবে’–এটাই জগতের সবচেয়ে কঠিন সত্য। কবরের পাশে দাঁড়ালে অন্তর নরম হয়। আখিরাতের কথা মনে পড়ে। নিজের শেষ গন্তব্যস্থলের ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে মন। এজন্যেই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের কবরস্থান জিয়ারত করতে বলেছেন।[২] নুহাশপল্লীর দ্বিতীয় যে ব্যাপারটা আমাকে খুব বিস্মিত করেছে তা হলাে—দুনিয়ার জীবনকে আপন আর উপভােগ করার জন্য হুমায়ুন আহমেদের ঐকান্তিক চেষ্টা-তদবির। ছােট্ট আয়তনের নুহাশপল্লীকে তিনি বানাতে চেয়েছিলেন এক টুকরাে স্বর্গ। সেই স্বর্গে কৃত্রিম হ্রদ আছে, দিঘি আছে। মানুষের বানানাে ঝরনা, কৃত্রিম অরণ্য-সহ জীবন উপভােগের নানান উপাদান তাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সেই উপাদানগুলােতে তিনি সুখ খুঁজতে চেয়েছেন। বসন্তে কোকিলের গান, শরতের উড়ু উড়ু মেঘ, পৌষের হাড়কাঁপানাে শীত এবং পূর্ণিমার অপরূপ জোছনা—সবকিছু নিয়েই তিনি বাঁচতে চেয়েছিলেন। সাধারণ যে-কেউ প্রথম দেখাতেই তার এই ইচ্ছেটার প্রেমে পড়ে যাবে। মনে হবে, ইশ! আমার যদি হুমায়ূন আহমেদের মতাে অনেক অনেক টাকা হতাে, আমিও দূরে কোথাও, নির্জন অরণ্যের পাশে গিয়ে এ রকম একটা নুহাশপল্লী বানাতাম। সেখানে থাকত কেবল সুখ আর সুখ! সেখানে একটা ‘দিঘি লীলাবতী’ হবে, একটা [1] এটি একটি আয়াতের অংশবিশেষ। আয়াতটি হলাে- من كان يريد الحياة الدنيا وزيتها توفي إليهم أعمالهم فيها وهم فيها لا ينسون যারা দুনিয়ার জীবন ও চাকচিক্য চায়, আমি দুনিয়াতেই তাদের কৃতকর্ম পরিপূর্ণভাবে দিয়ে দিই, কোনাে কমতি করা হয় না। [সুরা হুদ, আয়াত : ১৫] [2]সুনান আবি দাউদ : ৩২৩৭, হাদিসটি গ্রহণযােগ্য ‘বৃষ্টিবিলাস’ আর একটা ‘ভূতের বাড়ি’ হবে। পূর্ণিমার জোছনাতে থৈ থৈ করবে সেই নুহাশপল্লীর মাঠঘাট। বর্ষার ঝুম বৃষ্টিতে ভেজা কাকের মতন হয়ে উঠবে চারপাশ। এ রকম একটা নুহাশপল্লী বানাতে হলে কী পরিমাণ টাকা লাগবে? নিশ্চয় অনেক অনেক টাকা, তাই না? আচ্ছা, যদি আপনাকে বলা হয় একদিন আপনি সত্যি সত্যিই নুহাশপল্লীর চেয়েও হাজার কোটি গুণ সুন্দর, অপরূপ, অকল্পনীয়, অভাবনীয় প্রাসাদের মালিক হবেন, বিশ্বাস করবেন? ইট আর পাথর দিয়ে নয়, সেই প্রাসাদ হবে মণি-মুক্তোর তৈরি। দৃষ্টিসীমা যতদূর বিস্তৃত হবে, ততদূর আলােকিত হয়ে পড়বে সেই মণি-মুক্তোর ঝলকানিতে। প্রাসাদের নিচে থাকবে ঝরনা। সেই ঝরনার কলকল ধ্বনি আপনি শুনতে পাবেন। সামনে থাকবে অনিন্দ্য সুন্দর ফুলের বাগান। সেই ফুলগুলাে এর আগে আপনি আর কখনাে দেখেননি। ফুলের গন্ধে ম-ম করবে আপনার চারিপাশ। আপনি চাইলেই সেখানে জোছনা নামবে। বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দেবে আপনাকে। চাইলেই কোকিলের গান, নদীর কলতান আর অরণ্যের সবুজ—সবকিছুই আপনাকে দিয়ে দেওয়া হবে। অনন্তকালের জন্য আপনি হয়ে যাবেন এই অপূর্ব সুন্দর প্রাসাদের মালিক। সেই প্রাসাদের সামনে দুনিয়ার নুহাশপল্লীকে তখন আপনার নস্যি মনে হবে। চাকচিক্যে ঘেরা সেই প্রাসাদ দেখে আপনি এতই বিমােহিত, চমৎকৃত আর বিস্ময়াভিভূত হবেন যে, দুনিয়ার নুহাশপল্লীর কথা আপনার মনেই থাকবে না। আপনি এতক্ষণে বুঝে গেছেন আমি কীসের কথা বলছি। পরম আরাধ্য জান্নাত। প্রত্যেক মুমিন মুসলিমের অন্তরে লালিত স্বপ্ন। এ রকম একটি অনিন্দ্য সুন্দর প্রাসাদের স্বপ্ন দেখেছিলেন ফিরাউনের স্ত্রী আসিয়া আলাইহাস সালাম। তিনি আল্লাহর কাছে দুআ করে বলেছিলেন— رب ابن لي عندك بيتا في الجنة হে আমার প্রতিপালক, জান্নাতে আপনার সন্নিকটে আমার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করুন।[1] কত অপূর্ব সুন্দর এই দুআ! এই দুআতে তিনি বলেননি, হে আমার মালিক। ফিরাউনের প্রাসাদে এটা-ওটা আছে, জান্নাতেও আমার জন্য সেগুলাের ব্যবস্থা করে দিন। ফিরাউনের প্রাসাদ দামি পাথর দিয়ে বানানাে। জান্নাতেও এই পাথর দিয়ে তৈরি একটি প্রাসাদ আমি চাই। তিনি সে রকম কিছুই চাননি। তিনি কেবল আল্লাহর কাছাকাছি থাকতে চেয়েছেন। তাই তাে বলেছেন, ‘মালিক! আপনার সন্নিকটে আমার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করুন। আল্লাহর কাছাকাছি থাকতে পারার সৌভাগ্যের চেয়ে বড় আর কিছুই নেই। কিছু না। জান্নাতে বাড়ি বানাতে হলে কিন্তু লাখ লাখ টাকার দরকার নেই। দৌড়ঝাঁপ দিয়ে জোগাড় করা রাজউকের সার্টিফিকেটও আপনার লাগবে না। এই বাড়ি নির্মাণের জন্য আপনাকে নিতে হবে না মিথ্যার আশ্রয়। অন্যের হক নষ্ট করে, অন্যকে ধোঁকা দিয়ে নিজের ইমারত তৈরির যে অসুস্থ প্রতিযােগিতা আমাদের চারপাশে, আপনাকে সেই প্রতিযােগিতাতেও নামতে হবে না। কেবল দরকার একটুখানি চেষ্টা। একটু সদিচ্ছা আর একটু আন্তরিকতা। জান্নাতে বাড়ি নির্মাণের কৌশল তাে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন। সেই কৌশল অবলম্বন করে আমরা চাইলেই অনায়েশে জান্নাতের অনিন্দ্য সুন্দর প্রাসাদের মালিক হতে পারি। আমাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়েছে। ফজর, যােহর, আসর, মাগরিব এবং ইশা। এই ওয়াক্তগুলােতে ফরয সালাতের বাইরে সাধারণত আমরা আরও কিছু সালাত পড়ে থাকি। সেগুলােকে বলা হয় সুন্নাত এবং নফল সালাত। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন ১২ রাকআত সুন্নাত আদায় করবে, আল্লাহ তাআলা জান্নাতে তার জন্য একটি বাড়ি নির্মাণ করবেন। সেই ১২ রাকআত সুন্নাতগুলাে হলাে—ফজর সালাতের পূর্বে দুই রাকআত, যােহরের আগে চার রাকআত এবং পরে দুই রাকআত, মাগরিবের পরে দুই রাকআত এবং ইশার পরে দুই রাকআত। আমরা যদি নিয়মিত এবং যত্নের সাথে এই সালাতগুলাে আদায় করি, তাহলে জান্নাতে একটি বাড়ি পাওয়ার সুসংবাদ দিচ্ছেন স্বয়ং আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। কত সহজ, তাই না? লাখ লাখ টাকা লাগছে। কি? লাগছে কোনাে পরিশ্রম কিংবা নিতে হচ্ছে কোনাে অসততার আশ্রয়? ফরয সালাতের বাইরের এই ১২ রাকআত সুন্নাত সালাত আদায় করে জান্নাতে মনােরম একটি বাড়ি নিশ্চিত করার এই প্রতিযােগিতা আমাদের সালাফে-সালিহিনের মাঝে খুব দৃঢ়ভাবে প্রচলিত ছিল। এই ১২ রাকআত আদায় করলে জান্নাতে যে একটি বাড়ি পাওয়া যাবে, এই হাদিস নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুখ থেকে সর্বপ্রথম শুনেন উম্ম হাবিবা রাযিয়াল্লাহু আনহা। এরপর, তিনি বলেন, যেদিন নবিজির মুখ থেকে আমি এই হাদিস শুনেছি, সেদিন থেকে জীবনে আর একটিবারের জন্যও আমি এই ১২ রাকআত সালাত ছেড়ে দিইনি।' এই হাদিস উম্ম হাবিবা রাযিয়াল্লাহু আনহার কাছ থেকে শুনেছেন তার ভাই আমবাসা রাযিয়াল্লাহু আনহু। তিনি বলেন, যেদিন উম্ম হাবিবার মুখ থেকে এই হাদিস আমি শুনেছি, সেদিন থেকে জীবনে আর কখনােই আমি এই ১২ রাকআত সালাত ছেড়ে দিইনি। আনবাসা রাযিয়াল্লাহু আনহুর কাছ থেকে এই হাদিস শুনেছিলেন আমর ইবনু আউস রাহিমাহুল্লাহ। তিনি বলেন, যেদিন আমি আনবাসার মুখে এই হাদিস শুনেছি, সেদিন থেকে জীবনে আর কোনােদিন আমি এই ১২ রাকআত সালাত ছেড়ে দিইনি। আমর ইবনু আউস রাহিমাহুল্লাহ থেকে এই হাদিস শুনেন নুমান ইবনু সালিম রাহিমাহুল্লাহ। তিনি বলেন, যেদিন আমর ইবনু আউস রাহিমাহুল্লাহর মুখ থেকে আমি এই হাদিস শুনেছি, সেদিন থেকে আর কখনােই আমি এই ১২ রাকআত সালাত ছেড়ে দিইনি।[১] একবার গভীরভাবে ভাবা যাক তারা কতটা নিষ্ঠাবান ছিলেন। কতটা তৎপর ছিলেন নিজেদের পুণ্যের পাল্লা ভারি করার প্রতিযােগিতায়। নবিজির মুখ থেকে উম্ম হাবিবা রাযিয়াল্লাহু আনহা এই হাদিস শােনার পর থেকে আমৃত্যু তার ওপর আমল করেছেন। তার কাছ থেকে যিনি শুনেছেন তিনিও এবং তার কাছ থেকে যিনি শুনেছেন তিনি, এভাবে পরম্পরায় যাদের পর্যন্তই এই হাদিস পৌঁছেছে, তারা সকলেই সেটাকে দৃঢ় প্রত্যয়ে, গভীর অনুরাগ এবং জান্নাতের অসীম প্রাপ্তির আশায় নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করেছেন। জান্নাতে একটি বাড়ি লাভের এই সুবর্ণ সুযােগ তারা হেলায় নষ্ট করেননি। কখনাে অলসতায়, ব্যস্ততার অজুহাতে কিংবা অবহেলার দরুন এই আমল থেকে তারা বিরত হােননি। আমাদের অনেকেই হয়তাে এই হাদিসটি আগে অনেকবার শুনেছি, কিন্তু কখনাে কি একটিবার তৎপর হয়েছি উম্মু হাবিবার মতাে? কিংবা আনবাসা রাযিয়াল্লাহু আনহুর মতাে? অথবা, আমর ইবনু আউস রাহিমাহুল্লাহহ আর নুমান ইবনু সালিম রাহিমাহুল্লাহর মতাে? হয়তো আমরা হইনি কিংবা হতে পারিনি। তবে, দুঃখের কোনাে কারণ নেই। এতােদিন হয়তাে পারিনি, কিন্তু আজ তাে আমরা আবার নতুন করে শুনলাম এই হাদিস। নতুন করে জানলাম এর মাহাত্ম্য। আজ থেকে কি তবে নতুন করে শুরু করা যায় না? একেবারে শুরু থেকে? টলটলে জলের, কলকল ঝরণার সৃচ্ছ, শুভ্র, সফেদ সেই অনন্ত অসীম জান্নাতে একটি বাড়ির জন্য আজ থেকে আমরা কি এই হাদিসখানাকে জীবনের সাথে জড়িয়ে নিতে পারি না? আবার ধরুন, কোনাে এক বন্ধুর সাথে কথা বলতে বলতে তর্কে জড়িয়ে পড়লেন। কথা কাটাকাটি, বাড়াবাড়ি শুরু হলাে। আপনি নিশ্চিতভাবে জানেন যে, আপনি যা বলছেন বা বলতে চাইছেন তা একদম ঠিক ও নির্ভুল। অপরদিকে আপনার বন্ধু যা বলতে চাইছে বা বলছে তা সঠিক নয়। এই মুহূর্তে আপনার করণীয় কী? তর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়া? নাহ। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে বলেননি। এমন মুহূর্তে তিনি আপনাকে থেমে যেতে বলেছেন। তাই, থেমে যান। চুপ করে থাকুন। তর্ক বেশিদূর গড়ানাের সুযােগ দেবেন না। এতে ফিতনা ছড়ানাের ভয় থাকে এবং ভ্রাতৃত্ব নষ্ট হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। এই যে আপনি সঠিক হওয়া সত্ত্বেও চুপ করে গেলেন, এর বিপরীতে আপনার জন্য কী পুরস্কার অপেক্ষা করছে জানেন? এর বিপরীতে জান্নাতে আপনার জন্য বরাদ্দ হয়েছে একটি অপরূপ সুন্দর বাড়ি। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের প্রান্তে একটি বাড়ির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যে সঠিক হওয়া সত্ত্বেও তর্কে লিপ্ত হয় না।[1] জান্নাতে আস্ত একটি বাড়ি লাভের কত সহজ উপায়, তাই না? কেবল নিজে সঠিক হওয়া সত্ত্বেও তর্কে লিপ্ত না হলেই জান্নাতে আমরা পেয়ে যাব আস্ত একটা বাড়ি। সেই বাড়িটা হবে স্বর্ণ-রৌপ্য দিয়ে তৈরি। মণি-মুক্তো খচিত সেই বাড়িতে থাকবে না বিন্দু পরিমাণ খুঁত। এ ছাড়াও নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি—যে ব্যক্তি দুনিয়ার বুকে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে কোনাে মসজিদ নির্মাণ করবে, হােক সেটা চড়ুই পাখির বাসার সমান, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি নির্মাণ করবেন।২] আমাদের আশপাশে এমন কত গ্রাম আছে যেখানে হয়তাে একটা মসজিদ নেই। মসজিদের অভাবে কত মুসলিম জামাআত সহকারে সালাত আদায় করতে পারে না। দেশের উত্তরাঞ্চল। এবং পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ি জায়গাগুলােতে এ রকম প্রচুর গ্রাম আছে। আমরা উদ্যোগ নিয়ে এমন জায়গাগুলােতে মসজিদ নির্মাণ করতে পারি। একা যদি না পারি, তাহলে কয়েকজন মিলে করতে পারি। আমাদের উদ্দেশ্য হবে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি। ব্যস। বিনিময়? জান্নাতে একটি সুউচ্চ, মনােরম সুন্দর অট্টালিকা! দুনিয়ায় একটা নুহাশপল্লী বানানাের জন্য আমাদের কত কাঠখড়ই-না পােড়াতে হয়। লাখ লাখ টাকা উপার্জন করতে হয়। সেই টাকার জন্য বিসর্জন দিতে হয় নিজেদের জীবন-যৌবন। এরপর ধীরে ধীরে যখন সেই নুহাশপল্লী তৈরি হয়, টুপ করেই আমরা মারা যাই। খুব বেশিদিন সেই নুহাশপল্লীর মাঠে শুয়ে জোছনা উপভােগ করা হয় না। কয়টা শ্রাবণ বর্ষার জলেই-বা আর গা ভেজাতে পারি আমরা? সেই দিঘি লীলাবতী, সেই বৃষ্টিবিলাস আর সেই ভূতের বাড়ি। সবকিছু পেছনে ফেলে আমাদের পাড়ি জমাতে হয় অনন্তের পথে। যে অনন্ত জীবনের পথে আমরা পা বাড়াই, সেই জীবনের জন্য মেঘের ওপারে অগ্রীম একটা বাড়ি বুকিং দিয়ে রাখতে ক্ষতি কী, বলুন? চলুন, সালাতের মধ্যে, একান্ত মুনাজাতে রবের কাছে আসিয়া আলাইহাস সালামের মতাে দুহাত তুলে ফরিয়াদ করি। বলি, “হে আমার রব! জান্নাতে আপনার সন্নিকটে আমার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করুন। চলবে ইনশাআল্লাহ


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২১০৩৩ জন


এ জাতীয় গল্প

→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে
→ বেলা ফুরাবার আগে

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now